মারিউপোলে রুশ আল্টিমেটাম শেষ

শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের ঘোষণা ইউক্রেনের

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অবশিষ্ট অংশকে আত্মসমর্পণের জন্য রাশিয়ার দেওয়া আল্টিমেটাম শেষ হয়ে গেছে। আত্মসমর্পণের জন্য রাশিয়া সময়সীমা বেঁধে দিলেও তাতে ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা সাড়া দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শামিহাল বলেছেন, কেউ আত্মসমর্পণ করবে না এবং শহরে থাকা অবশিষ্ট সেনারা লড়াই চালিয়ে যাবে।

শামিহাল আরও বলেন, মারিউপোলে অবশিষ্ট ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনও লড়াই করছে এবং আত্মসমর্পণের বিষয়ে রাশিয়ার আল্টিমেটাম মানতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘শহরের পতন এখনও হয়নি।’ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

ইউক্রেনের ওডেসা নগরীর এমপি ওলেক্সি গনচারেঙ্কো বলেছেন, ‘মারিউপোলে ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করবে না। আমি গতকালই তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি জানি, তারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে।’

মারিউপোলের মেয়রের উপদেষ্টা পেত্রো আন্দ্রিউসচেঙ্কো টেলিগ্রামে বলেছেন, তাদের বাহিনী এখনও প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া অবশিষ্ট সেনাদের জন্য ‘আত্মসমর্পণ করিডোর’ এর ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়ার পরও আমাদের প্রতিরক্ষা সেনারা তাদের প্রতিরোধ অক্ষুণœ রেখেছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বলেছেন, তারা গত শনিবারই শহরটির অন্য সব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে, ইউক্রেইন বাহিনীর কেবল অল্প কিছু সেনা এখন বিশাল আজভস্টাল ইস্পাত কারখানা সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবরুদ্ধ হয়ে আছে।

মস্কো বলছে, মারিউপোলের অবশিষ্ট ইউক্রেনীয় সেনাদের সবাই এখন এক বিশাল ইস্পাত কারখানার ভেতর অবস্থান করছে। রাশিয়া আরও বলছে, মারিউপোল শহর এখন প্রায় পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে। যদি মারিউপোলের পতন ঘটে, এটি হবে গত দুমাসের যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আজভস্টল ইস্পাত কারখানার ভেতর এখন প্রায় আড়াই হাজার ইউক্রেনীয় সেনা আছে। সেখান থেকে তাদের বের হওয়ার পথ বন্ধ করে রেখেছে রুশ বাহিনী।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মারিউপোলের ইউক্রেইনীয় যোদ্ধাদেরকে সেখান থেকে হটিয়ে দেওয়া হলে যুদ্ধ অবসানে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনার ইতি ঘটবে।

ইউক্রেনীয় এমপি ওলেক্সি গনচারেঙ্কো মারিউপোলে রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞকে ‘প্রকৃতই গণহত্যা’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আনুমানিক হিসাব দিয়ে বলেন, অবরুদ্ধ এই নগরীতে প্রায় ১ লাখ মানুষ আছে। তার মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

গত রোববার মস্কোর স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ইউক্রেইনীয় সেনা ও ‘বিদেশি ভাড়াটে সেনাদের’ অস্ত্র সমর্পণে সময় বেঁধে দিয়ে বলেছে, যারাই অস্ত্র নামিয়ে রাখবে, তাদেরকে যুদ্ধবন্দির মর্যাদা দেওয়া হবে ও জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আচরণ করা হবে। কিছুদিন হলো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে হামলা বাড়িয়েছে রুশ বাহিনী। ডনবাসের দোনেস্ক এবং লুহানস্কে লড়াই তীব্র আকার নিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বেসামরিক স্থাপনা টার্গেট করে বোমাবর্ষণ করছে শত্রুরা। ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে রাশিয়া তেমন সুবিধা করতে না পারার পর পূর্বের ডনবাস অঞ্চলের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল। তবে এর পাশাপাশি তারা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাজধানী কিয়েভে এবং অন্যান্য এলাকায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের উত্তর পূর্বাঞ্চলে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ হামলায় আরও কমপক্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন বলে আঞ্চলিক এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

খারকিভের স্বাস্থ্য বিভাগের আঞ্চলিক প্রধান মাকসিম খাস্তভ রাশিয়ার একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতাহতের ওই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে খারকিভের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকা- ঘটেছে। শহরটির বিভিন্ন এলাকার ভবনের ছাদ ধসে গেছে।

এএফপির প্রতিনিধি খারকিভের দুটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে দেখেছেন। তিনি বলেছেন, খারকিভের মধ্যাঞ্চলের একটি আবাসিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে অন্তত পাঁচটি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। শহরের কেন্দ্রজুড়ে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের ছুটতে দেখা গেছে।

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপর খারকিভের সড়কজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পদচারীদের দৌড়ে এবং বিভিন্ন যানবাহনকে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। এর আগে গত শুক্রবার খারকিভের আবাসিক এলাকায় রাশিয়ার অনবরত গোলাবর্ষণে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। শনিবারও শহরটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আরও দুজন নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ০৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

মারিউপোলে রুশ আল্টিমেটাম শেষ

শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের ঘোষণা ইউক্রেনের

image

খারকিভে রুশ বোমা হামলায় আহত এক মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের স্বেচ্ছাসেবীরা -ডেইলি মেইল

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অবশিষ্ট অংশকে আত্মসমর্পণের জন্য রাশিয়ার দেওয়া আল্টিমেটাম শেষ হয়ে গেছে। আত্মসমর্পণের জন্য রাশিয়া সময়সীমা বেঁধে দিলেও তাতে ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা সাড়া দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শামিহাল বলেছেন, কেউ আত্মসমর্পণ করবে না এবং শহরে থাকা অবশিষ্ট সেনারা লড়াই চালিয়ে যাবে।

শামিহাল আরও বলেন, মারিউপোলে অবশিষ্ট ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনও লড়াই করছে এবং আত্মসমর্পণের বিষয়ে রাশিয়ার আল্টিমেটাম মানতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘শহরের পতন এখনও হয়নি।’ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

ইউক্রেনের ওডেসা নগরীর এমপি ওলেক্সি গনচারেঙ্কো বলেছেন, ‘মারিউপোলে ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করবে না। আমি গতকালই তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি জানি, তারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে।’

মারিউপোলের মেয়রের উপদেষ্টা পেত্রো আন্দ্রিউসচেঙ্কো টেলিগ্রামে বলেছেন, তাদের বাহিনী এখনও প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া অবশিষ্ট সেনাদের জন্য ‘আত্মসমর্পণ করিডোর’ এর ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়ার পরও আমাদের প্রতিরক্ষা সেনারা তাদের প্রতিরোধ অক্ষুণœ রেখেছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বলেছেন, তারা গত শনিবারই শহরটির অন্য সব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে, ইউক্রেইন বাহিনীর কেবল অল্প কিছু সেনা এখন বিশাল আজভস্টাল ইস্পাত কারখানা সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবরুদ্ধ হয়ে আছে।

মস্কো বলছে, মারিউপোলের অবশিষ্ট ইউক্রেনীয় সেনাদের সবাই এখন এক বিশাল ইস্পাত কারখানার ভেতর অবস্থান করছে। রাশিয়া আরও বলছে, মারিউপোল শহর এখন প্রায় পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে। যদি মারিউপোলের পতন ঘটে, এটি হবে গত দুমাসের যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আজভস্টল ইস্পাত কারখানার ভেতর এখন প্রায় আড়াই হাজার ইউক্রেনীয় সেনা আছে। সেখান থেকে তাদের বের হওয়ার পথ বন্ধ করে রেখেছে রুশ বাহিনী।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মারিউপোলের ইউক্রেইনীয় যোদ্ধাদেরকে সেখান থেকে হটিয়ে দেওয়া হলে যুদ্ধ অবসানে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনার ইতি ঘটবে।

ইউক্রেনীয় এমপি ওলেক্সি গনচারেঙ্কো মারিউপোলে রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞকে ‘প্রকৃতই গণহত্যা’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আনুমানিক হিসাব দিয়ে বলেন, অবরুদ্ধ এই নগরীতে প্রায় ১ লাখ মানুষ আছে। তার মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

গত রোববার মস্কোর স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ইউক্রেইনীয় সেনা ও ‘বিদেশি ভাড়াটে সেনাদের’ অস্ত্র সমর্পণে সময় বেঁধে দিয়ে বলেছে, যারাই অস্ত্র নামিয়ে রাখবে, তাদেরকে যুদ্ধবন্দির মর্যাদা দেওয়া হবে ও জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আচরণ করা হবে। কিছুদিন হলো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে হামলা বাড়িয়েছে রুশ বাহিনী। ডনবাসের দোনেস্ক এবং লুহানস্কে লড়াই তীব্র আকার নিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বেসামরিক স্থাপনা টার্গেট করে বোমাবর্ষণ করছে শত্রুরা। ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে রাশিয়া তেমন সুবিধা করতে না পারার পর পূর্বের ডনবাস অঞ্চলের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল। তবে এর পাশাপাশি তারা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাজধানী কিয়েভে এবং অন্যান্য এলাকায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের উত্তর পূর্বাঞ্চলে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ হামলায় আরও কমপক্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন বলে আঞ্চলিক এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

খারকিভের স্বাস্থ্য বিভাগের আঞ্চলিক প্রধান মাকসিম খাস্তভ রাশিয়ার একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতাহতের ওই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে খারকিভের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকা- ঘটেছে। শহরটির বিভিন্ন এলাকার ভবনের ছাদ ধসে গেছে।

এএফপির প্রতিনিধি খারকিভের দুটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে দেখেছেন। তিনি বলেছেন, খারকিভের মধ্যাঞ্চলের একটি আবাসিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে অন্তত পাঁচটি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। শহরের কেন্দ্রজুড়ে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের ছুটতে দেখা গেছে।

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপর খারকিভের সড়কজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পদচারীদের দৌড়ে এবং বিভিন্ন যানবাহনকে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। এর আগে গত শুক্রবার খারকিভের আবাসিক এলাকায় রাশিয়ার অনবরত গোলাবর্ষণে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। শনিবারও শহরটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আরও দুজন নিহত হয়েছেন।