ডিজিটাল দেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল সংযুক্তি খাতের অর্জন

মোস্তাফা জব্বার

দুই ॥

বিটিসিএলের আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। টেলিকম সেবা আধুনিকায়নে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এমওটিএন প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ হলে টেলিফোন সেবায় দেশে নতুন যুগের সূচনা হবে। গ্রাহক সাধারণ টেলিফোন থেকে কথা বলার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা পাবে। টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় GPON (Gigabit Passive optical Network) FTTx (Fiber to the Ofiice/home/building) System ) (Triple Play (Voice, Data and Video) সেবা পাওয়া যাবে।

সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ বহনের জন্য ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে বিটিসিএল ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেডের (প্রটেকশন) অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যমান ৪০ জিবিপিএস ক্ষমতার বর্তমান অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন লিংককে ২৪০ জিবিপিএস ক্ষমতায় রূপান্তর করা হয়েছে।

ডাক বিভাগ কর্তৃক মোবাইল ফিন্যান্স সার্ভিস নগদ এবং ডিজিটাল ডাক টাকা চালু করা হয়েছে। ডাক সেবাকে ডিজিটাল ডাক সেবায় রূপান্তরের মাধ্যমে ডাক বিভাগের অবকাঠামোকে কার্যকর ডিজিটাল কমার্সের উপযোগী করে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাইজেশনের প্রভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চিঠি আদান-প্রদানের যুগ শেষ হয়ে গেলেও পণ্য পরিবহনে ডাক বিভাগকে শ্রেষ্ঠতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি পুরো ডাক ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করছি আমরা ডাকঘরকে ডিজিটাইজেশনের জন্য ডিজিটাল সার্ভিস ল্যাব করেছি। সেখান থেকে ডিজিটাল প্রক্রিয়া কিভাবে করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। হাওর ও দুর্গম দ্বীপ অঞ্চলে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসওএফের অর্থায়নে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অধীন হাওরসমূহে এবং মাতারবাড়ি, হাতিয়া, ভাসানটেক প্রভৃতি দ্বীপ অঞ্চলে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সপ্রসারণের লক্ষ্যে বিটিআরসির (সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল) এসওএফ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রকল্পটি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।

টেলিফোন শিল্প সংস্থা ডিজিটাল ডিভাইস নির্মাণের উপযোগী করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের তৈরি ল্যাপটপ ও কম্পিউটার রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিবান্ধব প্রদত্ত সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে নেপাল ও নাইজেরিয়ায় কম্পিউটার ও ল্যাপটপের বড় অংকের চালান রপ্তানি হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানির বিষয়টি পাইপ লাইনে রয়েছে।

টেলিটক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণ ও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল মহাসড়ক নির্মাণ প্রক্রিয়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই সম্পন্ন হবে- এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

ডিজিটাইজেশনের প্রসারের পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য এখন বড় একটি চ্যালেঞ্জ। সে সংকটও অতিক্রম করতে আমরা কাজ করছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ প্রণয়ণ ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এ আইনের আওতায় একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন করা হয়েছে। এ এজেন্সির মাধ্যমে ২২ হাজার পর্ন সাইট ও ৬ হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। ফেসবুক-ইউটিউবে যে ধরনের পর্নো সংক্রান্ত বা নোংরা-অশ্লীল তথ্যউপাত্ত দেওয়া হয় সেগুলো অপসারণ করার ব্যবস্থা নিয়েছি।

টেলিযোগাযোগ সুবিধা বঞ্চিত হাওর, দ্বীপ ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি স্থাপনে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (এসওএফ) ১৫২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছেÑ এর মধ্যে আইসিটি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ৫০৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে টেলিযোগাযোগ সুবিধা বঞ্চিত এলাকাসমূহে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি স্থাপন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের অধীন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দ্বীপ এলাকায় নেটওয়ার্ক স্থাপনে ৪৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, টেলিটকের মাধ্যমে ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওর ও দ্বীপাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন, বিটিসিএলের মাধ্যমে ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওর-বাঁওড় ও প্রত্যন্ত ব্রডব্যান্ড ওয়াইফাই সম্প্রসারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এছাড়াও বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত দুর্গম ও উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন জনপদ ও স্থাপনায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনে ৬৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এবং সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটাল করণে ৮৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত ৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে আমরা আরও একটি গুরুত্ব্পূর্ণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের জন্য এবং অপারেটরসমূহের প্যাকেজ বিড়ম্বনা যৌক্তিকমাত্রায় নির্ধারণ করার মাধ্যমে গ্রাহক সুবিধা নিশ্চিত করতে একটি অ্যাপ আমরা চালু করেছি। গত ৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখ বিটিআরসি কর্তৃক মোবাইল ডেটা প্যাকেজ নির্দেশিকা এবং টেক্সটের মাধ্যমে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ও ডিসকভার অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়। ২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রা থেকে শুরু করে ডিজিটাল অবকাঠামো সম্প্রসারণে গত ১৩ বছরে গৃহীত যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে ডিজিটাল সেবা দেশের প্রতিটি অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের হাতে মুঠোয় পৌঁছে গেছে। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র (ইউআইএসসি) একযোগে উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে সারাদেশে ৪ হাজার ৫১৬টি (ইউআইএসসি) স্থাপন করা হয়। দেশের সকল ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্য হল, ইউনিয়ন পরিষদকে একটি তথ্য ও জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, যাতে এই সেবা প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের মধ্যে একটি তথ্য ও জ্ঞানভিত্তিক দেশ প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে। এসব কেন্দ্র থেকে ৩০০টি সরকারি সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনগণ গ্রহণ করতে পারছে। এর পাশাপাশি দেশের ৮ হাজার ৫০০ ডাকঘর থেকে ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ও টেলিযোগাযোগ খাতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার

বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড (সংশোধন) আইন-০০৯, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন-০০১ (সংশোধিত ২০১০), পোস্ট অফিস আইন-১৮৯৮ (সংশোধিত ২০১০), আন্তর্জাতিক দূরপাল্লার টেলিযোগযোগ সেবা নীতিমালা-২০১০, ব্রডব্যান্ড নীতিমালা-২০০৯, মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ বিধিমালা-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।

টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর গঠন (২০১৫), বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (২০১৭) প্রতিষ্ঠা এবং মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃক্ষ গঠন (২০১৩) করা হয়েছে।

বিটিসিএল কর্তৃক ১০০০টি ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প ডিসেম্বর ২০১৬ সালে সমাপ্ত হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪টি জেলায় ১১৪টি উপজেলা হতে ১১০৪টি ইউনিয়নে প্রায় ৮০০০ কি.মি. অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে।

উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, প্রকল্পের আওতায় ৬৪টি জেলার ৩৪৯টি উপজেলায় ৮৯০০ কি.মি. অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপিত হয়।

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সিমিইউ-৫ এর ল্যান্ডিং স্টেশন ও সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিমিউই-৫ এর ‘ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটায় স্থাপন করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে ১৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাবে। ৩টি দুর্গম পার্বত্য জেলার সব উপজেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা সম্ভব হয়েছে। দুর্গম পার্বত্য এলাকায় নেটওয়ার্ক স্থাপনে সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নেটওয়ার্ক তথা মোবাইল যোগাযোগ পার্বত্য অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

বিটিসিএলসহ ৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে International Terrestrial Cable (ITC) লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। জনগণের নিকট স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিটিসিএল, পিজিসিবি, রেলওয়ে এবং ২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে Nationwide Telecommunication Transmission Network (NTTN) লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে।

প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে বিদ্যমান দুইটি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিটিসিএল এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে Broadband Wireless Access (BWA) প্রদান করা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের জন্য প্রায় ১৮০০টি বিভিন্ন প্রকারের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে।

ওInternet Corporation for Assigned Names and Numbers (ICANN) কর্তৃক গত ৪ অক্টোবর ২০১৬ ডটবাংলা ডোমেইন বাংলাদেশের অনুকূলে চূড়ান্ত বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে ‘বাংলা’ ডোমেইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

ডটবাংলা ডোমেইন চালুর ফলে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বাংলা ভাষায় ইন্টারনেটে প্রবেশ ও ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া ‘বাংলা’ ডোমেইন সর্বস্তরের বাংলা ভাষা প্রচলনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ৫০০টি উপজেলা ও সাব পোস্টঅফিস এবং ৮,০০০ টি গ্রামীণ অবিভাগীয় শাখা ডাকঘরকে পোস্ট ডিজিটাল- সেন্টারে রূপান্তর করা হয়েছে। দ্রুত ও নিরাপদে ডাক সেবা প্রদানের লক্ষ্যকে সামনে রেখে মেইল ও ক্যাশ পরিবহনের জন্য ১১৮টি মেইল গাড়ি ডাক পরিবহন বহরে যুক্ত করা এবং এবং ৩৩টি গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়ছে। পোস্ট ডি-কমার্স সার্ভিস প্রদান কার্যক্রম ডাক অধিদপ্তরের নতুন সেবা কার্যক্রম হিসেবে চালু করা হয়েছে।

টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা

গ্রাহকগণের আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ না করেই এনআইডির তথ্যের সাথে গ্রাহকগণের তথ্য যাচাইপূর্বক পুনঃনিবন্ধন কার্যক্রম নির্ধারিত সময়সীমার (৩১ মে ২০১৬) মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এর ফলে মোবাইল ফোনে হুমকি, চাঁদাবাজি, জঙ্গি অর্থায়ন ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকা- বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের বিশটি উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণের এ অভিযাত্রায় তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নিরন্তর এ পথচলা আরো গতিময় হোক, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা হোক আমাদের সবার প্রত্যাশা।

[লেখক : ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী]

ঢাকা। ১৭ এপ্রিল, ২০২২।

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ০৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

ডিজিটাল দেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল সংযুক্তি খাতের অর্জন

মোস্তাফা জব্বার

দুই ॥

বিটিসিএলের আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। টেলিকম সেবা আধুনিকায়নে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এমওটিএন প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ হলে টেলিফোন সেবায় দেশে নতুন যুগের সূচনা হবে। গ্রাহক সাধারণ টেলিফোন থেকে কথা বলার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা পাবে। টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় GPON (Gigabit Passive optical Network) FTTx (Fiber to the Ofiice/home/building) System ) (Triple Play (Voice, Data and Video) সেবা পাওয়া যাবে।

সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ বহনের জন্য ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে বিটিসিএল ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেডের (প্রটেকশন) অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যমান ৪০ জিবিপিএস ক্ষমতার বর্তমান অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন লিংককে ২৪০ জিবিপিএস ক্ষমতায় রূপান্তর করা হয়েছে।

ডাক বিভাগ কর্তৃক মোবাইল ফিন্যান্স সার্ভিস নগদ এবং ডিজিটাল ডাক টাকা চালু করা হয়েছে। ডাক সেবাকে ডিজিটাল ডাক সেবায় রূপান্তরের মাধ্যমে ডাক বিভাগের অবকাঠামোকে কার্যকর ডিজিটাল কমার্সের উপযোগী করে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাইজেশনের প্রভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চিঠি আদান-প্রদানের যুগ শেষ হয়ে গেলেও পণ্য পরিবহনে ডাক বিভাগকে শ্রেষ্ঠতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি পুরো ডাক ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করছি আমরা ডাকঘরকে ডিজিটাইজেশনের জন্য ডিজিটাল সার্ভিস ল্যাব করেছি। সেখান থেকে ডিজিটাল প্রক্রিয়া কিভাবে করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। হাওর ও দুর্গম দ্বীপ অঞ্চলে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসওএফের অর্থায়নে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অধীন হাওরসমূহে এবং মাতারবাড়ি, হাতিয়া, ভাসানটেক প্রভৃতি দ্বীপ অঞ্চলে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সপ্রসারণের লক্ষ্যে বিটিআরসির (সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল) এসওএফ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রকল্পটি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।

টেলিফোন শিল্প সংস্থা ডিজিটাল ডিভাইস নির্মাণের উপযোগী করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের তৈরি ল্যাপটপ ও কম্পিউটার রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিবান্ধব প্রদত্ত সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে নেপাল ও নাইজেরিয়ায় কম্পিউটার ও ল্যাপটপের বড় অংকের চালান রপ্তানি হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানির বিষয়টি পাইপ লাইনে রয়েছে।

টেলিটক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণ ও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল মহাসড়ক নির্মাণ প্রক্রিয়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই সম্পন্ন হবে- এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

ডিজিটাইজেশনের প্রসারের পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য এখন বড় একটি চ্যালেঞ্জ। সে সংকটও অতিক্রম করতে আমরা কাজ করছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ প্রণয়ণ ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এ আইনের আওতায় একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন করা হয়েছে। এ এজেন্সির মাধ্যমে ২২ হাজার পর্ন সাইট ও ৬ হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। ফেসবুক-ইউটিউবে যে ধরনের পর্নো সংক্রান্ত বা নোংরা-অশ্লীল তথ্যউপাত্ত দেওয়া হয় সেগুলো অপসারণ করার ব্যবস্থা নিয়েছি।

টেলিযোগাযোগ সুবিধা বঞ্চিত হাওর, দ্বীপ ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি স্থাপনে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (এসওএফ) ১৫২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছেÑ এর মধ্যে আইসিটি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ৫০৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে টেলিযোগাযোগ সুবিধা বঞ্চিত এলাকাসমূহে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি স্থাপন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের অধীন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দ্বীপ এলাকায় নেটওয়ার্ক স্থাপনে ৪৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, টেলিটকের মাধ্যমে ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওর ও দ্বীপাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন, বিটিসিএলের মাধ্যমে ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওর-বাঁওড় ও প্রত্যন্ত ব্রডব্যান্ড ওয়াইফাই সম্প্রসারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এছাড়াও বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত দুর্গম ও উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন জনপদ ও স্থাপনায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনে ৬৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এবং সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটাল করণে ৮৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত ৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে আমরা আরও একটি গুরুত্ব্পূর্ণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের জন্য এবং অপারেটরসমূহের প্যাকেজ বিড়ম্বনা যৌক্তিকমাত্রায় নির্ধারণ করার মাধ্যমে গ্রাহক সুবিধা নিশ্চিত করতে একটি অ্যাপ আমরা চালু করেছি। গত ৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখ বিটিআরসি কর্তৃক মোবাইল ডেটা প্যাকেজ নির্দেশিকা এবং টেক্সটের মাধ্যমে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ও ডিসকভার অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়। ২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রা থেকে শুরু করে ডিজিটাল অবকাঠামো সম্প্রসারণে গত ১৩ বছরে গৃহীত যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে ডিজিটাল সেবা দেশের প্রতিটি অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের হাতে মুঠোয় পৌঁছে গেছে। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র (ইউআইএসসি) একযোগে উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে সারাদেশে ৪ হাজার ৫১৬টি (ইউআইএসসি) স্থাপন করা হয়। দেশের সকল ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্য হল, ইউনিয়ন পরিষদকে একটি তথ্য ও জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, যাতে এই সেবা প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের মধ্যে একটি তথ্য ও জ্ঞানভিত্তিক দেশ প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে। এসব কেন্দ্র থেকে ৩০০টি সরকারি সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনগণ গ্রহণ করতে পারছে। এর পাশাপাশি দেশের ৮ হাজার ৫০০ ডাকঘর থেকে ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ও টেলিযোগাযোগ খাতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার

বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড (সংশোধন) আইন-০০৯, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন-০০১ (সংশোধিত ২০১০), পোস্ট অফিস আইন-১৮৯৮ (সংশোধিত ২০১০), আন্তর্জাতিক দূরপাল্লার টেলিযোগযোগ সেবা নীতিমালা-২০১০, ব্রডব্যান্ড নীতিমালা-২০০৯, মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ বিধিমালা-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।

টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর গঠন (২০১৫), বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (২০১৭) প্রতিষ্ঠা এবং মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃক্ষ গঠন (২০১৩) করা হয়েছে।

বিটিসিএল কর্তৃক ১০০০টি ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প ডিসেম্বর ২০১৬ সালে সমাপ্ত হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪টি জেলায় ১১৪টি উপজেলা হতে ১১০৪টি ইউনিয়নে প্রায় ৮০০০ কি.মি. অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে।

উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, প্রকল্পের আওতায় ৬৪টি জেলার ৩৪৯টি উপজেলায় ৮৯০০ কি.মি. অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপিত হয়।

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সিমিইউ-৫ এর ল্যান্ডিং স্টেশন ও সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিমিউই-৫ এর ‘ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটায় স্থাপন করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে ১৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাবে। ৩টি দুর্গম পার্বত্য জেলার সব উপজেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা সম্ভব হয়েছে। দুর্গম পার্বত্য এলাকায় নেটওয়ার্ক স্থাপনে সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নেটওয়ার্ক তথা মোবাইল যোগাযোগ পার্বত্য অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

বিটিসিএলসহ ৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে International Terrestrial Cable (ITC) লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। জনগণের নিকট স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিটিসিএল, পিজিসিবি, রেলওয়ে এবং ২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে Nationwide Telecommunication Transmission Network (NTTN) লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে।

প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে বিদ্যমান দুইটি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিটিসিএল এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে Broadband Wireless Access (BWA) প্রদান করা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের জন্য প্রায় ১৮০০টি বিভিন্ন প্রকারের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে।

ওInternet Corporation for Assigned Names and Numbers (ICANN) কর্তৃক গত ৪ অক্টোবর ২০১৬ ডটবাংলা ডোমেইন বাংলাদেশের অনুকূলে চূড়ান্ত বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে ‘বাংলা’ ডোমেইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

ডটবাংলা ডোমেইন চালুর ফলে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বাংলা ভাষায় ইন্টারনেটে প্রবেশ ও ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া ‘বাংলা’ ডোমেইন সর্বস্তরের বাংলা ভাষা প্রচলনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ৫০০টি উপজেলা ও সাব পোস্টঅফিস এবং ৮,০০০ টি গ্রামীণ অবিভাগীয় শাখা ডাকঘরকে পোস্ট ডিজিটাল- সেন্টারে রূপান্তর করা হয়েছে। দ্রুত ও নিরাপদে ডাক সেবা প্রদানের লক্ষ্যকে সামনে রেখে মেইল ও ক্যাশ পরিবহনের জন্য ১১৮টি মেইল গাড়ি ডাক পরিবহন বহরে যুক্ত করা এবং এবং ৩৩টি গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়ছে। পোস্ট ডি-কমার্স সার্ভিস প্রদান কার্যক্রম ডাক অধিদপ্তরের নতুন সেবা কার্যক্রম হিসেবে চালু করা হয়েছে।

টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা

গ্রাহকগণের আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ না করেই এনআইডির তথ্যের সাথে গ্রাহকগণের তথ্য যাচাইপূর্বক পুনঃনিবন্ধন কার্যক্রম নির্ধারিত সময়সীমার (৩১ মে ২০১৬) মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এর ফলে মোবাইল ফোনে হুমকি, চাঁদাবাজি, জঙ্গি অর্থায়ন ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকা- বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের বিশটি উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণের এ অভিযাত্রায় তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নিরন্তর এ পথচলা আরো গতিময় হোক, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা হোক আমাদের সবার প্রত্যাশা।

[লেখক : ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী]

ঢাকা। ১৭ এপ্রিল, ২০২২।