বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাণভোমরা হিসেবে বিবেচিত হয় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয়। গত অর্ধশতাব্দীতে বাংলাদেশ যে নজরকাড়া উচ্চতায় উপনীত হয়েছে তার পেছনেও রয়েছে প্রবাস থেকে আসা শ্রমজীবীদের অবদান। বিদেশে কর্মজীবী হিসেবে লব্ধ জ্ঞানে তারা দেশে গড় তুলেছেন নানা প্রতিষ্ঠান। সৌদি আরব এখন বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজার। গত বছরে বিদেশে কর্মসংস্থানের ৭৪ শতাংশ হয়েছে সৌদি আরবে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় ৬৪ শতাংশই গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে। এর বাইরে মাঝারি মানের চাহিদা রয়েছে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার ও জর্ডানে। অল্প কিছু কর্মজীবী যাচ্ছেন মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও লেবাননে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের ধারা বজায় রাখতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মোচনের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলোতে শ্রমবাজার খোঁজার দিকেও নজর দিতে হবে। ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোর কথাও মনে রাখতে হবে সচেতনভাবে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জমি লিজ নিয়ে কৃষিপণ্য ফলানো যেতে পারে। তাতেও লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মার্চে ১৮৬ কোটি ডলার বা ১৫ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা এসেছে দেশে। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ফলে মার্চে ৩৭ কোটি ডলার বা ৩ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা বেশি এসেছে দেশে। তবে গত বছর, অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের মার্চের তুলনায় এবার ৫ কোটি ডলার বা ৪৩০ কোটি টাকা কম রেমিট্যান্স এসেছে। তখন প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ১৯১ কোটি ডলার বা ১৬ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। অপরদিকে চলতি বছরের (২০২২) প্রথম মাস জানুয়ারিতে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়ে ছিলেন ১৭০ কোটি ডলার বা ১৪ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এদিকে করোনা মহামারির পর এবার ইউক্রেন যুদ্ধেও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি আয়ের পর সদ্যসমাপ্ত মার্চে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। গত বছর মার্চে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার রপ্তানি আয় হয়েছিল।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য রপ্তানি ছিল ২ হাজার ৩৪৮ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থবছরের মার্চ মাস শেষে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে ৩৫.২৯ শতাংশ এবং ওভেন পোশাকের রপ্তানি ৩২.০৭ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ এবং প্লাস্টিক পণ্যে আয় বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

করোনাকালে বিদেশের শ্রমবাজারে যে ধস নেমেছে, তা মোকাবিলায় কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। আমদানিকারক দেশগুলোর চাহিদামাফিক আমাদের কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া; দ্বিতীয়ত, শ্রমশক্তির নতুন বাজার ও খাত খুঁজে বের করা এবং বিদেশে গিয়ে আমাদের শ্রমিকরা যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে দূতাবাসগুলোর তদারকি জোরদার করা। মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ যেসব দেশে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির চাহিদা বেশি, সেসব দেশে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলো দূর করা। পারস্পরিক দোষারোপ ও দায় এড়ানোর সংস্কৃতি বাদ দিয়ে বিদেশে শ্রমবাজারের সঙ্গে যুক্ত সব সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা যেতে পারে।

[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন]

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২ , ০৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২০ রমাদ্বান ১৪৪৩

বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাণভোমরা হিসেবে বিবেচিত হয় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয়। গত অর্ধশতাব্দীতে বাংলাদেশ যে নজরকাড়া উচ্চতায় উপনীত হয়েছে তার পেছনেও রয়েছে প্রবাস থেকে আসা শ্রমজীবীদের অবদান। বিদেশে কর্মজীবী হিসেবে লব্ধ জ্ঞানে তারা দেশে গড় তুলেছেন নানা প্রতিষ্ঠান। সৌদি আরব এখন বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজার। গত বছরে বিদেশে কর্মসংস্থানের ৭৪ শতাংশ হয়েছে সৌদি আরবে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় ৬৪ শতাংশই গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে। এর বাইরে মাঝারি মানের চাহিদা রয়েছে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার ও জর্ডানে। অল্প কিছু কর্মজীবী যাচ্ছেন মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও লেবাননে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের ধারা বজায় রাখতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মোচনের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলোতে শ্রমবাজার খোঁজার দিকেও নজর দিতে হবে। ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোর কথাও মনে রাখতে হবে সচেতনভাবে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জমি লিজ নিয়ে কৃষিপণ্য ফলানো যেতে পারে। তাতেও লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মার্চে ১৮৬ কোটি ডলার বা ১৫ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা এসেছে দেশে। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ফলে মার্চে ৩৭ কোটি ডলার বা ৩ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা বেশি এসেছে দেশে। তবে গত বছর, অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের মার্চের তুলনায় এবার ৫ কোটি ডলার বা ৪৩০ কোটি টাকা কম রেমিট্যান্স এসেছে। তখন প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ১৯১ কোটি ডলার বা ১৬ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। অপরদিকে চলতি বছরের (২০২২) প্রথম মাস জানুয়ারিতে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়ে ছিলেন ১৭০ কোটি ডলার বা ১৪ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এদিকে করোনা মহামারির পর এবার ইউক্রেন যুদ্ধেও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি আয়ের পর সদ্যসমাপ্ত মার্চে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। গত বছর মার্চে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার রপ্তানি আয় হয়েছিল।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য রপ্তানি ছিল ২ হাজার ৩৪৮ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থবছরের মার্চ মাস শেষে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে ৩৫.২৯ শতাংশ এবং ওভেন পোশাকের রপ্তানি ৩২.০৭ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ এবং প্লাস্টিক পণ্যে আয় বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

করোনাকালে বিদেশের শ্রমবাজারে যে ধস নেমেছে, তা মোকাবিলায় কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। আমদানিকারক দেশগুলোর চাহিদামাফিক আমাদের কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া; দ্বিতীয়ত, শ্রমশক্তির নতুন বাজার ও খাত খুঁজে বের করা এবং বিদেশে গিয়ে আমাদের শ্রমিকরা যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে দূতাবাসগুলোর তদারকি জোরদার করা। মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ যেসব দেশে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির চাহিদা বেশি, সেসব দেশে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলো দূর করা। পারস্পরিক দোষারোপ ও দায় এড়ানোর সংস্কৃতি বাদ দিয়ে বিদেশে শ্রমবাজারের সঙ্গে যুক্ত সব সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা যেতে পারে।

[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন]