আধা পাকা ধান কাটছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকরা

দেশের বিভিন্ন জেলায় বাঁধ ভেঙে হাওরের শত শত হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এখনও বাঁধ ভাঙার ঝুঁকিতে রয়েছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান। আতঙ্কে আধা পাকা ও কাঁচা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ সামসুদ্দোহা সতর্ক করেছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

আধা পাকা ধান কাটছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা

সুনামগঞ্জ : জেলায় আধা পাকা ধান কাটছেন কৃষকরা। কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, গত সোমবার পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাওরে এ পর্যন্ত ৬২ হাজার ৩১৪ হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। গতকাল আরও ৮/১০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। সব মিলিয়ে শতকরা ৩৭ ভাগ ধান কর্তন হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ সামসুদ্দোহা দাবি করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এ পর্যন্ত ৫টি বাঁধ ঢলের পানিতে ভেঙে গেছে। তিনি আরও বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম থাকায় এবং ঢল না নামার কারণে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হত। পানি ভৈরবের দিকে নামছে না কোথাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সবগুলো বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ এখনও রয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী দাবি করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এ পর্যন্ত ৫টি বাঁধ ঢলের পানিতে ভেঙে গেছে। এগুলো হচ্ছে তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওর, দিরাই উপজেলার চাপতির হাওর, টাংনির হাওর, হুরা মন্দিরা হাওর ও ধর্ম পাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওর। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

দোয়ারাবাজার উপজেলার নাইন্দার হাওরসহ আশপাশের ফসল রক্ষাবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। কাউয়ারখালি বাঁধের কালভার্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। এলাকার লোকজন ও প্রশাসনের সহযোগিতায় মাটি, বাঁশ বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষার কাজ চলছে।

শনির হাওর পাড়ের বড় কৃষক পাভেল মিয়া জানান শনির হাওরের ধান পাকতে আরও অন্তত ৮/১০ দিন লাগবে। ২৮ জাতের ধান ইতোমধ্যেই কিছু কাটা হয়ে গেছে কিছু ধান শিলা বৃষ্টি ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওরের বর্ধিত গুরমার হাওরে বাঁধ ভাঙার ফলে পাটাবুকা, ভবানীপুর, সন্তোষ নুর, মানিকটিলা, রাম সিংহপুর, লামাগাও, নোয়াগাঁও বলাইকান্দি, গোলাবাড়ী, জয়পুর, গাঞজাইল, মোয়াজ্জেমপুরসহ ওই এলাকার কৃষকরা ফসল হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের বাসিন্দা মীর্জা আনিসুল ইসলাম লিটন বলেন, হুরা মন্দিরা হাওরের পাশের গ্রামের আরও কিছু ছোট ছোট হাওর বা কান্দায় চাপতি ও নলুয়ার হাওরের কান্দা সংলগ্ন হুরা মন্দিরার হাওরের বাঁধ ভেঙে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওর পাড়ের কৃষক লোকমান

হোসেন, জইন উদ্দিন ও মঙ্গল মিয়া জানান অনেক কষ্ট করে ও খরছ করে কিছু জমি চাষাবাদ করেন কিন্ত কিছু পানিতে কিছু গরম বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন নিজে খাব না মহাজনের ঋণ দেব ভেবে পাচ্ছি না। আশা ছিল সামনে ঈদ ছেলে মেয়েদের কাপড় চোপড় দেব ভালোভাবে ঈদ করব সব শেষ হয়ে গেছে।

নেত্রকোনার হাওরে কাঁচা ফসল কেটে ক্ষতির মুখে চাষিরা

নেত্রকোনা : ধনু নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত পানি বিপদসীমার ২৭ সেন্টমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো।

এরইমধ্যে কীর্তনখোলা বাঁধের বিভিন্ন অংশে আবারও নতুন করে ধস দেখা দিয়েছে। এছাড়া বাঁধগুলো প্রায় ছুঁই ছুঁই অবস্থায় রয়েছে অনেকাংশেই। যেকোন সময় ভেঙে কিংবা উপচে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। যদিও বাঁধ রক্ষায় সার্বক্ষণিক কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন। সেইসঙ্গে আধা কাঁচা পাকা ফসলই তাড়াহুড়ো করে ঘরে তুলছেন চাষিরা। এতে ব্যাপকভাবেই ক্ষতির মুখে পরেছেন খালিয়াজুরীর হাজার হাজার কৃষকেরা।

খালিয়াজুরী কীর্তনখোলা বাঁধের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে রাতদিন কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়া চর-হাইজদা, গোমাইলসহ বেশকয়েকটি বাঁধগুলো রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। এছাড়া রসুলপুর বাঁধের বিভিন্ন অংশেই পানি ছুঁই ছুঁই অবস্থায় রয়েছে। পানির চাপে যেকোন সময়ই বাঁধ ভেঙে কিংবা উপচে পানি প্রবেশ করতে পারে হাওরে।

এমন আশঙ্কায় গেল এক সপ্তাহ ধরেই ২৮ জাতের আধা পাকা ধান কাটলেও ২৯ ও হাইব্রিড জাতের কাঁচা ধান এখনো রয়েছে মাঠেই। খালিয়াজুরী সদর, মেন্দীপুর ও চাকুয়া ইউনিয়নের অসংখ্য কৃষকরা জানান, হাওরের পুরো ফসল ঘরে তুলতে এখনো ১৫ থেকে ২০ দিন সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে হাওরবাসীর।

গত কয়েকদিন আধা কাঁচা ফসল কেটে ফেলায় বাজারে দর অনেকটাই কমে গেছে। এতে কোনভাবেই পুষিয়ে উঠতে পারছেন না কৃষকরা।

ইটনায় ৬টি বাঁধ ভেঙে ডুবেছে ৬শ’ একর

কিশোরগঞ্জ : ধানের জেলা কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে কয়েকদিন ধরেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি ঢলে আগাম বন্যার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। জেলার নদী এবং হাওরগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু কিছু নিচু জমির ধান ডুবে গেছে। গত সোমবারের বৃষ্টিতে ইটনায় কৃষকদের তৈরি করা ৬টি বাঁধ ভেঙে প্রায় ৬শ’ একর জমি ডুবে গেছে।

বন্যার ভয়ে কৃষকরা আগাম জাতের ব্রিধান-২৮ জমির আধা পাকা ধানই কাটতে শুরু করেছিলেন। কৃষি বিভাগ জমির ধান ৮০ ভাগ পাকলেই কেটে ফেলার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানিয়েছেন, এবার জেলার ১৩ উপজেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৯৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে কেবল হাওরাঞ্চলেই আবাদ করা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর। চারটি উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী পুরোপুরি হাওর অধ্যুষিত হলেও আরও কয়েকটি উপজেলার কিছু অংশ হাওরের আওতায় পড়েছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় মোট জমির ২৪ ভাগ এবং হাওরাঞ্চলে মোট জমির ৩৮ ভাগ কাটা হয়ে গেছে।

তিনি জানান, কৃষকরা ধান কাটতে শুরু করেছেন। তবে এখনও পাহাড়ি ঢলের হুমকি রয়েছে।

তবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এখন হাওরে শ্রমিক সংকট রয়েছে। যে কারণে চড়া দামে শ্রমিক নিয়োগ করতে হচ্ছে।

গত সোমবার রাতে ইটনার মৃগা ইউনিয়নের কলাবিল বাঁধ, সিংরা বাঁধ, ছিমৎখালী বাঁধ, নরবিল বাঁধ, নরমোড়ার বাঁধ এবং অরুঙ্গা বাঁধ ভেঙে প্রায় ৬শ’ একর জমির ধান ডুবে গেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মৃগা ইউপি চেয়ারম্যান দারুল ইসলাম।

হবিগঞ্জে ডুবল শতাধিক হেক্টর জমির ফসল

হবিগঞ্জ : লাখাইয়ে সুতাং ও ধলেশ্বরী নদী পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ওই এলাকার অন্তত শতাধিক হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার কৃষক।

স্বজনগ্রামের কৃষক আনজব আলী বলেন, অনেক ধার-দেনা করে ২০ কানি জমিতে আটাশ ধান চাষ করেছি। জমি থেকে প্রায় পাঁচশ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলেও অসময়ে কেটে ফেলায় এখন এক থেকে দেড়শ মণ ধান পাওয়া যেতে পারে।

অন্য কৃষক কালা মিয়া বলেন, কানিপ্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলে এখন পাওয়া যাবে অর্ধেকেরও কম। তাছাড়া ধান কাঁচা কাটতে প্রতি কানিতে দিতে হচ্ছে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে। ফলে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

কৃষক রতম বৈষ্ণব বলেন, প্রতি বছর চলতি সময়ের চেয়ে দুই সপ্তাহ পর পানি আসে কিন্তু এবার আকস্মিকভাবে আগেই পানি চলে আসায় কয়েকশ’ কানি ধানি জমির ফসল হুমকির মুখে।

লাখাইয়ে সুতাং ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে হাওরে প্রবেশ করছে পানি। এতে দশকানিয়া, বারচর, ভোগার বিল, আঠারোদোনা হাওরের অন্তত শতাধিক হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম আরও শতাধিক হেক্টর জমি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সেই জমিগুলোও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০২২ , ০৭ বৈশাখ ১৪২৮ ১৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

আধা পাকা ধান কাটছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকরা

সংবাদ ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন জেলায় বাঁধ ভেঙে হাওরের শত শত হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এখনও বাঁধ ভাঙার ঝুঁকিতে রয়েছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান। আতঙ্কে আধা পাকা ও কাঁচা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ সামসুদ্দোহা সতর্ক করেছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

আধা পাকা ধান কাটছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা

সুনামগঞ্জ : জেলায় আধা পাকা ধান কাটছেন কৃষকরা। কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, গত সোমবার পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাওরে এ পর্যন্ত ৬২ হাজার ৩১৪ হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। গতকাল আরও ৮/১০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। সব মিলিয়ে শতকরা ৩৭ ভাগ ধান কর্তন হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ সামসুদ্দোহা দাবি করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এ পর্যন্ত ৫টি বাঁধ ঢলের পানিতে ভেঙে গেছে। তিনি আরও বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম থাকায় এবং ঢল না নামার কারণে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হত। পানি ভৈরবের দিকে নামছে না কোথাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সবগুলো বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ এখনও রয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী দাবি করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এ পর্যন্ত ৫টি বাঁধ ঢলের পানিতে ভেঙে গেছে। এগুলো হচ্ছে তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওর, দিরাই উপজেলার চাপতির হাওর, টাংনির হাওর, হুরা মন্দিরা হাওর ও ধর্ম পাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওর। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

দোয়ারাবাজার উপজেলার নাইন্দার হাওরসহ আশপাশের ফসল রক্ষাবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। কাউয়ারখালি বাঁধের কালভার্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। এলাকার লোকজন ও প্রশাসনের সহযোগিতায় মাটি, বাঁশ বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষার কাজ চলছে।

শনির হাওর পাড়ের বড় কৃষক পাভেল মিয়া জানান শনির হাওরের ধান পাকতে আরও অন্তত ৮/১০ দিন লাগবে। ২৮ জাতের ধান ইতোমধ্যেই কিছু কাটা হয়ে গেছে কিছু ধান শিলা বৃষ্টি ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওরের বর্ধিত গুরমার হাওরে বাঁধ ভাঙার ফলে পাটাবুকা, ভবানীপুর, সন্তোষ নুর, মানিকটিলা, রাম সিংহপুর, লামাগাও, নোয়াগাঁও বলাইকান্দি, গোলাবাড়ী, জয়পুর, গাঞজাইল, মোয়াজ্জেমপুরসহ ওই এলাকার কৃষকরা ফসল হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের বাসিন্দা মীর্জা আনিসুল ইসলাম লিটন বলেন, হুরা মন্দিরা হাওরের পাশের গ্রামের আরও কিছু ছোট ছোট হাওর বা কান্দায় চাপতি ও নলুয়ার হাওরের কান্দা সংলগ্ন হুরা মন্দিরার হাওরের বাঁধ ভেঙে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওর পাড়ের কৃষক লোকমান

হোসেন, জইন উদ্দিন ও মঙ্গল মিয়া জানান অনেক কষ্ট করে ও খরছ করে কিছু জমি চাষাবাদ করেন কিন্ত কিছু পানিতে কিছু গরম বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন নিজে খাব না মহাজনের ঋণ দেব ভেবে পাচ্ছি না। আশা ছিল সামনে ঈদ ছেলে মেয়েদের কাপড় চোপড় দেব ভালোভাবে ঈদ করব সব শেষ হয়ে গেছে।

নেত্রকোনার হাওরে কাঁচা ফসল কেটে ক্ষতির মুখে চাষিরা

নেত্রকোনা : ধনু নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত পানি বিপদসীমার ২৭ সেন্টমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো।

এরইমধ্যে কীর্তনখোলা বাঁধের বিভিন্ন অংশে আবারও নতুন করে ধস দেখা দিয়েছে। এছাড়া বাঁধগুলো প্রায় ছুঁই ছুঁই অবস্থায় রয়েছে অনেকাংশেই। যেকোন সময় ভেঙে কিংবা উপচে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। যদিও বাঁধ রক্ষায় সার্বক্ষণিক কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন। সেইসঙ্গে আধা কাঁচা পাকা ফসলই তাড়াহুড়ো করে ঘরে তুলছেন চাষিরা। এতে ব্যাপকভাবেই ক্ষতির মুখে পরেছেন খালিয়াজুরীর হাজার হাজার কৃষকেরা।

খালিয়াজুরী কীর্তনখোলা বাঁধের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে রাতদিন কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়া চর-হাইজদা, গোমাইলসহ বেশকয়েকটি বাঁধগুলো রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। এছাড়া রসুলপুর বাঁধের বিভিন্ন অংশেই পানি ছুঁই ছুঁই অবস্থায় রয়েছে। পানির চাপে যেকোন সময়ই বাঁধ ভেঙে কিংবা উপচে পানি প্রবেশ করতে পারে হাওরে।

এমন আশঙ্কায় গেল এক সপ্তাহ ধরেই ২৮ জাতের আধা পাকা ধান কাটলেও ২৯ ও হাইব্রিড জাতের কাঁচা ধান এখনো রয়েছে মাঠেই। খালিয়াজুরী সদর, মেন্দীপুর ও চাকুয়া ইউনিয়নের অসংখ্য কৃষকরা জানান, হাওরের পুরো ফসল ঘরে তুলতে এখনো ১৫ থেকে ২০ দিন সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে হাওরবাসীর।

গত কয়েকদিন আধা কাঁচা ফসল কেটে ফেলায় বাজারে দর অনেকটাই কমে গেছে। এতে কোনভাবেই পুষিয়ে উঠতে পারছেন না কৃষকরা।

ইটনায় ৬টি বাঁধ ভেঙে ডুবেছে ৬শ’ একর

কিশোরগঞ্জ : ধানের জেলা কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে কয়েকদিন ধরেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি ঢলে আগাম বন্যার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। জেলার নদী এবং হাওরগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু কিছু নিচু জমির ধান ডুবে গেছে। গত সোমবারের বৃষ্টিতে ইটনায় কৃষকদের তৈরি করা ৬টি বাঁধ ভেঙে প্রায় ৬শ’ একর জমি ডুবে গেছে।

বন্যার ভয়ে কৃষকরা আগাম জাতের ব্রিধান-২৮ জমির আধা পাকা ধানই কাটতে শুরু করেছিলেন। কৃষি বিভাগ জমির ধান ৮০ ভাগ পাকলেই কেটে ফেলার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানিয়েছেন, এবার জেলার ১৩ উপজেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৯৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে কেবল হাওরাঞ্চলেই আবাদ করা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর। চারটি উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী পুরোপুরি হাওর অধ্যুষিত হলেও আরও কয়েকটি উপজেলার কিছু অংশ হাওরের আওতায় পড়েছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় মোট জমির ২৪ ভাগ এবং হাওরাঞ্চলে মোট জমির ৩৮ ভাগ কাটা হয়ে গেছে।

তিনি জানান, কৃষকরা ধান কাটতে শুরু করেছেন। তবে এখনও পাহাড়ি ঢলের হুমকি রয়েছে।

তবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এখন হাওরে শ্রমিক সংকট রয়েছে। যে কারণে চড়া দামে শ্রমিক নিয়োগ করতে হচ্ছে।

গত সোমবার রাতে ইটনার মৃগা ইউনিয়নের কলাবিল বাঁধ, সিংরা বাঁধ, ছিমৎখালী বাঁধ, নরবিল বাঁধ, নরমোড়ার বাঁধ এবং অরুঙ্গা বাঁধ ভেঙে প্রায় ৬শ’ একর জমির ধান ডুবে গেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মৃগা ইউপি চেয়ারম্যান দারুল ইসলাম।

হবিগঞ্জে ডুবল শতাধিক হেক্টর জমির ফসল

হবিগঞ্জ : লাখাইয়ে সুতাং ও ধলেশ্বরী নদী পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ওই এলাকার অন্তত শতাধিক হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার কৃষক।

স্বজনগ্রামের কৃষক আনজব আলী বলেন, অনেক ধার-দেনা করে ২০ কানি জমিতে আটাশ ধান চাষ করেছি। জমি থেকে প্রায় পাঁচশ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলেও অসময়ে কেটে ফেলায় এখন এক থেকে দেড়শ মণ ধান পাওয়া যেতে পারে।

অন্য কৃষক কালা মিয়া বলেন, কানিপ্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলে এখন পাওয়া যাবে অর্ধেকেরও কম। তাছাড়া ধান কাঁচা কাটতে প্রতি কানিতে দিতে হচ্ছে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে। ফলে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

কৃষক রতম বৈষ্ণব বলেন, প্রতি বছর চলতি সময়ের চেয়ে দুই সপ্তাহ পর পানি আসে কিন্তু এবার আকস্মিকভাবে আগেই পানি চলে আসায় কয়েকশ’ কানি ধানি জমির ফসল হুমকির মুখে।

লাখাইয়ে সুতাং ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে হাওরে প্রবেশ করছে পানি। এতে দশকানিয়া, বারচর, ভোগার বিল, আঠারোদোনা হাওরের অন্তত শতাধিক হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম আরও শতাধিক হেক্টর জমি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সেই জমিগুলোও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।