নিউমার্কেট এলাকার পরিস্থিতি থমথমে

দিনভর নানা নাটকীয়তা ও জল্পনা-কল্পনা শেষে গতকাল বিকেলে দোকান খোলার প্রস্তুতি নেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মিরপুর সড়কে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ফলে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকান খুলেননি ব্যবসায়ীরা। এর আগে বেলা ২টার দিকে ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দোকান খোলার ঘোষণা দেন। সেই অনুযায়ী বেলা ৩টার দিকে দোকানিরা দোকান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক সে সময় কে বা কারা নিউমার্কেটের সড়কে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে ব্যবসায়ীরা শাটার বন্ধ করে দেন। তবে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা গতকাল সারাদিন শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছিলেন। তাদের কেউ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়নি বরং তারা ককটেলের শব্দে ক্যাম্পাস থেকে বের হন। তৃতীয় কোন পক্ষ এমনটি করতে পারে। তবে সংঘর্ষ নিয়ে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিকেলের দিকে সড়কে নামেন শিক্ষার্থীরা।

টানা দুদিনের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো নিউমার্কেট এলাকা। গতকাল সকাল সকাল ওখানকার ২০-২২টি মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ফুটপাতের দোকানিরা আসেন। তবে ব্যবসায়ীরা দোকান খুলেননি। ফলে কর্মচারীরা জটলা বেধে বসে থাকেন। ফুটপাতের দোকানিরাও দোকান খুলেননি। সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে দোকান খোলার অনুমতি পাননি বলে জানিয়েছিলেন তারা। সংঘর্ষপরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মার্কেট খুলে দেয়া হবে বলে সকালে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর কিছুক্ষণ পর বেলা ২টায় ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন করে দোকান খোলার ঘোষণা দিলেও অবশেষে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আর দোকান খোলা হয়নি। এ ঘটনায় তৃতীয় পক্ষ জড়িত বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়লেও ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেছেন। সকাল থেকে মিরপুর রোডে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও চাপ ছিল একেবারে কম। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। এ ঘটনায় কাউকে আটক করাও সম্ভব হয়নি।

পুলিশ বলছেন, নিহত যুবক নাহিদের পরিবার মামলা করবেন। পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশও বাদী হয়ে মামলা করার কথা ভাবছে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নিউমার্কেট থানায় কোন মামলা হয়নি। নাহিদ কোন গ্রুপের হামলায় নিহত হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহসহ নানাভাবে কাজ করছে পুলিশ। গতকাল দুপুরের দিকে নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, নীলক্ষেত থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত পুরো রাস্তা প্রায় ফাঁকা। লোকজনের সংখ্যা একেবারেই কম। ওই রুটে চলাচলকারী যানের সংখ্যাও ছিল কম। ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র ১নং গেট খোলা রেখেছেন। বাকি গেটগুলো বন্ধ রয়েছে। ১নং গেটের সামনে ও ভেতরে ব্যবসায়ী, দোকানি ও কর্মচারীরা এসে ভিড় করছেন। ফুটপাতের দোকানিরাও সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ দোকান খুলছেন না।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের ভেতরেই অবস্থান করতে দেখা গেছে। সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা না থাকায় ক্যাম্পাসে হলের ছাত্র ছাড়া অন্যরা ছিলেন না। তবে বিভাগীয় কাজকর্ম করতে অধ্যক্ষসহ সব বিভাগের শিক্ষকরা ক্যাম্পাসেই ছিলেন। দেখা যায়, টানা দুদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবহৃত ভাঙা ইট, কাঠ, বাঁশ, ফুটপাতের পোড়া মালামালের অবশিষ্টাংশর স্তূপ পড়ে আছে। সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি এসব অপসারণ করেনি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে এসব ইট-পাথর আবারও ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। নিউমার্কেট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সড়ক থেকে এসব ইট-পাথর সরিয়ে নিতে সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার তারা জানিয়েছেন। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের কোন কর্মীকে ঘটনাস্থলে আসতে দেখা যায়নি। এখন এসব ভাঙা ইট-পাথরের কারণে সড়কে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

দুপুর ২টার দিকে ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী নেতারা ছাড়াও আশপাশের প্রায় সব মার্কেটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, ৪নং গেটের ক্যাপিটাল ফাস্টফুড ও ওয়েলকাম ফাস্টফুডের দোকানিদের স্টাফদের মধ্যে ইফতারির টেবিল বসা নিয়ে ঝামেলা হয়। পরে একটি দোকানের একজন স্টাফ ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত তার বন্ধুকে বিষয়টি জানায়। কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিষয়টি জানতে কিংবা মীমাংসা করতে ইফতারের পর মার্কেটে আসেন। তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দোকানের স্টাফদের ঝামেলা হয় এবং পরবর্তীতে তা ক্যাম্পাসে জানাজানি হলে কর্মচারী ও হাকরদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, গত মঙ্গলবার আমরা মার্কেট খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু সকাল ৬টার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে মার্কেট বন্ধ রাখতে বলা হয়। তাই আমরা মার্কেট বন্ধ রাখি। মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করলে ব্যবসায়ী, কর্মচারীরা কেন আসল, তাহলে মঙ্গলবারের সংঘর্ষ কী পরিকল্পিত? এমন প্রশ্নের জবাবে সভাপতি বলেন, সকালে মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা ব্যবসায়ী ও স্টাফদের জানাতে সময় লেগে যায়। এদের কেউ কেউ আবার বন্ধের বিষয়টি জানতে পারেননি। তাই মার্কেটে চলে আসেছেন। সেদিন সংঘর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছিল, ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা সাংবাদিক ও অ্যাম্বলেন্সে হামলা করেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এসব হামলায় নিউমার্কেটের কেউ জড়িত ছিল না। সেখানে তৃতীয় পক্ষ হামলা চালিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখলেই বিষয়টা স্পষ্ট হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে চাই এবং এই এলাকায় ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী একত্রে থাকতে চাই।

ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা এখান থেকে ঢাকা কলেজ সরিয়ে নেয়ার দাবি তুলেছে, এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব কথা বলে শিক্ষার্থীদের আরও উত্তেজিত করতে চাই না। আমরাও পড়াশোনা করে আসছি। আমাদের অনেক ব্যবসায়ীই ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। আমরা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি কিংবা কমিটি গঠন করতে চাই। যাতে ভবিষ্যতে কোন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী কিংবা কর্মচারী অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনা ঘটালে শিক্ষার্থীরা আমাদের কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারেন। সংবাদ সম্মেলনে দোকান খোলার ঘোষণা দেন তিনি। তবে তখনও ঢাকা কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের কোন ধরনের আলোচনা হয়নি।

গতকাল বেলা ২টা পর্যন্তও দোকান না খোলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। মন্ত্রী বলেছেন, দেখা যাক। পরিস্থিতি বুঝে দোকান খোলার কথা বলেছেন। এছাড়া আমাদের অন্যান্য ব্যবসায়িক সংগঠন ও নেতাদের কাছ থেকে দোকান খোলার বিষয়টি সঠিক সিদ্ধান্ত পাইনি বলে দোকান খোলা হয়নি। সংবাদ সম্মেলন শেষে বিকেলে দোকান খোলার ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে গত দুইদিনের সংঘর্ষে দোকান বন্ধ থাকায় নিউমার্কেট এলাকার ১০ হাজার ব্যবসায়ীর প্রায় ২০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ঈদের বেশি দিন বাকি নেই। যতদিন যাচ্ছে ততই লোকসানের মাত্রা বাড়ছে। এর আগে সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে দোকান খুলে দেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, সাত কলেজের ছাত্ররা নাকি ঢাকা অচল করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নুরুল হক নুররাও ওদের সঙ্গে শামিল। ইডেনের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামার কথা বলেছে; বুঝে হোক আর না বুঝে হোক। পরিস্থিতি যাতে আর ঘোলা না হয়, সেজন্য আমি বলেছিলাম আজ (গতকাল) দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে পরিস্থিতি দেখে তারপর দোকান খুলতে।

কোর কমিটি গঠন করা হবে : সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীন বলেন, দোকানের কর্মচারীরা ক্রেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগের ব্যাপারে আমরাও একমত। আমরা কথা দিচ্ছি, ঈদের পর আমরা তাদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করব। আমাদের কর্মচারীরা খুব বেশি শিক্ষিত না। তারা বেয়াদবি করলে আমাদের সমিতির অফিসে এসে অভিযোগ জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, আমাদের কর্মচারীরা সুশিক্ষিত নন। তাই তারা অনেক ভুল করে থাকেন। আমরা এখন থেকে এমন অভিযোগ পাইলে আইনি ব্যবস্থা নিব। অতীতে কোন ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার নজির রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমরা সেই সুযোগই পাইনি। তাহলে ব্যবস্থা নিব কিভাবে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে দাবি করে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ ও এই এলাকার ব্যবসায়ী নেতাসহ আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটি কোর কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেব। যাতে যেকোন ঘটনা আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান করা যায়।

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান, সড়কে শিক্ষার্থীরা : তবে সংঘর্ষ নিয়ে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে গতকাল বিকেল ৫টার দিকে ফের সড়কে নেমেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা একাধিক দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় কয়েকটি বাজি ফাটানোর আওয়াজ শোনা যায়। এ ঘটনায় মিরপুর রোডে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কে নেমে আসা শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিচ্ছেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। যান চলাচল একেবারেই বন্ধ রয়েছে। নিউমার্কেটের সামনে ব্যবসায়ীরা সড়কে নেমে এলেও পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ব্যবসায়ীরা একতরফাভাবে সংবাদ সম্মেলন করে সংঘর্ষের পেছনে তাদের দায়ী করেছেন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দায়ী করে ব্যবসায়ীদের দেয়া এ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নিউমার্কেটের সব দোকান বন্ধ রাখতে হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নেতা বেলাল বলেন, আমাদের কোন শিক্ষার্থী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়নি বরং আমরা ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে বের হই। পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে আসেন। পুলিশের নিউমার্কেট জোনের এডিসি শাহেন শাহ মাহমুদ বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকটা মার্কেটে সাদা পতাকা উড়িয়েছে। ঢাকা কলেজের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা কথা বলেছে, বিষয়টা সমাধান হচ্ছে। বাকি উত্তেজনাও হয়তো ছাত্রদের মধ্যে থাকবে না।

নিউমার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে এমন খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা কলেজের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা নিউমার্কেট খোলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি- গত দুদিন ধরে চলা সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত নিউমার্কেটের কোন দোকান খোলা যাবে না। এডিসি বলেন, হঠাৎ করেই আবারও পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়। আমরা প্রয়োজন না হলে কখনও শক্তি প্রয়োগ করি না।

সংঘর্ষের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি : শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকারদের সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশের ওপর হামলা, সম্পদের ক্ষতি এবং হত্যার ঘটনায় মামলা করা হবে। জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের এডিসি শাহেন শাহ বলেন, যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় তার পরিবার বাদী হয়ে মামলা করবেন। তবে এখনও (রাত ৮টা) মামলা হয়নি। আমাদের পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাই আমরাও মামলা করার কথা ভাবছি। যুবক নাহিদ কোন গ্রুপের হামলায় নিহত হয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এডিসি বলেন, সেটি নিশ্চিত হতে আমরা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ ও তা পর্যবেক্ষণ করছি। যে পক্ষই দায়ী থাকে সেই পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে এডিসি বলেন, মঙ্গলবার মার্কেট বন্ধ রাখতে আমরা মার্কেট কমিটিকে নিষেধ করিনি। ওখানকার হকারদের কাছ থেকে স্থানীয় নেতা ও পুলিশ সদস্য টাকা নিচ্ছেন এমন প্রশ্নে এডিসি বলেন, ঢাকা শহরের সব জায়গা হকাররা বসেন। আমাকে যদি সিটি করপোরেশন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সরকারের সংশ্লিষ্টরা সিদ্ধান্ত দেন তাহলে আমি আজই হকারদের উঠিয়ে দিব।

হামলাকারীদের চিহ্নিত করাসহ ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের চার দাবি

সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী, দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিক ও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করাসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল নীলক্ষেত মোড়ে এক মানববন্ধনে এসব দাবি তোলা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলোÑ যারা হামলা করেছে, তাদের একটাই পরিচয় তারা সন্ত্রাসী। তাদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনা, হল এবং ক্যাম্পাস খোলা রেখে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই হল এবং ক্যাম্পাস বন্ধ করা যাবে না, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির নির্দেশ দানকারী এডিসি এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অবশ্যই অপসারণ করা ও অ্যাম্বুলেন্স এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

মানববন্ধনে সাত কলেজ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ইসমাইল হোসেন সম্রাট বলেন, ১৮ এপ্রিল মধ্যরাতে এডিসি হারুনের নেতৃত্বে ঢাকা কলেজে যে হামলা হয়েছে, সেই কারণেই আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। একটা গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। এডিসি হারুনের নির্লজ্জ আচরণে শুধু ঢাকা কলেজ নয়, সারা দেশের ছাত্রসমাজ আজ ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, হামলায় ঢাকা কলেজের ১২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব কলেজ প্রশাসন ও রাষ্ট্রকে নিতে হবে। যে শ্রমিক ভাই নিহত হয়েছেন, তার ওপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে এডিসি হারুন অর রশীদের দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, আমি ভিডিও দেখিনি। কী পরিস্থিতিতে এডিসি অন্য পুলিশ সদস্যকে থাপ্পড় মেরেছেন। রমনার ডিসি যদি রিপোর্ট করেন তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২ , ০৮ বৈশাখ ১৪২৮ ১৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

নিউমার্কেট এলাকার পরিস্থিতি থমথমে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দিনভর নানা নাটকীয়তা ও জল্পনা-কল্পনা শেষে গতকাল বিকেলে দোকান খোলার প্রস্তুতি নেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মিরপুর সড়কে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ফলে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকান খুলেননি ব্যবসায়ীরা। এর আগে বেলা ২টার দিকে ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দোকান খোলার ঘোষণা দেন। সেই অনুযায়ী বেলা ৩টার দিকে দোকানিরা দোকান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক সে সময় কে বা কারা নিউমার্কেটের সড়কে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে ব্যবসায়ীরা শাটার বন্ধ করে দেন। তবে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা গতকাল সারাদিন শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছিলেন। তাদের কেউ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়নি বরং তারা ককটেলের শব্দে ক্যাম্পাস থেকে বের হন। তৃতীয় কোন পক্ষ এমনটি করতে পারে। তবে সংঘর্ষ নিয়ে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিকেলের দিকে সড়কে নামেন শিক্ষার্থীরা।

টানা দুদিনের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো নিউমার্কেট এলাকা। গতকাল সকাল সকাল ওখানকার ২০-২২টি মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ফুটপাতের দোকানিরা আসেন। তবে ব্যবসায়ীরা দোকান খুলেননি। ফলে কর্মচারীরা জটলা বেধে বসে থাকেন। ফুটপাতের দোকানিরাও দোকান খুলেননি। সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে দোকান খোলার অনুমতি পাননি বলে জানিয়েছিলেন তারা। সংঘর্ষপরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মার্কেট খুলে দেয়া হবে বলে সকালে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর কিছুক্ষণ পর বেলা ২টায় ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন করে দোকান খোলার ঘোষণা দিলেও অবশেষে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আর দোকান খোলা হয়নি। এ ঘটনায় তৃতীয় পক্ষ জড়িত বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়লেও ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেছেন। সকাল থেকে মিরপুর রোডে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও চাপ ছিল একেবারে কম। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। এ ঘটনায় কাউকে আটক করাও সম্ভব হয়নি।

পুলিশ বলছেন, নিহত যুবক নাহিদের পরিবার মামলা করবেন। পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশও বাদী হয়ে মামলা করার কথা ভাবছে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নিউমার্কেট থানায় কোন মামলা হয়নি। নাহিদ কোন গ্রুপের হামলায় নিহত হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহসহ নানাভাবে কাজ করছে পুলিশ। গতকাল দুপুরের দিকে নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, নীলক্ষেত থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত পুরো রাস্তা প্রায় ফাঁকা। লোকজনের সংখ্যা একেবারেই কম। ওই রুটে চলাচলকারী যানের সংখ্যাও ছিল কম। ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র ১নং গেট খোলা রেখেছেন। বাকি গেটগুলো বন্ধ রয়েছে। ১নং গেটের সামনে ও ভেতরে ব্যবসায়ী, দোকানি ও কর্মচারীরা এসে ভিড় করছেন। ফুটপাতের দোকানিরাও সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ দোকান খুলছেন না।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের ভেতরেই অবস্থান করতে দেখা গেছে। সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা না থাকায় ক্যাম্পাসে হলের ছাত্র ছাড়া অন্যরা ছিলেন না। তবে বিভাগীয় কাজকর্ম করতে অধ্যক্ষসহ সব বিভাগের শিক্ষকরা ক্যাম্পাসেই ছিলেন। দেখা যায়, টানা দুদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবহৃত ভাঙা ইট, কাঠ, বাঁশ, ফুটপাতের পোড়া মালামালের অবশিষ্টাংশর স্তূপ পড়ে আছে। সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি এসব অপসারণ করেনি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে এসব ইট-পাথর আবারও ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। নিউমার্কেট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সড়ক থেকে এসব ইট-পাথর সরিয়ে নিতে সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার তারা জানিয়েছেন। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের কোন কর্মীকে ঘটনাস্থলে আসতে দেখা যায়নি। এখন এসব ভাঙা ইট-পাথরের কারণে সড়কে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

দুপুর ২টার দিকে ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী নেতারা ছাড়াও আশপাশের প্রায় সব মার্কেটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, ৪নং গেটের ক্যাপিটাল ফাস্টফুড ও ওয়েলকাম ফাস্টফুডের দোকানিদের স্টাফদের মধ্যে ইফতারির টেবিল বসা নিয়ে ঝামেলা হয়। পরে একটি দোকানের একজন স্টাফ ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত তার বন্ধুকে বিষয়টি জানায়। কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিষয়টি জানতে কিংবা মীমাংসা করতে ইফতারের পর মার্কেটে আসেন। তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দোকানের স্টাফদের ঝামেলা হয় এবং পরবর্তীতে তা ক্যাম্পাসে জানাজানি হলে কর্মচারী ও হাকরদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, গত মঙ্গলবার আমরা মার্কেট খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু সকাল ৬টার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে মার্কেট বন্ধ রাখতে বলা হয়। তাই আমরা মার্কেট বন্ধ রাখি। মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করলে ব্যবসায়ী, কর্মচারীরা কেন আসল, তাহলে মঙ্গলবারের সংঘর্ষ কী পরিকল্পিত? এমন প্রশ্নের জবাবে সভাপতি বলেন, সকালে মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা ব্যবসায়ী ও স্টাফদের জানাতে সময় লেগে যায়। এদের কেউ কেউ আবার বন্ধের বিষয়টি জানতে পারেননি। তাই মার্কেটে চলে আসেছেন। সেদিন সংঘর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছিল, ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা সাংবাদিক ও অ্যাম্বলেন্সে হামলা করেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এসব হামলায় নিউমার্কেটের কেউ জড়িত ছিল না। সেখানে তৃতীয় পক্ষ হামলা চালিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখলেই বিষয়টা স্পষ্ট হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে চাই এবং এই এলাকায় ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী একত্রে থাকতে চাই।

ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা এখান থেকে ঢাকা কলেজ সরিয়ে নেয়ার দাবি তুলেছে, এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব কথা বলে শিক্ষার্থীদের আরও উত্তেজিত করতে চাই না। আমরাও পড়াশোনা করে আসছি। আমাদের অনেক ব্যবসায়ীই ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। আমরা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি কিংবা কমিটি গঠন করতে চাই। যাতে ভবিষ্যতে কোন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী কিংবা কর্মচারী অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনা ঘটালে শিক্ষার্থীরা আমাদের কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারেন। সংবাদ সম্মেলনে দোকান খোলার ঘোষণা দেন তিনি। তবে তখনও ঢাকা কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের কোন ধরনের আলোচনা হয়নি।

গতকাল বেলা ২টা পর্যন্তও দোকান না খোলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। মন্ত্রী বলেছেন, দেখা যাক। পরিস্থিতি বুঝে দোকান খোলার কথা বলেছেন। এছাড়া আমাদের অন্যান্য ব্যবসায়িক সংগঠন ও নেতাদের কাছ থেকে দোকান খোলার বিষয়টি সঠিক সিদ্ধান্ত পাইনি বলে দোকান খোলা হয়নি। সংবাদ সম্মেলন শেষে বিকেলে দোকান খোলার ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে গত দুইদিনের সংঘর্ষে দোকান বন্ধ থাকায় নিউমার্কেট এলাকার ১০ হাজার ব্যবসায়ীর প্রায় ২০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ঈদের বেশি দিন বাকি নেই। যতদিন যাচ্ছে ততই লোকসানের মাত্রা বাড়ছে। এর আগে সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে দোকান খুলে দেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, সাত কলেজের ছাত্ররা নাকি ঢাকা অচল করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নুরুল হক নুররাও ওদের সঙ্গে শামিল। ইডেনের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামার কথা বলেছে; বুঝে হোক আর না বুঝে হোক। পরিস্থিতি যাতে আর ঘোলা না হয়, সেজন্য আমি বলেছিলাম আজ (গতকাল) দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে পরিস্থিতি দেখে তারপর দোকান খুলতে।

কোর কমিটি গঠন করা হবে : সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীন বলেন, দোকানের কর্মচারীরা ক্রেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগের ব্যাপারে আমরাও একমত। আমরা কথা দিচ্ছি, ঈদের পর আমরা তাদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করব। আমাদের কর্মচারীরা খুব বেশি শিক্ষিত না। তারা বেয়াদবি করলে আমাদের সমিতির অফিসে এসে অভিযোগ জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, আমাদের কর্মচারীরা সুশিক্ষিত নন। তাই তারা অনেক ভুল করে থাকেন। আমরা এখন থেকে এমন অভিযোগ পাইলে আইনি ব্যবস্থা নিব। অতীতে কোন ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার নজির রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমরা সেই সুযোগই পাইনি। তাহলে ব্যবস্থা নিব কিভাবে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে দাবি করে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ ও এই এলাকার ব্যবসায়ী নেতাসহ আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটি কোর কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেব। যাতে যেকোন ঘটনা আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান করা যায়।

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান, সড়কে শিক্ষার্থীরা : তবে সংঘর্ষ নিয়ে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে গতকাল বিকেল ৫টার দিকে ফের সড়কে নেমেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা একাধিক দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় কয়েকটি বাজি ফাটানোর আওয়াজ শোনা যায়। এ ঘটনায় মিরপুর রোডে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কে নেমে আসা শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিচ্ছেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। যান চলাচল একেবারেই বন্ধ রয়েছে। নিউমার্কেটের সামনে ব্যবসায়ীরা সড়কে নেমে এলেও পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ব্যবসায়ীরা একতরফাভাবে সংবাদ সম্মেলন করে সংঘর্ষের পেছনে তাদের দায়ী করেছেন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দায়ী করে ব্যবসায়ীদের দেয়া এ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নিউমার্কেটের সব দোকান বন্ধ রাখতে হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নেতা বেলাল বলেন, আমাদের কোন শিক্ষার্থী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়নি বরং আমরা ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে বের হই। পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে আসেন। পুলিশের নিউমার্কেট জোনের এডিসি শাহেন শাহ মাহমুদ বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকটা মার্কেটে সাদা পতাকা উড়িয়েছে। ঢাকা কলেজের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা কথা বলেছে, বিষয়টা সমাধান হচ্ছে। বাকি উত্তেজনাও হয়তো ছাত্রদের মধ্যে থাকবে না।

নিউমার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে এমন খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা কলেজের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা নিউমার্কেট খোলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি- গত দুদিন ধরে চলা সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত নিউমার্কেটের কোন দোকান খোলা যাবে না। এডিসি বলেন, হঠাৎ করেই আবারও পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়। আমরা প্রয়োজন না হলে কখনও শক্তি প্রয়োগ করি না।

সংঘর্ষের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি : শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকারদের সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশের ওপর হামলা, সম্পদের ক্ষতি এবং হত্যার ঘটনায় মামলা করা হবে। জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের এডিসি শাহেন শাহ বলেন, যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় তার পরিবার বাদী হয়ে মামলা করবেন। তবে এখনও (রাত ৮টা) মামলা হয়নি। আমাদের পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাই আমরাও মামলা করার কথা ভাবছি। যুবক নাহিদ কোন গ্রুপের হামলায় নিহত হয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এডিসি বলেন, সেটি নিশ্চিত হতে আমরা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ ও তা পর্যবেক্ষণ করছি। যে পক্ষই দায়ী থাকে সেই পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে এডিসি বলেন, মঙ্গলবার মার্কেট বন্ধ রাখতে আমরা মার্কেট কমিটিকে নিষেধ করিনি। ওখানকার হকারদের কাছ থেকে স্থানীয় নেতা ও পুলিশ সদস্য টাকা নিচ্ছেন এমন প্রশ্নে এডিসি বলেন, ঢাকা শহরের সব জায়গা হকাররা বসেন। আমাকে যদি সিটি করপোরেশন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সরকারের সংশ্লিষ্টরা সিদ্ধান্ত দেন তাহলে আমি আজই হকারদের উঠিয়ে দিব।

হামলাকারীদের চিহ্নিত করাসহ ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের চার দাবি

সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী, দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিক ও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করাসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল নীলক্ষেত মোড়ে এক মানববন্ধনে এসব দাবি তোলা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলোÑ যারা হামলা করেছে, তাদের একটাই পরিচয় তারা সন্ত্রাসী। তাদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনা, হল এবং ক্যাম্পাস খোলা রেখে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই হল এবং ক্যাম্পাস বন্ধ করা যাবে না, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির নির্দেশ দানকারী এডিসি এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অবশ্যই অপসারণ করা ও অ্যাম্বুলেন্স এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

মানববন্ধনে সাত কলেজ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ইসমাইল হোসেন সম্রাট বলেন, ১৮ এপ্রিল মধ্যরাতে এডিসি হারুনের নেতৃত্বে ঢাকা কলেজে যে হামলা হয়েছে, সেই কারণেই আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। একটা গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। এডিসি হারুনের নির্লজ্জ আচরণে শুধু ঢাকা কলেজ নয়, সারা দেশের ছাত্রসমাজ আজ ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, হামলায় ঢাকা কলেজের ১২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব কলেজ প্রশাসন ও রাষ্ট্রকে নিতে হবে। যে শ্রমিক ভাই নিহত হয়েছেন, তার ওপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে এডিসি হারুন অর রশীদের দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, আমি ভিডিও দেখিনি। কী পরিস্থিতিতে এডিসি অন্য পুলিশ সদস্যকে থাপ্পড় মেরেছেন। রমনার ডিসি যদি রিপোর্ট করেন তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।