ঈদ সামনে রেখে মাদক চক্র সক্রিয়

ঈদকে সামনে রেখে ঈশ্বরদীতে মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। আর এ সকল মাদক আনার কাজে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে রেল ও সড়কপথ। প্রতিদিন এসব মাধ্যম দিয়ে আসছে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য নেশাদ্রব্য। বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত সুকৌশলে মাদকের চালান ঈশ্বরদীতে প্রবেশ করাচ্ছে। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছে আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গত ৮ এপ্রিল ৪১২ গ্রাম হেরোইনসহ মেজর আলী (২৬) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের সদস্যরা। ওই দিন সকালে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন এলাকায় অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহরাপুর এলাকার নুুরুল হুদার ছেলে। র‌্যাব জানায়, মেজর আলী একজন প্রথম সারির মাদক ব্যবসায়ী। সে নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদক কেনা-বেচা করত। এর তিনদিন পর ১১ এপ্রিল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দিয়াড় সাহাপুরে অভিযান চালায় র‌্যাব। দিয়াড় সাহাপুরের ব্র্যাক অফিসের সামনে থেকে ১৪ গ্রাম হেরোইনসহ বুদু প্রামাণিককে (৫২) গ্রেপ্তার করা হয়। সে উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর এলাকার মৃত ইব্রাহিম প্রামাণিকের ছেলে। বুদু প্রামাণিক দীর্ঘদিন থেকে নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদক বিক্রি করে আসছিল বলে র‌্যাব জানায়। এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) পাবনা ‘খ’ সার্কেল ঈশ্বরদীর সদস্যরাও দুই দিনের অভিযানে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। গত ৯ এপ্রিল ঈশ্বরদী পৌর এলাকার পিয়ারাখালীতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পিয়ারাখালীর মৃত গোলবার হোসেনের ছেলে জীবন হোসেনকে (৩৫) ১০৫ পিস ইয়াবাসহ আটক করে ডিএনসি পাবনা ‘খ’, সার্কেল ঈশ্বরদীর সদস্যরা। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাফিন মন্ডল ওরফে আশিক (২৯) নামে যুবককে ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। মঙ্গলবার ভোরে ঈশ্বরদী পৌর এলাকার কলেজ রোডে খয়ের হাজী মার্কেটের পেছনে খয়ের হাজী মেসে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। সে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার আড়িয়া ইউনিয়নের হৃদয়পুর গ্রামের মৃত আমজাদ মন্ডলের ছেলে। সে দীর্ঘদিন থেকে ঈশ্বরদীতে অবস্থান করে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। এদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে পাবনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ বলছেন, মাদক কারবারিরা তাদের কার্যক্রম চালাবে। তবে তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং বর্তমানে তা আরও জোরদার করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য জেলার সঙ্গে যোগাযোগ যেমন সড়ক, নৌ, রেল ব্যবস্থা নির্বিঘেœ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সহজে মাদক নিয়ে ঈশ্বরদীতে প্রবেশ করতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোপন সংবাদে দু’একজনকে আটক করলেও বেশির ভাগ ব্যবসায়ীরা তাদের মাদক বেচা-কেনা করে পার পেয়ে যায়। এছাড়া শহরের ফতেমোহাম্মদপুর, মিলপট্রি, কাচারিপাড়া, আড়ামবাড়িয়া, পাকশীর হঠাৎপাড়ার মাদক চক্রের তৎপরতায় মাদক কেনা-বেচা হয়ে থাকে। এক পুলিশ সদস্য জানান, চিহ্নিত মাদক কারবারিরা এখন আর মাদক আনা নেয়ার কাজ করেন না। ঘরে বসে তারা শুধু সেগুলো রিসিভ করেন। টাকা দিয়ে মাদক আনা এবং পৌঁছানোর কাজে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য এলাকার লোকদের। যাতে তারা পুলিশের সন্দেহ তালিকার বাইরে থাকে। এভাবে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাদক পাচার করা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয় থাকলেও পুলিশ এ ব্যাপারে সর্তক রয়েছে। মাদক কারবারিরা তাদের কার্যক্রম চালাবে। তবে তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং বর্তমানে তা আরও জোরদার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২ , ০৮ বৈশাখ ১৪২৮ ১৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

ঈদ সামনে রেখে মাদক চক্র সক্রিয়

প্রতিনিধি, ঈশ্বরদী (পাবনা)

ঈদকে সামনে রেখে ঈশ্বরদীতে মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। আর এ সকল মাদক আনার কাজে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে রেল ও সড়কপথ। প্রতিদিন এসব মাধ্যম দিয়ে আসছে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য নেশাদ্রব্য। বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত সুকৌশলে মাদকের চালান ঈশ্বরদীতে প্রবেশ করাচ্ছে। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছে আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গত ৮ এপ্রিল ৪১২ গ্রাম হেরোইনসহ মেজর আলী (২৬) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের সদস্যরা। ওই দিন সকালে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন এলাকায় অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহরাপুর এলাকার নুুরুল হুদার ছেলে। র‌্যাব জানায়, মেজর আলী একজন প্রথম সারির মাদক ব্যবসায়ী। সে নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদক কেনা-বেচা করত। এর তিনদিন পর ১১ এপ্রিল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দিয়াড় সাহাপুরে অভিযান চালায় র‌্যাব। দিয়াড় সাহাপুরের ব্র্যাক অফিসের সামনে থেকে ১৪ গ্রাম হেরোইনসহ বুদু প্রামাণিককে (৫২) গ্রেপ্তার করা হয়। সে উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর এলাকার মৃত ইব্রাহিম প্রামাণিকের ছেলে। বুদু প্রামাণিক দীর্ঘদিন থেকে নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদক বিক্রি করে আসছিল বলে র‌্যাব জানায়। এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) পাবনা ‘খ’ সার্কেল ঈশ্বরদীর সদস্যরাও দুই দিনের অভিযানে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। গত ৯ এপ্রিল ঈশ্বরদী পৌর এলাকার পিয়ারাখালীতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পিয়ারাখালীর মৃত গোলবার হোসেনের ছেলে জীবন হোসেনকে (৩৫) ১০৫ পিস ইয়াবাসহ আটক করে ডিএনসি পাবনা ‘খ’, সার্কেল ঈশ্বরদীর সদস্যরা। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাফিন মন্ডল ওরফে আশিক (২৯) নামে যুবককে ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। মঙ্গলবার ভোরে ঈশ্বরদী পৌর এলাকার কলেজ রোডে খয়ের হাজী মার্কেটের পেছনে খয়ের হাজী মেসে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। সে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার আড়িয়া ইউনিয়নের হৃদয়পুর গ্রামের মৃত আমজাদ মন্ডলের ছেলে। সে দীর্ঘদিন থেকে ঈশ্বরদীতে অবস্থান করে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। এদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে পাবনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ বলছেন, মাদক কারবারিরা তাদের কার্যক্রম চালাবে। তবে তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং বর্তমানে তা আরও জোরদার করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য জেলার সঙ্গে যোগাযোগ যেমন সড়ক, নৌ, রেল ব্যবস্থা নির্বিঘেœ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সহজে মাদক নিয়ে ঈশ্বরদীতে প্রবেশ করতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোপন সংবাদে দু’একজনকে আটক করলেও বেশির ভাগ ব্যবসায়ীরা তাদের মাদক বেচা-কেনা করে পার পেয়ে যায়। এছাড়া শহরের ফতেমোহাম্মদপুর, মিলপট্রি, কাচারিপাড়া, আড়ামবাড়িয়া, পাকশীর হঠাৎপাড়ার মাদক চক্রের তৎপরতায় মাদক কেনা-বেচা হয়ে থাকে। এক পুলিশ সদস্য জানান, চিহ্নিত মাদক কারবারিরা এখন আর মাদক আনা নেয়ার কাজ করেন না। ঘরে বসে তারা শুধু সেগুলো রিসিভ করেন। টাকা দিয়ে মাদক আনা এবং পৌঁছানোর কাজে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য এলাকার লোকদের। যাতে তারা পুলিশের সন্দেহ তালিকার বাইরে থাকে। এভাবে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাদক পাচার করা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয় থাকলেও পুলিশ এ ব্যাপারে সর্তক রয়েছে। মাদক কারবারিরা তাদের কার্যক্রম চালাবে। তবে তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং বর্তমানে তা আরও জোরদার করা হয়েছে।