প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে অপহরণকারী চক্রের খপ্পরে যাত্রী

নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়

প্রাইভেটকার অথবা মাইক্রোবাসে যাত্রীবেশে যেকোন ব্যক্তিকে টার্গেট করে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার টোপ দেয়। অনেকেই জরুরি বা দ্রুত পৌঁছার জন্য গাড়িতে উঠেন। গাড়িতে উঠার পর যাত্রীবেশে অন্যরা টার্গেট ব্যক্তিকে গাড়িতে আটকে নির্জন স্থান নিয়ে আটকে নির্যাতন শুরু করেন। এরপর পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করেন। এমন কৌশলে গত কয়েক বছরে ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে চক্রটি।

যাত্রাবাড়ী থানায় একটি অপহরণ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এ চক্রের সন্ধান পায় ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকারের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে চক্রের দলনেতাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গতকাল এ তথ্য জানিয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, নানা পন্থায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকার বিভিন্ন স্থান ও নরসিংদীর শিবপুর থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো আবদুল বাকের, সহযোগী ড্রাইভার মো. হিরু মোল্লা, মো. জাকির হোসেন, ব্যবসায়ী মো. নজরুল

ইসলাম এবং মো. নিজাম উদ্দিন।

যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি সকালে যাত্রাবাড়ীর বাদশা মিয়া রোডের মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে এক ব্যক্তি অপহৃত হয়। পরবর্তী সময়ে ওই ব্যক্তিকে বেধড়ক পিটিয়ে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যাচেষ্টা চালিয়ে ৫ লাখ টাকার জন্য তার বাসায় ফোন করতে বলে। এ অবস্থায় তার স্ত্রী প্রথমে বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে তাদের নির্যাতনে আরও ৫০ হাজার টাকা পাঠায়। অপহরণকারীরা ভিকটিমের কাছ থেকে এক লাখ টাকাসহ ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন এবং পকেটে থাকা ১৫০০ টাকা নিয়ে নেয়। বিকেল আনুমানিক ৪টায় তাকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার একটি নির্জন স্থানে ফেলে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ভিকটিম অনেক কষ্টে বাড়ি ফিরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরবর্তী সময়ে তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানায় একটি অপহরণ মামলা হয়। থানা পুলিশের তদন্তের পর তদন্তভার পরবর্তীতে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগকে দেয়া হয়। বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম দীর্ঘদিন তদন্ত করে তথ্যপ্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় চক্রটিকে শনাক্ত করে। পরবর্তী সময়ে সোমবার ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এ চক্রের চারজন ও নরসিংদীর শিবপুর থেকে চক্রের মূল হোতা আবদুল বারেককে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, ধারালো অস্ত্র, মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের মূল নেতা আবদুল খালেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নরসিংদীর শিবকপুর এলাকা থেকে।

যুগ্ম কমিশনার হারুনের দাবি গ্রেপ্তাতারকৃতরা অপরাধ সংঘটনের আগে ঢাকা মহানগরীর জনসমাগম স্থান বা আশপাশ এলাকায় প্রাইভেটকারে ১ থেকে ২টি সিট খালি রেখে অবস্থান নেয়। টার্গেট অফিসগামী যাত্রী। যেসব যাত্রী গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য পরিবহনে উঠতে ব্যর্থ হয় তাদের ডেকে যাত্রীর গন্তব্যস্থলের দিকে যাবে বলে গাড়িতে ওঠায়। এরপর টার্গেট ব্যক্তিকে গন্তব্যে পৌঁছে না দিয়ে নিজেদের পছন্দের বা সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে আটকে রাখে। পরে মুক্তিপণ আদায় করে। কখন কখনও গাড়িতে তুলেই অপহৃত ব্যক্তিকে শারীরিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের ভিডিও বা ছবি স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করে।

তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তাাকৃতরা এ পর্যন্ত ৫০০ এর বেশি ব্যক্তিকে অপহরণ করেছে বলে স্বীকার করেছে। পুলিশের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গেপ্তারকৃতদের মধ্যে আবদুল বারেকের নামে ৬টি ও গ্রেপ্তারকৃত বাকিদের নামে পৃথক পৃথক দুটি করে মামলা রয়েছে।’

এ ধরনের অপরাধ থেকে বাঁচতে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন ‘অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস কিংবা সিএনজিতে একসঙ্গে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। গাড়িতে ভ্রমণের আগে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর নোট রাখতে হবে। যেসব গাড়িতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট বিদ্যমান নেই সেসব গাড়ি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।’

রাইড শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই অ্যাপসভিত্তিক স্বনামধন্য কোম্পানির সেবা গ্রহণ করতে হবে অথবা হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব ব্যবহার করতে হবে। যেসব স্থানে অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা বিদ্যমান নেই সেসব স্থানে গণপরিবহন অর্থাৎ বাস, লেগুনা ইত্যাদি সেবা গ্রহণ করতে পরামর্শ দেন ডিবি কর্মকর্তা।

বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০২২ , ০৭ বৈশাখ ১৪২৮ ১৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে অপহরণকারী চক্রের খপ্পরে যাত্রী

নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রাইভেটকার অথবা মাইক্রোবাসে যাত্রীবেশে যেকোন ব্যক্তিকে টার্গেট করে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার টোপ দেয়। অনেকেই জরুরি বা দ্রুত পৌঁছার জন্য গাড়িতে উঠেন। গাড়িতে উঠার পর যাত্রীবেশে অন্যরা টার্গেট ব্যক্তিকে গাড়িতে আটকে নির্জন স্থান নিয়ে আটকে নির্যাতন শুরু করেন। এরপর পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করেন। এমন কৌশলে গত কয়েক বছরে ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে চক্রটি।

যাত্রাবাড়ী থানায় একটি অপহরণ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এ চক্রের সন্ধান পায় ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকারের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে চক্রের দলনেতাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গতকাল এ তথ্য জানিয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, নানা পন্থায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকার বিভিন্ন স্থান ও নরসিংদীর শিবপুর থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো আবদুল বাকের, সহযোগী ড্রাইভার মো. হিরু মোল্লা, মো. জাকির হোসেন, ব্যবসায়ী মো. নজরুল

ইসলাম এবং মো. নিজাম উদ্দিন।

যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি সকালে যাত্রাবাড়ীর বাদশা মিয়া রোডের মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে এক ব্যক্তি অপহৃত হয়। পরবর্তী সময়ে ওই ব্যক্তিকে বেধড়ক পিটিয়ে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যাচেষ্টা চালিয়ে ৫ লাখ টাকার জন্য তার বাসায় ফোন করতে বলে। এ অবস্থায় তার স্ত্রী প্রথমে বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে তাদের নির্যাতনে আরও ৫০ হাজার টাকা পাঠায়। অপহরণকারীরা ভিকটিমের কাছ থেকে এক লাখ টাকাসহ ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন এবং পকেটে থাকা ১৫০০ টাকা নিয়ে নেয়। বিকেল আনুমানিক ৪টায় তাকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার একটি নির্জন স্থানে ফেলে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ভিকটিম অনেক কষ্টে বাড়ি ফিরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরবর্তী সময়ে তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানায় একটি অপহরণ মামলা হয়। থানা পুলিশের তদন্তের পর তদন্তভার পরবর্তীতে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগকে দেয়া হয়। বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম দীর্ঘদিন তদন্ত করে তথ্যপ্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় চক্রটিকে শনাক্ত করে। পরবর্তী সময়ে সোমবার ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এ চক্রের চারজন ও নরসিংদীর শিবপুর থেকে চক্রের মূল হোতা আবদুল বারেককে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, ধারালো অস্ত্র, মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের মূল নেতা আবদুল খালেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নরসিংদীর শিবকপুর এলাকা থেকে।

যুগ্ম কমিশনার হারুনের দাবি গ্রেপ্তাতারকৃতরা অপরাধ সংঘটনের আগে ঢাকা মহানগরীর জনসমাগম স্থান বা আশপাশ এলাকায় প্রাইভেটকারে ১ থেকে ২টি সিট খালি রেখে অবস্থান নেয়। টার্গেট অফিসগামী যাত্রী। যেসব যাত্রী গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য পরিবহনে উঠতে ব্যর্থ হয় তাদের ডেকে যাত্রীর গন্তব্যস্থলের দিকে যাবে বলে গাড়িতে ওঠায়। এরপর টার্গেট ব্যক্তিকে গন্তব্যে পৌঁছে না দিয়ে নিজেদের পছন্দের বা সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে আটকে রাখে। পরে মুক্তিপণ আদায় করে। কখন কখনও গাড়িতে তুলেই অপহৃত ব্যক্তিকে শারীরিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের ভিডিও বা ছবি স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করে।

তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তাাকৃতরা এ পর্যন্ত ৫০০ এর বেশি ব্যক্তিকে অপহরণ করেছে বলে স্বীকার করেছে। পুলিশের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গেপ্তারকৃতদের মধ্যে আবদুল বারেকের নামে ৬টি ও গ্রেপ্তারকৃত বাকিদের নামে পৃথক পৃথক দুটি করে মামলা রয়েছে।’

এ ধরনের অপরাধ থেকে বাঁচতে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন ‘অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস কিংবা সিএনজিতে একসঙ্গে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। গাড়িতে ভ্রমণের আগে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর নোট রাখতে হবে। যেসব গাড়িতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট বিদ্যমান নেই সেসব গাড়ি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।’

রাইড শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই অ্যাপসভিত্তিক স্বনামধন্য কোম্পানির সেবা গ্রহণ করতে হবে অথবা হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব ব্যবহার করতে হবে। যেসব স্থানে অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা বিদ্যমান নেই সেসব স্থানে গণপরিবহন অর্থাৎ বাস, লেগুনা ইত্যাদি সেবা গ্রহণ করতে পরামর্শ দেন ডিবি কর্মকর্তা।