ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জে তাঁতপল্লীগুলো এখন কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত ২ বছর করোনার বিধি নিষেধের কারণে তাঁত মালিকদের ব্যবসা না থাকলেও এবার বাজার চাঙ্গা বলে ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই তাঁত পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে।
জেলার সোহাগপুর, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারী আসতে শুরু করেছে এবং তাঁত মালিকদের অগ্রিম বায়না দিচ্ছেন তাদের পছন্দের কাপড়ের জন্য। করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁত কারখানা গুলোও আবারও চালু করা হয়েছে। দিন রাত কাজ করে ব্যপারীদের চাহিদা মতো কাপড় তৈরি করছেন তাঁত মালিকরা।
গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর চাহিদা অনেক বেশি বলে জানান তাঁত মালিকরা। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, জেলায় এবার তাঁতবস্ত্র বিক্রির পরিমাণ দেড়শ’ থেকে ২শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। জেলার বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালি, উল্লাপাড়া, সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় আড়াই লক্ষাধিক তাঁত কারখানা ছিল। তবে করোনা কারণে পুঁজি সংকটে অনেক তাঁত কারখানাই বন্ধ হয়ে গেছে। এসব তাঁত কারখানায় গত ২ বছর ধরে মন্দাভাব ছিল। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে সেই মন্দাভাব ইতোমধ্যেই কেটে গেছে। কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার তাঁতপল্লীগুলো। কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে নারী পুরুষ ও শিশুরা।
কেউ তাঁতে শাড়ি বুনছে, কেউ সুতা রঙ করছে, আবার কেউ চরকায় সুতা তুলছে। এরই মধ্যেই এই শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৫ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
চাহিদা বেশি দেখে তাঁত মালিকরা বেশ খুশি। তবে পুঁজি সংকটের কারণে অনেক তাঁত মালিকই চাহিদা মতো শাড়ি, থ্রি-পিসও লুঙ্গি সরবরাহ করতে পারছে না বলে তাঁত সংশ্লিষ্টরা জানান। এ বছর তাঁতের মাঝারি মানের শাড়ি ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ গ্রামের তাঁত মালিক সাহাব উদ্দিন জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার দিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন এই অর্ডার বেড়ে চলেছে। তিনি জানান তাদের তিন ভাইয়ের কারখানায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছে। ইতোমধ্যেই তাদের কাছে দেড় কোটি টাকার অর্ডার এসেছে। প্রতিদিনই অর্ডার আসছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ বছর রেকর্ড পরিমাণ তাঁতপণ্য বিক্রি হবে।
কাপড়ের পাইকার ইসমাইল হোসেন জানান তিনি সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস ক্রয় করে নীলফামারী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, করটিয়া, বাবুরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে থাকেন। ছোট মেয়েদের শাড়ি ১শ’ হতে ২শ’ টাকা করে কিনে ২শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা বিক্রি করেন। এতে খরচ বাদে ভালোই লাভ হয়। বড়দের শাড়ি, থ্রি-পিস ৫শ’ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় ক্রয় করে মার্কেটে ৭শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তিনি জানান সিরাজগঞ্জের পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বেলকুচি এলাকার তাঁত মালিক আবদুল আলিম জানান গত দুই বছর করোনার কারণে কোন ব্যবসা ছিল না এবার আবার ব্যবসা শুরু হয়েছে আশা করি করোনার ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া যাবে।
একই এলাকার তাঁত শ্রমিক আবদুল্লাহ, শহিদুল, জাকারিয়া জানান, গত ২ বছর খুব কষ্টে দিন গেছে তাঁত কারখানা চালু হওয়ায় সে কষ্ট দূর হবে আশা করছি। এবার ঈদে অন্তত স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে ঈদ করতে পারবো।
বেলকুচি উপজেলা হস্ত অ্যান্ড পাওয়ার লুম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী বৈদ্যনাথ রায় জানান, করোনা কাটিয়ে এ বছর তাঁত কারখানাগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। প্রচুর অর্ডার আসছে। ইতোমধ্যেই বাইরের পাইকাররা এখানে এসে অর্ডার দিচ্ছেন। এতে করে তাঁত মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে । এ বছর জেলায় দেড়শ’ থেকে দুইশ’ কোটি টাকার তাঁতপণ্য বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও জানান ইতোমধ্যেই প্রতি পাউন্ড সুতায় ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, এছাড়া রঙসহ তাঁত কারখানায় ব্যবহৃত অন্য সামগ্রীর দামও বেড়েছে এতে করে মালিকদের কিছুটা বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ : ঈদকে সামনে রেখে শাড়ী তৈরিতে ব্যস্ত তাঁত শ্রমিক -সংবাদ
আরও খবরমঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ০৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৭ রমাদ্বান ১৪৪৩
আবদুল কুদ্দুস, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ : ঈদকে সামনে রেখে শাড়ী তৈরিতে ব্যস্ত তাঁত শ্রমিক -সংবাদ
ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জে তাঁতপল্লীগুলো এখন কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত ২ বছর করোনার বিধি নিষেধের কারণে তাঁত মালিকদের ব্যবসা না থাকলেও এবার বাজার চাঙ্গা বলে ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই তাঁত পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে।
জেলার সোহাগপুর, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারী আসতে শুরু করেছে এবং তাঁত মালিকদের অগ্রিম বায়না দিচ্ছেন তাদের পছন্দের কাপড়ের জন্য। করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁত কারখানা গুলোও আবারও চালু করা হয়েছে। দিন রাত কাজ করে ব্যপারীদের চাহিদা মতো কাপড় তৈরি করছেন তাঁত মালিকরা।
গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর চাহিদা অনেক বেশি বলে জানান তাঁত মালিকরা। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, জেলায় এবার তাঁতবস্ত্র বিক্রির পরিমাণ দেড়শ’ থেকে ২শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। জেলার বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালি, উল্লাপাড়া, সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় আড়াই লক্ষাধিক তাঁত কারখানা ছিল। তবে করোনা কারণে পুঁজি সংকটে অনেক তাঁত কারখানাই বন্ধ হয়ে গেছে। এসব তাঁত কারখানায় গত ২ বছর ধরে মন্দাভাব ছিল। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে সেই মন্দাভাব ইতোমধ্যেই কেটে গেছে। কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার তাঁতপল্লীগুলো। কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে নারী পুরুষ ও শিশুরা।
কেউ তাঁতে শাড়ি বুনছে, কেউ সুতা রঙ করছে, আবার কেউ চরকায় সুতা তুলছে। এরই মধ্যেই এই শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৫ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
চাহিদা বেশি দেখে তাঁত মালিকরা বেশ খুশি। তবে পুঁজি সংকটের কারণে অনেক তাঁত মালিকই চাহিদা মতো শাড়ি, থ্রি-পিসও লুঙ্গি সরবরাহ করতে পারছে না বলে তাঁত সংশ্লিষ্টরা জানান। এ বছর তাঁতের মাঝারি মানের শাড়ি ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ গ্রামের তাঁত মালিক সাহাব উদ্দিন জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার দিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন এই অর্ডার বেড়ে চলেছে। তিনি জানান তাদের তিন ভাইয়ের কারখানায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছে। ইতোমধ্যেই তাদের কাছে দেড় কোটি টাকার অর্ডার এসেছে। প্রতিদিনই অর্ডার আসছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ বছর রেকর্ড পরিমাণ তাঁতপণ্য বিক্রি হবে।
কাপড়ের পাইকার ইসমাইল হোসেন জানান তিনি সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস ক্রয় করে নীলফামারী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, করটিয়া, বাবুরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে থাকেন। ছোট মেয়েদের শাড়ি ১শ’ হতে ২শ’ টাকা করে কিনে ২শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা বিক্রি করেন। এতে খরচ বাদে ভালোই লাভ হয়। বড়দের শাড়ি, থ্রি-পিস ৫শ’ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় ক্রয় করে মার্কেটে ৭শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তিনি জানান সিরাজগঞ্জের পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বেলকুচি এলাকার তাঁত মালিক আবদুল আলিম জানান গত দুই বছর করোনার কারণে কোন ব্যবসা ছিল না এবার আবার ব্যবসা শুরু হয়েছে আশা করি করোনার ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া যাবে।
একই এলাকার তাঁত শ্রমিক আবদুল্লাহ, শহিদুল, জাকারিয়া জানান, গত ২ বছর খুব কষ্টে দিন গেছে তাঁত কারখানা চালু হওয়ায় সে কষ্ট দূর হবে আশা করছি। এবার ঈদে অন্তত স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে ঈদ করতে পারবো।
বেলকুচি উপজেলা হস্ত অ্যান্ড পাওয়ার লুম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী বৈদ্যনাথ রায় জানান, করোনা কাটিয়ে এ বছর তাঁত কারখানাগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। প্রচুর অর্ডার আসছে। ইতোমধ্যেই বাইরের পাইকাররা এখানে এসে অর্ডার দিচ্ছেন। এতে করে তাঁত মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে । এ বছর জেলায় দেড়শ’ থেকে দুইশ’ কোটি টাকার তাঁতপণ্য বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও জানান ইতোমধ্যেই প্রতি পাউন্ড সুতায় ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, এছাড়া রঙসহ তাঁত কারখানায় ব্যবহৃত অন্য সামগ্রীর দামও বেড়েছে এতে করে মালিকদের কিছুটা বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে।