ঢাকার যানজট নিরসনে গার্মেন্ট শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়া হবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘বড়-বড় শিল্প-কারখানাগুলো যদি একসঙ্গে ছুটি দেয় তাহলে আমাদের হিসাবে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ ঢাকা ত্যাগ করবে। তারা শুধু শ্রমিক, এর সঙ্গে অন্য মানুষ তো আছেই। কাজেই যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা আছে।’ তাই পর্যায়ক্রমে ছুটিগুলো দিলে সেটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে বলে জানান তিনি। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সভা শেষে ঢাকা শহরের যানজট নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় অনেকগুলো উন্নয়ন কাজ চলছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভারের কারণে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এই যানজটের জন্য সেটিও একটি কারণ। এছাড়া কোভিডের পর সব কিছু খুলেছে, আবার ঈদও এসে গেছে। সবাই মার্কেটমুখী। ঘর থেকে বের হয়ে সবাই এসব জায়গায় যাতায়াত শুরু করেছেন, যানজটের কিছু কারণের মধ্যে এগুলোও অন্যতম।’

যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ বিভাগ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী সাত দিনে তারা কী করবেন, তার একটি কর্মপদ্ধতিও তারা বের করেছেন। আশা করি, দুই এক দিনের মধ্যে যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে।’

গার্মেন্টস শ্রমিকদের একসঙ্গে ছুটি দেয়া যাবে না

গার্মেন্টস কবে থেকে ছুটি হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘গার্মেন্টস ছুটির বিষয়ে বলেছি একসঙ্গে যেন ছুটি দেয়া না হয়। শিল্প পুলিশসহ বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ অন্যান্য সংগঠন বসে সিদ্ধান্ত নেবে কোন শিল্প কারখানা কখন বন্ধ ঘোষণা করবে। এখানে অনেক কিছু নির্ভর করে। যেমন, শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধের বিষয়, বিদেশি অর্ডারের বিষয়ের ওপরও কিছু নির্ভর করে।’

শ্রমিকদের বেতন ভাতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এপ্রিল মাসের অগ্রিম বেতন ও বোনাস কবে দেবে সেটা শ্রম মন্ত্রণালয়ে বসে গার্মেন্টস মালিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা চাই সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ঈদের আগে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে। বিশেষ-বিশেষ রাস্তা ও মোড়ে চেকপোস্ট এবং জাল টাকার বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন

ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তার জন্য বাস, ট্রেন ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ঈদ উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে যানজট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।’

মহাসড়কের পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হাইওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, ২৫ এপ্রিলের মধ্যে সবগুলো রাস্তা সচল হবে। যেখানে খানাখন্দ আছে সেগুলোও রিপেয়ার করে দেবে। এটি যেন কার্যকর হয়, এজন্য আগামী কাল বা পরশুর মধ্যে তারা আবারও বসবেন। যদি কোন অসুবিধা পাওয়া যায় সেটি চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেবে।’

ঈদে ঘরমুখো মানুষদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয়। এটা বন্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফেরির সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেয়া যায়

কি-না আমরা চিন্তা করছি। ঈদের আগের তিন দিন শুধুমাত্র খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া কোন পণ্যই ফেরি পারাপার হবে না। পাশাপাশি ঈদের আগের তিন দিন হাইওয়ে দিয়ে ট্রাক যাবে না। আমরা এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেয়া যাবে না

ঈদযাত্রায় নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া যাতে আদায় করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনী নজর রাখবে। নসিমন করিমনসহ ব্যাটারিচালিত গাড়ি যেন মহাসড়কে উঠতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সভায় নির্দেশনা দেয়া হয়।

সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে যানজট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। ঈদযাত্রায় নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া যাতে আদায় করতে না পারে সেজন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী নজর রাখবে। নসিমন-করিমনসহ ব্যাটারিচালিত গাড়ি যেন হাইওয়েতে না উঠতে পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’