হামলায় হেলমেট পরা কারা?

টানা দুই দিন দফায় দফায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন সাংবাদিকসহ আহত হন শতাধিক লোক। দফায় দফায় টানা দুই দিন চলা এ সংঘর্ষ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, ইট-পাটকেল ছোড়া, ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি রামদা, হকিস্টিক, লাঠি-রড নিয়ে হেলমেট পরে বেপরোয়া মারধর করলো কারা?

শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের দাবি, হামলা যারা চালিয়েছেন তারা তাদের লোক নয়। হামলাকারীরা তৃতীয় পক্ষের কেউ। অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করার ঘটনাগুলো তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতির দাবি আরও জোরদার করেছে। এমনকি ব্যবসায়ী নেতারাও বলছেন, সাংবাদিকদের ওপর ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা কোন ছাত্র বা ব্যবসায়ীর কাজ হতে পারে না। এখানে তৃতীয় পক্ষ থাকতে পারে। ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষও সংঘর্ষের পেছনে উসকানির কথা বলেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সংঘাত বাঁধিয়ে কে কীভাবে ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছিল, তার কারণ খুঁজছে পুলিশ।

এদিকে, এত বড় সংঘর্ষের পরও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করেনি। তবে দোকান কর্মচারী, ফুটপাতের ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ অন্তত অর্ধশতাধিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকার শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকটি পক্ষ ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে জ্বালাও-পোড়াওয়ে নেতৃত্ব দেয়। তাদের অনেকের মাথায় ছিল হেলমেট। কেউ কেউ আবার কয়েকটি দোকানের ক্যাশবাক্স লুট ও নিউমার্কেট এলাকার কয়েকটি স্পটে আগুন দেয়। ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি রামদা, হকিস্টিক, লাঠি-রড হামলাকারীরা পেলো কোথায় এবং তারা কেনইবা এই হামলা করল এ বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থা।

ডিএমপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সংঘর্ষে জড়িতদের বেশিরভাগই দোকান কর্মচারী ও ফুটপাতের হকার। বিনা উসকানিতে কেউ সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে কি-না সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। নিউমার্কেট থানা ছাড়াও ডিএমপির নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও একাধিক সাইবার টিম ঘটনা তদন্তে কাজ করছে। মিথ্যা তথ্য প্রচার করে কেউ পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে কি-না তাও শনাক্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ বেশ কয়েকজন হকারকে চিহ্নিত করেছে, যারা সহিংসতায় জড়িত ছিলেন। একাধিক ফুটেজে ঘুরেফিরে তাদের চেহারা দেখা গেছে। সাংবাদিকদের ওপর ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলাসহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ ও পথচারীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন তারা। দফায় দফায় টানা দুই দিনের বেশি সময় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কারা উত্তাপ ছড়িয়েছে, তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে নানা বয়সী কয়েকশ’ লোক হেলমেট পরে সংঘাতে জড়ালে তাদের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় কতটুকু রাজনৈতিক ইন্ধন কাজ করেছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকা নিউমার্কেটের দুই ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারীদের বাগবিত-া থেকে সূত্রপাত হওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনার প্রভাব মুহূর্তেই কীভাবে বিরাট এলাকার কমপক্ষে ২২টি মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে, তার কারণ অনুসন্ধান করছেন গোয়েন্দারা।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বেসরকারি টেলিভিশন দীপ্ত টিভির প্রতিবেদক আসিফ সুমিত ও ক্যামেরাপারসন ইমরানের ওপর হামলা চালাচ্ছে একদল যুবক। দুইজনকে লাঠি ও রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বেধড়ক মারধরে তারা গুরুতর আহত হন। ভেঙে ফেলা হয় টিভি ক্যামেরা। এ সময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনলাইন নিউজপোর্টাল সাংবাদিক শাহেদ শফিকও হামলাকারীদের মারধরে আহত হন। শাহেদ শফিক বলেন, নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি দুই সাংবাদিককে রড দিয়ে ব্যবসায়ীরা মারধর করছেন। আমি তাদের বাঁচাতে গেলে ব্যবসায়ীরা আমার ওপর চড়াও হন।

এদিকে, গত বুধবার সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলেন ঢাকা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের নাসিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লিটন ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের আবদুল্লাহ আল মাসউদ। চিহ্নিত তিনজনই ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগকর্মী বলে জানা গেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার সময় নাসিমের গায়ে নিজের নাম লেখা জার্সি। মাসউদের সবুজ রঙের টি-শার্ট পরা। আর মেরুন রঙের শার্ট পরা যুবকের নাম লিটন। তিনজনই ঢাকা কলেজের ফরহাদ হলের ছাত্র। অনুসন্ধানে জানা যায়, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ওই মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের দুই কর্মচারীর ঝগড়া থেকে। ভিডিও ফুটেজে বাপ্পী নামে একজনকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারী।

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মার্কেটের ৪ নম্বর গেটের ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মচারী কাওসারের মধ্যে সন্ধ্যায় কথা কাটাকাটি থেকেই সংঘর্ষের শুরু। দুটি দোকানের মালিক আপন চাচাতো ভাই। ইফতারের সময় নিউমার্কেটের ভেতরে হাঁটার রাস্তায় টেবিল পেতে বসে ইফতারের ব্যবস্থা করে ফাস্টফুডের দোকানগুলো। মূলত এ বিরোধের সূত্রপাত দুই ফাস্টফুডের দুই কর্মচারীর মধ্যে। বাগবিত-ার এক পর্যায়ে কাওসারকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বাপ্পী ওই জায়গা থেকে চলে যান।

রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের কাছ থেকে তৃতীয় পক্ষের কথা আমরাও শুনেছি। অতি উৎসাহী বেশ কয়েকজন হামলাকারীকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে।

গত সোমবার রাতে থেমে যাওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে সকাল থেকে সংঘর্ষ শুরু হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুপুরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। এ বিষয়ে এডিসি শাহেন শাহ বলেন, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের পুরো ঘটনায় আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনিটরিং করছিলেন। এছাড়া আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোর্স প্রস্তুত ছিল। পরিস্থিতি যখন সংঘর্ষে রূপ নেয় তখন পুলিশ গিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি, মামলা হয়েছে তবে এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বেশকিছু বিষয় সামনে রেখে তদন্তকাজ এগোচ্ছে। এ ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এরপর তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। গোয়েন্দা রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, মামলার পর গতকাল থেকে ডিবি রমনা বিভাগ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো দেখে আসামি শনাক্ত ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার পর র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যারা এ ঘটনায় উসকানি দিয়েছে ও সরাসরি হামলা চালিয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২ , ১০ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমাদ্বান ১৪৪৩

হামলায় হেলমেট পরা কারা?

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

টানা দুই দিন দফায় দফায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন সাংবাদিকসহ আহত হন শতাধিক লোক। দফায় দফায় টানা দুই দিন চলা এ সংঘর্ষ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, ইট-পাটকেল ছোড়া, ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি রামদা, হকিস্টিক, লাঠি-রড নিয়ে হেলমেট পরে বেপরোয়া মারধর করলো কারা?

শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের দাবি, হামলা যারা চালিয়েছেন তারা তাদের লোক নয়। হামলাকারীরা তৃতীয় পক্ষের কেউ। অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করার ঘটনাগুলো তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতির দাবি আরও জোরদার করেছে। এমনকি ব্যবসায়ী নেতারাও বলছেন, সাংবাদিকদের ওপর ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা কোন ছাত্র বা ব্যবসায়ীর কাজ হতে পারে না। এখানে তৃতীয় পক্ষ থাকতে পারে। ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষও সংঘর্ষের পেছনে উসকানির কথা বলেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সংঘাত বাঁধিয়ে কে কীভাবে ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছিল, তার কারণ খুঁজছে পুলিশ।

এদিকে, এত বড় সংঘর্ষের পরও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করেনি। তবে দোকান কর্মচারী, ফুটপাতের ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ অন্তত অর্ধশতাধিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকার শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকটি পক্ষ ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে জ্বালাও-পোড়াওয়ে নেতৃত্ব দেয়। তাদের অনেকের মাথায় ছিল হেলমেট। কেউ কেউ আবার কয়েকটি দোকানের ক্যাশবাক্স লুট ও নিউমার্কেট এলাকার কয়েকটি স্পটে আগুন দেয়। ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি রামদা, হকিস্টিক, লাঠি-রড হামলাকারীরা পেলো কোথায় এবং তারা কেনইবা এই হামলা করল এ বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থা।

ডিএমপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সংঘর্ষে জড়িতদের বেশিরভাগই দোকান কর্মচারী ও ফুটপাতের হকার। বিনা উসকানিতে কেউ সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে কি-না সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। নিউমার্কেট থানা ছাড়াও ডিএমপির নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও একাধিক সাইবার টিম ঘটনা তদন্তে কাজ করছে। মিথ্যা তথ্য প্রচার করে কেউ পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে কি-না তাও শনাক্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ বেশ কয়েকজন হকারকে চিহ্নিত করেছে, যারা সহিংসতায় জড়িত ছিলেন। একাধিক ফুটেজে ঘুরেফিরে তাদের চেহারা দেখা গেছে। সাংবাদিকদের ওপর ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলাসহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ ও পথচারীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন তারা। দফায় দফায় টানা দুই দিনের বেশি সময় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কারা উত্তাপ ছড়িয়েছে, তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে নানা বয়সী কয়েকশ’ লোক হেলমেট পরে সংঘাতে জড়ালে তাদের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় কতটুকু রাজনৈতিক ইন্ধন কাজ করেছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকা নিউমার্কেটের দুই ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারীদের বাগবিত-া থেকে সূত্রপাত হওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনার প্রভাব মুহূর্তেই কীভাবে বিরাট এলাকার কমপক্ষে ২২টি মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে, তার কারণ অনুসন্ধান করছেন গোয়েন্দারা।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বেসরকারি টেলিভিশন দীপ্ত টিভির প্রতিবেদক আসিফ সুমিত ও ক্যামেরাপারসন ইমরানের ওপর হামলা চালাচ্ছে একদল যুবক। দুইজনকে লাঠি ও রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বেধড়ক মারধরে তারা গুরুতর আহত হন। ভেঙে ফেলা হয় টিভি ক্যামেরা। এ সময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনলাইন নিউজপোর্টাল সাংবাদিক শাহেদ শফিকও হামলাকারীদের মারধরে আহত হন। শাহেদ শফিক বলেন, নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি দুই সাংবাদিককে রড দিয়ে ব্যবসায়ীরা মারধর করছেন। আমি তাদের বাঁচাতে গেলে ব্যবসায়ীরা আমার ওপর চড়াও হন।

এদিকে, গত বুধবার সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলেন ঢাকা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের নাসিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লিটন ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের আবদুল্লাহ আল মাসউদ। চিহ্নিত তিনজনই ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগকর্মী বলে জানা গেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার সময় নাসিমের গায়ে নিজের নাম লেখা জার্সি। মাসউদের সবুজ রঙের টি-শার্ট পরা। আর মেরুন রঙের শার্ট পরা যুবকের নাম লিটন। তিনজনই ঢাকা কলেজের ফরহাদ হলের ছাত্র। অনুসন্ধানে জানা যায়, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ওই মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের দুই কর্মচারীর ঝগড়া থেকে। ভিডিও ফুটেজে বাপ্পী নামে একজনকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারী।

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মার্কেটের ৪ নম্বর গেটের ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মচারী কাওসারের মধ্যে সন্ধ্যায় কথা কাটাকাটি থেকেই সংঘর্ষের শুরু। দুটি দোকানের মালিক আপন চাচাতো ভাই। ইফতারের সময় নিউমার্কেটের ভেতরে হাঁটার রাস্তায় টেবিল পেতে বসে ইফতারের ব্যবস্থা করে ফাস্টফুডের দোকানগুলো। মূলত এ বিরোধের সূত্রপাত দুই ফাস্টফুডের দুই কর্মচারীর মধ্যে। বাগবিত-ার এক পর্যায়ে কাওসারকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বাপ্পী ওই জায়গা থেকে চলে যান।

রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের কাছ থেকে তৃতীয় পক্ষের কথা আমরাও শুনেছি। অতি উৎসাহী বেশ কয়েকজন হামলাকারীকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে।

গত সোমবার রাতে থেমে যাওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে সকাল থেকে সংঘর্ষ শুরু হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুপুরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। এ বিষয়ে এডিসি শাহেন শাহ বলেন, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের পুরো ঘটনায় আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনিটরিং করছিলেন। এছাড়া আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোর্স প্রস্তুত ছিল। পরিস্থিতি যখন সংঘর্ষে রূপ নেয় তখন পুলিশ গিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি, মামলা হয়েছে তবে এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বেশকিছু বিষয় সামনে রেখে তদন্তকাজ এগোচ্ছে। এ ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এরপর তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। গোয়েন্দা রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, মামলার পর গতকাল থেকে ডিবি রমনা বিভাগ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো দেখে আসামি শনাক্ত ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার পর র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যারা এ ঘটনায় উসকানি দিয়েছে ও সরাসরি হামলা চালিয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।