সেলিম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাঁবিপ্রবি) ক্যাম্পাসের জন্য জমি অধিগ্রহণে সরকারের ৩৬০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের চেষ্টা করেছিলেন জেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত ঢাকা দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের সহযোগী সেলিম খান। জমির দাম বাড়িয়ে ১৩৯টি দলিল বানিয়ে কারসাজি করে এ বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করে একটি চক্র, যার নেতৃত্বে ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাথমিকভাবে এমন অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে।

এক সময় রিকশাচালক থেকে চলচ্চিত্রের প্রযোজক বনে যাওয়া সেলিম খান পুরান ঢাকার একটি ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলেও সেলিম খান আত্মগোপনে চলে যান। তখন তার নানা অপকর্মের কাহিনী বেরিয়ে আসে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে চাঁদপুরে অভিযান পরিচালনা করে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযানে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দাম দেখানো হয়। এর মাধ্যমে ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিল কারসাজির মাধ্যমে সরকারের ৩৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে জেলা প্রশাসনে জমির দামে ফারাকের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তা করা সম্ভব হয়নি।

শিক্ষামন্ত্রীর পরিবারের কেউ এতে জড়িত কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের নাম চলে আসবে। এখানে গোপন করার কিছু নেই। তদন্তে উদ্ঘাটিত হবে কারা জড়িত।’

সম্প্রতি প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) জমি অধিগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির পরিবারের সদস্যরা জড়িত বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দাবি করেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাঁবিপ্রবি) স্থাপনের প্রস্তাবিত এলাকায় আমি বা আমার পরিবারের কারও কোন জমি নেই। তাই অধি গ্রহণের সময় বেশি মূল্যে জমি বিক্রি করে লাভবান হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না।

এদিকে গত ৬ এপ্রিল দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পত্তি অর্জন বিষয়ে চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাইয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লার সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাৎ-এর নেতৃত্বে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে।

জানা গেছে, অভিযানকালে দুদকের টিম চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মৌজায় চাঁদপুর-হাইমচর সড়কের পাশে মেঘনা নদী থেকে ৮০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমি সরেজমিন পরিদর্শন করে। দুদক টিম, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, বিআইডব্লিউটিএ ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে অভিযোগ সম্পর্কিত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। টিমের সংগৃহীত রেকর্ডপত্রে চাঁদপুর জেলার পদ্মা-মেঘনা নদী অংশে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রকৃতি-পরিবেশ বিনষ্টসহ রাজস্ব ক্ষতি এবং প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকারের বিরাট অঙ্কের অর্থ লুটপাটের দূরভিসন্ধি সম্পর্কে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দুদক জানায়।

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২ , ০৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২০ রমাদ্বান ১৪৪৩

জমির দাম বাড়িয়ে কারসাজি

সেলিম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাঁবিপ্রবি) ক্যাম্পাসের জন্য জমি অধিগ্রহণে সরকারের ৩৬০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের চেষ্টা করেছিলেন জেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত ঢাকা দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের সহযোগী সেলিম খান। জমির দাম বাড়িয়ে ১৩৯টি দলিল বানিয়ে কারসাজি করে এ বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করে একটি চক্র, যার নেতৃত্বে ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাথমিকভাবে এমন অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে।

এক সময় রিকশাচালক থেকে চলচ্চিত্রের প্রযোজক বনে যাওয়া সেলিম খান পুরান ঢাকার একটি ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলেও সেলিম খান আত্মগোপনে চলে যান। তখন তার নানা অপকর্মের কাহিনী বেরিয়ে আসে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে চাঁদপুরে অভিযান পরিচালনা করে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযানে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দাম দেখানো হয়। এর মাধ্যমে ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিল কারসাজির মাধ্যমে সরকারের ৩৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে জেলা প্রশাসনে জমির দামে ফারাকের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তা করা সম্ভব হয়নি।

শিক্ষামন্ত্রীর পরিবারের কেউ এতে জড়িত কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের নাম চলে আসবে। এখানে গোপন করার কিছু নেই। তদন্তে উদ্ঘাটিত হবে কারা জড়িত।’

সম্প্রতি প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) জমি অধিগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির পরিবারের সদস্যরা জড়িত বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দাবি করেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাঁবিপ্রবি) স্থাপনের প্রস্তাবিত এলাকায় আমি বা আমার পরিবারের কারও কোন জমি নেই। তাই অধি গ্রহণের সময় বেশি মূল্যে জমি বিক্রি করে লাভবান হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না।

এদিকে গত ৬ এপ্রিল দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পত্তি অর্জন বিষয়ে চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাইয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লার সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাৎ-এর নেতৃত্বে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে।

জানা গেছে, অভিযানকালে দুদকের টিম চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মৌজায় চাঁদপুর-হাইমচর সড়কের পাশে মেঘনা নদী থেকে ৮০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমি সরেজমিন পরিদর্শন করে। দুদক টিম, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, বিআইডব্লিউটিএ ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে অভিযোগ সম্পর্কিত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। টিমের সংগৃহীত রেকর্ডপত্রে চাঁদপুর জেলার পদ্মা-মেঘনা নদী অংশে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রকৃতি-পরিবেশ বিনষ্টসহ রাজস্ব ক্ষতি এবং প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকারের বিরাট অঙ্কের অর্থ লুটপাটের দূরভিসন্ধি সম্পর্কে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দুদক জানায়।