‘সেন্টমার্টিন রিসোর্ট’ বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের

কক্সবাজারের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে থাকা অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের পরিবেশগত ছাড়পত্রহীন ‘সেন্টমার্টিন রিসোর্ট’ অবিলম্বে বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল এ বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিল সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।

আদালতে অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের (সেন্টমার্টিন রিসোর্ট) পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ ও মারগুব কবির। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সেন্টমার্টিনে অবৈধভাবে নির্মিত সব হোটেল, মোটেল, রিসোর্টসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণ এবং সেই দ্বীপের প্রবাল, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী অনিয়ন্ত্রিত আহরণ বন্ধে জনস্বার্থে একটি মামলা (মামলা নং ৬৮৪৮/২০০৯) দায়ের করে। ওই মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১১ হালের ২৪ অক্টোবর রায় প্রদান করে।

রায়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন গড়ে ওঠা সকল স্থাপনা ভেঙে ফেলতে, ভবিষ্যতে যেন পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতীত কোন স্থাপনা গড়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী শাস্তি প্রদানেরও নির্দেশ দেয় আদালত।

এরপর ২০১১ সালের ২৪ অক্টোবর আদালতের রায় ও নির্দেশ প্রতিপালনের লক্ষ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া গড়ে ওঠা অন্যান্য স্থাপনাগুলোর সঙ্গে অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের সেন্টমার্টিন রিসোর্ট উচ্ছেদের জন্য নোটিশ প্রদান করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরবর্তীতে অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের (সেন্টমার্টিন রিসোর্ট) অনুকূলে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানের জন্য অনলাইনে পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করলে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে আবেদনটি বাতিল করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

এরপর সেন্টমার্টিন রিসোর্ট উচ্ছেদে পরিবেশ অধিদপ্তরের পাঠানো নোটিশ এবং সেন্টমার্টিন রিসোর্টের অনুকূলে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রাপ্তির আবেদন বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালে অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের পক্ষে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং : ৬৭৮২/২০১৭।

সেই মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সেন্টমার্টিন রিসোর্ট ভেঙে ফেলা সংক্রান্ত নোটিশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং এ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না, তা জানতে চেয়ে বিবাদীদের ওপর দুটি রুল জারি করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এ মামলায় পক্ষভুক্ত হয়ে মামলাটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

গতকাল সেই মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের (সেন্টমার্টিন রিসোর্ট) পক্ষে জারি করা রুল দুটি খারিজ করে দেয়। একইসঙ্গে আদালত পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন সেন্টমার্টিন রিসোর্টের সব কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশ প্রদান করে।

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২ , ০৮ বৈশাখ ১৪২৮ ১৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

‘সেন্টমার্টিন রিসোর্ট’ বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের

আদালত বার্তা পরিবেশক

কক্সবাজারের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে থাকা অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের পরিবেশগত ছাড়পত্রহীন ‘সেন্টমার্টিন রিসোর্ট’ অবিলম্বে বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল এ বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিল সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।

আদালতে অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের (সেন্টমার্টিন রিসোর্ট) পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ ও মারগুব কবির। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সেন্টমার্টিনে অবৈধভাবে নির্মিত সব হোটেল, মোটেল, রিসোর্টসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণ এবং সেই দ্বীপের প্রবাল, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী অনিয়ন্ত্রিত আহরণ বন্ধে জনস্বার্থে একটি মামলা (মামলা নং ৬৮৪৮/২০০৯) দায়ের করে। ওই মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১১ হালের ২৪ অক্টোবর রায় প্রদান করে।

রায়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন গড়ে ওঠা সকল স্থাপনা ভেঙে ফেলতে, ভবিষ্যতে যেন পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতীত কোন স্থাপনা গড়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী শাস্তি প্রদানেরও নির্দেশ দেয় আদালত।

এরপর ২০১১ সালের ২৪ অক্টোবর আদালতের রায় ও নির্দেশ প্রতিপালনের লক্ষ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া গড়ে ওঠা অন্যান্য স্থাপনাগুলোর সঙ্গে অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের সেন্টমার্টিন রিসোর্ট উচ্ছেদের জন্য নোটিশ প্রদান করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরবর্তীতে অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের (সেন্টমার্টিন রিসোর্ট) অনুকূলে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানের জন্য অনলাইনে পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করলে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে আবেদনটি বাতিল করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

এরপর সেন্টমার্টিন রিসোর্ট উচ্ছেদে পরিবেশ অধিদপ্তরের পাঠানো নোটিশ এবং সেন্টমার্টিন রিসোর্টের অনুকূলে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রাপ্তির আবেদন বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালে অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের পক্ষে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং : ৬৭৮২/২০১৭।

সেই মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সেন্টমার্টিন রিসোর্ট ভেঙে ফেলা সংক্রান্ত নোটিশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং এ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না, তা জানতে চেয়ে বিবাদীদের ওপর দুটি রুল জারি করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এ মামলায় পক্ষভুক্ত হয়ে মামলাটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

গতকাল সেই মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অবকাশ পর্যটন লিমিটেডের (সেন্টমার্টিন রিসোর্ট) পক্ষে জারি করা রুল দুটি খারিজ করে দেয়। একইসঙ্গে আদালত পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন সেন্টমার্টিন রিসোর্টের সব কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশ প্রদান করে।