এবার ক্রিমিনা শহর দখলে নিলো রাশিয়া

ইউক্রেনের আরও একটি শহর দখলে নিয়েছে রাশিয়া। ভয়াবহ হামলার পর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এই শহরটি দখলে নেয় রুশ সেনারা। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, ভয়াবহ হামলার মাধ্যমে ‘সবকিছু মাটির সঙ্গে মিশিয়ে’ ক্রিমিনা শহরের দখল নিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। ক্রিমিনা শহরটি পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলে অবস্থিত। শহর হাতছাড়া হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সার্গি গাইদে বলেন, ‘রোববার থেকে সোমবার ক্রেমিনাতে রাতে বড় ধরনের হামলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যেই শহরটিতে প্রবেশ করেছে। রুশ সেনাদের সঙ্গে ব্যাপক সংখ্যায় সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে... ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ যোদ্ধারা পিছু হটে নতুন অবস্থানে চলে গেছে।’ ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারি ওলেক্সি দানিলভ দেশের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার আক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দোনেতস্ক, লুহানস্ক এবং খারকিভ অঞ্চলের প্রায় পুরো ফ্রন্টলাইন বরাবর হামলাকারী আমাদের প্রতিরক্ষা ভেদ করার চেষ্টা করেছে। সৌভাগ্যবশত, আমাদের সামরিক বাহিনী (তাদের জায়গা) এখনও ধরে রেখেছে।’

অবশ্য পূর্ব ইউক্রেনে হামলা জোরদার করার পর রুশ সামরিক বাহিনী দুটি এলাকার দখল নিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। ওলেক্সি দানিলভ বলছেন, ‘ক্রিমিনা এবং ছোট অন্য একটি শহর (রুশ সামরিক বাহিনীর দখলে চলে গেছে)। কিন্তু এখনও লড়াই চলছে। আমরা আমাদের ভূখ- কারও হাতে তুলে দেব না।’

ক্রিমিনা শহরটি আঞ্চলিক প্রশাসনের কেন্দ্র ক্র্যামাতোরস্ক থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে শহরটিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করতেন। কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি দখল করা ছিল রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম লক্ষ্য।

ডনবাস অঞ্চলে রুশ হামলা শুরু

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলা শুরু হয়েছে। রকেট ও কামানের গোলাবর্ষণের মাধ্যমে রুশ সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে চলছে তীব্র হামলা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও হামলা শুরুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেছেন, পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চল দখল করতে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার রকেট ও কামানের গোলাবর্ষণের মাধ্যমে ডনবাস অঞ্চলের শহরগুলোতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। পরে দেয়া এক ভিডিওবার্তায় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ‘ডনবাসের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে’।

ইউক্রেনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওলেক্সি ড্যানিলভ বলেছেন, রাশিয়া এই অঞ্চলে ইউক্রেনের ফ্রন্ট লাইন ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এই আক্রমণটি দীর্ঘ প্রত্যাশিত ছিল।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়া প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনের প্রধান শহরগুলো দখল করতে এবং বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্য নিয়েছিল বলে মনে করা হয়। কিন্তু কঠোর প্রতিরোধের মুখোমুখি হওয়ার পর, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা দাবি করেন যে, ‘সামরিক অভিযানের প্রথম পর্যায়ে’ মস্কোর মূল উদ্দেশ্যগুলো ‘সম্পন্ন’ হয়েছে এবং রুশ বাহিনীকে রাজধানীর আশপাশের এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এক টেলিভিশন ভাষণে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনী ডনবাস অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু করেছে। তিনি দাবি করেন, ডনবাস অঞ্চল রক্ষা করার জন্য ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বহু আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।

রুশ সেনাবাহিনীর একটি বিশাল অংশকে ডনবাস হামলায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, রাশিয়ার যত বেশি সেনাই আনা হোক না কেন ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ডনবাস রক্ষার চেষ্টা করবে। বৃহত্তর ডনবাস অঞ্চলের লুহানস্ক এলাকার গভর্নর তার নিয়ন্ত্রিত এলাকার পরিস্থিতিকে ‘নারকীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ডনবাস অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার ফলে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। ইউক্রেনের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, রাশিয়ার সেনারা পূর্ব সীমান্তের সবগুলো ফ্রন্টে বিশেষ করে দোনেতস্ক, লুহানস্ক ও খারকিভ দিয়ে ডনবাস অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।

বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০২২ , ০৭ বৈশাখ ১৪২৮ ১৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

এবার ক্রিমিনা শহর দখলে নিলো রাশিয়া

image

ইলিচ আয়রন অ্যান্ড স্টিল ওয়ার্কস কারখানায় ধ্বংসপ্রাপ্ত কয়েকটি যানবাহন -ডেইলি মেইল

ইউক্রেনের আরও একটি শহর দখলে নিয়েছে রাশিয়া। ভয়াবহ হামলার পর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এই শহরটি দখলে নেয় রুশ সেনারা। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, ভয়াবহ হামলার মাধ্যমে ‘সবকিছু মাটির সঙ্গে মিশিয়ে’ ক্রিমিনা শহরের দখল নিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। ক্রিমিনা শহরটি পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলে অবস্থিত। শহর হাতছাড়া হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সার্গি গাইদে বলেন, ‘রোববার থেকে সোমবার ক্রেমিনাতে রাতে বড় ধরনের হামলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যেই শহরটিতে প্রবেশ করেছে। রুশ সেনাদের সঙ্গে ব্যাপক সংখ্যায় সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে... ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ যোদ্ধারা পিছু হটে নতুন অবস্থানে চলে গেছে।’ ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারি ওলেক্সি দানিলভ দেশের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার আক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দোনেতস্ক, লুহানস্ক এবং খারকিভ অঞ্চলের প্রায় পুরো ফ্রন্টলাইন বরাবর হামলাকারী আমাদের প্রতিরক্ষা ভেদ করার চেষ্টা করেছে। সৌভাগ্যবশত, আমাদের সামরিক বাহিনী (তাদের জায়গা) এখনও ধরে রেখেছে।’

অবশ্য পূর্ব ইউক্রেনে হামলা জোরদার করার পর রুশ সামরিক বাহিনী দুটি এলাকার দখল নিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। ওলেক্সি দানিলভ বলছেন, ‘ক্রিমিনা এবং ছোট অন্য একটি শহর (রুশ সামরিক বাহিনীর দখলে চলে গেছে)। কিন্তু এখনও লড়াই চলছে। আমরা আমাদের ভূখ- কারও হাতে তুলে দেব না।’

ক্রিমিনা শহরটি আঞ্চলিক প্রশাসনের কেন্দ্র ক্র্যামাতোরস্ক থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে শহরটিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করতেন। কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি দখল করা ছিল রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম লক্ষ্য।

ডনবাস অঞ্চলে রুশ হামলা শুরু

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলা শুরু হয়েছে। রকেট ও কামানের গোলাবর্ষণের মাধ্যমে রুশ সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে চলছে তীব্র হামলা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও হামলা শুরুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেছেন, পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চল দখল করতে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার রকেট ও কামানের গোলাবর্ষণের মাধ্যমে ডনবাস অঞ্চলের শহরগুলোতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। পরে দেয়া এক ভিডিওবার্তায় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ‘ডনবাসের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে’।

ইউক্রেনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওলেক্সি ড্যানিলভ বলেছেন, রাশিয়া এই অঞ্চলে ইউক্রেনের ফ্রন্ট লাইন ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এই আক্রমণটি দীর্ঘ প্রত্যাশিত ছিল।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়া প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনের প্রধান শহরগুলো দখল করতে এবং বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্য নিয়েছিল বলে মনে করা হয়। কিন্তু কঠোর প্রতিরোধের মুখোমুখি হওয়ার পর, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা দাবি করেন যে, ‘সামরিক অভিযানের প্রথম পর্যায়ে’ মস্কোর মূল উদ্দেশ্যগুলো ‘সম্পন্ন’ হয়েছে এবং রুশ বাহিনীকে রাজধানীর আশপাশের এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এক টেলিভিশন ভাষণে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনী ডনবাস অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু করেছে। তিনি দাবি করেন, ডনবাস অঞ্চল রক্ষা করার জন্য ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বহু আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।

রুশ সেনাবাহিনীর একটি বিশাল অংশকে ডনবাস হামলায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, রাশিয়ার যত বেশি সেনাই আনা হোক না কেন ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ডনবাস রক্ষার চেষ্টা করবে। বৃহত্তর ডনবাস অঞ্চলের লুহানস্ক এলাকার গভর্নর তার নিয়ন্ত্রিত এলাকার পরিস্থিতিকে ‘নারকীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ডনবাস অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার ফলে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। ইউক্রেনের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, রাশিয়ার সেনারা পূর্ব সীমান্তের সবগুলো ফ্রন্টে বিশেষ করে দোনেতস্ক, লুহানস্ক ও খারকিভ দিয়ে ডনবাস অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।