ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের উৎসের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয় ময়মনসিংহ দুদক কার্যালয়ে। দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ত্রিশালের মেয়রের সম্পদ বিবরণীও তলব করে দুদক। পরবর্র্তীতে নিজের স্থাবর, অস্থাবর সম্পদের বিবরণী জমা দেন এবিএম আনিসুজ্জামান। সম্পদ বিবরণীতে ত্রিশালে নিজের বাড়ি-গাড়ি, কৃষি জমি, দোকান-পুকুরসহ প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পদের বিবরণ দেন তিনি। এবিএম আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন দুদকের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে। তার সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই চলছে। তবে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে তার সম্পদ বিবরণীতে কিছু গড়মিল পাওয়া গেছে। অনুসন্ধান শেষে আইনগত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা আনিসুজ্জামানের সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছি, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এবিএম আনিসুজ্জামান তার সম্পদের বিবরণী জমা দিয়েছেন। তার সম্পদের বিবরণী কতটুকু সঠিক, সেটিও আমরা খতিয়ে দেখছি। এছাড়া আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কিছু তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছি, কিছু চিঠির জবাব পেয়েছি, আরও কিছু চিঠির জবাবের অপেক্ষায় আছি। সব হাতে পেলে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করে দেখবো। তার সম্পদ বিবরণীর বাইরে আর কোন সম্পদ আছে কি-না, থাকলে তার আয়ের সোর্স কি, এগুলো গ্রহণযোগ্য কি-না, এসব নিয়ে আমরা কাজ করছি। অনুসন্ধানে যদি অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু পাওয়া যায়, তাহলে আইনগত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনে ত্রিশাল পৌরসভার এই মেয়রের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মামুন অর রশিদ। ওই অভিযোগে জানা যায়, মেয়র আনিস অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি খাস জমি দখল করে
মার্কেট নির্মাণ করেন। সুতিয়া নদী দখলের সহায়ক হয়ে রায়মনি আকিজ কোম্পানির ভূমির জাল দলিলে সহযোগিতা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ময়মনসিংহ নগরীর জিলা স্কুল মোড়ে দশ তলা বিলাসবহুল মেয়র টাওয়ার নির্মাণ করেছেন। ত্রিশালের চেলেরঘাটে ৮ একর জমির ওপর গড়ে তুলেছেন পেপার মিল। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নামে-বেনামে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২০ একর জমি। নিজ নামে রয়েছে প্রায় ১০টি ট্রাক ও বিলাসবহুল গাড়ি। পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকা- নয়ছয় করে ঠিকাদারের যোগসাজশে হাতিয়ে নিয়েছেন আরও প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জন করেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
উল্লেখ্য, গত বছর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো ত্রিশালের পৌরমেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এবিএম আনিসুজ্জামান। ২০১৬ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এক যুবলীগ নেতা হত্যা মামলায় তাকে আসামি করে মামলাও করা হয়েছিল। এবার তার বিরুদ্ধে চলছে দুর্নীতির অনুসন্ধান। এ বিষয়ে জানতে পৌরমেয়র আনিসুজ্জামানের মোবাইলে কল করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
গতকালও নিউমার্কেট এলাকায় দোকানপাট ছিল বন্ধ -সংবাদ
আরও খবরবৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২ , ০৮ বৈশাখ ১৪২৮ ১৯ রমাদ্বান ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
গতকালও নিউমার্কেট এলাকায় দোকানপাট ছিল বন্ধ -সংবাদ
ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের উৎসের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয় ময়মনসিংহ দুদক কার্যালয়ে। দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ত্রিশালের মেয়রের সম্পদ বিবরণীও তলব করে দুদক। পরবর্র্তীতে নিজের স্থাবর, অস্থাবর সম্পদের বিবরণী জমা দেন এবিএম আনিসুজ্জামান। সম্পদ বিবরণীতে ত্রিশালে নিজের বাড়ি-গাড়ি, কৃষি জমি, দোকান-পুকুরসহ প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পদের বিবরণ দেন তিনি। এবিএম আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন দুদকের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে। তার সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই চলছে। তবে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে তার সম্পদ বিবরণীতে কিছু গড়মিল পাওয়া গেছে। অনুসন্ধান শেষে আইনগত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা আনিসুজ্জামানের সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছি, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এবিএম আনিসুজ্জামান তার সম্পদের বিবরণী জমা দিয়েছেন। তার সম্পদের বিবরণী কতটুকু সঠিক, সেটিও আমরা খতিয়ে দেখছি। এছাড়া আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কিছু তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছি, কিছু চিঠির জবাব পেয়েছি, আরও কিছু চিঠির জবাবের অপেক্ষায় আছি। সব হাতে পেলে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করে দেখবো। তার সম্পদ বিবরণীর বাইরে আর কোন সম্পদ আছে কি-না, থাকলে তার আয়ের সোর্স কি, এগুলো গ্রহণযোগ্য কি-না, এসব নিয়ে আমরা কাজ করছি। অনুসন্ধানে যদি অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু পাওয়া যায়, তাহলে আইনগত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনে ত্রিশাল পৌরসভার এই মেয়রের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মামুন অর রশিদ। ওই অভিযোগে জানা যায়, মেয়র আনিস অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি খাস জমি দখল করে
মার্কেট নির্মাণ করেন। সুতিয়া নদী দখলের সহায়ক হয়ে রায়মনি আকিজ কোম্পানির ভূমির জাল দলিলে সহযোগিতা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ময়মনসিংহ নগরীর জিলা স্কুল মোড়ে দশ তলা বিলাসবহুল মেয়র টাওয়ার নির্মাণ করেছেন। ত্রিশালের চেলেরঘাটে ৮ একর জমির ওপর গড়ে তুলেছেন পেপার মিল। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নামে-বেনামে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২০ একর জমি। নিজ নামে রয়েছে প্রায় ১০টি ট্রাক ও বিলাসবহুল গাড়ি। পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকা- নয়ছয় করে ঠিকাদারের যোগসাজশে হাতিয়ে নিয়েছেন আরও প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জন করেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
উল্লেখ্য, গত বছর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো ত্রিশালের পৌরমেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এবিএম আনিসুজ্জামান। ২০১৬ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এক যুবলীগ নেতা হত্যা মামলায় তাকে আসামি করে মামলাও করা হয়েছিল। এবার তার বিরুদ্ধে চলছে দুর্নীতির অনুসন্ধান। এ বিষয়ে জানতে পৌরমেয়র আনিসুজ্জামানের মোবাইলে কল করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।