প্রাথমিকে সমাপনী পরীক্ষা এবারও হচ্ছে না

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবারও হচ্ছে না। প্রাথমিকের যে নতুন শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হয়েছে সেখানে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা রাখেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে গত দুই বছর এই পরীক্ষা নেয়া হয়নি।

অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষাও আর হচ্ছে না। শিক্ষা বোর্ডগুলোর এই পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে কোন প্রস্তুতি নেই। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এবার জেএসসি-জেডিসি নেয়া হবে কি-না সেটি নিশ্চিত নয়। আগামী দু’একমাসের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তিনি গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, পরীক্ষা নেয়া হবে কি-না সে সর্ম্পকে পরীক্ষার ২-৩ মাস আগে ঘোষণা দেয়া হবে।

সরকার দেশের সব শিশুকে শিক্ষার আওতায় নেয়ার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং ২০১০ সালে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষা সমাপনী (জেএসসি-জেডিসি) পরীক্ষা শুরু করে। প্রতিবছর নভেম্বরে এই দুই স্তরের পরীক্ষা নিয়ে ডিসেম্বরের শেষের দিকে ফল প্রকাশ করা হতো।

কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে এই দুই স্তরের পরীক্ষা নেয়া হয়নি। এ বছর নতুন শিক্ষাক্রমের ‘পাইলটিং’ (পরীক্ষামূলক পাঠদান) শুরু হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গতকাল সংবাদকে জানান, তারা এখন অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করাচ্ছেন। তবে জেএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে কি-না সেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। কিন্তু পরীক্ষা না নিয়ে শিক্ষার্থীদের সনদ দিতে হলেও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে বলে জানান বোর্ড চেয়ারম্যান।

জেএসসি পরীক্ষার কোন প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আগামী জুনে এসএসসি এবং আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা। আমরা সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রতিটি পরীক্ষা দেড় থেকে দুই মাস ধরে চলবে। এ হিসাবে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হতে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর নাগাদ গড়াতে পারে। তারপর ফল প্রকাশ।’ এই ব্যস্ততার পরও সরকার যদি জেএসসি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে বলে জানান ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী একবারেই বাতিলের চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নতুন যে কারিকুলাম আছে সেখানে পরীক্ষাটা নাই। আমরা শিক্ষাবিদসহ অংশীজনের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

‘সমাপনী পরীক্ষা নভেম্বরের দিকে হয়’ জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা ২-৩ মাস আগে জানাবো। এখনই জানালে কোচিং সেন্টারে সব লাইন ধরবে।’

করোনা সংক্রমণের কারণে দুই বছর স্কুল বন্ধ ছিল উল্লেখ করে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শিখন ঘাটতি পূরণে আর একটু টাইম নেই। আমরা ঘাটতি পূরণ করে তারপর সিদ্ধান্ত জানাবো।’

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মো. মনসুরুল আলম বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই সমাপনী পরীক্ষা থাকবে না।’ তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা পাঠে ব্যস্ত থাকুক। তাদের ‘টেনশনে’ ফেলতে চাই না। তারা শিখন যোগ্যতা যাতে অর্জন করতে পারে সেজন্য পরীক্ষার ‘টেনশন’ দিতে চাই না।

ভবিষ্যতে নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোন পরীক্ষা থাকবে না জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়নে যাবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের বাড়তি টেনশন দিতে চাইছি না। আস্তে আস্তে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাবে।’

সরকার আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ছোটদের শিখন প্রক্রিয়া এবং বড়দের শিখন প্রক্রিয়া ভিন্ন। এখনই জানিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটা ব্যাহত করতে চাই না। পরীক্ষাকেন্দ্রিক চিন্তা করার কোন কারণ নেই।

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২ , ০৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২০ রমাদ্বান ১৪৪৩

প্রাথমিকে সমাপনী পরীক্ষা এবারও হচ্ছে না

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবারও হচ্ছে না। প্রাথমিকের যে নতুন শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হয়েছে সেখানে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা রাখেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে গত দুই বছর এই পরীক্ষা নেয়া হয়নি।

অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষাও আর হচ্ছে না। শিক্ষা বোর্ডগুলোর এই পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে কোন প্রস্তুতি নেই। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এবার জেএসসি-জেডিসি নেয়া হবে কি-না সেটি নিশ্চিত নয়। আগামী দু’একমাসের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তিনি গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, পরীক্ষা নেয়া হবে কি-না সে সর্ম্পকে পরীক্ষার ২-৩ মাস আগে ঘোষণা দেয়া হবে।

সরকার দেশের সব শিশুকে শিক্ষার আওতায় নেয়ার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং ২০১০ সালে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষা সমাপনী (জেএসসি-জেডিসি) পরীক্ষা শুরু করে। প্রতিবছর নভেম্বরে এই দুই স্তরের পরীক্ষা নিয়ে ডিসেম্বরের শেষের দিকে ফল প্রকাশ করা হতো।

কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে এই দুই স্তরের পরীক্ষা নেয়া হয়নি। এ বছর নতুন শিক্ষাক্রমের ‘পাইলটিং’ (পরীক্ষামূলক পাঠদান) শুরু হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গতকাল সংবাদকে জানান, তারা এখন অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করাচ্ছেন। তবে জেএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে কি-না সেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। কিন্তু পরীক্ষা না নিয়ে শিক্ষার্থীদের সনদ দিতে হলেও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে বলে জানান বোর্ড চেয়ারম্যান।

জেএসসি পরীক্ষার কোন প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আগামী জুনে এসএসসি এবং আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা। আমরা সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রতিটি পরীক্ষা দেড় থেকে দুই মাস ধরে চলবে। এ হিসাবে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হতে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর নাগাদ গড়াতে পারে। তারপর ফল প্রকাশ।’ এই ব্যস্ততার পরও সরকার যদি জেএসসি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে বলে জানান ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী একবারেই বাতিলের চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নতুন যে কারিকুলাম আছে সেখানে পরীক্ষাটা নাই। আমরা শিক্ষাবিদসহ অংশীজনের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

‘সমাপনী পরীক্ষা নভেম্বরের দিকে হয়’ জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা ২-৩ মাস আগে জানাবো। এখনই জানালে কোচিং সেন্টারে সব লাইন ধরবে।’

করোনা সংক্রমণের কারণে দুই বছর স্কুল বন্ধ ছিল উল্লেখ করে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শিখন ঘাটতি পূরণে আর একটু টাইম নেই। আমরা ঘাটতি পূরণ করে তারপর সিদ্ধান্ত জানাবো।’

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মো. মনসুরুল আলম বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই সমাপনী পরীক্ষা থাকবে না।’ তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা পাঠে ব্যস্ত থাকুক। তাদের ‘টেনশনে’ ফেলতে চাই না। তারা শিখন যোগ্যতা যাতে অর্জন করতে পারে সেজন্য পরীক্ষার ‘টেনশন’ দিতে চাই না।

ভবিষ্যতে নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোন পরীক্ষা থাকবে না জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়নে যাবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের বাড়তি টেনশন দিতে চাইছি না। আস্তে আস্তে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাবে।’

সরকার আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ছোটদের শিখন প্রক্রিয়া এবং বড়দের শিখন প্রক্রিয়া ভিন্ন। এখনই জানিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটা ব্যাহত করতে চাই না। পরীক্ষাকেন্দ্রিক চিন্তা করার কোন কারণ নেই।