মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি, থামাবে কে

আহসান হাবিব

রাজধানীসহ সারা দেশের সড়কে-মহাসড়কে দুই চাকার যান ‘মোটরসাইকেল’ নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ। মোটরসাইকেলের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রাফিক বিভাগের উদাসীনতা ও নিয়ম না মানা, এই প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পথচারীদের।

মোটর বাইকে চলাচলকারীদের জন্য সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বহু গুণ বেড়ে গেছে। এক তথ্যে জানা যায়, ২০২০ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৮০% মানুষের বয়স ২১ বছরের নিচে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে ১০ মাসে ১৬৫৩টি যানবাহন দুর্ঘটনায় ১৭৫৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনার ৫৪% মোটরসাইকেলের কারণে ঘটেছিল। এ বছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ২২২ জন প্রাণ হারান। সড়ক দুর্ঘটনার ফলে প্রতিদিন যত রোগী হাসপাতালে আসেন, তার সিংহভাগ মোটরসাইকেল চালক ও যাত্রী। এরা মাথা ও হাত-পায়ে থেঁতলে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। এদের শতকরা ৮০ ভাগ রোগীর হাত-পা কেটে ফেলতে হয়। এরা পঙ্গু হয়ে জীবন কাটাতে বাধ্য হন। এর ফলে তাদের ও তাদের পরিবারে নেমে আসে এক করুণ অধ্যায়।

নগরীতে এভাবেই এখন মূর্তিমান এক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল। প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। আর এতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে মোটরবাইক আরোহী কিংবা পথচারীদের। পুলিশ বলছে, ট্রাফিক আইন না মানা, বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালকসহ নানা কারণে ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। নগরীতে এখন রাস্তা পারাপার হতেও ভয় লাগে। কখন যে, মোটরবাইক এসে ধাক্কা দেবে টেরও পাওয়া যাবে না। এই মোটরসাইকেল এখন সাধারণ মানুষের জীবনে এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে কিশোর-তরুণরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে। তাদের অনেকের থাকে না কোনো লাইসেন্স। তারা অনেকেই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করে না এবং কেউ একবার করলেও সেটা নবায়ন করে না। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার কমাতে হলে ১৮ বছরের নিচে কাউকে অবৈধভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা যাবে না। গাড়ির গতি কমাতে সিসি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই দুর্ঘটনায় আঘাত বেশি, তাই অঙ্গহানি বেশি। এটা এখন বড় সংক্রামক রূপ নিয়েছে। সারা দেশ থেকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহতরা রাজধানীর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভিড় করেও রোগীর কাক্সিক্ষত সুরাহা করতে পারছে না।

এয়ারপোর্ট রোডের ফাঁকা রাস্তায় শো শো জব্দে চলে মোটরসাইকেল। সেই শব্দে লোকজন চোখ তুলে তাকানোর আগেই বাতাসে শিস দিয়ে ছুটে যায় কিছু কিছু মোটরসাইকেল। পথচারীরা ‘বাহ!’ বলার আগেই চোখের আড়ালেই চলে গেছে গাড়িটি। শৌখিন তরুণদের এই বাহনটি ষোলআনা আধুনিক। দেখতে পেশী বহুল, চলে দুরন্ত গতিতে।

দেখা গেছে, নগরীতে নিয়মমতো ট্রাফিক সিগন্যালে সব গাড়িই দাঁড়ায়। শুধু নিয়ম যেন নেই মোটরসাইকেলের। কখনো এগিয়ে চলে এঁকেবেঁকে ফুটপাত দিয়ে। কখনো উল্টো পথে, আবার কখনো বিপজ্জনক গতিতে মোটরসাইকেল আরোহীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরজুড়ে। শুধু ফুটপাতই নয়, রাজপথেও এখন আতঙ্ক এই দুই চাকার গাড়ি। মোটরসাইকেল আরোহীদের প্রতিদিনকার এই উৎপাতে সাধারণ পথচারীদের মধ্যে ক্ষোভের অন্ত নেই।

ট্রাফিক আইন কড়াকড়ি করেও লাভ হবে না যদি আমরা নিজেরা সচেতন না হই এবং অপরকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ না করি। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনার শীর্ষে থাকা মোটরসাইকেল সাবধানে চালাতে হবে। তা না হলে রাস্তায় নিজে সচেতন হয়ে চললেও অন্যেরা আপনার ঘাড়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এরূপ হঠাৎ বিপদ ও বিষাদের কালো ছায়া যেন আর বাড়তে না পারে সেজন্য রাস্তার সাক্ষাৎ মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই আশা করছি, সরকার মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি থামাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

[লেখক : সাংবাদিক]

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ০৬ বৈশাখ ১৪২৮ ১৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি, থামাবে কে

আহসান হাবিব

রাজধানীসহ সারা দেশের সড়কে-মহাসড়কে দুই চাকার যান ‘মোটরসাইকেল’ নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ। মোটরসাইকেলের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রাফিক বিভাগের উদাসীনতা ও নিয়ম না মানা, এই প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পথচারীদের।

মোটর বাইকে চলাচলকারীদের জন্য সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বহু গুণ বেড়ে গেছে। এক তথ্যে জানা যায়, ২০২০ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৮০% মানুষের বয়স ২১ বছরের নিচে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে ১০ মাসে ১৬৫৩টি যানবাহন দুর্ঘটনায় ১৭৫৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনার ৫৪% মোটরসাইকেলের কারণে ঘটেছিল। এ বছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ২২২ জন প্রাণ হারান। সড়ক দুর্ঘটনার ফলে প্রতিদিন যত রোগী হাসপাতালে আসেন, তার সিংহভাগ মোটরসাইকেল চালক ও যাত্রী। এরা মাথা ও হাত-পায়ে থেঁতলে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। এদের শতকরা ৮০ ভাগ রোগীর হাত-পা কেটে ফেলতে হয়। এরা পঙ্গু হয়ে জীবন কাটাতে বাধ্য হন। এর ফলে তাদের ও তাদের পরিবারে নেমে আসে এক করুণ অধ্যায়।

নগরীতে এভাবেই এখন মূর্তিমান এক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল। প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। আর এতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে মোটরবাইক আরোহী কিংবা পথচারীদের। পুলিশ বলছে, ট্রাফিক আইন না মানা, বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালকসহ নানা কারণে ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। নগরীতে এখন রাস্তা পারাপার হতেও ভয় লাগে। কখন যে, মোটরবাইক এসে ধাক্কা দেবে টেরও পাওয়া যাবে না। এই মোটরসাইকেল এখন সাধারণ মানুষের জীবনে এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে কিশোর-তরুণরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে। তাদের অনেকের থাকে না কোনো লাইসেন্স। তারা অনেকেই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করে না এবং কেউ একবার করলেও সেটা নবায়ন করে না। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার কমাতে হলে ১৮ বছরের নিচে কাউকে অবৈধভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা যাবে না। গাড়ির গতি কমাতে সিসি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই দুর্ঘটনায় আঘাত বেশি, তাই অঙ্গহানি বেশি। এটা এখন বড় সংক্রামক রূপ নিয়েছে। সারা দেশ থেকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহতরা রাজধানীর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভিড় করেও রোগীর কাক্সিক্ষত সুরাহা করতে পারছে না।

এয়ারপোর্ট রোডের ফাঁকা রাস্তায় শো শো জব্দে চলে মোটরসাইকেল। সেই শব্দে লোকজন চোখ তুলে তাকানোর আগেই বাতাসে শিস দিয়ে ছুটে যায় কিছু কিছু মোটরসাইকেল। পথচারীরা ‘বাহ!’ বলার আগেই চোখের আড়ালেই চলে গেছে গাড়িটি। শৌখিন তরুণদের এই বাহনটি ষোলআনা আধুনিক। দেখতে পেশী বহুল, চলে দুরন্ত গতিতে।

দেখা গেছে, নগরীতে নিয়মমতো ট্রাফিক সিগন্যালে সব গাড়িই দাঁড়ায়। শুধু নিয়ম যেন নেই মোটরসাইকেলের। কখনো এগিয়ে চলে এঁকেবেঁকে ফুটপাত দিয়ে। কখনো উল্টো পথে, আবার কখনো বিপজ্জনক গতিতে মোটরসাইকেল আরোহীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরজুড়ে। শুধু ফুটপাতই নয়, রাজপথেও এখন আতঙ্ক এই দুই চাকার গাড়ি। মোটরসাইকেল আরোহীদের প্রতিদিনকার এই উৎপাতে সাধারণ পথচারীদের মধ্যে ক্ষোভের অন্ত নেই।

ট্রাফিক আইন কড়াকড়ি করেও লাভ হবে না যদি আমরা নিজেরা সচেতন না হই এবং অপরকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ না করি। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনার শীর্ষে থাকা মোটরসাইকেল সাবধানে চালাতে হবে। তা না হলে রাস্তায় নিজে সচেতন হয়ে চললেও অন্যেরা আপনার ঘাড়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এরূপ হঠাৎ বিপদ ও বিষাদের কালো ছায়া যেন আর বাড়তে না পারে সেজন্য রাস্তার সাক্ষাৎ মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই আশা করছি, সরকার মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি থামাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

[লেখক : সাংবাদিক]