নিউমার্কেটে সংঘর্ষে তৃতীয় পক্ষ কারা?

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট ও আশপাশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় তৃতীয় পক্ষ ছিল বলে দাবি উঠেছে। ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী উভয়পক্ষের অভিন্ন দাবি ওঠায় পুলিশ ও গোয়েন্দারা খোঁজখবর শুরু করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় এর উৎস খোঁজা হচ্ছে। বিশেষ করে টানা দেড় দিনের বেশি সময় বিরামহীন সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কারা উত্তাপ ছড়িয়েছে তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে নানা বয়সী কয়েকশ’ লোক হেলমেট পরে সংঘাতে জড়ালে তাদের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াসা সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় কতটুকু রাজনৈতিক ইন্ধন কাজ করেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সেই সঙ্গে ঢাকা নিউমার্কেটের দুই ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারীদের বাগবিত-া থেকে সূত্রপাত হওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনার প্রভাব মুহূর্তেই কিভাবে বিরাট এলাকার কমপক্ষে ২২টি মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে তার কারণ অনুসন্ধান করছে গোয়েন্দারা। ছাত্র-ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘাত বাঁধিয়ে কে কি ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছিল তার কারণ খুঁজছে পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমদিন রাতে সংঘর্ষের পরদিন মঙ্গলবার সকালে বিনা উস্কানিতে ঢাকা কলেজে হামলা, মার্কেট বন্ধ ঘোষণার পরেও ব্যবসায়ী কর্মচারীসহ শত শত লোকের সমবেত হওয়া, ১২ সাংবাদিককে মারাত্মকভাবে জখম করা, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করার ঘটনাগুলো ৩য় পক্ষের উপস্থিতির দাবি আরও জোরদার করে তুলেছে। এমনকি ব্যবসায়ী নেতারাও বলছেন, সাংবাদিকদের ওপর ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা কোন ছাত্র বা ব্যবসায়ীর কাজ হতে পারে না। এখানে ৩য় পক্ষ থাকতে পারে। ঢাকা কলেজের কর্তৃপক্ষও সংঘর্ষের পেছনে উস্কানির কথা বলেছেন।

এই ৩য় পক্ষ কারা, কার নির্দেশে তারা হামলায় অংশ নিয়েছে এসব বিষয়ে জানতে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। অতি উৎসাহী হামলাকারীদের পরিচয় নিশ্চিত হতে কমপক্ষে ১০ জন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা কলেজের বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ফুটেজ দেখে কয়েকজন সহিংস হকারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি নিউমার্কেটে ফাস্টফুডের ঘটনায় মারধরের শিকার হওয়ার পর ক্যাম্পাসে ফিরে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে উত্তাপ সৃষ্টি করা ৩ ছাত্রকেও চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, গতকাল দুপুরে নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এত বড় ঘটনার পেছনে নিশ্চিত কোন তৃতীয় পক্ষ রয়েছে। কেননা সংঘর্ষ চলাকালে অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাটিও অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমি মনে করি, কোন ব্যবসায়ী বা ছাত্র এ কাজ করতে পারে না। এ ঘটনায় স্পষ্ট প্রতীয়মান এখানে তৃতীয়পক্ষ জড়িত। জানি না তারা কারা? তিনি আরও বলেন, তারা উশৃঙ্খল জনতা, এখানে তৃতীয় পক্ষ ছিল, নিশ্চিত করে বলছি। তবে এ ঘটনায় যদি কোন ব্যবসায়ী জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া

যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের ওপর দোকান মালিক-কর্মচারীদের হামলার বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কর্মচারীরা তেমন লেখাপড়া জানে না। তারা যদি কোন খারাপ আচারণ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এটিএম মইনুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, গত সোমবার রাতে সংঘর্ষের পর আমরা আমাদের ছাত্রদের বুঝিয়ে নিয়ে আসি এবং ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। কিন্তু হঠাৎ করে মঙ্গলবার সকালে মার্কেটের লোকজন এসে আক্রমণ চালায় এবং ঢাকা কলেজের ভেতরেও ঢুকে যায়। এরপরই সমস্যাটি হয়। আর এবার যে ঝামেলা হয়েছে সেটি তো পুরোটাই তাদের (নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী) অভ্যন্তরীণ বিষয় থেকে শুরু। এখানে ছাত্ররা জড়িত ছিল না, জড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, সোমবার রাতে সংঘর্ষ হওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই নিউমার্কেট এলাকায় জড়ো হন শত শত ব্যবসায়ী-হকার ও কর্মচারী। তারা আতর্কিতভাবে ঢাকা কলেজে হামলার পর ব্যাপক পরিসরে সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম থাকলেও অতি উৎসাহী কিছু লোক সামনে থেকে হামলায় অংশ নেয়। তারা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা কর্মচারীদের সংঘর্ষে অংশ নিতে আহ্বানও জানায়। অনেক কর্মচারী তা-বে অংশ না নিয়ে ফুটওভারব্রীজে দাঁড়িয়ে থাকায় তাদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরই মাঝে একদল লোক হেলমেট পড়ে তা-বে অংশ নেয়। কিন্তু এই লোকগুলো কি উদ্দেশে এত উৎসাহ দেখাল, সাংবাদিকদের ওওপর হামলা করল সে বিষয়ে কেউ কোন তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। এদিকে বিরতিহীন সংঘর্ষের আঁচ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লেও পরিস্থিতি নিরসনে স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের দেখা পাননি কেউ। তিনি নিজেও একজন বড়মাপের ব্যবসায়ী। তার এ নীরবতায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠছে।

ডিএমপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়াদের বেশিরভাগই দোকান কর্মচারী ও ফুটপাথের হকার। বিনা উসকানিতে কেউ সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে কি-না সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। নিউমার্কেট থানা ছাড়াও ডিএমপির নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি), পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও সাইবার টিম ঘটনা তদন্তে কাজ করছে। মিথ্যা তথ্য প্রচার করে কেউ পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে কি-না তা শনাক্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ বেশ কয়েকজন সহিংস হকারকে চিহ্নিত করেছে। একাধিক ফুটেজে ঘুরে ফিরে তাদের চেহারা দেখা গেছে। সাংবাদিকদের ওপর ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলাসহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ ও পথচারীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ বলেন, ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের কাছ থেকে তৃতীয়পক্ষের কথা আমরাও শুনেছি। ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। অতি উৎসাহী বেশ কয়েকজন হামলাকারীকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যারা হেলমেট পরিহিত ছিল তারা শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী বলে মনে হচ্ছে। এর কারণ, এখন অনেক শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীর মোটরসাইকেল রয়েছে। সংঘর্ষ শুরুর পর উভয়পক্ষের অনেককেই আমরা মোটরসাইকেল থেকে হেলমেট নিয়ে পরতে দেখেছি।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে। মামলায় ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিউ মার্কেট থানা সূত্রে জানা গেছে, মামলায় ডেলিভারিম্যান নাহিদকে হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ইত্যাদির ধারা যুক্ত করা হবে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আহত হন।

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২ , ০৮ বৈশাখ ১৪২৮ ১৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

নিউমার্কেটে সংঘর্ষে তৃতীয় পক্ষ কারা?

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট ও আশপাশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় তৃতীয় পক্ষ ছিল বলে দাবি উঠেছে। ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী উভয়পক্ষের অভিন্ন দাবি ওঠায় পুলিশ ও গোয়েন্দারা খোঁজখবর শুরু করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় এর উৎস খোঁজা হচ্ছে। বিশেষ করে টানা দেড় দিনের বেশি সময় বিরামহীন সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কারা উত্তাপ ছড়িয়েছে তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে নানা বয়সী কয়েকশ’ লোক হেলমেট পরে সংঘাতে জড়ালে তাদের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াসা সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় কতটুকু রাজনৈতিক ইন্ধন কাজ করেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সেই সঙ্গে ঢাকা নিউমার্কেটের দুই ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারীদের বাগবিত-া থেকে সূত্রপাত হওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনার প্রভাব মুহূর্তেই কিভাবে বিরাট এলাকার কমপক্ষে ২২টি মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে তার কারণ অনুসন্ধান করছে গোয়েন্দারা। ছাত্র-ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘাত বাঁধিয়ে কে কি ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছিল তার কারণ খুঁজছে পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমদিন রাতে সংঘর্ষের পরদিন মঙ্গলবার সকালে বিনা উস্কানিতে ঢাকা কলেজে হামলা, মার্কেট বন্ধ ঘোষণার পরেও ব্যবসায়ী কর্মচারীসহ শত শত লোকের সমবেত হওয়া, ১২ সাংবাদিককে মারাত্মকভাবে জখম করা, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করার ঘটনাগুলো ৩য় পক্ষের উপস্থিতির দাবি আরও জোরদার করে তুলেছে। এমনকি ব্যবসায়ী নেতারাও বলছেন, সাংবাদিকদের ওপর ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা কোন ছাত্র বা ব্যবসায়ীর কাজ হতে পারে না। এখানে ৩য় পক্ষ থাকতে পারে। ঢাকা কলেজের কর্তৃপক্ষও সংঘর্ষের পেছনে উস্কানির কথা বলেছেন।

এই ৩য় পক্ষ কারা, কার নির্দেশে তারা হামলায় অংশ নিয়েছে এসব বিষয়ে জানতে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। অতি উৎসাহী হামলাকারীদের পরিচয় নিশ্চিত হতে কমপক্ষে ১০ জন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা কলেজের বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ফুটেজ দেখে কয়েকজন সহিংস হকারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি নিউমার্কেটে ফাস্টফুডের ঘটনায় মারধরের শিকার হওয়ার পর ক্যাম্পাসে ফিরে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে উত্তাপ সৃষ্টি করা ৩ ছাত্রকেও চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, গতকাল দুপুরে নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এত বড় ঘটনার পেছনে নিশ্চিত কোন তৃতীয় পক্ষ রয়েছে। কেননা সংঘর্ষ চলাকালে অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাটিও অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমি মনে করি, কোন ব্যবসায়ী বা ছাত্র এ কাজ করতে পারে না। এ ঘটনায় স্পষ্ট প্রতীয়মান এখানে তৃতীয়পক্ষ জড়িত। জানি না তারা কারা? তিনি আরও বলেন, তারা উশৃঙ্খল জনতা, এখানে তৃতীয় পক্ষ ছিল, নিশ্চিত করে বলছি। তবে এ ঘটনায় যদি কোন ব্যবসায়ী জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া

যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের ওপর দোকান মালিক-কর্মচারীদের হামলার বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কর্মচারীরা তেমন লেখাপড়া জানে না। তারা যদি কোন খারাপ আচারণ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এটিএম মইনুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, গত সোমবার রাতে সংঘর্ষের পর আমরা আমাদের ছাত্রদের বুঝিয়ে নিয়ে আসি এবং ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। কিন্তু হঠাৎ করে মঙ্গলবার সকালে মার্কেটের লোকজন এসে আক্রমণ চালায় এবং ঢাকা কলেজের ভেতরেও ঢুকে যায়। এরপরই সমস্যাটি হয়। আর এবার যে ঝামেলা হয়েছে সেটি তো পুরোটাই তাদের (নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী) অভ্যন্তরীণ বিষয় থেকে শুরু। এখানে ছাত্ররা জড়িত ছিল না, জড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, সোমবার রাতে সংঘর্ষ হওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই নিউমার্কেট এলাকায় জড়ো হন শত শত ব্যবসায়ী-হকার ও কর্মচারী। তারা আতর্কিতভাবে ঢাকা কলেজে হামলার পর ব্যাপক পরিসরে সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম থাকলেও অতি উৎসাহী কিছু লোক সামনে থেকে হামলায় অংশ নেয়। তারা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা কর্মচারীদের সংঘর্ষে অংশ নিতে আহ্বানও জানায়। অনেক কর্মচারী তা-বে অংশ না নিয়ে ফুটওভারব্রীজে দাঁড়িয়ে থাকায় তাদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরই মাঝে একদল লোক হেলমেট পড়ে তা-বে অংশ নেয়। কিন্তু এই লোকগুলো কি উদ্দেশে এত উৎসাহ দেখাল, সাংবাদিকদের ওওপর হামলা করল সে বিষয়ে কেউ কোন তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। এদিকে বিরতিহীন সংঘর্ষের আঁচ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লেও পরিস্থিতি নিরসনে স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের দেখা পাননি কেউ। তিনি নিজেও একজন বড়মাপের ব্যবসায়ী। তার এ নীরবতায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠছে।

ডিএমপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়াদের বেশিরভাগই দোকান কর্মচারী ও ফুটপাথের হকার। বিনা উসকানিতে কেউ সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে কি-না সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। নিউমার্কেট থানা ছাড়াও ডিএমপির নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি), পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও সাইবার টিম ঘটনা তদন্তে কাজ করছে। মিথ্যা তথ্য প্রচার করে কেউ পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে কি-না তা শনাক্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ বেশ কয়েকজন সহিংস হকারকে চিহ্নিত করেছে। একাধিক ফুটেজে ঘুরে ফিরে তাদের চেহারা দেখা গেছে। সাংবাদিকদের ওপর ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলাসহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ ও পথচারীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ বলেন, ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের কাছ থেকে তৃতীয়পক্ষের কথা আমরাও শুনেছি। ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। অতি উৎসাহী বেশ কয়েকজন হামলাকারীকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যারা হেলমেট পরিহিত ছিল তারা শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী বলে মনে হচ্ছে। এর কারণ, এখন অনেক শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীর মোটরসাইকেল রয়েছে। সংঘর্ষ শুরুর পর উভয়পক্ষের অনেককেই আমরা মোটরসাইকেল থেকে হেলমেট নিয়ে পরতে দেখেছি।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে। মামলায় ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিউ মার্কেট থানা সূত্রে জানা গেছে, মামলায় ডেলিভারিম্যান নাহিদকে হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ইত্যাদির ধারা যুক্ত করা হবে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আহত হন।