ময়মনসিংহের ত্রাস জিলানী দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহের ত্রিশালের ত্রাস ও ভূমিদস্যু জিলানী বাহিনীর প্রধান আবদুল কাদের জিলানীকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে গাজীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্য ২ জন হলো লাল মিয়া ও রাকিবুল ইসলাম।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিলানীর দেয়া তথ্য মতে, তার বাড়ির সামনে বাঁশঝাড় থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা উদ্ধার করা হয়। ওই বস্তায় একটি লোহার রড, দুইটি চাপাতি, একটি বড় দা, একটি লোহার তৈরি বেসবল, খেলার ব্যাটসাদৃশ্য ধাতবদ- উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

র‌্যাব জানায়, গত ১৪ এপ্রিল রাতে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার জামতলী গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কতিপয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আবুল কালাম (ভিকটিম) ও তার দুই ভাতিজার ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। পরবর্তীতে আবুল কালাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এলাকাবাসী আলোচিত এ হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। এরপর র‌্যাব জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

নিহত আবুল কালামের ভাতিজা মো. সোহাগ একটি হত্যা মামলার সাক্ষী। সে মামলায় সোহাগ আদালতে সাক্ষ্য দেয়ায় গ্রেপ্তারকৃত আবদুল কাদের জিলানী ও তার সহযোগীরা তাকে মারধর ও হত্যার হুমকি দেয়। এরই জের ধরে ঘটনার দিন রাতে মামলার বাদী সোহাগ স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার বাড়ি সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে জিলানীর পরিকল্পনা ও নির্দেশ মতো লাল মিয়া ও রাকিবুল ইসলামসহ ৯ জন হামলা চালায়।

তখন সোহাগ চিৎকার করলে তার চাচা আবুল কালাম, ছোট ভাই ও চাচাত ভাই তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলে তাদের গুরুতর আহত করে।

ঘটনার পর অভিযুক্তরা আত্মগোপনে গিয়ে গাজীপুরে অবস্থান নেয়।র‌্যাব জানায়, মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার হত্যা মামলা এবং রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলা থেকে বাঁচার জন্য তারা ৩টি হত্যাকা- ঘটিয়েছে।

অভিযুক্তরা জালিয়াতির মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের ভূমি দখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করত। বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি গত ১৯ বছর ধরে একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন।

গত ৮ বছর ধরে স্থানীয় দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন। এলাকার গরিবদের সাহায্য সহযোগিতা করতেন। গ্রামের গরিব মানুষরা তার কাছে গিয়ে নানা অভিযোগ করতেন। তিনি তাদের পরামর্শ দিতেন। অন্যায়ের প্রতবাদ করায় ২০১৮ সালের ৪ জুলাই রাত ১২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আবদুল কাদের জিলানী এলাকার সন্ত্রাস, ভূমিদখল ও বিভিন্ন অপকর্মের জন্য ২০ থেকে ২৫ জনের একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে। তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ মোট ১২টি মামলা ও ১০টি জিডি রয়েছে। এর আগে সে বিভিন্ন সময় একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছে।

বিভিন্ন সময় উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় স্থানীয় চেয়ারম্যান তাকে ভূমিদস্যু আখ্যায়িত করে। তার অত্যাচারে মোক্ষপুর, মটবাড়ি ও আমিরবাড়ি ইউনিয়নের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছিল।

গ্রেপ্তার লাল মিয়া জিলানী বাহিনীর প্রধান আবদুল কাদের জিলানীর বড় ভাই। তার সব অপকর্মের অন্যতম প্রধান সহযোগী। আবুল কালামকে হত্যায় সে অংশগ্রহণ করেছিল।

গ্রেপ্তার রাকিবুল এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। আবুল কালামকে হত্যার সময় সে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত, মুখে, শরীরসহ বিভিন্ন স্থানে উপুর্যুপরি আঘাত করে। তার নামে বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে ৫টি মামলা আছে। সে বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করেছে। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার সন্ত্রাস ও হত্যাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২ , ০৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২০ রমাদ্বান ১৪৪৩

ময়মনসিংহের ত্রাস জিলানী দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ময়মনসিংহের ত্রিশালের ত্রাস ও ভূমিদস্যু জিলানী বাহিনীর প্রধান আবদুল কাদের জিলানীকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে গাজীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্য ২ জন হলো লাল মিয়া ও রাকিবুল ইসলাম।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিলানীর দেয়া তথ্য মতে, তার বাড়ির সামনে বাঁশঝাড় থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা উদ্ধার করা হয়। ওই বস্তায় একটি লোহার রড, দুইটি চাপাতি, একটি বড় দা, একটি লোহার তৈরি বেসবল, খেলার ব্যাটসাদৃশ্য ধাতবদ- উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

র‌্যাব জানায়, গত ১৪ এপ্রিল রাতে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার জামতলী গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কতিপয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আবুল কালাম (ভিকটিম) ও তার দুই ভাতিজার ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। পরবর্তীতে আবুল কালাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এলাকাবাসী আলোচিত এ হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। এরপর র‌্যাব জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

নিহত আবুল কালামের ভাতিজা মো. সোহাগ একটি হত্যা মামলার সাক্ষী। সে মামলায় সোহাগ আদালতে সাক্ষ্য দেয়ায় গ্রেপ্তারকৃত আবদুল কাদের জিলানী ও তার সহযোগীরা তাকে মারধর ও হত্যার হুমকি দেয়। এরই জের ধরে ঘটনার দিন রাতে মামলার বাদী সোহাগ স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার বাড়ি সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে জিলানীর পরিকল্পনা ও নির্দেশ মতো লাল মিয়া ও রাকিবুল ইসলামসহ ৯ জন হামলা চালায়।

তখন সোহাগ চিৎকার করলে তার চাচা আবুল কালাম, ছোট ভাই ও চাচাত ভাই তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলে তাদের গুরুতর আহত করে।

ঘটনার পর অভিযুক্তরা আত্মগোপনে গিয়ে গাজীপুরে অবস্থান নেয়।র‌্যাব জানায়, মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার হত্যা মামলা এবং রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলা থেকে বাঁচার জন্য তারা ৩টি হত্যাকা- ঘটিয়েছে।

অভিযুক্তরা জালিয়াতির মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের ভূমি দখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করত। বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি গত ১৯ বছর ধরে একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন।

গত ৮ বছর ধরে স্থানীয় দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন। এলাকার গরিবদের সাহায্য সহযোগিতা করতেন। গ্রামের গরিব মানুষরা তার কাছে গিয়ে নানা অভিযোগ করতেন। তিনি তাদের পরামর্শ দিতেন। অন্যায়ের প্রতবাদ করায় ২০১৮ সালের ৪ জুলাই রাত ১২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আবদুল কাদের জিলানী এলাকার সন্ত্রাস, ভূমিদখল ও বিভিন্ন অপকর্মের জন্য ২০ থেকে ২৫ জনের একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে। তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ মোট ১২টি মামলা ও ১০টি জিডি রয়েছে। এর আগে সে বিভিন্ন সময় একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছে।

বিভিন্ন সময় উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় স্থানীয় চেয়ারম্যান তাকে ভূমিদস্যু আখ্যায়িত করে। তার অত্যাচারে মোক্ষপুর, মটবাড়ি ও আমিরবাড়ি ইউনিয়নের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছিল।

গ্রেপ্তার লাল মিয়া জিলানী বাহিনীর প্রধান আবদুল কাদের জিলানীর বড় ভাই। তার সব অপকর্মের অন্যতম প্রধান সহযোগী। আবুল কালামকে হত্যায় সে অংশগ্রহণ করেছিল।

গ্রেপ্তার রাকিবুল এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। আবুল কালামকে হত্যার সময় সে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত, মুখে, শরীরসহ বিভিন্ন স্থানে উপুর্যুপরি আঘাত করে। তার নামে বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে ৫টি মামলা আছে। সে বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করেছে। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার সন্ত্রাস ও হত্যাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।