রাজধানীর নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক আহত হয়েছে। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ চলে ভোর রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। সেহরির সময় এই সংঘর্ষ বন্ধ হয়ে যায়। পরে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ফের শুরু হয়ে চলে দিনব্যাপী। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে গুরুতর আহত দুইজন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন। দিনব্যাপী সংঘর্ষের ফলে ওই এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
পরে ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্সের সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ কর্তৃপক্ষ ৫ মে পর্যন্ত হলও বন্ধ ঘোষণা করে। তবে শিক্ষার্থীরা তা মানতে নারাজ। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এর আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ঘটনাস্থলে যান। শিক্ষার্থীরা তাদের ওপরও চড়াও হন। গতকাল দুই
দফায় সংঘর্ষের পর সন্ধ্যার আগে উভয় পক্ষ শান্ত হলেও নিউমার্কেট এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিউমার্কেটের কয়েকটি দোকান খুললেও ক্রেতার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। ওই এলাকা দিয়ে সন্ধ্যার পর যান চলাচল শুরু হয়।
পরে পুলিশের টিয়ারগ্যাসে টিকতে না পেরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ঢুকে পড়েন। রাত প্রায় আড়াইটার দিকে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর এটিএমমইনুল হোসেন এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন। হ্যান্ড মাইকে অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষক রাত ৩টার দিকে নিউমার্কেট ৪নং গেটে থাকা পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষকরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নিতে বলেন এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেন। তখন পুলিশ সাঁজোয়া যান কিছুটা সরিয়ে নেন এবং তারাও কিছুটা সরে যান। সেখানে দীর্ঘক্ষণ সেøাগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ক্যাম্পাসের ভেতরে পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারগ্যাসের অসংখ্য খোসা এনে সংবাদকর্মীদের দেখান। রাবার বুলেটে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ায় তারা আরও ফুঁসে উঠেন। পরে সেখান ৩০ মিনিটের মতো সেøাগান দিয়ে সেহরি খেতে চলে যান শিক্ষার্থীরা। তখন রাত সাড়ে ৩টা।
ঘটনাস্থলে রাত সাড়ে ৩টায় পুলিশের রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী নিউমার্কেটে খেতে আসলে যেকোন কারণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঝামেলা হয়। বিষয়টি ক্যাম্পাসে জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা উত্তপ্ত হয় এবং শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে পুলিশ সদস্য, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের কয়েকজন আহত হন। পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্যধরে ঘটনাটি মোকাবিলা করে। এক প্রশ্নে ডিসি বলেন, পুলিশ ক্যাম্পাসে টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেনি। শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের কারণে কোন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে থাকলে সেটি খোঁজ নেয়া হবে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও রাতে জানিয়েছেন তিনি।
রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা কলেজ প্রশাসন কলেজের ফেইসবুক পেইজে মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স-মাস্টার্সের ক্লাস ও অনার্স-মাস্টার্সের পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। গতকাল সকালে আবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা ছাত্রদের ক্লাস বন্ধের বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপসহ বিভিন্নভাবে জানিয়ে দেন। গত সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে সংঘর্ষ বন্ধ হওয়ার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকাররা মার্কেটে আসেন। তখন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এ সময় আতর্কিত সংঘর্ষ বেঁধে যায়। তখনও ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলেননি। দেখা যায়, সকালের দিকে হকার ও কর্মচারীরা রোগীবাহী দুটি অ্যাম্বুলেন্সে ভাঙচুর করেন। রিকশাযোগে যাত্রী যাওয়ার সময় তাদের পথ আটকান।
এক যাত্রী তার পেটের অপারেশনের দাগ দেখিয়ে কর্মচারীদের রোষানল থেকে মুক্তি পান। প্রায় ১১টার দিকে নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে লাইভ চলাকালীন দীপ্ত টিভির রিপোর্টার আসিফ সুমিতকে এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকে হকার ও কর্মচারীরা। এ সময় তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে আরও কয়েকজন সংবাদকর্মী ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের হামলার শিকার হন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা গত সোমবার রাতের মতো গতকাল সকালেও ক্যাম্পাসের ১০ তলা ভবনের উপরে উঠে ব্যবসায়ী, হকার ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। নূর জাহান মার্কেটের কয়েকজন কর্মচারী দুই শিক্ষার্থীকে ব্যাপক মারধর করেন। কিছুক্ষণ পর আবার শিক্ষার্থীরা তিনজন কর্মচারীকে ধরে ক্যাম্পাসে নিয়ে মারধর করে। এর মধ্যে দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মীরা।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে নূরজাহান মার্কেটের নিচ তলায় আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। পরে পুলিশের সাঁজোয়া যান সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ক্যাম্পাসে ও ছাদে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতর ঢুকে যান। অন্যদিকে ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকাররা পুলিশের সঙ্গে সেøাগান দিয়ে ঢাকা কলেজের মেইন গেটে গিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। কিছুক্ষণ ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে ব্যবসায়ীদের ধাওয়া দেন। ব্যবসায়ীরা নীলক্ষেতের দিকে পিছু হঠেন। আবার কিছুক্ষণ পর পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া যায়। এভাবে চলতে থাকে বেলা ৩টা পর্যন্ত।
গতকাল সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ থামাতে বিকেল সাড়ে ৩টায় ঘটনাস্থলে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকেই শান্ত থাকতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি এবং উভয় পক্ষকেই শান্ত হওয়ার জন্য বলেছি। সার্বিকভাবে আমরা চাই কোন ধরনের সংঘাত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেন তৈরি না হয়। যারা আহত হয়েছেন তাদের সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর দোকান মালিক সমিতি ও ছাত্র প্রতিনিধি যারা আছেন সবাই একসঙ্গে বসে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয়টি প্রশাসনের ব্যাপার। আমরা এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সারাদিনে অন্তত ১১ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সাংবাদিকেরা বলছেন, সংঘর্ষে জড়ানো দু’পক্ষের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আরচণেরও শিকার হয়েছেন তারা অনেকে। বেলা আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে নূরজাহান মার্কেটের আগুন নেভায়। তবে এর আগেই পুড়ে যায় কয়েকটি দোকান। ঢাকা কলেজের সামনে, নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে কয়েক জায়গায় ছোট ছোট টেবিল, চৌকি, কাঠ, বাঁশ ও ফুটপাতে থাকা হকারদের প্লাস্টিকের কাগজসহ মালামালে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সংঘর্ষের ফলে নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা, নূরজাহান, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নিউমার্কেট, রাফীন প্লাজা, নীলক্ষেত বইয়ের দোকানসহ প্রায় নিউমার্কেট এলাকায় ২০-২২টি মার্কেট বন্ধ ছিল। এতে কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা বন্ধ ছিল ব্যবসায়ীদের।
জানতে চাইলে ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন আহমেদ জানান, দুই দোকানের দ্বন্দ্বে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে আমরাও শুনেছি। তবে এখনও আমরা নিশ্চিত নই, কিভাবে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। আমরা সিসি ক্যামেরা দেখে ঘটনার সূত্রপাত জানার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের হামলায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং কতজন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন, সেটিও জানা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, সকাল থেকে আমরা মার্কেটই খুলতে পারিনি। তাই এসবও জানতে পারিনি। পুরো নিউমার্কেট এলাকায় ২০-২২টি মার্কেট রয়েছে। সংঘর্ষের কারণে সবগুলো মার্কেট বন্ধ ছিল। এতে কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা হয়নি।
দায়িত্ব পালনকালে আহত ১১ সাংবাদিক
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের চলমান সংঘর্ষে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ১১ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আহত সাংবাদিকেরা বলছেন, সংঘর্ষে জড়ানো দু’পক্ষের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আরচণেরও শিকার হয়েছেন তারা অনেকে। হামলার শিকার সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন আজকের পত্রিকার রিপোর্টার আল আমিন রাজু, ডেইলি স্টারের ফটোগ্রাফার প্রবীর দাস, ঢাকা পোস্টের সিনিয়র রিপোর্টার জসীম উদ্দীন মাহি, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার ইকলাচুর রহমান, দীপ্ত টিভির রিপোর্টার আসিফ সুমিত, এসএ টিভির রিপোর্টার তুহিন, ক্যামেরাপারসন কবির হোসেন, আরটিভির ক্যামেরা পারসন সুমন দে, মাই টিভির রিপোর্টার ড্যানি, জাগো নিউজের রিপোর্টার তৌহিদুজ্জামান তন্ময় ও মানবজমিনের ফটো সাংবাদিক জীবন। এর মধ্যে দৈনিক আজকের পত্রিকার রিপোর্টার আল আমিন রাজু ও ডেইলি স্টারের ফটোগ্রাফার প্রবীর দাসকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়েছে হেলমেটধারী দোকান কর্মচারীরা।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অবরুদ্ধ
সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজ প্রশাসনের দুর্বলতাকে দায়ী করছে। এই অভিযোগ এনে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর এটিএম মইনুল হোসেনকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, অদক্ষ প্রিন্সিপাল মানি না মানবো না’সহ নানা স্লোাগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুলিশি হামলায় প্রশাসন এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
সংঘর্ষ জিইয়ে রাখার অভিযোগ এডিসি এহসানুলের বিরুদ্ধে
গত সোমবার রাতে যখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, তখন পুলিশ সদস্যদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন পুলিশের রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনের এডিসি এহসানুল ফেরদৌস। পরে অবশ্যই রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদ হোসেন ঘটনাস্থলে আসেন। তবে এর আগে সংঘর্ষে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী, হকার ও কর্মচারীদের উস্কে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এডিসি এহসানুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এডিসি এহসানুল ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা যখন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, তখন পুলিশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থেকেও কিছু বলেনি। এডিসি এহসানুল তখন নেতৃত্ব দিয়েছেন। গতকাল বেলা দেড়টার দিকেও এডিসি ৩০-৩৫ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে, তখনও তার সঙ্গে ব্যবসায়ীরা এসে ক্যাম্পাসে ইটপাটকেল, লোহার রড ছুড়ে সড়কের পাশের ভবনের কাঁচ ভেঙে ফেলে। তখন এডিসিকে ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিতে দেখা গেছে।
দায়ীদের আইনের মুখোমুখি করা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংঘর্ষের ঘটনায় মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, একটা ছোটখাট ঘটনা নিয়ে তর্কাতর্কি-মারামারির পর্যায়ে চলে আসছে। আমরা দেখছি, সহিংসতা হয়েছে। ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি দেখছি, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে এগুলো লক্ষ্য করছেন এবং ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমরা শুনলাম ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়িতে অনেকেই আহত হয়েছেন। সাংবাদিক আহত হওয়ার কথাও শুনেছি। যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
এ সময় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, টেকনিক্যাল কারণে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশ সফট আচরণ করছে। সাধারণভাবে গুলি করে শক্তি প্রয়োগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা বুদ্ধির কাজ না। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ছাত্রদের মোকাবিলা করার সময় আমাদের বেশকিছু সাবধানতা অবলম্বন করা লাগে। আমরা ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে মার্কেটে ঢোকানোর চেষ্টা করছি। আইজিপিও কথা বলেছেন ডিসির সঙ্গে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো একটা পক্ষকে নিবৃত্ত করা। এখানে শুধু নিউমার্কেট না, চারপাশের সব মার্কেটের লোকজন বা শ্রমিকরা নেমে পড়েছেন, যেখান থেকেই খবর পাচ্ছি সেখানেই পুলিশ পাঠাচ্ছি। দুই পক্ষের দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন,পুলিশ ইন করলে ত্রিমুখী সংঘর্ষটা শুরু হবে। যেহেতু শুরু থেকেই পুলিশ মাঝে অবস্থান করতে পারেনি তাই টেকনিক্যাল কারণে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করছে। পুরোনো অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন,যতই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হোক, শিক্ষার্থীরা মার্কেটে ঢুকবে না, আর ব্যবসায়ীরাও কলেজের ভেতরে যাবে না।
ঢাকা কলেজের সামনে শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন তৎপরতা ছিল না, ফলে দিনভর সংঘর্ষ চলে -সোহরাব আলম
আরও খবরবুধবার, ২০ এপ্রিল ২০২২ , ০৭ বৈশাখ ১৪২৮ ১৮ রমাদ্বান ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ঢাকা কলেজের সামনে শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন তৎপরতা ছিল না, ফলে দিনভর সংঘর্ষ চলে -সোহরাব আলম
রাজধানীর নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক আহত হয়েছে। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ চলে ভোর রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। সেহরির সময় এই সংঘর্ষ বন্ধ হয়ে যায়। পরে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ফের শুরু হয়ে চলে দিনব্যাপী। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে গুরুতর আহত দুইজন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন। দিনব্যাপী সংঘর্ষের ফলে ওই এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
পরে ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্সের সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ কর্তৃপক্ষ ৫ মে পর্যন্ত হলও বন্ধ ঘোষণা করে। তবে শিক্ষার্থীরা তা মানতে নারাজ। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এর আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ঘটনাস্থলে যান। শিক্ষার্থীরা তাদের ওপরও চড়াও হন। গতকাল দুই
দফায় সংঘর্ষের পর সন্ধ্যার আগে উভয় পক্ষ শান্ত হলেও নিউমার্কেট এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিউমার্কেটের কয়েকটি দোকান খুললেও ক্রেতার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। ওই এলাকা দিয়ে সন্ধ্যার পর যান চলাচল শুরু হয়।
পরে পুলিশের টিয়ারগ্যাসে টিকতে না পেরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ঢুকে পড়েন। রাত প্রায় আড়াইটার দিকে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর এটিএমমইনুল হোসেন এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন। হ্যান্ড মাইকে অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষক রাত ৩টার দিকে নিউমার্কেট ৪নং গেটে থাকা পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষকরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নিতে বলেন এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেন। তখন পুলিশ সাঁজোয়া যান কিছুটা সরিয়ে নেন এবং তারাও কিছুটা সরে যান। সেখানে দীর্ঘক্ষণ সেøাগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ক্যাম্পাসের ভেতরে পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারগ্যাসের অসংখ্য খোসা এনে সংবাদকর্মীদের দেখান। রাবার বুলেটে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ায় তারা আরও ফুঁসে উঠেন। পরে সেখান ৩০ মিনিটের মতো সেøাগান দিয়ে সেহরি খেতে চলে যান শিক্ষার্থীরা। তখন রাত সাড়ে ৩টা।
ঘটনাস্থলে রাত সাড়ে ৩টায় পুলিশের রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী নিউমার্কেটে খেতে আসলে যেকোন কারণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঝামেলা হয়। বিষয়টি ক্যাম্পাসে জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা উত্তপ্ত হয় এবং শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে পুলিশ সদস্য, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের কয়েকজন আহত হন। পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্যধরে ঘটনাটি মোকাবিলা করে। এক প্রশ্নে ডিসি বলেন, পুলিশ ক্যাম্পাসে টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেনি। শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের কারণে কোন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে থাকলে সেটি খোঁজ নেয়া হবে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও রাতে জানিয়েছেন তিনি।
রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা কলেজ প্রশাসন কলেজের ফেইসবুক পেইজে মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স-মাস্টার্সের ক্লাস ও অনার্স-মাস্টার্সের পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। গতকাল সকালে আবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা ছাত্রদের ক্লাস বন্ধের বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপসহ বিভিন্নভাবে জানিয়ে দেন। গত সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে সংঘর্ষ বন্ধ হওয়ার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকাররা মার্কেটে আসেন। তখন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এ সময় আতর্কিত সংঘর্ষ বেঁধে যায়। তখনও ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলেননি। দেখা যায়, সকালের দিকে হকার ও কর্মচারীরা রোগীবাহী দুটি অ্যাম্বুলেন্সে ভাঙচুর করেন। রিকশাযোগে যাত্রী যাওয়ার সময় তাদের পথ আটকান।
এক যাত্রী তার পেটের অপারেশনের দাগ দেখিয়ে কর্মচারীদের রোষানল থেকে মুক্তি পান। প্রায় ১১টার দিকে নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে লাইভ চলাকালীন দীপ্ত টিভির রিপোর্টার আসিফ সুমিতকে এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকে হকার ও কর্মচারীরা। এ সময় তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে আরও কয়েকজন সংবাদকর্মী ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের হামলার শিকার হন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা গত সোমবার রাতের মতো গতকাল সকালেও ক্যাম্পাসের ১০ তলা ভবনের উপরে উঠে ব্যবসায়ী, হকার ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। নূর জাহান মার্কেটের কয়েকজন কর্মচারী দুই শিক্ষার্থীকে ব্যাপক মারধর করেন। কিছুক্ষণ পর আবার শিক্ষার্থীরা তিনজন কর্মচারীকে ধরে ক্যাম্পাসে নিয়ে মারধর করে। এর মধ্যে দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মীরা।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে নূরজাহান মার্কেটের নিচ তলায় আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। পরে পুলিশের সাঁজোয়া যান সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ক্যাম্পাসে ও ছাদে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতর ঢুকে যান। অন্যদিকে ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকাররা পুলিশের সঙ্গে সেøাগান দিয়ে ঢাকা কলেজের মেইন গেটে গিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। কিছুক্ষণ ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে ব্যবসায়ীদের ধাওয়া দেন। ব্যবসায়ীরা নীলক্ষেতের দিকে পিছু হঠেন। আবার কিছুক্ষণ পর পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া যায়। এভাবে চলতে থাকে বেলা ৩টা পর্যন্ত।
গতকাল সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ থামাতে বিকেল সাড়ে ৩টায় ঘটনাস্থলে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকেই শান্ত থাকতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি এবং উভয় পক্ষকেই শান্ত হওয়ার জন্য বলেছি। সার্বিকভাবে আমরা চাই কোন ধরনের সংঘাত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেন তৈরি না হয়। যারা আহত হয়েছেন তাদের সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর দোকান মালিক সমিতি ও ছাত্র প্রতিনিধি যারা আছেন সবাই একসঙ্গে বসে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয়টি প্রশাসনের ব্যাপার। আমরা এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সারাদিনে অন্তত ১১ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সাংবাদিকেরা বলছেন, সংঘর্ষে জড়ানো দু’পক্ষের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আরচণেরও শিকার হয়েছেন তারা অনেকে। বেলা আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে নূরজাহান মার্কেটের আগুন নেভায়। তবে এর আগেই পুড়ে যায় কয়েকটি দোকান। ঢাকা কলেজের সামনে, নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে কয়েক জায়গায় ছোট ছোট টেবিল, চৌকি, কাঠ, বাঁশ ও ফুটপাতে থাকা হকারদের প্লাস্টিকের কাগজসহ মালামালে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সংঘর্ষের ফলে নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা, নূরজাহান, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নিউমার্কেট, রাফীন প্লাজা, নীলক্ষেত বইয়ের দোকানসহ প্রায় নিউমার্কেট এলাকায় ২০-২২টি মার্কেট বন্ধ ছিল। এতে কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা বন্ধ ছিল ব্যবসায়ীদের।
জানতে চাইলে ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন আহমেদ জানান, দুই দোকানের দ্বন্দ্বে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে আমরাও শুনেছি। তবে এখনও আমরা নিশ্চিত নই, কিভাবে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। আমরা সিসি ক্যামেরা দেখে ঘটনার সূত্রপাত জানার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের হামলায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং কতজন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন, সেটিও জানা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, সকাল থেকে আমরা মার্কেটই খুলতে পারিনি। তাই এসবও জানতে পারিনি। পুরো নিউমার্কেট এলাকায় ২০-২২টি মার্কেট রয়েছে। সংঘর্ষের কারণে সবগুলো মার্কেট বন্ধ ছিল। এতে কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা হয়নি।
দায়িত্ব পালনকালে আহত ১১ সাংবাদিক
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের চলমান সংঘর্ষে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ১১ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আহত সাংবাদিকেরা বলছেন, সংঘর্ষে জড়ানো দু’পক্ষের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আরচণেরও শিকার হয়েছেন তারা অনেকে। হামলার শিকার সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন আজকের পত্রিকার রিপোর্টার আল আমিন রাজু, ডেইলি স্টারের ফটোগ্রাফার প্রবীর দাস, ঢাকা পোস্টের সিনিয়র রিপোর্টার জসীম উদ্দীন মাহি, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার ইকলাচুর রহমান, দীপ্ত টিভির রিপোর্টার আসিফ সুমিত, এসএ টিভির রিপোর্টার তুহিন, ক্যামেরাপারসন কবির হোসেন, আরটিভির ক্যামেরা পারসন সুমন দে, মাই টিভির রিপোর্টার ড্যানি, জাগো নিউজের রিপোর্টার তৌহিদুজ্জামান তন্ময় ও মানবজমিনের ফটো সাংবাদিক জীবন। এর মধ্যে দৈনিক আজকের পত্রিকার রিপোর্টার আল আমিন রাজু ও ডেইলি স্টারের ফটোগ্রাফার প্রবীর দাসকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়েছে হেলমেটধারী দোকান কর্মচারীরা।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অবরুদ্ধ
সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজ প্রশাসনের দুর্বলতাকে দায়ী করছে। এই অভিযোগ এনে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর এটিএম মইনুল হোসেনকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, অদক্ষ প্রিন্সিপাল মানি না মানবো না’সহ নানা স্লোাগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুলিশি হামলায় প্রশাসন এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
সংঘর্ষ জিইয়ে রাখার অভিযোগ এডিসি এহসানুলের বিরুদ্ধে
গত সোমবার রাতে যখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, তখন পুলিশ সদস্যদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন পুলিশের রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনের এডিসি এহসানুল ফেরদৌস। পরে অবশ্যই রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদ হোসেন ঘটনাস্থলে আসেন। তবে এর আগে সংঘর্ষে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী, হকার ও কর্মচারীদের উস্কে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এডিসি এহসানুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এডিসি এহসানুল ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা যখন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, তখন পুলিশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থেকেও কিছু বলেনি। এডিসি এহসানুল তখন নেতৃত্ব দিয়েছেন। গতকাল বেলা দেড়টার দিকেও এডিসি ৩০-৩৫ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে, তখনও তার সঙ্গে ব্যবসায়ীরা এসে ক্যাম্পাসে ইটপাটকেল, লোহার রড ছুড়ে সড়কের পাশের ভবনের কাঁচ ভেঙে ফেলে। তখন এডিসিকে ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিতে দেখা গেছে।
দায়ীদের আইনের মুখোমুখি করা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংঘর্ষের ঘটনায় মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, একটা ছোটখাট ঘটনা নিয়ে তর্কাতর্কি-মারামারির পর্যায়ে চলে আসছে। আমরা দেখছি, সহিংসতা হয়েছে। ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি দেখছি, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে এগুলো লক্ষ্য করছেন এবং ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমরা শুনলাম ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়িতে অনেকেই আহত হয়েছেন। সাংবাদিক আহত হওয়ার কথাও শুনেছি। যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
এ সময় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, টেকনিক্যাল কারণে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশ সফট আচরণ করছে। সাধারণভাবে গুলি করে শক্তি প্রয়োগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা বুদ্ধির কাজ না। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ছাত্রদের মোকাবিলা করার সময় আমাদের বেশকিছু সাবধানতা অবলম্বন করা লাগে। আমরা ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে মার্কেটে ঢোকানোর চেষ্টা করছি। আইজিপিও কথা বলেছেন ডিসির সঙ্গে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো একটা পক্ষকে নিবৃত্ত করা। এখানে শুধু নিউমার্কেট না, চারপাশের সব মার্কেটের লোকজন বা শ্রমিকরা নেমে পড়েছেন, যেখান থেকেই খবর পাচ্ছি সেখানেই পুলিশ পাঠাচ্ছি। দুই পক্ষের দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন,পুলিশ ইন করলে ত্রিমুখী সংঘর্ষটা শুরু হবে। যেহেতু শুরু থেকেই পুলিশ মাঝে অবস্থান করতে পারেনি তাই টেকনিক্যাল কারণে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করছে। পুরোনো অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন,যতই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হোক, শিক্ষার্থীরা মার্কেটে ঢুকবে না, আর ব্যবসায়ীরাও কলেজের ভেতরে যাবে না।