দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট

আসন্ন ঈদযাত্রায় চরম দুর্ভোগের আশঙ্কা

দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার এক নাম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এখানে সারাবছরই প্রায় নানা কারণে যেমন বর্ষায় নদী ভাঙন, শীতকালীন ঘনকুয়াশা, শুকনো মৌসুমে নদীতে নাব্যতা সংকট, ফেরি সংকটসহ নানা কারণে দুর্ভোগ লেগেই থাকে। আর ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে সেই দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

তবে আসছে আগামী ঈদুল ফিতরে ঢাকাসহ তার আশপাশের জেলাগুলো থেকে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে আসা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ার কারণে চলতি রমজান মাসের শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিন নদী পারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়ে থাকে এতে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হতে হয় শত শত যাত্রীসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকদের তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন শিশু, বয়স্ক রোগীদের। আরও জানা যায়, এই দুর্ভোগ আসন্ন ঈদে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

নদী পারাপার হতে আসা যানবাহনের তুলনায় নৌরুটে ফেরি সংকট, নদীতে নাব্যতা সংকট ও ঘাট সংকটে মূলত যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। পদ্মা নদী পাড়ি দিতে ফেরির নাগাল পেতে মহাসড়কে প্রতিদিনই পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী যানবাহনের রোগী বহনকারী

অ্যাম্বুলেন্স ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ সারিতে আটকে থাকতে হয়। আর এ সুযোগে দালালচক্র অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। এ সব সংকট নিরসন না হলে ঈদ যাত্রায় চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির পোহাতে ঈদে ঘরে ফেরা লাখ লাখ মানুষের।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এ নৌরুটের ফেরি বহরে মোট ২১টি ফেরি রয়েছে। বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৩টি রোরো ফেরি, ২টি ইউটিলিটি ফেরি বিকল রয়েছে। এরমধ্যে পাটুরিয়া ভাসমান কারখানা মধুমতিতে মেরামত কাজ চলছে ফেরি মাধবীলতা আর নারায়ণগঞ্জ ডর্কইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে ভাষাসৈনিক গোলাম মাওলা, শাহ্ আলী, শাহ্ পরান ও শাপলা-শালুক।

দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোডের জন্য মোট ৭টি ফেরিঘাট পন্টুন রয়েছে। এরমধ্যে ১নং ঘাট ও ২নং ঘাট দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। ঘাট দুটি দীর্ঘ দিনেও সচল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। কী কারণে ঘাটগুলো সচল করা যাচ্ছে না! এছাড়া ৬নং ফেরি ঘাটটি কিছুদিন যাবত বিকল হয়ে বন্ধ রয়েছে। সচল থাকা ৩নং ঘাট ও ৪নং ঘাটেরও সবগুলো পকেটে ফেরি ভেড়ার উপযোগীতা নেই। তাই একটি করে পকেটে ফেরি লোড-আনলোড করা হয়। অন্যদিকে ৫নং ঘাট ও ৭নং ফেরি ঘাট সম্পূর্ণ সচল থাকলেও নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া পন্টুন সড়ক থেকে অনেক নিচু হয়ে গেছে। এতেকরে যানবাহনগুলোকে ফেরি থেকে নেমে অত্যন্ত খাড়া ঢালু টপকে সড়কে উঠতে হয়। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে।

অন্যদিকে বর্তমান শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নৌরুটে তীব্র নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ কৃত্রিমভাবে খনন যন্ত্র দিয়ে ফেরি চলাচলে জন্য খনন কাজ করছে। খনন কাজে ব্যবহৃত পাইপসহ অন্য যন্ত্রাংশের জন্যও কিছুটা ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরিগুলোকে ধীর গতিতে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে চলাচল করতে হচ্ছে।

সরেজমিন গত শনিবার সকালে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বাংলাদেশ হ্যাচারিজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার সড়কে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের সিরিয়াল রয়েছে। আর গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী অভিমুখে রয়েছে ২ শতাধিক ট্রাকের সারি। এদিকে রমজানের মধ্যেও দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছেন নদী পার হতে আসা যাত্রী ট্রাকের চালক ও সহকারীরা। সময়মতো মালামাল পরিবহন করতে না পেরে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ৩৪টি লঞ্চে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার যাত্রী পারাপার হয়। বর্তমানের তুলনায় ঈদে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ হবে। গত বর্ষা মৌসুমে লঞ্চ ঘাটের পন্টুনে ওঠা-নামার জন্য দুটি ওয়েব্রিজ নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘ আট মাস অতিবাহিত হলেও ওয়েব্রিজ দুটি সংস্কার করে সচল করা হয়নি। বিআইডব্লিউটিএ ক্ষতিগ্রস্ত ওয়েব্রিজের নিচ দিয়ে জিও ব্যাগ ফেলে সরু পথ তৈরি করে আপাতত যাত্রীদের লঞ্চ ঘাটে উঠা-নামার ব্যবস্থা করেছে। যেহেতু ঈদের সময় যাত্রীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে সেহেতু ওই সরু পথ দিয়ে যাত্রী উঠা ও নামায় চরম দুর্ভোগ ভোগান্তির ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে। আর ওই সময় যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে পিচ্ছিল হয়ে লঞ্চ ঘাটে যাত্রীদে যাওয়া-আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিউটিএ) আরিচা অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট তো গত বছরেই ভেঙে শেষ, কোন রকমে অবস্থার আলোকে কিছু কিছু কাজ করে যাত্রী ওঠানামার ব্যবস্থা করেছি। বর্ষাকাল আসলে এখানে ঘাট রাখতে পারি কি-না সন্দিহান। দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়নের বড় প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। ওই প্রকল্প থেকে স্থায়ীভাবে এখানে যা করার, করে দিব। কোন কারণে যদি দেখা যায় এখানে ঘাট রাখা যাচ্ছে না, তবে যেকোন একটি ফেরিঘাটকে আমরা লঞ্চঘাট হিসেবে ব্যবহার করে যাত্রী পারাপার করা হবে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ম্যানেজার প্রফুল্ল চৌহান সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট-বড় ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। দৌলতদিয়ার ঘাট সংকট, ফেরি সংকট ও নাব্যতা সংকটের কারণে চলাচল স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া নদী পার হতে আসা গাড়ির চাপ বেশি থাকায় প্রতিদিনই গাড়ির সিরিয়াল হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শিহাব উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আগামী ঈদে যানবাহন পারাপারে গতি আনতে দৌলতদিয়া ২নং ফেরি ঘাটটি সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রী ও বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান সরেজমিন পরিদর্শন করে এই নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া মেরামতে থাকা সব ফেরি ঈদের আগেই রুটের ফেরিবহরে যুক্ত হবে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করে ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোড দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে পারলে প্রতিটি ফেরির ট্রিপ সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং কম সময়ে আরও অনেক বেশি যানবাহন পারাপার করা সম্ভব হবে।

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ০৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট

আসন্ন ঈদযাত্রায় চরম দুর্ভোগের আশঙ্কা

শেখ রাজীব, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

image

দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার এক নাম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এখানে সারাবছরই প্রায় নানা কারণে যেমন বর্ষায় নদী ভাঙন, শীতকালীন ঘনকুয়াশা, শুকনো মৌসুমে নদীতে নাব্যতা সংকট, ফেরি সংকটসহ নানা কারণে দুর্ভোগ লেগেই থাকে। আর ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে সেই দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

তবে আসছে আগামী ঈদুল ফিতরে ঢাকাসহ তার আশপাশের জেলাগুলো থেকে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে আসা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ার কারণে চলতি রমজান মাসের শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিন নদী পারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়ে থাকে এতে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হতে হয় শত শত যাত্রীসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকদের তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন শিশু, বয়স্ক রোগীদের। আরও জানা যায়, এই দুর্ভোগ আসন্ন ঈদে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

নদী পারাপার হতে আসা যানবাহনের তুলনায় নৌরুটে ফেরি সংকট, নদীতে নাব্যতা সংকট ও ঘাট সংকটে মূলত যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। পদ্মা নদী পাড়ি দিতে ফেরির নাগাল পেতে মহাসড়কে প্রতিদিনই পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী যানবাহনের রোগী বহনকারী

অ্যাম্বুলেন্স ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ সারিতে আটকে থাকতে হয়। আর এ সুযোগে দালালচক্র অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। এ সব সংকট নিরসন না হলে ঈদ যাত্রায় চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির পোহাতে ঈদে ঘরে ফেরা লাখ লাখ মানুষের।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এ নৌরুটের ফেরি বহরে মোট ২১টি ফেরি রয়েছে। বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৩টি রোরো ফেরি, ২টি ইউটিলিটি ফেরি বিকল রয়েছে। এরমধ্যে পাটুরিয়া ভাসমান কারখানা মধুমতিতে মেরামত কাজ চলছে ফেরি মাধবীলতা আর নারায়ণগঞ্জ ডর্কইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে ভাষাসৈনিক গোলাম মাওলা, শাহ্ আলী, শাহ্ পরান ও শাপলা-শালুক।

দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোডের জন্য মোট ৭টি ফেরিঘাট পন্টুন রয়েছে। এরমধ্যে ১নং ঘাট ও ২নং ঘাট দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। ঘাট দুটি দীর্ঘ দিনেও সচল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। কী কারণে ঘাটগুলো সচল করা যাচ্ছে না! এছাড়া ৬নং ফেরি ঘাটটি কিছুদিন যাবত বিকল হয়ে বন্ধ রয়েছে। সচল থাকা ৩নং ঘাট ও ৪নং ঘাটেরও সবগুলো পকেটে ফেরি ভেড়ার উপযোগীতা নেই। তাই একটি করে পকেটে ফেরি লোড-আনলোড করা হয়। অন্যদিকে ৫নং ঘাট ও ৭নং ফেরি ঘাট সম্পূর্ণ সচল থাকলেও নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া পন্টুন সড়ক থেকে অনেক নিচু হয়ে গেছে। এতেকরে যানবাহনগুলোকে ফেরি থেকে নেমে অত্যন্ত খাড়া ঢালু টপকে সড়কে উঠতে হয়। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে।

অন্যদিকে বর্তমান শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নৌরুটে তীব্র নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ কৃত্রিমভাবে খনন যন্ত্র দিয়ে ফেরি চলাচলে জন্য খনন কাজ করছে। খনন কাজে ব্যবহৃত পাইপসহ অন্য যন্ত্রাংশের জন্যও কিছুটা ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরিগুলোকে ধীর গতিতে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে চলাচল করতে হচ্ছে।

সরেজমিন গত শনিবার সকালে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বাংলাদেশ হ্যাচারিজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার সড়কে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের সিরিয়াল রয়েছে। আর গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী অভিমুখে রয়েছে ২ শতাধিক ট্রাকের সারি। এদিকে রমজানের মধ্যেও দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছেন নদী পার হতে আসা যাত্রী ট্রাকের চালক ও সহকারীরা। সময়মতো মালামাল পরিবহন করতে না পেরে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ৩৪টি লঞ্চে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার যাত্রী পারাপার হয়। বর্তমানের তুলনায় ঈদে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ হবে। গত বর্ষা মৌসুমে লঞ্চ ঘাটের পন্টুনে ওঠা-নামার জন্য দুটি ওয়েব্রিজ নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘ আট মাস অতিবাহিত হলেও ওয়েব্রিজ দুটি সংস্কার করে সচল করা হয়নি। বিআইডব্লিউটিএ ক্ষতিগ্রস্ত ওয়েব্রিজের নিচ দিয়ে জিও ব্যাগ ফেলে সরু পথ তৈরি করে আপাতত যাত্রীদের লঞ্চ ঘাটে উঠা-নামার ব্যবস্থা করেছে। যেহেতু ঈদের সময় যাত্রীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে সেহেতু ওই সরু পথ দিয়ে যাত্রী উঠা ও নামায় চরম দুর্ভোগ ভোগান্তির ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে। আর ওই সময় যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে পিচ্ছিল হয়ে লঞ্চ ঘাটে যাত্রীদে যাওয়া-আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিউটিএ) আরিচা অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট তো গত বছরেই ভেঙে শেষ, কোন রকমে অবস্থার আলোকে কিছু কিছু কাজ করে যাত্রী ওঠানামার ব্যবস্থা করেছি। বর্ষাকাল আসলে এখানে ঘাট রাখতে পারি কি-না সন্দিহান। দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়নের বড় প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। ওই প্রকল্প থেকে স্থায়ীভাবে এখানে যা করার, করে দিব। কোন কারণে যদি দেখা যায় এখানে ঘাট রাখা যাচ্ছে না, তবে যেকোন একটি ফেরিঘাটকে আমরা লঞ্চঘাট হিসেবে ব্যবহার করে যাত্রী পারাপার করা হবে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ম্যানেজার প্রফুল্ল চৌহান সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট-বড় ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। দৌলতদিয়ার ঘাট সংকট, ফেরি সংকট ও নাব্যতা সংকটের কারণে চলাচল স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া নদী পার হতে আসা গাড়ির চাপ বেশি থাকায় প্রতিদিনই গাড়ির সিরিয়াল হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শিহাব উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আগামী ঈদে যানবাহন পারাপারে গতি আনতে দৌলতদিয়া ২নং ফেরি ঘাটটি সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রী ও বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান সরেজমিন পরিদর্শন করে এই নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া মেরামতে থাকা সব ফেরি ঈদের আগেই রুটের ফেরিবহরে যুক্ত হবে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করে ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোড দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে পারলে প্রতিটি ফেরির ট্রিপ সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং কম সময়ে আরও অনেক বেশি যানবাহন পারাপার করা সম্ভব হবে।