পটুয়াখালী অপরাধ জগতের হোতা ল্যাংড়া মামুনসহ গ্রেপ্তার ৫

ব্যবসায়ী শিবু লালকে ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ

মুফতি মামুন ওরফে ল্যাংড়া মামুন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ডান পা হারালেও অপরাধমূলক নানা কর্মকা-ে জড়িয়ে ছিলেন। ভগ্নিপতির টাকা আত্মসাৎ করে পটুয়াখালী শহরে একাধিক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন তিনি। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষকে আটকে রেখে আপত্তিকর ছবি তুলে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। তার রয়েছে দুটি টর্চার সেলও। পটুয়াখালীর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শিবু লালকে ফিল্মি স্টাইলে অপহরণও করেন এই ল্যাংড়া মামুন।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা ও গুলিস্তান এলাকায় অভিযান চালিয়ে পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী শিবু লাল দাসকে অপহরণের মূলহোতা ল্যাংড়া মামুন ওরফে মুফতি মামুনসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি গুলশান বিভাগ। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য ব্যক্তিরা হলেনÑ ল্যাংড়া মামুনের সহযোগী পিচ্চি রানা, বিআরটিসির গাড়িচালক জসীম উদ্দীন এবং রেন্ট-এ-কারের দালাল আশিকুর রহমান। এ সময় তাদের কাছ থেকে অপহরণ কা-ে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, মোবাইল ফোন, গামছা ও চার হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ, ডিবি গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান। এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নানা অপকৌশলে পটুয়াখালী জেলা শহরে মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে যান মামুন। তার অর্থের প্রধান উৎস মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-। এলাকায় বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়া এবং বড় ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মামুন।

অপহরণের শিকার শিবু লাল দাস পটুয়াখালী জেলা শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন ব্যবসায় সম্পৃক্ত। গত ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে গলাচিপার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের গাড়িতে করে পটুয়াখালী শহরের বাসায় ফেরার পথে ড্রাইভারসহ নিখোঁজ হন শিবু লাল দাস। পরে দূরের একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে পরিত্যক্ত অবস্থায় তার পাজেরো জিপটিকে উদ্ধার করে জেলা পুলিশ। পরদিন ১২ এপ্রিল রাতে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় শিবু লালকে উদ্ধার করে পুলিশ। জেলা পুলিশের অনুরোধে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে ডিএমপির গুলশান ডিবি। অবশেষে গত মঙ্গলবার অপহরণে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধ স্বীকার করেছে এবং নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।

অপহরণের পরিকল্পনা : হাফিজ আক্তার বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের কাছাকাছি ল্যাংড়া মামুনের পোশাক কারখানার অফিসে বসে পরিকল্পনা সাজায় অপহরণকারীরা। এতে অংশ নেয় ল্যাংড়া মামুন, পিচ্চি রানা, পাভেল ও বিআরটিসির গাড়িচালক জসিম। পরে একাধিকবার মিটিং ও অপারেশনাল পরিকল্পনা করে তারা। এই মিটিংয়ে ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে যোগ দেয় জসীম উদ্দীন মৃধা ও তার ভাই গাড়ির দালাল আশিক মৃধা। আগাম ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা থেকে এক সপ্তাহের জন্য গাড়ি ভাড়া করা হয়। এছাড়া অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগসহ অপারেশনাল কাজে ব্যবহার করার জন্য সাভার থেকে কেনা হয় পাঁচটি বাটন মোবাইল ফোন। বেশি দাম দিয়ে কেনা হয় অন্যজনের নামে নিবন্ধন করা সিম। এরপর একটি খেলনা পিস্তল, দুটি সুইচ গিয়ার চাকু, তিনটি চাপাতি ও গরু জবাই করার একটি বড় ছুরি সংগ্রহ করে তারা। একাধিক দিন রেকি করে ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ করা হয় শিবু লাল দাসকে।

লোমহর্ষক অপহরণ অপারেশন : ১১ এপ্রিল দুপুরে পটুয়াখালী এয়ারপোর্টের কাছে মিলিত হয়ে কার কোথায় কী দায়িত্ব তা নির্ধারণ করে দেয় ল্যাংড়া মামুন ও পিচ্চি রানা। শিবু লালের গতিবিধি জানানোর জন্য পিচ্চি রানা ও ল্যাংড়া মামুন মোটরসাইকেলে করে যায় গলাচিপা ঘাটে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্যারিকেড দেয়ার জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা সড়কের শাঁখারিয়ার নির্জন জায়গায় একটা প্রাইভেটকার ও একটা ট্রলি নিয়ে অবস্থান নেয় তাদের পাঁচ সহযোগী। ল্যাংড়া মামুনের সংকেত পাওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে ড্রাইভার বিল্লাল ট্রলিটি নিয়ে সুকৌশলে শিবু লাল দাসের জিপের সামনে আড়াআড়ি করে অবস্থান নেয়। পেছন থেকে অনুসরণ করতে থাকা আশিক মৃধা তার প্রাইভেটকার নিয়ে শিবু লালের গাড়ির পেছনে অবস্থান নেয়।

এরপর আশিক মৃধা প্রাইভেটকার ছেড়ে শিবু লালের গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। গাড়িতে উঠেই বিল্লাল, পাভেল, সোহাগ, আশিক শিবু লাল ও তার গাড়িচালককে বেঁধে ফেলে। গামছা, টিস্যু পেপার ও স্কচ টেপ দিয়ে মুখ, হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালাতে থাকে। বরগুনার আমতলী এলাকার গাজিপুরায় গিয়ে শিবু লাল ও তার গাড়িচালককে তোলা হয় ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া প্রাইভেটকারটিতে।? সেখানে দুজনকেই বেঁধে প্লাস্টিকের বস্তায় ঢুকানো হয়। শিবু লালের জিপটিকে আমতলীর একটি ফিলিং স্টেশনে ফেলে আসে তারা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ল্যাংড়া মামুন ও পিচ্চি রানা পটুয়াখালীর বাঁধঘাট এলাকায় ভিকটিমদের বহনকারী গাড়ি বুঝে নেয়। এরপর পটুয়াখালী শহরের এইচডি রোডের নিজস্ব মেশিন ঘর কাম টর্চার সেলে নেয়া হয় তাদের। সেখান থেকে পরে নিয়ে যাওয়া হয় এসপি কমপ্লেক্স সুপার মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডের অস্থায়ী সেলে। সেখানে রাতভর নির্যাতন চালানো হয় শিবু লাল ও তার গাড়িচালকের ওপর। পরদিন পিচ্চি রানার নির্দেশে বিল্লাল শিবু লালের সিম থেকে তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং বিষয়টি পুলিশকে জানালে শিবু লালকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয় সে।

মামুনের ছিল টর্চার সেল : এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ল্যাংড়া মামুন অল্প বয়সে অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে। নিজের ভগ্নিপতির টাকা মেরে দিয়ে পটুয়াখালী শহরে একাধিক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছে সে। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষকে তার টর্চার সেলে আটকে রেখে আপত্তিকর ছবি তুলত সে। এরপর তাদের ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা। মাওলানা হিসেবে তার বাবার সুখ্যাতি এবং বেপরোয়া আচরণের কারণে পঙ্গু এ ক্যাডারের ভয়ে এতদিন মুখ খোলেনি কেউ। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া তাদের নামে আরও একটি মামলা করা হবে মাদক আইনে।

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২ , ০৮ বৈশাখ ১৪২৮ ১৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

পটুয়াখালী অপরাধ জগতের হোতা ল্যাংড়া মামুনসহ গ্রেপ্তার ৫

ব্যবসায়ী শিবু লালকে ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মুফতি মামুন ওরফে ল্যাংড়া মামুন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ডান পা হারালেও অপরাধমূলক নানা কর্মকা-ে জড়িয়ে ছিলেন। ভগ্নিপতির টাকা আত্মসাৎ করে পটুয়াখালী শহরে একাধিক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন তিনি। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষকে আটকে রেখে আপত্তিকর ছবি তুলে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। তার রয়েছে দুটি টর্চার সেলও। পটুয়াখালীর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শিবু লালকে ফিল্মি স্টাইলে অপহরণও করেন এই ল্যাংড়া মামুন।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা ও গুলিস্তান এলাকায় অভিযান চালিয়ে পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী শিবু লাল দাসকে অপহরণের মূলহোতা ল্যাংড়া মামুন ওরফে মুফতি মামুনসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি গুলশান বিভাগ। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য ব্যক্তিরা হলেনÑ ল্যাংড়া মামুনের সহযোগী পিচ্চি রানা, বিআরটিসির গাড়িচালক জসীম উদ্দীন এবং রেন্ট-এ-কারের দালাল আশিকুর রহমান। এ সময় তাদের কাছ থেকে অপহরণ কা-ে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, মোবাইল ফোন, গামছা ও চার হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ, ডিবি গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান। এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নানা অপকৌশলে পটুয়াখালী জেলা শহরে মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে যান মামুন। তার অর্থের প্রধান উৎস মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-। এলাকায় বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়া এবং বড় ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মামুন।

অপহরণের শিকার শিবু লাল দাস পটুয়াখালী জেলা শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন ব্যবসায় সম্পৃক্ত। গত ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে গলাচিপার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের গাড়িতে করে পটুয়াখালী শহরের বাসায় ফেরার পথে ড্রাইভারসহ নিখোঁজ হন শিবু লাল দাস। পরে দূরের একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে পরিত্যক্ত অবস্থায় তার পাজেরো জিপটিকে উদ্ধার করে জেলা পুলিশ। পরদিন ১২ এপ্রিল রাতে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় শিবু লালকে উদ্ধার করে পুলিশ। জেলা পুলিশের অনুরোধে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে ডিএমপির গুলশান ডিবি। অবশেষে গত মঙ্গলবার অপহরণে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধ স্বীকার করেছে এবং নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।

অপহরণের পরিকল্পনা : হাফিজ আক্তার বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের কাছাকাছি ল্যাংড়া মামুনের পোশাক কারখানার অফিসে বসে পরিকল্পনা সাজায় অপহরণকারীরা। এতে অংশ নেয় ল্যাংড়া মামুন, পিচ্চি রানা, পাভেল ও বিআরটিসির গাড়িচালক জসিম। পরে একাধিকবার মিটিং ও অপারেশনাল পরিকল্পনা করে তারা। এই মিটিংয়ে ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে যোগ দেয় জসীম উদ্দীন মৃধা ও তার ভাই গাড়ির দালাল আশিক মৃধা। আগাম ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা থেকে এক সপ্তাহের জন্য গাড়ি ভাড়া করা হয়। এছাড়া অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগসহ অপারেশনাল কাজে ব্যবহার করার জন্য সাভার থেকে কেনা হয় পাঁচটি বাটন মোবাইল ফোন। বেশি দাম দিয়ে কেনা হয় অন্যজনের নামে নিবন্ধন করা সিম। এরপর একটি খেলনা পিস্তল, দুটি সুইচ গিয়ার চাকু, তিনটি চাপাতি ও গরু জবাই করার একটি বড় ছুরি সংগ্রহ করে তারা। একাধিক দিন রেকি করে ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ করা হয় শিবু লাল দাসকে।

লোমহর্ষক অপহরণ অপারেশন : ১১ এপ্রিল দুপুরে পটুয়াখালী এয়ারপোর্টের কাছে মিলিত হয়ে কার কোথায় কী দায়িত্ব তা নির্ধারণ করে দেয় ল্যাংড়া মামুন ও পিচ্চি রানা। শিবু লালের গতিবিধি জানানোর জন্য পিচ্চি রানা ও ল্যাংড়া মামুন মোটরসাইকেলে করে যায় গলাচিপা ঘাটে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্যারিকেড দেয়ার জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা সড়কের শাঁখারিয়ার নির্জন জায়গায় একটা প্রাইভেটকার ও একটা ট্রলি নিয়ে অবস্থান নেয় তাদের পাঁচ সহযোগী। ল্যাংড়া মামুনের সংকেত পাওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে ড্রাইভার বিল্লাল ট্রলিটি নিয়ে সুকৌশলে শিবু লাল দাসের জিপের সামনে আড়াআড়ি করে অবস্থান নেয়। পেছন থেকে অনুসরণ করতে থাকা আশিক মৃধা তার প্রাইভেটকার নিয়ে শিবু লালের গাড়ির পেছনে অবস্থান নেয়।

এরপর আশিক মৃধা প্রাইভেটকার ছেড়ে শিবু লালের গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। গাড়িতে উঠেই বিল্লাল, পাভেল, সোহাগ, আশিক শিবু লাল ও তার গাড়িচালককে বেঁধে ফেলে। গামছা, টিস্যু পেপার ও স্কচ টেপ দিয়ে মুখ, হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালাতে থাকে। বরগুনার আমতলী এলাকার গাজিপুরায় গিয়ে শিবু লাল ও তার গাড়িচালককে তোলা হয় ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া প্রাইভেটকারটিতে।? সেখানে দুজনকেই বেঁধে প্লাস্টিকের বস্তায় ঢুকানো হয়। শিবু লালের জিপটিকে আমতলীর একটি ফিলিং স্টেশনে ফেলে আসে তারা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ল্যাংড়া মামুন ও পিচ্চি রানা পটুয়াখালীর বাঁধঘাট এলাকায় ভিকটিমদের বহনকারী গাড়ি বুঝে নেয়। এরপর পটুয়াখালী শহরের এইচডি রোডের নিজস্ব মেশিন ঘর কাম টর্চার সেলে নেয়া হয় তাদের। সেখান থেকে পরে নিয়ে যাওয়া হয় এসপি কমপ্লেক্স সুপার মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডের অস্থায়ী সেলে। সেখানে রাতভর নির্যাতন চালানো হয় শিবু লাল ও তার গাড়িচালকের ওপর। পরদিন পিচ্চি রানার নির্দেশে বিল্লাল শিবু লালের সিম থেকে তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং বিষয়টি পুলিশকে জানালে শিবু লালকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয় সে।

মামুনের ছিল টর্চার সেল : এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ল্যাংড়া মামুন অল্প বয়সে অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে। নিজের ভগ্নিপতির টাকা মেরে দিয়ে পটুয়াখালী শহরে একাধিক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছে সে। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষকে তার টর্চার সেলে আটকে রেখে আপত্তিকর ছবি তুলত সে। এরপর তাদের ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা। মাওলানা হিসেবে তার বাবার সুখ্যাতি এবং বেপরোয়া আচরণের কারণে পঙ্গু এ ক্যাডারের ভয়ে এতদিন মুখ খোলেনি কেউ। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া তাদের নামে আরও একটি মামলা করা হবে মাদক আইনে।