রাজধানীর নিউমার্কেটে শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষে আহত আরও একজন মারা গেছেন। নিহেতের নাম মো. মুরসালিন (২২)। তিনি একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোর রাতের দিকে মারা যান তিনি। পরে দুপুরে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মুরসালিনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। কোন পক্ষের হামলায় মুরসালিনের প্রাণ গেল, সেটি নিশ্চিত ও ঘটনায় জড়িত কাউকে নিশ্চিত করে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে মুরসালিন নিহতের ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার পরিবার। তারা বলছেন, এই দেশে কোন বিচার নেই, কে করবে বিচার? কার বিরুদ্ধে মামলা করবে জানেন না পরিবার। তাই তারা মামলা করবেন না বলে জানিয়েছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত মুরসালিন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তারাকান্দা গ্রামের মৃত মো. মানিক মিয়ার ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুর এলাকায় স্ত্রী অর্ণি আক্তার মিতু, সাত বছর বয়সী মেয়ে হুমায়রা ইসলাম লামহা ও চার বছর বয়সী ছেলে আমির হামজাকে নিয়ে থাকতেন। নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় ‘হাটবাজার’ নামে শার্ট-প্যান্টের দোকানের সেলসম্যান ছিলেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে চলা সংঘর্ষে তিনি আহত হন। তারপর থেকে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, গতকাল ভোর ৪টার ৪০ মিনিটের দিকে মুরসালিনের মৃত্যু হয়। পরে তার মরদেহ মর্গে নেয়া হয়। গতকাল মর্গে গিয়ে দেখা যায়, মর্গের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনেরা ও পরিচিতজনেরা। মুরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ সাংবাদিকদের বললেন, এই দেশে কোন বিচার নেই। কে করবে বিচার? খানিক দূরে গিয়ে তিনি কিছুক্ষণ অঝোরে কাঁদলেন।
বেলা দেড়টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে মুরসালিনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে কামারাঙ্গীরচরে পশ্চিম রসুলপুরের ভাড়া বাসা নেয়া হয়। মরদেহ নিয়ে রওনা দেয়ার আগে মুরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ সাংবাদিকদের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা করে কী হবে? কার নামে মামলা করব। ভাইটা কীভাবে মারা গেল, কিছুই জানলাম না। এটা কেবল ও আর আল্লাহ জানেন। ওর শরীরে আঘাত আর ক্ষতের বাইরে আমরা আর কিছুই দেখিনি। নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, তাদের বাবা বেঁচে নেই, মা আছেন। মুরসালিন বিয়ে করেছিলেন। তার দুটি সন্তান রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি আলাদা থাকতেন। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক মনিকা খন্দকার জানান, আঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মুরসালিনের মৃত্যু হয়েছে।
কামরাঙ্গীরচরে মুরসালিনের বাসায় তার মরদেহের অপেক্ষায় ছিলেন স্ত্রী, মা, স্বজনরা, পাড়া-প্রতিবেশী ও মার্কেট থেকে আসা তার সহকর্মীরা। দুপুরের পর মুরসালিনের মরদেহ সেখানে নেয়া হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। আশপাশের প্রতিবেশীরা শেষবারের মতো মুরসালিনকে দেখতে ভিড় করেন।
এ সময় মুরসালিনের স্ত্রী ও মা বুক চাপড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। স্বজনরা তাদের ধরে রাখতে পারছিলেন না। মাথায় তেল-পানি দেন কেউ। স্ত্রী অর্ণি আক্তার মিতু বার বার বলছিলেন, কি থেকে কি হয়ে গেল। আমার স্বামীর কি দোষ ছিল? কেন ওকে এভাবে হত্যা করা হলো। দুইটা বাচ্চা নিয়ে আমি এখন কই যামু। কে আমাদের ভরণপোষণ দেবে। স্বজনরা মিতুকে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পাশ থেকে কেউ চোখের পানি, মুখের ঘাম মুছে দিচ্ছিলেন। কেউ হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছিলেন। স্বামীর শোকে কাঁদতে কাঁদতে ভোর থেকে ক্লান্ত মিতু। তার চোখ বেয়ে যেন আর পানি বের হচ্ছে না। নিথর দেহের মতো হেলান দিয়ে পড়ে আছেন মেঝেতে। আর্তনাদ দেখে উপস্থিতির জনতার চোখ বেয়েও পানি টলমল করতে দেখা গেছে। কে কাকে সান্ত¡না দিবেন, সেই ভাষা যেন কারও জানা নেই।
নিউ সুপার মার্কেটে গেলে সেখানেও মুরসালিনের মৃত্যুর ঘটনা ছিল সবার মুখে মুখে। এ সময় মুরসালিনের দোকান মালিক টুটুল জানান, প্রায় তিন বছর ধরে ৯ হাজার টাকা বেতন তার দোকানে চাকরি করে আসছিল মুরসালিন। সে অত্যন্ত ভদ্র ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। কখনও কোন ধরনের ঝামেলায় তাকে জড়াতে দেখিনি বরং ঝামেলা এড়িয়ে চলত। অথচ তার প্রাণ গেল এভাবে! টুটুল বলেন, সংঘর্ষের কারণে মঙ্গলবার মার্কেট কমিটি মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করেন। তবে তারা সেটি সকালে মার্কেটে এসে জানতে পারেন। তখন অনেক দোকান মালিক ও কর্মচারীরা মার্কেটে ইতোমধ্যে চলে এসেছেন।
পরে মার্কেট বন্ধের খবরে আমি সেখান থেকে চলে যাই। মুরসালিনসহ অন্যান্য কর্মচারীদেরও বাসায় চলে যেতে বলি। সবাই চলেও যায়। কিন্তু দুপুরের দিকে পরিচিত একজন কল করে জানায়, সংঘর্ষে মুরসালিন আহত হয়েছে। তাকে মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। আমরা মেডিকেলে ছুটে গিয়ে দেখি, তার মাথার পেছনের অংশ বড় ক্ষত হয়ে গেছে। হয়তো কারও আঘাতে কিংবা বড় ইট পড়ে এমনটি হতে পারে। তবে সেটি কিভাবে হয়েছে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। সেদিনই চিকিৎসক জানিয়েছেন, মুরসালিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। মুরসালিনের মৃত্যুর ঘটনায় আশপাশের দোকানের সহকর্মীরা, দোকান মালিক ও কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলছেন, ব্যবসায় ক্ষতি হলেও তা পুষে ওঠা যাবে। কিন্তু সংঘর্ষে যে দুইজন মানুষ মারা গেল, এই ক্ষতি কী কাটিয়ে উঠার মতো? দুটি পরিবার এখন কিভাবে চলবে। তাদের স্ত্রী, সন্তানদের কে খাওয়াবে?
নিউমার্কেট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ইয়াসির কবির বলেন, শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে মুরসালিন আহত হয়েছিলেন। তবে কোন পক্ষের হামলায় কিংবা কিভাবে তিনি প্রাণ হারালেন, সেটি এখনও জানা যায়নি। এ ঘটনায় তার পরিবারের কেউ গতকাল রাত পর্যন্ত নিউমার্কেট থানায় মামলা করেননি। এদিকে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কামরাঙ্গীরচরে মুরসালিনের মরদেহ গোসল করানো হয়। সেখানে বাদ আছর জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এর আগে মঙ্গলবার রাতে মারা যান এলিফ্যান্ড রোডের একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মচারী নাহিদ। এখনও দুই শিক্ষার্থী ও একজন কর্মচারী চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে আহত দোকান কর্মচারী মুরসালিনের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্ত্রী অর্ণি আক্তার মিতু -সংবাদ
আরও খবরশুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২ , ০৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২০ রমাদ্বান ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে আহত দোকান কর্মচারী মুরসালিনের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্ত্রী অর্ণি আক্তার মিতু -সংবাদ
রাজধানীর নিউমার্কেটে শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষে আহত আরও একজন মারা গেছেন। নিহেতের নাম মো. মুরসালিন (২২)। তিনি একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোর রাতের দিকে মারা যান তিনি। পরে দুপুরে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মুরসালিনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। কোন পক্ষের হামলায় মুরসালিনের প্রাণ গেল, সেটি নিশ্চিত ও ঘটনায় জড়িত কাউকে নিশ্চিত করে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে মুরসালিন নিহতের ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার পরিবার। তারা বলছেন, এই দেশে কোন বিচার নেই, কে করবে বিচার? কার বিরুদ্ধে মামলা করবে জানেন না পরিবার। তাই তারা মামলা করবেন না বলে জানিয়েছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত মুরসালিন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তারাকান্দা গ্রামের মৃত মো. মানিক মিয়ার ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুর এলাকায় স্ত্রী অর্ণি আক্তার মিতু, সাত বছর বয়সী মেয়ে হুমায়রা ইসলাম লামহা ও চার বছর বয়সী ছেলে আমির হামজাকে নিয়ে থাকতেন। নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় ‘হাটবাজার’ নামে শার্ট-প্যান্টের দোকানের সেলসম্যান ছিলেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে চলা সংঘর্ষে তিনি আহত হন। তারপর থেকে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, গতকাল ভোর ৪টার ৪০ মিনিটের দিকে মুরসালিনের মৃত্যু হয়। পরে তার মরদেহ মর্গে নেয়া হয়। গতকাল মর্গে গিয়ে দেখা যায়, মর্গের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনেরা ও পরিচিতজনেরা। মুরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ সাংবাদিকদের বললেন, এই দেশে কোন বিচার নেই। কে করবে বিচার? খানিক দূরে গিয়ে তিনি কিছুক্ষণ অঝোরে কাঁদলেন।
বেলা দেড়টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে মুরসালিনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে কামারাঙ্গীরচরে পশ্চিম রসুলপুরের ভাড়া বাসা নেয়া হয়। মরদেহ নিয়ে রওনা দেয়ার আগে মুরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ সাংবাদিকদের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা করে কী হবে? কার নামে মামলা করব। ভাইটা কীভাবে মারা গেল, কিছুই জানলাম না। এটা কেবল ও আর আল্লাহ জানেন। ওর শরীরে আঘাত আর ক্ষতের বাইরে আমরা আর কিছুই দেখিনি। নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, তাদের বাবা বেঁচে নেই, মা আছেন। মুরসালিন বিয়ে করেছিলেন। তার দুটি সন্তান রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি আলাদা থাকতেন। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক মনিকা খন্দকার জানান, আঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মুরসালিনের মৃত্যু হয়েছে।
কামরাঙ্গীরচরে মুরসালিনের বাসায় তার মরদেহের অপেক্ষায় ছিলেন স্ত্রী, মা, স্বজনরা, পাড়া-প্রতিবেশী ও মার্কেট থেকে আসা তার সহকর্মীরা। দুপুরের পর মুরসালিনের মরদেহ সেখানে নেয়া হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। আশপাশের প্রতিবেশীরা শেষবারের মতো মুরসালিনকে দেখতে ভিড় করেন।
এ সময় মুরসালিনের স্ত্রী ও মা বুক চাপড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। স্বজনরা তাদের ধরে রাখতে পারছিলেন না। মাথায় তেল-পানি দেন কেউ। স্ত্রী অর্ণি আক্তার মিতু বার বার বলছিলেন, কি থেকে কি হয়ে গেল। আমার স্বামীর কি দোষ ছিল? কেন ওকে এভাবে হত্যা করা হলো। দুইটা বাচ্চা নিয়ে আমি এখন কই যামু। কে আমাদের ভরণপোষণ দেবে। স্বজনরা মিতুকে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পাশ থেকে কেউ চোখের পানি, মুখের ঘাম মুছে দিচ্ছিলেন। কেউ হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছিলেন। স্বামীর শোকে কাঁদতে কাঁদতে ভোর থেকে ক্লান্ত মিতু। তার চোখ বেয়ে যেন আর পানি বের হচ্ছে না। নিথর দেহের মতো হেলান দিয়ে পড়ে আছেন মেঝেতে। আর্তনাদ দেখে উপস্থিতির জনতার চোখ বেয়েও পানি টলমল করতে দেখা গেছে। কে কাকে সান্ত¡না দিবেন, সেই ভাষা যেন কারও জানা নেই।
নিউ সুপার মার্কেটে গেলে সেখানেও মুরসালিনের মৃত্যুর ঘটনা ছিল সবার মুখে মুখে। এ সময় মুরসালিনের দোকান মালিক টুটুল জানান, প্রায় তিন বছর ধরে ৯ হাজার টাকা বেতন তার দোকানে চাকরি করে আসছিল মুরসালিন। সে অত্যন্ত ভদ্র ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। কখনও কোন ধরনের ঝামেলায় তাকে জড়াতে দেখিনি বরং ঝামেলা এড়িয়ে চলত। অথচ তার প্রাণ গেল এভাবে! টুটুল বলেন, সংঘর্ষের কারণে মঙ্গলবার মার্কেট কমিটি মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করেন। তবে তারা সেটি সকালে মার্কেটে এসে জানতে পারেন। তখন অনেক দোকান মালিক ও কর্মচারীরা মার্কেটে ইতোমধ্যে চলে এসেছেন।
পরে মার্কেট বন্ধের খবরে আমি সেখান থেকে চলে যাই। মুরসালিনসহ অন্যান্য কর্মচারীদেরও বাসায় চলে যেতে বলি। সবাই চলেও যায়। কিন্তু দুপুরের দিকে পরিচিত একজন কল করে জানায়, সংঘর্ষে মুরসালিন আহত হয়েছে। তাকে মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। আমরা মেডিকেলে ছুটে গিয়ে দেখি, তার মাথার পেছনের অংশ বড় ক্ষত হয়ে গেছে। হয়তো কারও আঘাতে কিংবা বড় ইট পড়ে এমনটি হতে পারে। তবে সেটি কিভাবে হয়েছে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। সেদিনই চিকিৎসক জানিয়েছেন, মুরসালিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। মুরসালিনের মৃত্যুর ঘটনায় আশপাশের দোকানের সহকর্মীরা, দোকান মালিক ও কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলছেন, ব্যবসায় ক্ষতি হলেও তা পুষে ওঠা যাবে। কিন্তু সংঘর্ষে যে দুইজন মানুষ মারা গেল, এই ক্ষতি কী কাটিয়ে উঠার মতো? দুটি পরিবার এখন কিভাবে চলবে। তাদের স্ত্রী, সন্তানদের কে খাওয়াবে?
নিউমার্কেট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ইয়াসির কবির বলেন, শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে মুরসালিন আহত হয়েছিলেন। তবে কোন পক্ষের হামলায় কিংবা কিভাবে তিনি প্রাণ হারালেন, সেটি এখনও জানা যায়নি। এ ঘটনায় তার পরিবারের কেউ গতকাল রাত পর্যন্ত নিউমার্কেট থানায় মামলা করেননি। এদিকে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কামরাঙ্গীরচরে মুরসালিনের মরদেহ গোসল করানো হয়। সেখানে বাদ আছর জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এর আগে মঙ্গলবার রাতে মারা যান এলিফ্যান্ড রোডের একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মচারী নাহিদ। এখনও দুই শিক্ষার্থী ও একজন কর্মচারী চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।