নিউমার্কেটে সংঘর্ষ নিয়ে তিন মামলা, আসামি ১৪২৪

বিএনপি নেতাসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে মামলায়, বাকিরা অজ্ঞাত

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। দুটি মামলায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষে নিহত নাহিদের চাচা মো. সাঈদ বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করেন। এই তিন মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে। তবে তিনটি মামলার মধ্যে শুধু একটিতেই ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই মামলাটির বাদী পুলিশ। তবে তিন মামলায় গতকাল রাত পর্যন্ত কোন গ্রেপ্তার নেই। পুলিশ বলছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ফুটেজে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করা হবে। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবিও কাজ করছে। নিউমার্কেট থানার পুলিশ জানায়, নাহিদের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডিবি রমনা বিভাগ মামলাটির তদন্ত করবে।

মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন অ্যাডভোকেট মকবুল, আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, জাপানি ফারুক, মিজান বেপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল। আসামিদের মধ্যে অ্যাডভোকেট মকবুল নিউমার্কেট থানা বিএনপির সভাপতি বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল নামে যে দুটি ফাস্ট ফুড দোকানের কর্মচারীর মধ্যে বিরোধের জেরে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সেই দোকান দুটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ নিয়েছিলেন মকবুল হোসেন। পরে দোকান দুটি তিনি ভাড়া দেন। গতকাল মকবুল হোসেন বলেন, আমিও এ রকম একটা মেসেজ পেয়েছি। কিন্তু গত চার মাস আমি ওই এলাকাতেই যাইনি। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, জখম, ভাঙচুরের প্রশ্নই আসে না। নব্বইয়ের দশকে আমি সিটি করপোরেশন থেকে দোকান দুটি ভাড়া নিই। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি। ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, মকবুল হোসেনের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। কিন্তু তিনি তো শুধু তার নামে বরাদ্দ হওয়া দোকান ভাড়া দিয়েছেন। সেই ভাড়া দেয়া দুই দোকানের কর্মচারীদের বিরোধে যদি তিনি আসামি হন, তাহলে তো সমস্যা। ঢাকা কলেজের যে তিন ছাত্র ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের দোকান কর্মচারীদের মধ্যে ঝগড়ায় জড়িয়েছিলেন, তাদের ব্যাপারেও পুলিশ খোঁজ-খবর নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে নিউমার্কেট এলাকায় দোকান মালিক ও কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন মামলায় পুলিশকে তদন্ত করার জন্য দেড় মাস সময় দিয়েছে আদালত। মামলাগুলো গতকাল আদালতে উঠার পর এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে ঢাকা মহানগর হাকিম শুভ্রা চক্রবর্তী আগামী ৭ জুন দিন রাখেন। তিন মামলার মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের একটি মামলা করেছেন নিউমার্কেট থানার এসআই মেহেদী হাসান। একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাও-পোড়াও, পুলিশের কাজের বাধা দেয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছেন। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়ার চাচা মো. সাঈদ দায়ের করেন হত্যা মামলা। তিন মামলায় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১৪শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নিউমার্কেট থানার ওসি শ ম কাইয়ুম বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে আহত ও ভাঙচুরের অপরাধে ৪৩/১৪৭/১৪৯/১৮৬/৩৩২/৩৫৩/৪২৭/৩৪ ধারায় মামলা হয়েছে। এই মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত নিউমার্কেট ব্যবসায়ী ও কর্মচারী ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা কলেজের ৬০০-৭০০ জন ছাত্রও রয়েছেন অজ্ঞাত হিসেবে।

এই ২৪ জনের পরিচয় জানতে চাইলে ওসি বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে না। আসামিদের গ্রেপ্তারে থানা পুলিশসহ গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। থানা সূত্রে জানা যায়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ২৪ জন এজাহারনামীয়সহ ব্যবসায়ী-কর্মচারী অজ্ঞাত ৩০০ জন। এছাড়া একই মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে ঢাকা কলেজের ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা আরেকটি মামলায় অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার এসআই মেহেদী হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির। এছাড়া নাহিদ হাসান নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেছে তার পরিবার। এই মামলায় ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) শরীফ মো. ফারুকুজ্জামান বলেন, পথচারী নাহিদ হত্যায় তার চাচা সাইদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১৫০/২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। নিউমার্কেট থানার এসআই মেহেদী বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেছেন। এই মামলায়ও অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ১৫০-২০০ জন। নিউমার্কেট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. ইয়ামিন কবীর পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩০০ জন অজ্ঞাত ব্যবসায়ী ও ৭০০ জন অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন।

এদিকে গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালে অল্প কয়েকটি দোকান খোলা হয়। দুপুর নাগাদ ঢাকা কলেজের পার্শ্ববর্তী চন্দ্রিমা মার্কেট, উল্টোপাশের নূরজাহান মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টার, নিউ সুপার মার্কেট, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্সসহ সবগুলো মার্কেটের কয়েক শত দোকান খোলা হয়েছে। চাঁদনীচক মার্কেটে গিয়েও সবগুলো দোকান খোলা দেখা গেছে। নিউমার্কেট এলাকাজুড়ে ফুটপাতের দোকানগুলোও খুলেছেন হকাররা। ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, রাতে ছাত্র, ব্যবসায়ী, শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ঢাকা কলেজ প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে এক যৌথ বৈঠকে সমঝোতা হয়েছে। তাই গতকাল বেলা ১১টার দিকে দোকান খুলতে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে দোকান খুলেছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নতুন করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোন ঝামেলা কিংবা সংঘর্ষ বাধার আশঙ্কা আমরা করছি না। তবে আমাদের শঙ্কা, মার্কেটে ক্রেতাদের আসা নিয়ে। ক্রেতারা না আসলে দোকান খুলেও লাভ নেই।

সাড়ে চার ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকে ছাত্র-ব্যবসায়ী যেভাবে সমঝোতা

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেট এবং আশপাশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দুই দিনের বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষ ও উত্তেজনা সাড়ে চার ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকে সুরাহা হয়েছে। গত বুধবার রাত ১২টায় সায়েন্সল্যাবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের সভাকক্ষে শুরু হওয়া বৈঠকে ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি মিলে প্রায় ৪০ জন উপস্থিত ছিলেন। তর্ক-বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি দাবি ও বাগবিতন্ডা শেষে সাড়ে চার ঘণ্টা পর ভোররাত সাড়ে ৪টায় মিলেছে সমাধান। এর আগে সংকট নিরসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছাত্র ও ব্যসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে তাদের এক টেবিলে বসার উদ্যোগ নিয়েছেন।

এর আগে গত সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এতে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাহিদ হাসান নামে এক ডেলিভারিম্যান। অন্যদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মো. মুরসালিন নামে এক দোকান কর্মচারী মারা গেছেন। গতকাল ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ নিয়ে এ ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হলো।

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২ , ০৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২০ রমাদ্বান ১৪৪৩

নিউমার্কেটে সংঘর্ষ নিয়ে তিন মামলা, আসামি ১৪২৪

বিএনপি নেতাসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে মামলায়, বাকিরা অজ্ঞাত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। দুটি মামলায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষে নিহত নাহিদের চাচা মো. সাঈদ বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করেন। এই তিন মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে। তবে তিনটি মামলার মধ্যে শুধু একটিতেই ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই মামলাটির বাদী পুলিশ। তবে তিন মামলায় গতকাল রাত পর্যন্ত কোন গ্রেপ্তার নেই। পুলিশ বলছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ফুটেজে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করা হবে। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবিও কাজ করছে। নিউমার্কেট থানার পুলিশ জানায়, নাহিদের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডিবি রমনা বিভাগ মামলাটির তদন্ত করবে।

মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন অ্যাডভোকেট মকবুল, আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, জাপানি ফারুক, মিজান বেপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল। আসামিদের মধ্যে অ্যাডভোকেট মকবুল নিউমার্কেট থানা বিএনপির সভাপতি বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল নামে যে দুটি ফাস্ট ফুড দোকানের কর্মচারীর মধ্যে বিরোধের জেরে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সেই দোকান দুটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ নিয়েছিলেন মকবুল হোসেন। পরে দোকান দুটি তিনি ভাড়া দেন। গতকাল মকবুল হোসেন বলেন, আমিও এ রকম একটা মেসেজ পেয়েছি। কিন্তু গত চার মাস আমি ওই এলাকাতেই যাইনি। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, জখম, ভাঙচুরের প্রশ্নই আসে না। নব্বইয়ের দশকে আমি সিটি করপোরেশন থেকে দোকান দুটি ভাড়া নিই। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি। ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, মকবুল হোসেনের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। কিন্তু তিনি তো শুধু তার নামে বরাদ্দ হওয়া দোকান ভাড়া দিয়েছেন। সেই ভাড়া দেয়া দুই দোকানের কর্মচারীদের বিরোধে যদি তিনি আসামি হন, তাহলে তো সমস্যা। ঢাকা কলেজের যে তিন ছাত্র ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের দোকান কর্মচারীদের মধ্যে ঝগড়ায় জড়িয়েছিলেন, তাদের ব্যাপারেও পুলিশ খোঁজ-খবর নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে নিউমার্কেট এলাকায় দোকান মালিক ও কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন মামলায় পুলিশকে তদন্ত করার জন্য দেড় মাস সময় দিয়েছে আদালত। মামলাগুলো গতকাল আদালতে উঠার পর এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে ঢাকা মহানগর হাকিম শুভ্রা চক্রবর্তী আগামী ৭ জুন দিন রাখেন। তিন মামলার মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের একটি মামলা করেছেন নিউমার্কেট থানার এসআই মেহেদী হাসান। একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাও-পোড়াও, পুলিশের কাজের বাধা দেয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছেন। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়ার চাচা মো. সাঈদ দায়ের করেন হত্যা মামলা। তিন মামলায় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১৪শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নিউমার্কেট থানার ওসি শ ম কাইয়ুম বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে আহত ও ভাঙচুরের অপরাধে ৪৩/১৪৭/১৪৯/১৮৬/৩৩২/৩৫৩/৪২৭/৩৪ ধারায় মামলা হয়েছে। এই মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত নিউমার্কেট ব্যবসায়ী ও কর্মচারী ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা কলেজের ৬০০-৭০০ জন ছাত্রও রয়েছেন অজ্ঞাত হিসেবে।

এই ২৪ জনের পরিচয় জানতে চাইলে ওসি বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে না। আসামিদের গ্রেপ্তারে থানা পুলিশসহ গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। থানা সূত্রে জানা যায়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ২৪ জন এজাহারনামীয়সহ ব্যবসায়ী-কর্মচারী অজ্ঞাত ৩০০ জন। এছাড়া একই মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে ঢাকা কলেজের ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা আরেকটি মামলায় অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার এসআই মেহেদী হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির। এছাড়া নাহিদ হাসান নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেছে তার পরিবার। এই মামলায় ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) শরীফ মো. ফারুকুজ্জামান বলেন, পথচারী নাহিদ হত্যায় তার চাচা সাইদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১৫০/২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। নিউমার্কেট থানার এসআই মেহেদী বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেছেন। এই মামলায়ও অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ১৫০-২০০ জন। নিউমার্কেট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. ইয়ামিন কবীর পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩০০ জন অজ্ঞাত ব্যবসায়ী ও ৭০০ জন অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন।

এদিকে গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালে অল্প কয়েকটি দোকান খোলা হয়। দুপুর নাগাদ ঢাকা কলেজের পার্শ্ববর্তী চন্দ্রিমা মার্কেট, উল্টোপাশের নূরজাহান মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টার, নিউ সুপার মার্কেট, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্সসহ সবগুলো মার্কেটের কয়েক শত দোকান খোলা হয়েছে। চাঁদনীচক মার্কেটে গিয়েও সবগুলো দোকান খোলা দেখা গেছে। নিউমার্কেট এলাকাজুড়ে ফুটপাতের দোকানগুলোও খুলেছেন হকাররা। ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, রাতে ছাত্র, ব্যবসায়ী, শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ঢাকা কলেজ প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে এক যৌথ বৈঠকে সমঝোতা হয়েছে। তাই গতকাল বেলা ১১টার দিকে দোকান খুলতে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে দোকান খুলেছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নতুন করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোন ঝামেলা কিংবা সংঘর্ষ বাধার আশঙ্কা আমরা করছি না। তবে আমাদের শঙ্কা, মার্কেটে ক্রেতাদের আসা নিয়ে। ক্রেতারা না আসলে দোকান খুলেও লাভ নেই।

সাড়ে চার ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকে ছাত্র-ব্যবসায়ী যেভাবে সমঝোতা

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেট এবং আশপাশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দুই দিনের বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষ ও উত্তেজনা সাড়ে চার ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকে সুরাহা হয়েছে। গত বুধবার রাত ১২টায় সায়েন্সল্যাবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের সভাকক্ষে শুরু হওয়া বৈঠকে ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি মিলে প্রায় ৪০ জন উপস্থিত ছিলেন। তর্ক-বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি দাবি ও বাগবিতন্ডা শেষে সাড়ে চার ঘণ্টা পর ভোররাত সাড়ে ৪টায় মিলেছে সমাধান। এর আগে সংকট নিরসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছাত্র ও ব্যসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে তাদের এক টেবিলে বসার উদ্যোগ নিয়েছেন।

এর আগে গত সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এতে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাহিদ হাসান নামে এক ডেলিভারিম্যান। অন্যদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মো. মুরসালিন নামে এক দোকান কর্মচারী মারা গেছেন। গতকাল ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ নিয়ে এ ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হলো।