গণতন্ত্র ফেরাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান ফখরুলের

প্রতিদিন বাংলাদেশে মানুষের অধিকার নিয়ে মানুষ কথা বলার চেষ্টা করছে, বলতে পারছে না। তাকিয়ে দেখুন চারদিকে একটা ভয়াবহ রকমের মতো, একটা অক্টোপাসের মতো সমস্ত কিছু দম বন্ধ করার একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

গতকাল সকালে গুলশানে লেকশোরে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনে বড় একটা আন্দোলন তৈরি করতে সক্ষম হব। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ভয়াবহ দানব আমাদের ওপর চেপে বসে আছে তাকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো, পার্লামেন্ট তৈরি করতে সক্ষম হবো।

তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের দেশকে রক্ষা করবার জন্য, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবার জন্য, আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য এবং গুম হয়ে যাওয়া সন্তানদের ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করি, আন্দোলন করি। একটা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আসি যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে।

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ সব গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, নিখোঁজ বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীর মেয়ে এখন আমাদের সামনে আসে না, অনেক কষ্ট নিয়ে আসে না।

গতকাল ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ১০ বছর পূর্ণ হয়। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী থেকে তিনি নিখোঁজ হন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার মনে আছে, যখন ইলিয়াস আলী গুম হয়ে যায় তখন আমি তার বাসায় গিয়েছিলাম, তার ছোট মেয়ের বয়স

ছিল তখন ৬ বছরের মতো। সে শূন্য একটা দৃষ্টি নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। প্রায় প্রত্যেক বছরই আমি তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে তাদের বাসায় যাই। এখন দেখা করতে গেলে তার মেয়ে আমাদের সামনে আসে না, অনেক কষ্ট নিয়ে আসে না। বলে, ‘তোমরা আসো কিন্তু আমার বাবা তো ফিরে আসে না।

ফখরুল ইসলাম বলেন, গুম হয়ে যাওয়া প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারের একই অবস্থা। আমার উত্তরার বাসার পাশেই দক্ষিণখান। সেখানে একজন মহিলা আছেন, তার ছেলে মুন্না গুম হয়ে গেছে। বাবা এক বছর বিভিন্ন জায়গায় ছেলেকে খুঁজতে-খুঁজতে মারা গেছেন। আর মা এখন অসহায় অবস্থায় আছেন। তার ঘর ভাড়াও থাকে না। আমরা চেষ্টা করি অত্যন্ত সীমিতভাবে তাদের পাশে থাকার জন্য।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আমাদের বারবার মনে হয়েছে- এটা তাদের পুরানো অভিলাষ যে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ক্ষমতায় থাকবো। ৭৫ সালেও তারা বাকশাল করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু টিকতে পারেনি। এখন কৌশলটা বদলে দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে আবারও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে।

ফখরুল বলেন, এটা এমন একটা সময় যখন ক্ষমতাসীনরা চূড়ান্ত বিপদের মধ্যে। ওরা একদিকে আপনাদেরকে স্টিক দেখাবে, আরেকদিকে ক্যারেড দেখাবে। ইংরেজিতে যেমন বলে স্টিক অ্যান্ড ক্যারেড পলিসি - ঠিক এরকম চেষ্টা করবে। আপনাদের ধমক দেবে আবার ওইদিকে নির্বাচনের টোপ দেবে।

আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ-অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ এবং বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল ও ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ০৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

গণতন্ত্র ফেরাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান ফখরুলের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রতিদিন বাংলাদেশে মানুষের অধিকার নিয়ে মানুষ কথা বলার চেষ্টা করছে, বলতে পারছে না। তাকিয়ে দেখুন চারদিকে একটা ভয়াবহ রকমের মতো, একটা অক্টোপাসের মতো সমস্ত কিছু দম বন্ধ করার একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

গতকাল সকালে গুলশানে লেকশোরে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনে বড় একটা আন্দোলন তৈরি করতে সক্ষম হব। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ভয়াবহ দানব আমাদের ওপর চেপে বসে আছে তাকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো, পার্লামেন্ট তৈরি করতে সক্ষম হবো।

তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের দেশকে রক্ষা করবার জন্য, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবার জন্য, আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য এবং গুম হয়ে যাওয়া সন্তানদের ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করি, আন্দোলন করি। একটা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আসি যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে।

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ সব গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, নিখোঁজ বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীর মেয়ে এখন আমাদের সামনে আসে না, অনেক কষ্ট নিয়ে আসে না।

গতকাল ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ১০ বছর পূর্ণ হয়। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী থেকে তিনি নিখোঁজ হন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার মনে আছে, যখন ইলিয়াস আলী গুম হয়ে যায় তখন আমি তার বাসায় গিয়েছিলাম, তার ছোট মেয়ের বয়স

ছিল তখন ৬ বছরের মতো। সে শূন্য একটা দৃষ্টি নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। প্রায় প্রত্যেক বছরই আমি তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে তাদের বাসায় যাই। এখন দেখা করতে গেলে তার মেয়ে আমাদের সামনে আসে না, অনেক কষ্ট নিয়ে আসে না। বলে, ‘তোমরা আসো কিন্তু আমার বাবা তো ফিরে আসে না।

ফখরুল ইসলাম বলেন, গুম হয়ে যাওয়া প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারের একই অবস্থা। আমার উত্তরার বাসার পাশেই দক্ষিণখান। সেখানে একজন মহিলা আছেন, তার ছেলে মুন্না গুম হয়ে গেছে। বাবা এক বছর বিভিন্ন জায়গায় ছেলেকে খুঁজতে-খুঁজতে মারা গেছেন। আর মা এখন অসহায় অবস্থায় আছেন। তার ঘর ভাড়াও থাকে না। আমরা চেষ্টা করি অত্যন্ত সীমিতভাবে তাদের পাশে থাকার জন্য।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আমাদের বারবার মনে হয়েছে- এটা তাদের পুরানো অভিলাষ যে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ক্ষমতায় থাকবো। ৭৫ সালেও তারা বাকশাল করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু টিকতে পারেনি। এখন কৌশলটা বদলে দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে আবারও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে।

ফখরুল বলেন, এটা এমন একটা সময় যখন ক্ষমতাসীনরা চূড়ান্ত বিপদের মধ্যে। ওরা একদিকে আপনাদেরকে স্টিক দেখাবে, আরেকদিকে ক্যারেড দেখাবে। ইংরেজিতে যেমন বলে স্টিক অ্যান্ড ক্যারেড পলিসি - ঠিক এরকম চেষ্টা করবে। আপনাদের ধমক দেবে আবার ওইদিকে নির্বাচনের টোপ দেবে।

আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ-অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ এবং বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল ও ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।