পরিবেশ রক্ষা করে কারখানা অবকাঠামো নির্মাণ করুন

প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিটি শিল্প-কারখানা ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিটি শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে নির্মাণাধীন অন্যসব স্থাপনা, সবকিছু পরিবেশবান্ধব করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ নরসিংদী জেলার ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও অন্যান্য চার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব (গ্রিন) ১০টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে ৭টিই বাংলাদেশে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার সরকার প্রতিটি ধাপে পরিবেশ বিবেচনায় পদক্ষেপ নিচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছে এবং দেশে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে, তখনই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক দায়িত্ব আছে এবং এগুলো সম্পন্ন করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ১০ হাজার ৪৬০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সংশ্লিষ্ট অন্যরা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) ও নরসিংদীর সার প্রকল্প স্থান থেকে এ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী একই সময়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের ১৪তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়সহ আরও চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে মাদারীপুর বিএসসিআইসি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট সম্প্রসারণ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টার (বিআইটিএসি) এর আওতায় টুলস ইনস্টিটিউশন স্থাপন এবং বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ালিং করপোরেশনের (বিএসইসি) আওতায় এলইডি লাইট অ্যাসেম্বিং প্লান্ট স্থাপন।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপির সভাপতিত্বে ঘোড়াশাল থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্টিজ করপোরেশনের চেয়ারম্যান শাহ মো. ইমদাদুল হক।

শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বিআইসিসি থেকে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিও বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে এই প্রকল্পগুলোর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

পরে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকাশিত শিল্পায়নের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার ওপর একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি খাদ্যপণ্য রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা খাদ্যের মান বৃদ্ধি করতে পারলে, আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়েও তা বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। এখন দেশের মানুষের ক্রমক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ নজর দেয়ায় বাংলাদেশ কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। নিয়মিত গবেষণার ফলে বাংলাদেশে শস্য, ফল, শাক-সবজি, ডিম, মাছ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমরা (খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প উন্নয়নে) নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’ সরকারপ্রধান বলেন, দেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তারা যথাযথ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১ চূড়ান্ত হয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩৩টি প্রকল্পের বিপরীতে ৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের নীতি ও গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে জিডিপিতে এই শিল্প এখন ৩৫ শতাংশ অবদান রাখছে। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর থেকে তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা ভোটের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় রেখেছে বলেই আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮-০৯ অর্থবছরের মাত্র ১৫,৫৬৫ মিলিয়ন থেকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৫,৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছে। কারণ, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ২০২টি দেশে ৭৬৬টি পণ্য রপ্তানি করে। তার সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, মুজিববর্ষে দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িকে আলোকিত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এ রূপান্তরিত করেছেন, প্রতিটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দিয়েছে এবং মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ পাঠিয়েছে।

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২ , ০৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২০ রমাদ্বান ১৪৪৩

পরিবেশ রক্ষা করে কারখানা অবকাঠামো নির্মাণ করুন

প্রধানমন্ত্রী

বাসস

image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিটি শিল্প-কারখানা ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিটি শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে নির্মাণাধীন অন্যসব স্থাপনা, সবকিছু পরিবেশবান্ধব করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ নরসিংদী জেলার ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও অন্যান্য চার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব (গ্রিন) ১০টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে ৭টিই বাংলাদেশে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার সরকার প্রতিটি ধাপে পরিবেশ বিবেচনায় পদক্ষেপ নিচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছে এবং দেশে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে, তখনই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক দায়িত্ব আছে এবং এগুলো সম্পন্ন করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ১০ হাজার ৪৬০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সংশ্লিষ্ট অন্যরা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) ও নরসিংদীর সার প্রকল্প স্থান থেকে এ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী একই সময়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের ১৪তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়সহ আরও চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে মাদারীপুর বিএসসিআইসি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট সম্প্রসারণ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টার (বিআইটিএসি) এর আওতায় টুলস ইনস্টিটিউশন স্থাপন এবং বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ালিং করপোরেশনের (বিএসইসি) আওতায় এলইডি লাইট অ্যাসেম্বিং প্লান্ট স্থাপন।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপির সভাপতিত্বে ঘোড়াশাল থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্টিজ করপোরেশনের চেয়ারম্যান শাহ মো. ইমদাদুল হক।

শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বিআইসিসি থেকে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিও বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে এই প্রকল্পগুলোর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

পরে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকাশিত শিল্পায়নের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার ওপর একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি খাদ্যপণ্য রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা খাদ্যের মান বৃদ্ধি করতে পারলে, আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়েও তা বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। এখন দেশের মানুষের ক্রমক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ নজর দেয়ায় বাংলাদেশ কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। নিয়মিত গবেষণার ফলে বাংলাদেশে শস্য, ফল, শাক-সবজি, ডিম, মাছ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমরা (খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প উন্নয়নে) নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’ সরকারপ্রধান বলেন, দেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তারা যথাযথ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১ চূড়ান্ত হয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩৩টি প্রকল্পের বিপরীতে ৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের নীতি ও গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে জিডিপিতে এই শিল্প এখন ৩৫ শতাংশ অবদান রাখছে। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর থেকে তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা ভোটের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় রেখেছে বলেই আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮-০৯ অর্থবছরের মাত্র ১৫,৫৬৫ মিলিয়ন থেকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৫,৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছে। কারণ, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ২০২টি দেশে ৭৬৬টি পণ্য রপ্তানি করে। তার সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, মুজিববর্ষে দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িকে আলোকিত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এ রূপান্তরিত করেছেন, প্রতিটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দিয়েছে এবং মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ পাঠিয়েছে।