জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সিকিউরিটি গার্ড ও এমএলএসএস (পিয়ন) পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করে মনির হোসেন ও কাজী মহিন উল্লাহ। দুটি পদই ২০তম গ্রেডের। দু’জনকে নিয়োগ দেয়া হয় ১৮তম গ্রেডের সিনিয়র কুক পদে। একইভাবে সিকিউরিটি গার্ড মোহাম্মদ জিহান ও এমএলএসএস জামাল হোসেন স্ব-পদে আবেদন করে নিয়োগ পান ১৯তম গ্রেডের সহকারী কুক পদে। এমএলএসএস আবদুল আলিম নিয়োগ পেয়েছেন বাস হেল্পার পদে।
এদিকে ২০২১ সালের ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪তম সিন্ডিকেট সভায় চুক্তিভিত্তিক ও দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মচারীদের একটি তালিকা করা হয়। তালিকা প্রকাশের ৪ দিন পর ৮ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে ১৬তম গ্রেডের সহকারী মেকানিক পদে ১ জন, ১৮তম গ্রেডের ইলেকট্রিশিয়ান পদে ১ জন, ১৮তম গ্রেডের লিফট অপারেটর পদে ৪ জন, ১৯তম গ্রেডের মেকানিক হেল্পার পদে ১ জন ও ২০তম গ্রেডের অফিস সহকারী, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিছন্নতা কর্মী ও সমমানের পদে ১৯ জন চাওয়া হয়।
এদিকে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ না থাকার পরও ১৮তম গ্রেডের কুক, ১৯তম গ্রেডের সহকারী কুক, বাস হেল্পার ও কমনরুম গার্ল হিসেবে ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এদিকে গ্রেড পরিবর্তন করে নিয়োগ দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তর থেকে বেতন বাবদ বাড়তি অর্থ খরচের ব্যাখ্যা চেয়ে উপাচার্যের কাছে নোট পাঠানো হলে এই ৬ জনের বেতন ভাতা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮৪তম সিন্ডিকেটের সিরিয়াল ক্রমও ব্যাতয় হয়েছে। বাস-হেল্পার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আবদুল আলিমের চাকরি ছিল এমএলএসএস হিসেবে। তার সিরিয়াল ক্রম ২৬। সুইপার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বীনা রানী দাসও এমএলএসএস হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তার সিরিয়াল ক্রম ২৯। কুক পদে নিয়োগ পাওয়া কাজী মহিন উল্লাহর এমএলএসএস সিরিয়াল ক্রম ৩৬, কমনরুম গার্ল হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাবেয়া বেগমের এমএলএসএস ক্রম ৪৩। কুক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জামাল হোসেন ছিলেন সংগীত বিভাগের এমএলএসএস কর্মচারী। তার ক্রম ৬১। নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ জিহান নিরাপত্তা প্রহরী ক্রমে ৭, বাজারকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া
মো. ইছহাক শেখ নিরাপত্তা প্রহরী ক্রম ৮ ও সহকারী কুক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. মনির হোসেনের নিরাপত্তা প্রহরী পদে ক্রমিক ছিল ৯। স্ব-স্ব পদে তালিকা ব্যাতয় ঘটিয়ে অন্য পদ থেকে পছন্দের ভিত্তিতে এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ কর্মচারীদের। বর্তমান চাকরি চুক্তিভিত্তিক ও দৈনিক হাজিরাভিত্তিক হওয়ায় চাকরি হারানোর ভয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি নন তারা।
এভাবে চাকরি পাওয়া একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর রেজিস্ট্রার স্যার আমাদের ডেকে নিয়ে আবেদন করতে বলে। আমরা আমাদের স্ব-পদেই আবেদন করি। এখন আমাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে গ্রেড ও পদ কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে সেটা জানি না। প্রশাসন আমাদের যেভাবে নিয়োগ দিয়েছে আমরা সেটাই পেয়েছি। এখানে আমাদের তো কোন দোষ নেই। আমাদের বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই গ্যাড়াকলে পড়ে যদি আমাদের বর্তমান চাকরিটাও চলে যায়, আমরা তো না খেয়ে মরবো।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল কাদের কাজী মনির বলেন, কর্মকর্তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে একটা সিন্ডিকেট আছে যারা নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্য করে আসছে। তারা টাকার বিনিমিয়ে সুইপারকে পিয়ন বানায় আবার সুবিধামতো পিয়নকে সুইপার বানায়। এবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মো. লুৎফুর রহমান বলেন, যেকোন অনিয়ম হলে আমরা তার বিরুদ্ধে কথা বলবো। নিয়োগে ঝামেলা হয়েছে এরকম একটা খবর শুনেছি। আমরা চাই সত্য বিষয়টা উঠে আসুক।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে উপাচার্য মহোদয় ব্যবস্থা নিবেন। নিয়োগ সংক্রান্ত সব কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকেই হয়েছে। এখানে নিয়মের ব্যাতয় কীভাবে ঘটলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমার কাছে কাগজ এসেছে আমি নিয়োগ দিয়ে দিয়েছি। এখন আমরা বিষয়টি তদন্ত করবো। এখানে প্রক্রিয়ায় যদি ত্রুটি ঘটে তাহলে নিয়োগ বাতিল করবো।
বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০২২ , ০৭ বৈশাখ ১৪২৮ ১৮ রমাদ্বান ১৪৪৩
মাহমুদ তানজীদ, জবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সিকিউরিটি গার্ড ও এমএলএসএস (পিয়ন) পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করে মনির হোসেন ও কাজী মহিন উল্লাহ। দুটি পদই ২০তম গ্রেডের। দু’জনকে নিয়োগ দেয়া হয় ১৮তম গ্রেডের সিনিয়র কুক পদে। একইভাবে সিকিউরিটি গার্ড মোহাম্মদ জিহান ও এমএলএসএস জামাল হোসেন স্ব-পদে আবেদন করে নিয়োগ পান ১৯তম গ্রেডের সহকারী কুক পদে। এমএলএসএস আবদুল আলিম নিয়োগ পেয়েছেন বাস হেল্পার পদে।
এদিকে ২০২১ সালের ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪তম সিন্ডিকেট সভায় চুক্তিভিত্তিক ও দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মচারীদের একটি তালিকা করা হয়। তালিকা প্রকাশের ৪ দিন পর ৮ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে ১৬তম গ্রেডের সহকারী মেকানিক পদে ১ জন, ১৮তম গ্রেডের ইলেকট্রিশিয়ান পদে ১ জন, ১৮তম গ্রেডের লিফট অপারেটর পদে ৪ জন, ১৯তম গ্রেডের মেকানিক হেল্পার পদে ১ জন ও ২০তম গ্রেডের অফিস সহকারী, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিছন্নতা কর্মী ও সমমানের পদে ১৯ জন চাওয়া হয়।
এদিকে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ না থাকার পরও ১৮তম গ্রেডের কুক, ১৯তম গ্রেডের সহকারী কুক, বাস হেল্পার ও কমনরুম গার্ল হিসেবে ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এদিকে গ্রেড পরিবর্তন করে নিয়োগ দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তর থেকে বেতন বাবদ বাড়তি অর্থ খরচের ব্যাখ্যা চেয়ে উপাচার্যের কাছে নোট পাঠানো হলে এই ৬ জনের বেতন ভাতা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮৪তম সিন্ডিকেটের সিরিয়াল ক্রমও ব্যাতয় হয়েছে। বাস-হেল্পার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আবদুল আলিমের চাকরি ছিল এমএলএসএস হিসেবে। তার সিরিয়াল ক্রম ২৬। সুইপার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বীনা রানী দাসও এমএলএসএস হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তার সিরিয়াল ক্রম ২৯। কুক পদে নিয়োগ পাওয়া কাজী মহিন উল্লাহর এমএলএসএস সিরিয়াল ক্রম ৩৬, কমনরুম গার্ল হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাবেয়া বেগমের এমএলএসএস ক্রম ৪৩। কুক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জামাল হোসেন ছিলেন সংগীত বিভাগের এমএলএসএস কর্মচারী। তার ক্রম ৬১। নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ জিহান নিরাপত্তা প্রহরী ক্রমে ৭, বাজারকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া
মো. ইছহাক শেখ নিরাপত্তা প্রহরী ক্রম ৮ ও সহকারী কুক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. মনির হোসেনের নিরাপত্তা প্রহরী পদে ক্রমিক ছিল ৯। স্ব-স্ব পদে তালিকা ব্যাতয় ঘটিয়ে অন্য পদ থেকে পছন্দের ভিত্তিতে এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ কর্মচারীদের। বর্তমান চাকরি চুক্তিভিত্তিক ও দৈনিক হাজিরাভিত্তিক হওয়ায় চাকরি হারানোর ভয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি নন তারা।
এভাবে চাকরি পাওয়া একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর রেজিস্ট্রার স্যার আমাদের ডেকে নিয়ে আবেদন করতে বলে। আমরা আমাদের স্ব-পদেই আবেদন করি। এখন আমাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে গ্রেড ও পদ কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে সেটা জানি না। প্রশাসন আমাদের যেভাবে নিয়োগ দিয়েছে আমরা সেটাই পেয়েছি। এখানে আমাদের তো কোন দোষ নেই। আমাদের বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই গ্যাড়াকলে পড়ে যদি আমাদের বর্তমান চাকরিটাও চলে যায়, আমরা তো না খেয়ে মরবো।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল কাদের কাজী মনির বলেন, কর্মকর্তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে একটা সিন্ডিকেট আছে যারা নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্য করে আসছে। তারা টাকার বিনিমিয়ে সুইপারকে পিয়ন বানায় আবার সুবিধামতো পিয়নকে সুইপার বানায়। এবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মো. লুৎফুর রহমান বলেন, যেকোন অনিয়ম হলে আমরা তার বিরুদ্ধে কথা বলবো। নিয়োগে ঝামেলা হয়েছে এরকম একটা খবর শুনেছি। আমরা চাই সত্য বিষয়টা উঠে আসুক।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে উপাচার্য মহোদয় ব্যবস্থা নিবেন। নিয়োগ সংক্রান্ত সব কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকেই হয়েছে। এখানে নিয়মের ব্যাতয় কীভাবে ঘটলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমার কাছে কাগজ এসেছে আমি নিয়োগ দিয়ে দিয়েছি। এখন আমরা বিষয়টি তদন্ত করবো। এখানে প্রক্রিয়ায় যদি ত্রুটি ঘটে তাহলে নিয়োগ বাতিল করবো।