করোনার কারণে দুই বছর কাক্সিক্ষত ব্যবসা করতে পারেনি পাবনা ও সিরাজগঞ্জের তাঁতিরা। আশায় বুক বেঁধে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে তাঁত কারখানাগুলো চালু করলেও লাভের দেখা পাচ্ছে না তাঁতিরা। দফায় দফায় সুতা, রঙসহ তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের দাম বাড়ায় তাঁতের কাপড় তৈরি করে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছে না দেশের বৃহত্তম তাঁতসমৃদ্ধ অঞ্চল পাবনা ও সিরাজগঞ্জের প্রান্তিক তাঁতিরা।
লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আশায় বুক বেঁধে তাঁতিরা কাপ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করলেও বাজারে নিয়ে কাপড় বিক্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন। লোকসানের ভয়ে অনেকে পৈতৃক ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের বৃহত্তম তাঁত শিল্প। বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ারলুম মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. হায়দার আলী বলেন, দেশের অন্যতম বৃহত্তম তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা পাবনা ও সিরাজগঞ্জের ৬ লাখ তাঁতের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ তাঁতই বন্ধ হয়ে গেছে।
দেশের বৃহত্তম তাঁতসমৃদ্ধ এ দুই জেলায় দুই থেকে আড়াই লাখ তাঁত সচল থাকলেও চড়া দামে কাচামাল নিয়ে কাপড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পারছে না। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে তাঁত শিল্প বলে জানান তিনি।
তাঁত কাপরের ব্যবসার সবচেয়ে বড় মৌসুম হওয়ায় প্রতি বছর রোজার ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে উঠে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের তাঁতিরা। গত দুই বছর করোনার কারণে আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি তাঁতিরা, লোকসান পুষিয়ে নিতে এ বছর কর্জ করে কারখানা চালু করলেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং বাজারে আশানুরূপ কাপড় বিক্রি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে তাঁতিরা।
সরেজমিন পাবনা ও সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লিগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসার ভরা মৌসুমেও কাক্সিক্ষত লাভের মুখ দেখতে না পারায় হা-হুতাশ করছে তাঁতিরা। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার নগরডালা গ্রামের তাঁতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তার কারখানার ৩০টি তাঁতের প্রায় সবগুলই গত বছর বন্ধ ছিল। ঈদকে সামনে রেখে এ বছর ধার- দেনা করে ২০টি তাঁত চালু করেছেন, তবে লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা লোকসান দিয়ে কাপড় তৈরি করেও বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারেছেন না।
নজরুল জানান, ঈদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে গত সপ্তাহে ২০০ শাড়ি তৈরি করেছেন তিনি। প্রতিটি শাড়ির উৎপাদন খরচ ৫০০ টাকার ওপর হলেও ৪৫০ টাকা দিয়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। গত সপ্তাহে পাইকাররা মাত্র ১২০টি শাড়ি তার কাছ থেকে কিনেছেন, এখনও ঘরে পড়ে আছে ৮০টি শাড়ি। তারপরও ঈদের শেষ মুহূর্তের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কারখানা চালু রেখেছেন।
নজরুল বলেন, ঈদকে সামনে রেখে দেড় হাজার শাড়ি তৈরির প্রস্তুতি রয়েছে তার, কিন্তু বাজারে কাপরের চাহিদা না থাকায় লোকসান দিয়ে কাপর তৈরি করেও ঘরেই জমা করে রাখতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না বলে জানান তিনি।
একই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, তার ৪১টি তাঁত ছিল, করোনার থাবায় ক্রমাগত লোকসান আর দেনার দায়ে সব তাঁত বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।
তাঁতিরা জানান, তাঁত কাপরের কাঁচামাল রঙ ও সুতার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত এক বছরে প্রতিটি সুতার দাম ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে অথচ কাপড়ের দাম সে তুলনায় বাড়েনি, ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। তাঁতিরা জানান, প্রতি বান্ডেল ৫০ কাউন্ট সুতা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা যা গত বছর ছিল ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। একইভাবে ৬০ কাউন্ট সুতা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৭ হাজার থেকে ২৭ হাজার ৫০০ টাকায়। গত বছর এর দাম ছিল ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। একইভাবে ৮০ কাউন্ট সুতা এখন ৩৩ থেকে ৩৪ হাজার টাকা রোল বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
একইভাবে রঙের দামও বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। পাবনার জালালপুর গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী মো. সবুর বলেন, সুতার দাম গত এক বছরে তিন দফা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। রঙ ও সুতার দাম বাড়ার ফলে কাপরের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। কিন্তু বাজারে কাপড়ের দাম মাত্র ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না তাঁতিরা।
সবুর বলেন, তার করখানায় চার পিসের ৫০ কাউন্ট সুতার লুঙ্গি তৈরি করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা আর বাজারে একটি থান ৮৫০ থেক ৯০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না। একটি ৮০ সুতার লুঙ্গির থান তৈরি করতে আড়াই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে কিন্তু বাজারে ২ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। সবুর বলেন লোকসান দিয়ে কাপড় তৈরি করেও বাজারে নিয়ে যেয়ে বিক্রি না করতে পেরে ফেরত আসতে হচ্ছে তাকে। ঈদকে সামনে রেখে প্রতি সপ্তাহে তার কারখানা থেকে ৬০০ লুঙ্গি তৈরি করলেও ২০০ থেকে ২৫০ পিসের বেশি লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে না। এতে আরও বিপাকে পড়েছেন তার মতো সাধারণ তাঁতিরা।
ঈদে কাক্সিক্ষত ব্যবসা করতে না পারলে মূলধন হারিয়ে পথে বসতে হবে তাঁতিদের বলে জানান তিনি।
এদিকে তাঁত কাপড়ের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এবার ঈদের কাক্সিক্ষত বেচাকেনা করতে পারছেন না তারা।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম তাঁত কাপড়ের পাইকারি হাট আতাইকুলা হাটে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা না থাকায় পাইকাররা বাজারে আশানুরূপ বেচাকেনা করতে পারছে না।
আতাইকুলা হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছরে ঈদের সময় প্রতি হাটবারে তার দোকান থেকে কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ পিস তাঁত কাপড় বিক্রি হতো। এ বছর প্রতি হাটবারে মাত্র ৫০/৬০ পিসের বেশি কাপড় বিক্রি করতে পারছেন না তিনি।
মহিউদ্দিন জানান, প্রতিবছর বাইরে থেকে পাইকাররা এ হাটে আসলেও এ বছর বাইরের ক্রেতাদের আনাগোনা একেবারেই কম। ফলে স্থানীয় ক্রেতাদের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের।
তবে ঈদের শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সরেজমিন পাবনা ও সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লিগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রমাগত লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে অধিকাংশ প্রান্তিক তাঁতিরা ইতোমধ্যে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। বড় ব্যবসায়ীরা অর্ধেকের বেশি তাঁত বন্ধ রেখে কোনরকম কারখানা চালু রেখেছেন।
তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে তাঁতিরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ারলুম মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আয়ুব আলী বলেন, তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে।
আয়ুব বলেন, তাঁত কাপড়ের ক্রেতাদের বেশিরভাগই নিম্নআয়ের মানুষ, কাপড়ের দাম বেশি বাড়ানো হলে তাদের পক্ষে কাপড় কেনা কঠিন হয়ে পড়বে, আর সে কারণেই উৎপাদন খরচ কমানের জন্য কাঁচামালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানান তিনি।
শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২ , ০৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২০ রমাদ্বান ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা
করোনার কারণে দুই বছর কাক্সিক্ষত ব্যবসা করতে পারেনি পাবনা ও সিরাজগঞ্জের তাঁতিরা। আশায় বুক বেঁধে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে তাঁত কারখানাগুলো চালু করলেও লাভের দেখা পাচ্ছে না তাঁতিরা। দফায় দফায় সুতা, রঙসহ তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের দাম বাড়ায় তাঁতের কাপড় তৈরি করে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছে না দেশের বৃহত্তম তাঁতসমৃদ্ধ অঞ্চল পাবনা ও সিরাজগঞ্জের প্রান্তিক তাঁতিরা।
লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আশায় বুক বেঁধে তাঁতিরা কাপ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করলেও বাজারে নিয়ে কাপড় বিক্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন। লোকসানের ভয়ে অনেকে পৈতৃক ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের বৃহত্তম তাঁত শিল্প। বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ারলুম মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. হায়দার আলী বলেন, দেশের অন্যতম বৃহত্তম তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা পাবনা ও সিরাজগঞ্জের ৬ লাখ তাঁতের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ তাঁতই বন্ধ হয়ে গেছে।
দেশের বৃহত্তম তাঁতসমৃদ্ধ এ দুই জেলায় দুই থেকে আড়াই লাখ তাঁত সচল থাকলেও চড়া দামে কাচামাল নিয়ে কাপড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পারছে না। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে তাঁত শিল্প বলে জানান তিনি।
তাঁত কাপরের ব্যবসার সবচেয়ে বড় মৌসুম হওয়ায় প্রতি বছর রোজার ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে উঠে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের তাঁতিরা। গত দুই বছর করোনার কারণে আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি তাঁতিরা, লোকসান পুষিয়ে নিতে এ বছর কর্জ করে কারখানা চালু করলেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং বাজারে আশানুরূপ কাপড় বিক্রি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে তাঁতিরা।
সরেজমিন পাবনা ও সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লিগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসার ভরা মৌসুমেও কাক্সিক্ষত লাভের মুখ দেখতে না পারায় হা-হুতাশ করছে তাঁতিরা। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার নগরডালা গ্রামের তাঁতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তার কারখানার ৩০টি তাঁতের প্রায় সবগুলই গত বছর বন্ধ ছিল। ঈদকে সামনে রেখে এ বছর ধার- দেনা করে ২০টি তাঁত চালু করেছেন, তবে লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা লোকসান দিয়ে কাপড় তৈরি করেও বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারেছেন না।
নজরুল জানান, ঈদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে গত সপ্তাহে ২০০ শাড়ি তৈরি করেছেন তিনি। প্রতিটি শাড়ির উৎপাদন খরচ ৫০০ টাকার ওপর হলেও ৪৫০ টাকা দিয়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। গত সপ্তাহে পাইকাররা মাত্র ১২০টি শাড়ি তার কাছ থেকে কিনেছেন, এখনও ঘরে পড়ে আছে ৮০টি শাড়ি। তারপরও ঈদের শেষ মুহূর্তের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কারখানা চালু রেখেছেন।
নজরুল বলেন, ঈদকে সামনে রেখে দেড় হাজার শাড়ি তৈরির প্রস্তুতি রয়েছে তার, কিন্তু বাজারে কাপরের চাহিদা না থাকায় লোকসান দিয়ে কাপর তৈরি করেও ঘরেই জমা করে রাখতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না বলে জানান তিনি।
একই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, তার ৪১টি তাঁত ছিল, করোনার থাবায় ক্রমাগত লোকসান আর দেনার দায়ে সব তাঁত বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।
তাঁতিরা জানান, তাঁত কাপরের কাঁচামাল রঙ ও সুতার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত এক বছরে প্রতিটি সুতার দাম ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে অথচ কাপড়ের দাম সে তুলনায় বাড়েনি, ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। তাঁতিরা জানান, প্রতি বান্ডেল ৫০ কাউন্ট সুতা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা যা গত বছর ছিল ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। একইভাবে ৬০ কাউন্ট সুতা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৭ হাজার থেকে ২৭ হাজার ৫০০ টাকায়। গত বছর এর দাম ছিল ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। একইভাবে ৮০ কাউন্ট সুতা এখন ৩৩ থেকে ৩৪ হাজার টাকা রোল বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
একইভাবে রঙের দামও বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। পাবনার জালালপুর গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী মো. সবুর বলেন, সুতার দাম গত এক বছরে তিন দফা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। রঙ ও সুতার দাম বাড়ার ফলে কাপরের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। কিন্তু বাজারে কাপড়ের দাম মাত্র ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না তাঁতিরা।
সবুর বলেন, তার করখানায় চার পিসের ৫০ কাউন্ট সুতার লুঙ্গি তৈরি করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা আর বাজারে একটি থান ৮৫০ থেক ৯০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না। একটি ৮০ সুতার লুঙ্গির থান তৈরি করতে আড়াই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে কিন্তু বাজারে ২ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। সবুর বলেন লোকসান দিয়ে কাপড় তৈরি করেও বাজারে নিয়ে যেয়ে বিক্রি না করতে পেরে ফেরত আসতে হচ্ছে তাকে। ঈদকে সামনে রেখে প্রতি সপ্তাহে তার কারখানা থেকে ৬০০ লুঙ্গি তৈরি করলেও ২০০ থেকে ২৫০ পিসের বেশি লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে না। এতে আরও বিপাকে পড়েছেন তার মতো সাধারণ তাঁতিরা।
ঈদে কাক্সিক্ষত ব্যবসা করতে না পারলে মূলধন হারিয়ে পথে বসতে হবে তাঁতিদের বলে জানান তিনি।
এদিকে তাঁত কাপড়ের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এবার ঈদের কাক্সিক্ষত বেচাকেনা করতে পারছেন না তারা।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম তাঁত কাপড়ের পাইকারি হাট আতাইকুলা হাটে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা না থাকায় পাইকাররা বাজারে আশানুরূপ বেচাকেনা করতে পারছে না।
আতাইকুলা হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছরে ঈদের সময় প্রতি হাটবারে তার দোকান থেকে কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ পিস তাঁত কাপড় বিক্রি হতো। এ বছর প্রতি হাটবারে মাত্র ৫০/৬০ পিসের বেশি কাপড় বিক্রি করতে পারছেন না তিনি।
মহিউদ্দিন জানান, প্রতিবছর বাইরে থেকে পাইকাররা এ হাটে আসলেও এ বছর বাইরের ক্রেতাদের আনাগোনা একেবারেই কম। ফলে স্থানীয় ক্রেতাদের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের।
তবে ঈদের শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সরেজমিন পাবনা ও সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লিগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রমাগত লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে অধিকাংশ প্রান্তিক তাঁতিরা ইতোমধ্যে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। বড় ব্যবসায়ীরা অর্ধেকের বেশি তাঁত বন্ধ রেখে কোনরকম কারখানা চালু রেখেছেন।
তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে তাঁতিরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ারলুম মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আয়ুব আলী বলেন, তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে।
আয়ুব বলেন, তাঁত কাপড়ের ক্রেতাদের বেশিরভাগই নিম্নআয়ের মানুষ, কাপড়ের দাম বেশি বাড়ানো হলে তাদের পক্ষে কাপড় কেনা কঠিন হয়ে পড়বে, আর সে কারণেই উৎপাদন খরচ কমানের জন্য কাঁচামালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানান তিনি।