মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিল

এম জি নিয়োগী

বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মুগডালের তিন ভাগের দুই ভাগই বৃহত্তর বরিশাল থেকে আসে। শুধু পটুয়াখালী, ভোলা এবং বরগুনা জেলাতেই লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে মুগডালের চাষ হয়। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এখানকার কৃষকরা মুগডাল চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন! কিন্তু কেন!

উপকূল অঞ্চলে ৪ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমি শুষ্ক মৌসুমে পতিত থাকছে। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষকরা বছরে একটি মাত্র ফসল আমন ধান আবাদ করতে পারেন, যা ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে কৃষকরা সাধারণত কেটে থাকেন। ধান কাঁটার পরে শুষ্ক মৌসুমে জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং বেশকিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার কারণে এবং এই এলাকার সেচযোগ্য পানির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে কৃষক বছরের বাকি সময় আর তেমন কোন ফসল আবাদ করতে পারেন না।

গবেষণায় দেখা গেছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ধান কাটার সময় জমিতে সাধারণত লবণাক্ততা কম থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসেও লবণাক্ততা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। মার্চ মাসে লবণাক্ততা বাড়তে থাকে এবং এপ্রিল-মে মাসে খুবই বেড়ে যায়।

তবে মুগডাল অত্যন্ত কম সময়ের ফসল। মাত্র ৭০-৭৫ দিনে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। এর চেয়ে কম সময়ে আর কোন ফসল ঘরে তোলা যায় না। মূলত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে আমন ধান কাটার পর যখন কোন প্রকার শীতকালীন বা দানা জাতীয় রবি ফসল চাষাবাদের সময় থাকে না, তখন একমাত্র মুগডাল ফসল জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জমিতে বপন করা যায়। সেজন্য ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ধান কাটার ঠিক পরেই পতিত জমিতে চাষ দিয়ে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে জোঁ অবস্থায় যদি মুগডালের বীজ বোনা যায়, তাহলে বীজ বোনার ৭০-৭৫ দিনের মধ্যেই অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিলের প্রথমেই অর্থাৎ জমিতে লবণাক্ততা বাড়ার আগেই প্রথমবারের ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শীতের প্রকোপ এবং সময়কাল কমে গেছে। দক্ষিনাঞ্চলে শীতের সময়কাল আরো কম। সে কারনে সম্ভব হলে, জমিতে জো অবস্থা সাপেক্ষে জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে বারি মুগ-৬ বা বিনামুগ-৮ বা বিইউ মুগ-৫ এর মতো স্বল্পমেয়াদি জাতের বীজ বপন করতে হবে। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে মুগ বীজ বোনার জন্য শীতের কারণে গাছের বাড়-বাড়তি কম হয়। তবে ফেব্রুয়ারি মাসেই গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়ে আসে। লবনাক্ততার কারনে গাছের বাড়-বাড়তি কম হয়। তাই লবণাক্ত জমির জন্য বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৫০০ গ্রাম বীজ বেশি বপন করতে হবে। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ২.৫ কেজি বীজের পরিবর্তে ৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। এপ্রিল-মে মাসে বৃষ্টি হলে লবণাক্ততার তীব্রতা হ্রাস পায়। তখন দ্বিতীয়বার এমনকি তৃতীয়বারও ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। হালকা বৃষ্টি হলে মুগডাল ফসলের জন্য ভাল। তবে বেশি বৃষ্টি হলে অথবা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে মুগডালের জমি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও মুগ গাছের শিকড়ে নডুউল তৈরি হয়, যা মাটিকে উর্বর করে। মুগের ছেঁই তোলার পর পুরো গাছ জমিতে মিশিয়ে দিলে জমির উর্বরতাও বাড়বে। এতে জমির লবণাক্ততাও কিছুটা কমে যাবে।

এত সীমাবদ্ধতার পরেও বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা প্রচুর মুগডাল চাষাবাদ করছেন। কিন্তু তারা কাক্সিক্ষত বাজারমূল্য পাচ্ছেন না। বাজারে এক কেজি মুগডালের মূল্য ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, কিন্তু কৃষক তাদের উৎপাদিত মুগ কালাই (খোসাসহ) মাত্র ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। মূল সমস্যা হচ্ছে, মুগ ডাল উৎপাদিত এলাকায় মুগডাল ভাঙ্গানো মেশিন না থাকার কারণে কৃষক তার উৎপাদিত মুগ কালাই অর্ধেকেরও কম মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

যেহেতু কৃষকরা ১৫০-১৬০ টাকার মুগডাল মাত্র ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, সেজন্য তারা মুগ কালাইয়ের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করছেন! যেহেতু তারা মুগডালের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না, সেজন্য তারা মুগডালের জমিতে তেমন গুরুত্ব দিয়ে চাষাবাদ করছেন না। ঠিকমতো সার দিচ্ছেন না! লাইনে বীজ বুনছেন না! নিড়ানী দিচ্ছেন না! উপযুক্ত কীটনাশক দিচ্ছেন না! বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখছেন না! ফলে ফসল ভালো হচ্ছে না। ফলন কম হচ্ছে।

সাধারণত প্রতিটি গ্রামেই ধান, গম, মরিচ, হলুদ, সরিষা ইত্যাদি ভাঙানোর মেশিন আছে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই গ্রামের এই সমস্ত মেশিন থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে খেতে পারেন এবং বাজারে অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু গ্রামের এই সমস্ত মিলে মুগ কালাই ভাঙানোর কোন মেশিন না থাকার কারনে কৃষক বাধ্য হয়েই অত্যন্ত কম মূল্যে ফড়িয়াদের কাছে বা স্থানীয় বাজারে তাদের উৎপাদিত মুগ কালাই বিক্রি করে দেন।

এমনকি অত্যন্ত সুস্বাদু পুষ্টিসমৃদ্ধ এই মুগডাল কৃষক পরিবারের সদস্যরা খেতেও পারেন না। যেহেতু গ্রামে মুগডাল ভাঙ্গানোর মেশিন নেই, সেকারণে বাড়িতে জাঁতা বা শিলপাটায় মুগ কালাই ভাঙিয়ে নিয়ে তা কুলায় পরিষ্কার করে তারপর রান্না করতে হয়- যা অত্যন্ত কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ। সেজন্য কৃষকদের ঘরে মুগ কালাই থাকা সত্ত্বেও এবং মুগ ডাল তাদের পছন্দনীয় খাবার হওয়া সত্ত্বেও তারা সপ্তাহে একদিন বা মাসে মাত্র ২-৩ দিন মুগডাল খেয়ে থাকেন।

এছাড়া বাজারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রং এবং কেমিক্যালযুক্ত গাঢ় হলুদ রংয়ের মুগডাল বিক্রি হচ্ছে, যা মানব শরিরের জন্য ক্ষতিকর। পরিষ্কার পানিতে রং এবং কেমিক্যালযুক্ত গাঢ় হলুদ রংয়ের মুগডাল ভিজিয়ে রাখলে সমস্ত পানি কিছুক্ষণের মধ্যেই হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। রং এবং কেমিক্যালমুক্ত মিনি-মিলের মুগডালের ক্ষেত্রে পানি হলুদ বর্ণ ধারন করবে না। সাধারন মানুষ বাজারের এই সমস্ত ভেজাল মুগডাল কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।

যেহেতু বরিশালের লবণাক্ত উপকূল অঞ্চলে প্রচুর জমি জানুয়ারি মাস থেকে শুস্ক মৌসুমে ৬-৭ মাস পতিত থাকছে এবং যেহেতু মুগডাল চাষাবাদের জন্য দক্ষিণাঞ্চলে মুগডাল চাষের উপযুক্ত সময় হলো জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস- যে সময়ে তেমন কোন শীতকালীন বা দানা জাতীয় ফসল চাষাবাদের সুযোগ থাকে না এবং যেহেতু মুগ ফসল মাত্র ৭০-৭৫ দিনের অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিলের প্রথমেই অর্থাৎ জমিতে লবণাক্ততা বাড়ার আগেই প্রথমবারের ফসল ঘরে তোলা সম্ভব, সেহেতু এই ফসলই কৃষকদের কাছে একমাত্র ভরসার জায়গা, যার বাজার মূল্য এবং পুষ্টিমূল্য দুই-ই অনেক বেশি।

মুগডাল চাষিদের সঙ্গে উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে কাজ করার সময় আমরা কৃষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার সুযোগ পেয়েছি। সেখান থেকে নিশ্চিত হয়েছি মুগডাল চাষিদের প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে মুগ কালাইয়ের উপযুক্ত বাজার মূল্য না পাওয়া।

এহেন অবস্থায় মুগডাল চাষাবাদকে কৃষকের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় করার জন্য অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্প (CIM-2014-076) বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, যাতে করে কৃষকরা মুগডাল উৎপাদন করে কাক্সিক্ষত বাজার মূল্যে পায় এবং পরিবারের সদস্যরা পুষ্টিসমৃদ্ধ এই মুগডাল যেন নিয়মিত খেতে পারে। সেজন্য অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্প মুগডাল উৎপাদিত এলাকায় গ্রামে গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে মুগ কালাই ভাঙানোর জন্য মিনি-মিল বসানোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ পর্যন্ত বরিশাল, পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলার মুগডাল উৎপাদিত এলাকায় ৫টি মুগডাল মিনি-মিল বসানো হয়েছে এবং আরো ১৫টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

গ্রামে গ্রামে ধান ভাঙানো, গম ভাঙানো, হলুদ-মরিচ ভাঙানো মেশিন আছে। এ সমস্ত মেশিন স্থানীয় মিস্ত্রিরাই তৈরি করে থাকেন। কিছু কিছু এলাকায় ছোট ছোট ডাল ভাঙানো মেশিনও আছে। ইতোপূর্বে ACIAR-Murdoch University ডাল ভাঙানোর মেশিনের উন্নয়নে কাজ করেছিল এবং সেটি দিয়ে মশুর, খেসারি ডাল ভালভাবে ভাঙানো গেছে। কিন্তু মুগকলাই ভালোভাবে ভাঙানো যায়নি। অন্যান্য ডাল ফসলের তুলনায় মুগ কালাই ভাঙানো একটু কষ্টসাপেক্ষ। কারণ মুগ কালাইয়ের খোসার সঙ্গে ডালের ভক্ষণযোগ্য অংশ শক্তভাবে লেগে থাকে।

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্পের দীর্ঘ ৫ বছর গবেষণায় পরিশীলিত এই মিনি-মিল দিয়ে এখন অনায়াসে মুগ কালাই ভাঙ্গানো যাচ্ছে। বিশেষ ধরনের রোলার এই মিনি-মিলে বসানো হয়েছে। এতে মুগডালের খোসা ছাড়ানো ত্বরান্বিত হয়। মুগ ডালের খোসা সহজে ছাড়ানোর জন্য মুগডালকে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। দেখা গেছে, ৫ কেজি মুগডালে ৩০ গ্রাম পরিমাণ সয়াবিন বা সরিষার তেল মাখিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিলে এই মেশিনে খুব সহজেই মুগডাল ভাঙানো যায়। এ মিনি-মিলে শুধু মুগডাল নয়- মশুর, খেসারিসহ অন্যান্য ডালও ভালোভাবে ভাঙানো যায়।

মিনি-মিল ১৫ হর্স পাওয়ারের ডিজেল ইঞ্জিন বা ইলেকট্রিক মোটর দ্বারা চালিত। এটি কাঠের তৈরি প্লাটফর্ম, রোলার, পাওয়ার ট্রান্সমিশন পুলি, স্টার্টার, কাটআউট, ফিডিং চেম্বার, সিভ, ট্রে, সেফটি কভার, কেসিট, বেল্ট, তার, লোহার রড এবং বল বিয়ারিং দ্বারা সংযুক্ত।

অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এ ধরনের মিনি-মিল প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার কেজি পর্যন্ত ডাল ভাঙ্গাতে পারে। ডাল ভাঙানোর পাশাপাশি গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য কৃষক ভূষি পাচ্ছে। বরগুনা জেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের কেউড়াবুনিয়া গ্রামের মিনি-মিল মালিক মো. আবুল কালাম সেন্টু মিয়া জানান, তার মিনি-মিলে স্থানীয় কৃষকরা ডাল ভাঙাচ্ছেন। ভালো দামে বিক্রি করছেন। এখন মানুষ বেশি করে ডাল খাচ্ছে। গ্রামের মানুষ খুবই খুশি। মুগডাল চাষাবাদের গ্রামগুলোতে মুগডাল ভাঙানোর মিনি-মিল এখন একটি আশীর্বাদ।

মিনি-মিল মালিকরা বিশ^াস করেন, মুগকালাই ভাঙানো এই মেশিনের কারণে এই গ্রাম এবং পাশর্^বর্তী গ্রামগুলোতে মুগডাল চাষাবাদ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বাজারে ভাঙানো মুগডালের যথোপযুক্ত মূল্য পাওয়াতে এবং পরিবারের সদস্যদের যথেষ্ট পরিমাণে মুগডাল খাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার কারণে কৃষক এখন মুগডাল চাষাবাদে আন্তরিক হচ্ছেন। জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন। জমিতে সার দিচ্ছেন। কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখছেন। এর ফলে কৃষক অনেক বেশি ফসল এখন ঘরে তুলতে পারছেন।

গত ১৫ এপ্রিল ২০২২ তারিখে মাননীয় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় গবেষণালব্ধ মুগকালাই ভাঙানো মিনি-মিল কার্যক্রমের উপযোগিতা প্রত্যক্ষ করেন এবং গবেষক ড. এম জি নিয়োগীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। মাননীয় কৃষি সচিব মনে করেন, মুগকালাই ভাঙানো এ মিনি-মিল ব্যাপকভাবে মুগডাল চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করবে। গবেষণালব্ধ মিনি-মিলের এই সার্থক প্রযুক্তি উপকূল অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

আমরা আশা করি, সরকার মিনি-মিল প্রযুক্তির উপযোগিতা অনুধাবন করে উপকূলের গ্রামে গ্রামে মিনি-মিল বসানোর উদ্যোগ নেবে এবং উপকূলের পতিত জমিতে মুগডাল উৎপাদন ও বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের ৫০ বছরের বন্ধুত্বের এটিই হোক উপকূলের কৃষকদের জন্য সবচেয়ে বড় টেকসই উপহার।

[লেখক : স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী, ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া]

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২ , ০৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২০ রমাদ্বান ১৪৪৩

মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিল

এম জি নিয়োগী

বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মুগডালের তিন ভাগের দুই ভাগই বৃহত্তর বরিশাল থেকে আসে। শুধু পটুয়াখালী, ভোলা এবং বরগুনা জেলাতেই লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে মুগডালের চাষ হয়। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এখানকার কৃষকরা মুগডাল চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন! কিন্তু কেন!

উপকূল অঞ্চলে ৪ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমি শুষ্ক মৌসুমে পতিত থাকছে। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষকরা বছরে একটি মাত্র ফসল আমন ধান আবাদ করতে পারেন, যা ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে কৃষকরা সাধারণত কেটে থাকেন। ধান কাঁটার পরে শুষ্ক মৌসুমে জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং বেশকিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার কারণে এবং এই এলাকার সেচযোগ্য পানির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে কৃষক বছরের বাকি সময় আর তেমন কোন ফসল আবাদ করতে পারেন না।

গবেষণায় দেখা গেছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ধান কাটার সময় জমিতে সাধারণত লবণাক্ততা কম থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসেও লবণাক্ততা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। মার্চ মাসে লবণাক্ততা বাড়তে থাকে এবং এপ্রিল-মে মাসে খুবই বেড়ে যায়।

তবে মুগডাল অত্যন্ত কম সময়ের ফসল। মাত্র ৭০-৭৫ দিনে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। এর চেয়ে কম সময়ে আর কোন ফসল ঘরে তোলা যায় না। মূলত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে আমন ধান কাটার পর যখন কোন প্রকার শীতকালীন বা দানা জাতীয় রবি ফসল চাষাবাদের সময় থাকে না, তখন একমাত্র মুগডাল ফসল জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জমিতে বপন করা যায়। সেজন্য ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ধান কাটার ঠিক পরেই পতিত জমিতে চাষ দিয়ে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে জোঁ অবস্থায় যদি মুগডালের বীজ বোনা যায়, তাহলে বীজ বোনার ৭০-৭৫ দিনের মধ্যেই অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিলের প্রথমেই অর্থাৎ জমিতে লবণাক্ততা বাড়ার আগেই প্রথমবারের ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শীতের প্রকোপ এবং সময়কাল কমে গেছে। দক্ষিনাঞ্চলে শীতের সময়কাল আরো কম। সে কারনে সম্ভব হলে, জমিতে জো অবস্থা সাপেক্ষে জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে বারি মুগ-৬ বা বিনামুগ-৮ বা বিইউ মুগ-৫ এর মতো স্বল্পমেয়াদি জাতের বীজ বপন করতে হবে। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে মুগ বীজ বোনার জন্য শীতের কারণে গাছের বাড়-বাড়তি কম হয়। তবে ফেব্রুয়ারি মাসেই গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়ে আসে। লবনাক্ততার কারনে গাছের বাড়-বাড়তি কম হয়। তাই লবণাক্ত জমির জন্য বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৫০০ গ্রাম বীজ বেশি বপন করতে হবে। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ২.৫ কেজি বীজের পরিবর্তে ৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। এপ্রিল-মে মাসে বৃষ্টি হলে লবণাক্ততার তীব্রতা হ্রাস পায়। তখন দ্বিতীয়বার এমনকি তৃতীয়বারও ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। হালকা বৃষ্টি হলে মুগডাল ফসলের জন্য ভাল। তবে বেশি বৃষ্টি হলে অথবা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে মুগডালের জমি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও মুগ গাছের শিকড়ে নডুউল তৈরি হয়, যা মাটিকে উর্বর করে। মুগের ছেঁই তোলার পর পুরো গাছ জমিতে মিশিয়ে দিলে জমির উর্বরতাও বাড়বে। এতে জমির লবণাক্ততাও কিছুটা কমে যাবে।

এত সীমাবদ্ধতার পরেও বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা প্রচুর মুগডাল চাষাবাদ করছেন। কিন্তু তারা কাক্সিক্ষত বাজারমূল্য পাচ্ছেন না। বাজারে এক কেজি মুগডালের মূল্য ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, কিন্তু কৃষক তাদের উৎপাদিত মুগ কালাই (খোসাসহ) মাত্র ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। মূল সমস্যা হচ্ছে, মুগ ডাল উৎপাদিত এলাকায় মুগডাল ভাঙ্গানো মেশিন না থাকার কারণে কৃষক তার উৎপাদিত মুগ কালাই অর্ধেকেরও কম মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

যেহেতু কৃষকরা ১৫০-১৬০ টাকার মুগডাল মাত্র ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, সেজন্য তারা মুগ কালাইয়ের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করছেন! যেহেতু তারা মুগডালের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না, সেজন্য তারা মুগডালের জমিতে তেমন গুরুত্ব দিয়ে চাষাবাদ করছেন না। ঠিকমতো সার দিচ্ছেন না! লাইনে বীজ বুনছেন না! নিড়ানী দিচ্ছেন না! উপযুক্ত কীটনাশক দিচ্ছেন না! বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখছেন না! ফলে ফসল ভালো হচ্ছে না। ফলন কম হচ্ছে।

সাধারণত প্রতিটি গ্রামেই ধান, গম, মরিচ, হলুদ, সরিষা ইত্যাদি ভাঙানোর মেশিন আছে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই গ্রামের এই সমস্ত মেশিন থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে খেতে পারেন এবং বাজারে অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু গ্রামের এই সমস্ত মিলে মুগ কালাই ভাঙানোর কোন মেশিন না থাকার কারনে কৃষক বাধ্য হয়েই অত্যন্ত কম মূল্যে ফড়িয়াদের কাছে বা স্থানীয় বাজারে তাদের উৎপাদিত মুগ কালাই বিক্রি করে দেন।

এমনকি অত্যন্ত সুস্বাদু পুষ্টিসমৃদ্ধ এই মুগডাল কৃষক পরিবারের সদস্যরা খেতেও পারেন না। যেহেতু গ্রামে মুগডাল ভাঙ্গানোর মেশিন নেই, সেকারণে বাড়িতে জাঁতা বা শিলপাটায় মুগ কালাই ভাঙিয়ে নিয়ে তা কুলায় পরিষ্কার করে তারপর রান্না করতে হয়- যা অত্যন্ত কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ। সেজন্য কৃষকদের ঘরে মুগ কালাই থাকা সত্ত্বেও এবং মুগ ডাল তাদের পছন্দনীয় খাবার হওয়া সত্ত্বেও তারা সপ্তাহে একদিন বা মাসে মাত্র ২-৩ দিন মুগডাল খেয়ে থাকেন।

এছাড়া বাজারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রং এবং কেমিক্যালযুক্ত গাঢ় হলুদ রংয়ের মুগডাল বিক্রি হচ্ছে, যা মানব শরিরের জন্য ক্ষতিকর। পরিষ্কার পানিতে রং এবং কেমিক্যালযুক্ত গাঢ় হলুদ রংয়ের মুগডাল ভিজিয়ে রাখলে সমস্ত পানি কিছুক্ষণের মধ্যেই হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। রং এবং কেমিক্যালমুক্ত মিনি-মিলের মুগডালের ক্ষেত্রে পানি হলুদ বর্ণ ধারন করবে না। সাধারন মানুষ বাজারের এই সমস্ত ভেজাল মুগডাল কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।

যেহেতু বরিশালের লবণাক্ত উপকূল অঞ্চলে প্রচুর জমি জানুয়ারি মাস থেকে শুস্ক মৌসুমে ৬-৭ মাস পতিত থাকছে এবং যেহেতু মুগডাল চাষাবাদের জন্য দক্ষিণাঞ্চলে মুগডাল চাষের উপযুক্ত সময় হলো জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস- যে সময়ে তেমন কোন শীতকালীন বা দানা জাতীয় ফসল চাষাবাদের সুযোগ থাকে না এবং যেহেতু মুগ ফসল মাত্র ৭০-৭৫ দিনের অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিলের প্রথমেই অর্থাৎ জমিতে লবণাক্ততা বাড়ার আগেই প্রথমবারের ফসল ঘরে তোলা সম্ভব, সেহেতু এই ফসলই কৃষকদের কাছে একমাত্র ভরসার জায়গা, যার বাজার মূল্য এবং পুষ্টিমূল্য দুই-ই অনেক বেশি।

মুগডাল চাষিদের সঙ্গে উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে কাজ করার সময় আমরা কৃষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার সুযোগ পেয়েছি। সেখান থেকে নিশ্চিত হয়েছি মুগডাল চাষিদের প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে মুগ কালাইয়ের উপযুক্ত বাজার মূল্য না পাওয়া।

এহেন অবস্থায় মুগডাল চাষাবাদকে কৃষকের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় করার জন্য অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্প (CIM-2014-076) বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, যাতে করে কৃষকরা মুগডাল উৎপাদন করে কাক্সিক্ষত বাজার মূল্যে পায় এবং পরিবারের সদস্যরা পুষ্টিসমৃদ্ধ এই মুগডাল যেন নিয়মিত খেতে পারে। সেজন্য অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্প মুগডাল উৎপাদিত এলাকায় গ্রামে গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে মুগ কালাই ভাঙানোর জন্য মিনি-মিল বসানোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ পর্যন্ত বরিশাল, পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলার মুগডাল উৎপাদিত এলাকায় ৫টি মুগডাল মিনি-মিল বসানো হয়েছে এবং আরো ১৫টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

গ্রামে গ্রামে ধান ভাঙানো, গম ভাঙানো, হলুদ-মরিচ ভাঙানো মেশিন আছে। এ সমস্ত মেশিন স্থানীয় মিস্ত্রিরাই তৈরি করে থাকেন। কিছু কিছু এলাকায় ছোট ছোট ডাল ভাঙানো মেশিনও আছে। ইতোপূর্বে ACIAR-Murdoch University ডাল ভাঙানোর মেশিনের উন্নয়নে কাজ করেছিল এবং সেটি দিয়ে মশুর, খেসারি ডাল ভালভাবে ভাঙানো গেছে। কিন্তু মুগকলাই ভালোভাবে ভাঙানো যায়নি। অন্যান্য ডাল ফসলের তুলনায় মুগ কালাই ভাঙানো একটু কষ্টসাপেক্ষ। কারণ মুগ কালাইয়ের খোসার সঙ্গে ডালের ভক্ষণযোগ্য অংশ শক্তভাবে লেগে থাকে।

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্পের দীর্ঘ ৫ বছর গবেষণায় পরিশীলিত এই মিনি-মিল দিয়ে এখন অনায়াসে মুগ কালাই ভাঙ্গানো যাচ্ছে। বিশেষ ধরনের রোলার এই মিনি-মিলে বসানো হয়েছে। এতে মুগডালের খোসা ছাড়ানো ত্বরান্বিত হয়। মুগ ডালের খোসা সহজে ছাড়ানোর জন্য মুগডালকে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। দেখা গেছে, ৫ কেজি মুগডালে ৩০ গ্রাম পরিমাণ সয়াবিন বা সরিষার তেল মাখিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিলে এই মেশিনে খুব সহজেই মুগডাল ভাঙানো যায়। এ মিনি-মিলে শুধু মুগডাল নয়- মশুর, খেসারিসহ অন্যান্য ডালও ভালোভাবে ভাঙানো যায়।

মিনি-মিল ১৫ হর্স পাওয়ারের ডিজেল ইঞ্জিন বা ইলেকট্রিক মোটর দ্বারা চালিত। এটি কাঠের তৈরি প্লাটফর্ম, রোলার, পাওয়ার ট্রান্সমিশন পুলি, স্টার্টার, কাটআউট, ফিডিং চেম্বার, সিভ, ট্রে, সেফটি কভার, কেসিট, বেল্ট, তার, লোহার রড এবং বল বিয়ারিং দ্বারা সংযুক্ত।

অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এ ধরনের মিনি-মিল প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার কেজি পর্যন্ত ডাল ভাঙ্গাতে পারে। ডাল ভাঙানোর পাশাপাশি গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য কৃষক ভূষি পাচ্ছে। বরগুনা জেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের কেউড়াবুনিয়া গ্রামের মিনি-মিল মালিক মো. আবুল কালাম সেন্টু মিয়া জানান, তার মিনি-মিলে স্থানীয় কৃষকরা ডাল ভাঙাচ্ছেন। ভালো দামে বিক্রি করছেন। এখন মানুষ বেশি করে ডাল খাচ্ছে। গ্রামের মানুষ খুবই খুশি। মুগডাল চাষাবাদের গ্রামগুলোতে মুগডাল ভাঙানোর মিনি-মিল এখন একটি আশীর্বাদ।

মিনি-মিল মালিকরা বিশ^াস করেন, মুগকালাই ভাঙানো এই মেশিনের কারণে এই গ্রাম এবং পাশর্^বর্তী গ্রামগুলোতে মুগডাল চাষাবাদ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বাজারে ভাঙানো মুগডালের যথোপযুক্ত মূল্য পাওয়াতে এবং পরিবারের সদস্যদের যথেষ্ট পরিমাণে মুগডাল খাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার কারণে কৃষক এখন মুগডাল চাষাবাদে আন্তরিক হচ্ছেন। জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন। জমিতে সার দিচ্ছেন। কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখছেন। এর ফলে কৃষক অনেক বেশি ফসল এখন ঘরে তুলতে পারছেন।

গত ১৫ এপ্রিল ২০২২ তারিখে মাননীয় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় গবেষণালব্ধ মুগকালাই ভাঙানো মিনি-মিল কার্যক্রমের উপযোগিতা প্রত্যক্ষ করেন এবং গবেষক ড. এম জি নিয়োগীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। মাননীয় কৃষি সচিব মনে করেন, মুগকালাই ভাঙানো এ মিনি-মিল ব্যাপকভাবে মুগডাল চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করবে। গবেষণালব্ধ মিনি-মিলের এই সার্থক প্রযুক্তি উপকূল অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

আমরা আশা করি, সরকার মিনি-মিল প্রযুক্তির উপযোগিতা অনুধাবন করে উপকূলের গ্রামে গ্রামে মিনি-মিল বসানোর উদ্যোগ নেবে এবং উপকূলের পতিত জমিতে মুগডাল উৎপাদন ও বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের ৫০ বছরের বন্ধুত্বের এটিই হোক উপকূলের কৃষকদের জন্য সবচেয়ে বড় টেকসই উপহার।

[লেখক : স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী, ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া]