অর্ধশতাধিক সিন্ডিকেটে পাহাড় খাল-ছড়ার মাটি বালি লুট

পাহাড় ধস বাড়ছে, ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বনভূমি, বালু উত্তোলনে ছড়াগুলো রূপ নিচ্ছে নদীতে

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড় ও খালের মাটি-বালু। গড়ে উঠেছে মাটি ও বালু কাটার অর্ধশতাধিক সিন্ডিকেট। প্রভাবশালী থেকে শুরু করে অতীব নিম্ন শ্রেণীর লোক পর্যন্ত এ সিন্ডিকেটে রয়েছে। এমনকি নামধারী রাজনৈতিক নেতাকর্মী এ সিন্ডিকেটগুলোতে রয়েছে বলেও জানা যায়। এদিকে দিনের পর দিন পাহাড় থেকে মাটি কাটার ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে তেমনি খাল থেকে বালু উত্তোলনের ফলে লোকালয় ও ফসলি জমি খালের পানিতে ভেঙে পড়ে কৃষক ও সাধারণ জনগণের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারপরেও এই বালু ও মাটি খেকো সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কেন ঠেকানো যাচ্ছে না তা নিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে পাহাড় থেকে মাটি ও খাল-ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটছে তেমনি সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। বাঁশখালীর পুকুরিয়া ও খানখানাবাদ এলাকায় শঙ্খ নদী থেকে বালি উত্তোলন করে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার ও নতুন বাড়িঘর তৈরিতে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। অপরদিকে সাধনপুর এলাকায় পাহাড়ি মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। কালীপুরে পাহাড় কাটা নিয়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ালেও পাহাড়ি মাটি কাটা নিয়ে বনবিভাগ সম্প্রতি কয়েকটি মামলা করেছে কালীপুর, সাধনপুর রেঞ্জের আওতায়। বাঁশখালীর উপকূলীয় বাহারছড়া ও কাথরিয়া এলাকার সমুদ্রসৈকত থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি চক্র। সম্প্রতি সেখানে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করা হলে আবারো চক্রটি তৎপর বলে জানা গেছে। গন্ডামারা, সরল, শীলকূপ, শেখেরখীল, ছনুয়া এলাকায় জলকদর খালের ভরাট হওয়া জায়গা থেকে মাটি বিক্রি করে যাচ্ছে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। গত কয়েকদিন আগে শীলকূপ ও গন্ডামারা এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে এস্কেভেটর জব্দ করা হলেও এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তারা বারবার পার পেয়ে যায়।

এদিকে জঙ্গল পুঁইছড়ি বালুমহালের ইজারা ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাতিল করে জেলা প্রশাসন। এর আগে ২০১৯ সালে স্থানীয় ঠিকাদার মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন ২২ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় জঙ্গল পুঁইছড়ি বালুমহাল ইজারা নিয়েছিলেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার অভিযোগে বালু মহালের ইজারা বাতিল করে দেওয়া হয়। অথচ পুঁইছড়ির পাহাড়ি এলাকায় ১০/১৫ পয়েন্ট থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন ও বিক্রি চোখে পড়ার মতো। পুঁইছড়ির ১০/১৫ জনের সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় ধরে এ কাজ চালিয়ে যাওয়ায় সেখানকার রাস্তাঘাটের অবস্থা করুণ হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান সোলতানুল গনি চৌধুরী এ অবৈধ বালি ব্যাবসা বন্ধে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন বরাবরে আবেদন করেছেন বলে জানা গেলেও এলাকার সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড এ অবৈধভাবে উত্তোলিত বালি দিয়ে হয়ে থাকার কারণে কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না অবৈধভাবে বালি উত্তোলন। পাহাড়ের পাদদেশ বেয়ে আসা ছড়া হতে বালি উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে পাহাড় ধসে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বনভূমি। তার সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। পাহাড়ের পাশের ছড়াগুলোর বালি কেটে পাচার করায় এগুলো বর্তমানে নদীতে রূপ নিচ্ছে। চট্টগ্রামের অন্যতম চুনতি অভয়ারণ্যের অভ্যন্তরে এভাবে বালি উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জান চৌধুরী বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।’

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২ , ০৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২০ রমাদ্বান ১৪৪৩

অর্ধশতাধিক সিন্ডিকেটে পাহাড় খাল-ছড়ার মাটি বালি লুট

পাহাড় ধস বাড়ছে, ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বনভূমি, বালু উত্তোলনে ছড়াগুলো রূপ নিচ্ছে নদীতে

প্রতিনিধি, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)

image

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : পুঁইছড়ি ছড়া হতে অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালুর স্তূপ -সংবাদ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড় ও খালের মাটি-বালু। গড়ে উঠেছে মাটি ও বালু কাটার অর্ধশতাধিক সিন্ডিকেট। প্রভাবশালী থেকে শুরু করে অতীব নিম্ন শ্রেণীর লোক পর্যন্ত এ সিন্ডিকেটে রয়েছে। এমনকি নামধারী রাজনৈতিক নেতাকর্মী এ সিন্ডিকেটগুলোতে রয়েছে বলেও জানা যায়। এদিকে দিনের পর দিন পাহাড় থেকে মাটি কাটার ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে তেমনি খাল থেকে বালু উত্তোলনের ফলে লোকালয় ও ফসলি জমি খালের পানিতে ভেঙে পড়ে কৃষক ও সাধারণ জনগণের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারপরেও এই বালু ও মাটি খেকো সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কেন ঠেকানো যাচ্ছে না তা নিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে পাহাড় থেকে মাটি ও খাল-ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটছে তেমনি সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। বাঁশখালীর পুকুরিয়া ও খানখানাবাদ এলাকায় শঙ্খ নদী থেকে বালি উত্তোলন করে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার ও নতুন বাড়িঘর তৈরিতে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। অপরদিকে সাধনপুর এলাকায় পাহাড়ি মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। কালীপুরে পাহাড় কাটা নিয়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ালেও পাহাড়ি মাটি কাটা নিয়ে বনবিভাগ সম্প্রতি কয়েকটি মামলা করেছে কালীপুর, সাধনপুর রেঞ্জের আওতায়। বাঁশখালীর উপকূলীয় বাহারছড়া ও কাথরিয়া এলাকার সমুদ্রসৈকত থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি চক্র। সম্প্রতি সেখানে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করা হলে আবারো চক্রটি তৎপর বলে জানা গেছে। গন্ডামারা, সরল, শীলকূপ, শেখেরখীল, ছনুয়া এলাকায় জলকদর খালের ভরাট হওয়া জায়গা থেকে মাটি বিক্রি করে যাচ্ছে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। গত কয়েকদিন আগে শীলকূপ ও গন্ডামারা এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে এস্কেভেটর জব্দ করা হলেও এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তারা বারবার পার পেয়ে যায়।

এদিকে জঙ্গল পুঁইছড়ি বালুমহালের ইজারা ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাতিল করে জেলা প্রশাসন। এর আগে ২০১৯ সালে স্থানীয় ঠিকাদার মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন ২২ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় জঙ্গল পুঁইছড়ি বালুমহাল ইজারা নিয়েছিলেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার অভিযোগে বালু মহালের ইজারা বাতিল করে দেওয়া হয়। অথচ পুঁইছড়ির পাহাড়ি এলাকায় ১০/১৫ পয়েন্ট থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন ও বিক্রি চোখে পড়ার মতো। পুঁইছড়ির ১০/১৫ জনের সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় ধরে এ কাজ চালিয়ে যাওয়ায় সেখানকার রাস্তাঘাটের অবস্থা করুণ হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান সোলতানুল গনি চৌধুরী এ অবৈধ বালি ব্যাবসা বন্ধে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন বরাবরে আবেদন করেছেন বলে জানা গেলেও এলাকার সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড এ অবৈধভাবে উত্তোলিত বালি দিয়ে হয়ে থাকার কারণে কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না অবৈধভাবে বালি উত্তোলন। পাহাড়ের পাদদেশ বেয়ে আসা ছড়া হতে বালি উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে পাহাড় ধসে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বনভূমি। তার সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। পাহাড়ের পাশের ছড়াগুলোর বালি কেটে পাচার করায় এগুলো বর্তমানে নদীতে রূপ নিচ্ছে। চট্টগ্রামের অন্যতম চুনতি অভয়ারণ্যের অভ্যন্তরে এভাবে বালি উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জান চৌধুরী বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।’