সাম্প্রতিক বাস্তবতা ও স্বদেশ চিন্তা

সালেহ আহমেদ

বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাব এখনো দেশে দেশে বিদ্যমান। করোনার প্রভাবে এমনিতেই বিপর্যস্ত অর্থনীতি। জীবনহানি, কর্মহীনতা, বেকারত্ব বৃদ্ধিসহ নানাবিধ জটিলতার মুখোমুখি হয়েছে মানুষ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্ত হয়েছে নতুন সংকট- বিশ্বব্যাপী জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি। ফলশ্রুতিতে নিত্যদিনের বর্ধিত ব্যয় ক্রমেই জনমনে বিপন্নতা ও অস্থিরতা তৈরি করছে। এখন সমাজ রাষ্ট্র অসহনীয় সংকেট নিয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

রাষ্ট্র, সমাজ ও সভ্যতার সংকটের ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কার মতো একটি প্রাচীন শক্তিশালী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যা আমাদের মতো রাষ্ট্রের জন্য একটি অশনি সংকেত। যদিও আমাদের সরকারপ্রধান জোর গলায় উচ্চারণ করছেন যে, এই বিপর্যয় নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তবে ইতোমধ্যে আমাদের জাতীয় অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করে দেশের উন্নয়ন ও মেগা প্রজেক্ট, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম, অর্থ পাচার, লুটপাট, কাজের ধীরগতি, অপচয়ের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি এই সব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে দায়িত্বশীলদের তেমন কোন কর্মতৎপরতা প্রতিকারের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদারদের থেকে নেয়া ঋণ ও তা পরিশোধের বিষয়ে পর্যালোচনা হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, মুদ্রা তহবিলের রিজার্ভের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির বিষয়টি সামনে আসায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদের পারিবারিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য এখন তলানিতে চলে যাচ্ছে।

এই অবস্থায় চলতে থাকলে ব্যাংকিং সেক্টরে এর প্রভাব দ্রুত পড়তে শুরু করবে। অনেকে তাদের জমানো অর্থ ব্যাংকে রাখতে নিরাপদ মনে নাও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে যতই আশ্বস্ত করা হোক না কেন, তা কোন কাজে আসবে বলে মনে হয় না। জাতীয় অগ্রযাত্রা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সরকার দ্রুত সময়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে দেশবাসীকে আশ^স্ত করলে ভালো হয়।

আমাদের অর্থনীতি সচল রাখতে রপ্তানিনির্ভর গার্মেন্ট শিল্প এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। এর পাশাপাশি বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নির্ভরতার কথা সকলে এক বাক্যে শিকার করবেন। বৈশি^ক মহামারী করোনায় বিশ^ব্যাপী যে বিপর্যয় চলছে তার প্রভাব আমাদের গার্মেন্ট শিল্পে পড়েছিল। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ প্রবাসী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। দেশে বিভিন্ন শিল্পকারখানা বন্ধ হয়েও অনেকে কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

করোনার শুরু থেকে এসব বিপর্যয়ের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা অনেক সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেও বিকল্প কোন কর্মের বিষয়ে এখানো সরকারের পক্ষ থেকে তেমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলতে অনেকেই নিজের শেষ সম্বল নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে দেশের প্রতিটি শহরের মোড়ে দাঁড়ালে ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব থেকে ২০ বছরের বালকদের বাইক নিয়ে অপেক্ষা করার যে চিত্র তা সবার নজরে পড়ে। এতে কতটা আয় রোজগার হয়, তা খতিয়ে দেখা দরকার। বিষয়টি কোন অবস্থায় বিকল্প কর্মসংস্থান যে নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

টেকসই বা স্থায়ী কোন উৎপাদন-বণ্টন কাজের ব্যবস্থা না করা গেলে দেশে যে কোন ধরনের বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। দেশের রাজনীতির স্থিতিশীলতার বিষয়টি সামনে রেখে এখনো জাতীয়ভাবে অনেক পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার।

[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন।

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২ , ০৮ বৈশাখ ১৪২৮ ১৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

সাম্প্রতিক বাস্তবতা ও স্বদেশ চিন্তা

সালেহ আহমেদ

বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাব এখনো দেশে দেশে বিদ্যমান। করোনার প্রভাবে এমনিতেই বিপর্যস্ত অর্থনীতি। জীবনহানি, কর্মহীনতা, বেকারত্ব বৃদ্ধিসহ নানাবিধ জটিলতার মুখোমুখি হয়েছে মানুষ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্ত হয়েছে নতুন সংকট- বিশ্বব্যাপী জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি। ফলশ্রুতিতে নিত্যদিনের বর্ধিত ব্যয় ক্রমেই জনমনে বিপন্নতা ও অস্থিরতা তৈরি করছে। এখন সমাজ রাষ্ট্র অসহনীয় সংকেট নিয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

রাষ্ট্র, সমাজ ও সভ্যতার সংকটের ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কার মতো একটি প্রাচীন শক্তিশালী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যা আমাদের মতো রাষ্ট্রের জন্য একটি অশনি সংকেত। যদিও আমাদের সরকারপ্রধান জোর গলায় উচ্চারণ করছেন যে, এই বিপর্যয় নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তবে ইতোমধ্যে আমাদের জাতীয় অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করে দেশের উন্নয়ন ও মেগা প্রজেক্ট, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম, অর্থ পাচার, লুটপাট, কাজের ধীরগতি, অপচয়ের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি এই সব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে দায়িত্বশীলদের তেমন কোন কর্মতৎপরতা প্রতিকারের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদারদের থেকে নেয়া ঋণ ও তা পরিশোধের বিষয়ে পর্যালোচনা হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, মুদ্রা তহবিলের রিজার্ভের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির বিষয়টি সামনে আসায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদের পারিবারিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য এখন তলানিতে চলে যাচ্ছে।

এই অবস্থায় চলতে থাকলে ব্যাংকিং সেক্টরে এর প্রভাব দ্রুত পড়তে শুরু করবে। অনেকে তাদের জমানো অর্থ ব্যাংকে রাখতে নিরাপদ মনে নাও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে যতই আশ্বস্ত করা হোক না কেন, তা কোন কাজে আসবে বলে মনে হয় না। জাতীয় অগ্রযাত্রা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সরকার দ্রুত সময়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে দেশবাসীকে আশ^স্ত করলে ভালো হয়।

আমাদের অর্থনীতি সচল রাখতে রপ্তানিনির্ভর গার্মেন্ট শিল্প এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। এর পাশাপাশি বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নির্ভরতার কথা সকলে এক বাক্যে শিকার করবেন। বৈশি^ক মহামারী করোনায় বিশ^ব্যাপী যে বিপর্যয় চলছে তার প্রভাব আমাদের গার্মেন্ট শিল্পে পড়েছিল। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ প্রবাসী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। দেশে বিভিন্ন শিল্পকারখানা বন্ধ হয়েও অনেকে কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

করোনার শুরু থেকে এসব বিপর্যয়ের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা অনেক সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেও বিকল্প কোন কর্মের বিষয়ে এখানো সরকারের পক্ষ থেকে তেমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলতে অনেকেই নিজের শেষ সম্বল নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে দেশের প্রতিটি শহরের মোড়ে দাঁড়ালে ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব থেকে ২০ বছরের বালকদের বাইক নিয়ে অপেক্ষা করার যে চিত্র তা সবার নজরে পড়ে। এতে কতটা আয় রোজগার হয়, তা খতিয়ে দেখা দরকার। বিষয়টি কোন অবস্থায় বিকল্প কর্মসংস্থান যে নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

টেকসই বা স্থায়ী কোন উৎপাদন-বণ্টন কাজের ব্যবস্থা না করা গেলে দেশে যে কোন ধরনের বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। দেশের রাজনীতির স্থিতিশীলতার বিষয়টি সামনে রেখে এখনো জাতীয়ভাবে অনেক পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার।

[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন।