সংঘর্ষের নেপথ্যে

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত হয় ব্যবসায়ীদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই। অনেক ব্যবসায়ী শিক্ষার্থীদের খাবারের বিল না দেয়ার বিষয়টি সামনে আনলেও ইফতার সামগ্রী বিক্রির জন্য টেবিল বসানোর জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় একই মালিকের দুই ফাস্টফুড দোকানের মধ্যে। তারাই প্রভাব খাটাতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বেশকিছু সদস্যকে ডেকে আনে। তারা ব্যবসায়ীদের ওপর চড়াও হলে ব্যবসায়ীরাও তাদের মারধর করে। এরপর ওই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গিয়ে সত্য ঘটনা আড়াল করে বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করলে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে নিউমার্কেটের আশপাশের মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একাধিক ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই ডান পাশের ২য় দোকানটি ওয়েলকাম ফাস্টফুড এবং সরু গলির বিপরীত পাশেই ক্যাপিটাল ফাস্টফুড। এই দুই দোকানের মালিক নিউমার্কেট থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন সরদার। তার আপন ভাই শহিদুল ক্যাপিটাল ফাস্টফুড ও চাচাতো ভাই রফিক ওয়েলকাম ফাস্টফুড পরিচালনা করেন। প্রতিদিন ইফতারের আগে প্রতিটি ফাস্টফুডের দোকানের সামনে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে ইফতার বিক্রি করা হয়। মূলত এই টেবিল বসানোর জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। শুক্রবার থেকে চলে আসা দ্বন্দ্ব সোমবার সন্ধ্যার পরপর প্রকাশ পায়।

সোমবার সন্ধ্যায় ইফতারির টেবিল বসানো নিয়ে ক্যাপিটাল ফাস্টফুড ও ওয়েলকাম ফাস্টফুডের স্টাফদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। পরে ইফতারির পর ওয়েলকাম ফাস্টফুডের স্টাফরা প্রভাব খাটাতে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের কয়েকজনকে ডাকে। একজন

ছাত্রলীগ নেতা ৮-১০ জনকে নিয়ে নিউমার্কেটে প্রবেশ করেই আতর্কিতভাবে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মচারীদের মারধর করতে থাকেন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দোকানে অকারণে হামলা চালিয়েছে ভেবে আশপাশের ব্যবসায়ীরা ওই শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। ব্যবসায়ীদের কাছে মারধরের শিকার হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করে ওই শিক্ষার্থীরা। পরে ঢাকা কলেজের ১০০-১৫০ শিক্ষার্থী নিউমার্কেটে হামলা চালায়। পাল্টা হামলা চালায় ব্যবসায়ীরাও। দুই পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে আশপাশের সব মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতেই থাকে।

ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের আশপাশের দোকানদাররাও ওই দুই দোকানে ঝামেলা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে ফাস্টফুড দুটির সংশ্লিষ্ট কাউকেই দোকানে পাওয়া যায়নি। অনেকে অভিযোগ করেছেন, ক্যাপিটাল ফাস্টফুডটি বিএনপি নেতা মকবুলের দখলে নেয়া। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একটি পক্ষকে নিয়মিত চাঁদা দেয়া হয়।

ঈদ উপলক্ষে গভীর রাত পর্যন্ত নিউমার্কেট এলাকায় বেচাকেনা চলে। তাই সোমবার রাত ১১টাও খোলা ছিল পুরো নিউমার্কেট। শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী নিউমার্কেটে হামলা চালায়। তখন ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ফুটপাতের হকাররা শিক্ষার্থীদের হামলা করে। দুই পক্ষের সংষর্ঘের খবরে রাতেই সেখানে পৌঁছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। এরপর সংঘর্ষ বাড়তে থাকলে আশপাশের থানা পুলিশ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও মিরপুর রিজার্ভ থেকে তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য সেখানে মোতায়েতন করা হয়। পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন, ধানমন্ডি জোনের এডিসি এহসানুল ফেরদৌস, নিউমার্কেট জোনের এসি শরীফুজ্জামান ফারুকের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। নেয়া হয় সাঁজোয়া যান, জলকামান। হকার, ব্যবসায়ীরা পুলিশের সঙ্গে একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করতে থাকে। পুলিশ সাঁজোয়া যান থেকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। রাতের এ ঘটনায় আরও ফুঁসে উঠে শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করতে থাকেন, পুলিশ ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিচ্ছে। অন্যদিকে তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ছে। শিক্ষার্থীরা এমন ক্ষোভে রাত ২টার দিকে ফের ক্যাম্পাস থেকে বের হয়। তখন আবারও সংঘর্ষ বাধে।

বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০২২ , ০৭ বৈশাখ ১৪২৮ ১৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

সংঘর্ষের নেপথ্যে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত হয় ব্যবসায়ীদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই। অনেক ব্যবসায়ী শিক্ষার্থীদের খাবারের বিল না দেয়ার বিষয়টি সামনে আনলেও ইফতার সামগ্রী বিক্রির জন্য টেবিল বসানোর জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় একই মালিকের দুই ফাস্টফুড দোকানের মধ্যে। তারাই প্রভাব খাটাতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বেশকিছু সদস্যকে ডেকে আনে। তারা ব্যবসায়ীদের ওপর চড়াও হলে ব্যবসায়ীরাও তাদের মারধর করে। এরপর ওই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গিয়ে সত্য ঘটনা আড়াল করে বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করলে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে নিউমার্কেটের আশপাশের মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একাধিক ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই ডান পাশের ২য় দোকানটি ওয়েলকাম ফাস্টফুড এবং সরু গলির বিপরীত পাশেই ক্যাপিটাল ফাস্টফুড। এই দুই দোকানের মালিক নিউমার্কেট থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন সরদার। তার আপন ভাই শহিদুল ক্যাপিটাল ফাস্টফুড ও চাচাতো ভাই রফিক ওয়েলকাম ফাস্টফুড পরিচালনা করেন। প্রতিদিন ইফতারের আগে প্রতিটি ফাস্টফুডের দোকানের সামনে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে ইফতার বিক্রি করা হয়। মূলত এই টেবিল বসানোর জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। শুক্রবার থেকে চলে আসা দ্বন্দ্ব সোমবার সন্ধ্যার পরপর প্রকাশ পায়।

সোমবার সন্ধ্যায় ইফতারির টেবিল বসানো নিয়ে ক্যাপিটাল ফাস্টফুড ও ওয়েলকাম ফাস্টফুডের স্টাফদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। পরে ইফতারির পর ওয়েলকাম ফাস্টফুডের স্টাফরা প্রভাব খাটাতে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের কয়েকজনকে ডাকে। একজন

ছাত্রলীগ নেতা ৮-১০ জনকে নিয়ে নিউমার্কেটে প্রবেশ করেই আতর্কিতভাবে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মচারীদের মারধর করতে থাকেন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দোকানে অকারণে হামলা চালিয়েছে ভেবে আশপাশের ব্যবসায়ীরা ওই শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। ব্যবসায়ীদের কাছে মারধরের শিকার হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করে ওই শিক্ষার্থীরা। পরে ঢাকা কলেজের ১০০-১৫০ শিক্ষার্থী নিউমার্কেটে হামলা চালায়। পাল্টা হামলা চালায় ব্যবসায়ীরাও। দুই পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে আশপাশের সব মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতেই থাকে।

ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের আশপাশের দোকানদাররাও ওই দুই দোকানে ঝামেলা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে ফাস্টফুড দুটির সংশ্লিষ্ট কাউকেই দোকানে পাওয়া যায়নি। অনেকে অভিযোগ করেছেন, ক্যাপিটাল ফাস্টফুডটি বিএনপি নেতা মকবুলের দখলে নেয়া। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একটি পক্ষকে নিয়মিত চাঁদা দেয়া হয়।

ঈদ উপলক্ষে গভীর রাত পর্যন্ত নিউমার্কেট এলাকায় বেচাকেনা চলে। তাই সোমবার রাত ১১টাও খোলা ছিল পুরো নিউমার্কেট। শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী নিউমার্কেটে হামলা চালায়। তখন ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ফুটপাতের হকাররা শিক্ষার্থীদের হামলা করে। দুই পক্ষের সংষর্ঘের খবরে রাতেই সেখানে পৌঁছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। এরপর সংঘর্ষ বাড়তে থাকলে আশপাশের থানা পুলিশ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও মিরপুর রিজার্ভ থেকে তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য সেখানে মোতায়েতন করা হয়। পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন, ধানমন্ডি জোনের এডিসি এহসানুল ফেরদৌস, নিউমার্কেট জোনের এসি শরীফুজ্জামান ফারুকের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। নেয়া হয় সাঁজোয়া যান, জলকামান। হকার, ব্যবসায়ীরা পুলিশের সঙ্গে একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করতে থাকে। পুলিশ সাঁজোয়া যান থেকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। রাতের এ ঘটনায় আরও ফুঁসে উঠে শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করতে থাকেন, পুলিশ ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিচ্ছে। অন্যদিকে তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ছে। শিক্ষার্থীরা এমন ক্ষোভে রাত ২টার দিকে ফের ক্যাম্পাস থেকে বের হয়। তখন আবারও সংঘর্ষ বাধে।