শঙ্কা কেটেছে, জমে উঠেছে ঈদ বাজার

নোয়াখালী থেকে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় এসেছেন লায়লা বিলকিস বানু। কাজ শেষে মেয়ের জন্য কেনাকাটা করতে নিউমার্কেটে যান। কেনকাটা করা তো দূরের কথা, মার্কেটে এত ভিড় যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে পুলিশের সহায়তায় বেরিয়ে আসেন নিউমার্কেট থেকে।

লায়লা বলেন, ‘ভেবেছিলাম গ-গোলের পর আজই মার্কেট খুলেছে। তেমন মানুষজন হবে না। ওরে বাপরে বাপ, এমন হবে জানলে এমুখো হতাম না।’

‘আসলে নিউমার্কেটে আমাদের মতো মানুষের জন্য রিজেনবেল প্রাইজের মধ্যে কাপড়-চোপড় থেকে শুরু করে সবকিছু পাওয়া যায়। তাই এখানে আসা। কে বলে মানুষের মধ্যে ঈদ নাই আনন্দ নাই।’

এখন মেয়ের জন্য কোথা থেকে পোশাক কিনবেন এমন প্রশ্নের জবাবে লায়লা সংবাদকে বলেন, ‘শপিংমলগুলোতে দেখবো। দাম একটু বেশি পড়বে। ভিড় থাকলেও মার্কেট এসি হওয়ায় এত খারাপ লাগবে না।’

গত সোমবার রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ হয়। পরদিন মঙ্গলবার দিনব্যাপী সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দু’জন মারা গেছেন। মঙ্গলবার সারাদিন নিউমার্কেটসহ আশপাশের দোকানপাট বন্ধ ছিল। বুধবার আলোচনা-সমঝোতার মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার মার্কেট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বৃহস্পতিবার জনসমাগম না হলেও গতকাল ছুটির দিন থাকায় ক্রেতা সাধারণের সমাগম দেখা যায় নিউমার্কেট এলাকার বিপণিবিতানগুলোতে। ঈদে যেমন ভিড় থাকার কথা তেমনটাই ভিড় দেখা যায়। দুইজন পথচারী মার্কেটের এমন অবস্থা দেখে নিজেদের মধ্যে বলা বলি করছিলেন, ‘শঙ্কা কাটিয়ে জমে উঠেছে ঢাকা নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকার মার্কেটগুলো।’

গত বুধবার পর্যন্ত নিউমার্কটে ও আশপাশের মার্কেট বন্ধ থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই শঙ্কিত ছিলেন। ঈদের আগে ভরা মৌসুমে বিপণিবিতানগুলো বন্ধ থাকায় হতাশ ছিলেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল থেকেই ক্রেতারা ভিড় করছে এ এলাকার মার্কেটগুলোতে। বেচাকেনা বেড়ে যাওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা বলে জানান গাউসিয়া মার্কেটের দোকানি মো. সুমন।

মো. সুমন সংবাদকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে দোকান খুলেছিলাম। তবে তেমন লোকজন আসেনি।’ গতকাল সকাল থেকে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। লোকজনের উপস্থিতি বাড়ছে জানিয়ে সুমন বলেন, ‘অনেক ক্রেতাদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক রয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে হয়তো সেটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

মজিবুর রহমান নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘আশা করছি, এখন থেকে প্রতিদিন বিক্রি বাড়বে। যখন ছাত্র আর আমাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, তখন দোকান কবে খুলতে পারব, এ নিয়ে ভয়ে ছিলাম। এখন ভয় কেটে গেছে।’

ছুটির দিনের সুযোগে মিরপুর থেকে গাউসিয়া মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন মাহবুব আহমেদ ও তার স্ত্রী। মাহবুব বলেন, ‘অপেক্ষায় ছিলাম কখন ঝামেলা শেষ হবে। পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনতে হবে। বাজেটের কারণে চাইলেও আমি বড় বিপণিবিতানে গিয়ে কিনতে পারি না। অল্প টাকায় ঘুরে ঘুরে এখান থেকে জিনিসপত্র কেনাকাটা করি।’

বিপণিবিতানগুলো খুলে দেয়ায় খুশি ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, ‘ক্রেতারা বাজারমুখী হচ্ছেন। বিক্রি শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। সামনের দিনগুলো আর কোন ঝামেলা নয়, নির্বিঘেœ ব্যবসা করতে চান তারা।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘অনেকের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। তাই অনেকেই দোকান খোলেননি। কিন্তু ভয় কেটে যাচ্ছে। লোকজন আসছে। বেচাবিক্রি বাড়বে আশা করি। সামনে আর কোন সমস্যা হবে না। ব্যবসায়ীরা যে লোকসানের মুখে পড়েছে তা কেটে যাবে এই প্রত্যাশা করি।’

সব আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে ঈদকে সামনে রেখে চেনা রূপে ফিরেছে নিউমার্কেট। জমে উঠেছে ক্রেতাদের পদচারণা। পুরোদমে চলছে কেনাকাটা। এতে যেমন খুশি ক্রেতা, তেমনি বিক্রেতাও।

শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২ , ১০ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমাদ্বান ১৪৪৩

শঙ্কা কেটেছে, জমে উঠেছে ঈদ বাজার

জাহিদা পারভেজ ছন্দা

image

নিউমার্কেট এলাকায় দুদিন সংঘর্ষের কারণে ঈদ মার্কেট ছিল বন্ধ, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসায়ীরা, শঙ্কা কাটার পর গতকাল থেকে মার্কেটে ক্রেতাদের ছিল উপচেপড়া ভিড় -সংবাদ

নোয়াখালী থেকে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় এসেছেন লায়লা বিলকিস বানু। কাজ শেষে মেয়ের জন্য কেনাকাটা করতে নিউমার্কেটে যান। কেনকাটা করা তো দূরের কথা, মার্কেটে এত ভিড় যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে পুলিশের সহায়তায় বেরিয়ে আসেন নিউমার্কেট থেকে।

লায়লা বলেন, ‘ভেবেছিলাম গ-গোলের পর আজই মার্কেট খুলেছে। তেমন মানুষজন হবে না। ওরে বাপরে বাপ, এমন হবে জানলে এমুখো হতাম না।’

‘আসলে নিউমার্কেটে আমাদের মতো মানুষের জন্য রিজেনবেল প্রাইজের মধ্যে কাপড়-চোপড় থেকে শুরু করে সবকিছু পাওয়া যায়। তাই এখানে আসা। কে বলে মানুষের মধ্যে ঈদ নাই আনন্দ নাই।’

এখন মেয়ের জন্য কোথা থেকে পোশাক কিনবেন এমন প্রশ্নের জবাবে লায়লা সংবাদকে বলেন, ‘শপিংমলগুলোতে দেখবো। দাম একটু বেশি পড়বে। ভিড় থাকলেও মার্কেট এসি হওয়ায় এত খারাপ লাগবে না।’

গত সোমবার রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ হয়। পরদিন মঙ্গলবার দিনব্যাপী সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দু’জন মারা গেছেন। মঙ্গলবার সারাদিন নিউমার্কেটসহ আশপাশের দোকানপাট বন্ধ ছিল। বুধবার আলোচনা-সমঝোতার মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার মার্কেট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বৃহস্পতিবার জনসমাগম না হলেও গতকাল ছুটির দিন থাকায় ক্রেতা সাধারণের সমাগম দেখা যায় নিউমার্কেট এলাকার বিপণিবিতানগুলোতে। ঈদে যেমন ভিড় থাকার কথা তেমনটাই ভিড় দেখা যায়। দুইজন পথচারী মার্কেটের এমন অবস্থা দেখে নিজেদের মধ্যে বলা বলি করছিলেন, ‘শঙ্কা কাটিয়ে জমে উঠেছে ঢাকা নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকার মার্কেটগুলো।’

গত বুধবার পর্যন্ত নিউমার্কটে ও আশপাশের মার্কেট বন্ধ থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই শঙ্কিত ছিলেন। ঈদের আগে ভরা মৌসুমে বিপণিবিতানগুলো বন্ধ থাকায় হতাশ ছিলেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল থেকেই ক্রেতারা ভিড় করছে এ এলাকার মার্কেটগুলোতে। বেচাকেনা বেড়ে যাওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা বলে জানান গাউসিয়া মার্কেটের দোকানি মো. সুমন।

মো. সুমন সংবাদকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে দোকান খুলেছিলাম। তবে তেমন লোকজন আসেনি।’ গতকাল সকাল থেকে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। লোকজনের উপস্থিতি বাড়ছে জানিয়ে সুমন বলেন, ‘অনেক ক্রেতাদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক রয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে হয়তো সেটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

মজিবুর রহমান নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘আশা করছি, এখন থেকে প্রতিদিন বিক্রি বাড়বে। যখন ছাত্র আর আমাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, তখন দোকান কবে খুলতে পারব, এ নিয়ে ভয়ে ছিলাম। এখন ভয় কেটে গেছে।’

ছুটির দিনের সুযোগে মিরপুর থেকে গাউসিয়া মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন মাহবুব আহমেদ ও তার স্ত্রী। মাহবুব বলেন, ‘অপেক্ষায় ছিলাম কখন ঝামেলা শেষ হবে। পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনতে হবে। বাজেটের কারণে চাইলেও আমি বড় বিপণিবিতানে গিয়ে কিনতে পারি না। অল্প টাকায় ঘুরে ঘুরে এখান থেকে জিনিসপত্র কেনাকাটা করি।’

বিপণিবিতানগুলো খুলে দেয়ায় খুশি ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, ‘ক্রেতারা বাজারমুখী হচ্ছেন। বিক্রি শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। সামনের দিনগুলো আর কোন ঝামেলা নয়, নির্বিঘেœ ব্যবসা করতে চান তারা।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘অনেকের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। তাই অনেকেই দোকান খোলেননি। কিন্তু ভয় কেটে যাচ্ছে। লোকজন আসছে। বেচাবিক্রি বাড়বে আশা করি। সামনে আর কোন সমস্যা হবে না। ব্যবসায়ীরা যে লোকসানের মুখে পড়েছে তা কেটে যাবে এই প্রত্যাশা করি।’

সব আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে ঈদকে সামনে রেখে চেনা রূপে ফিরেছে নিউমার্কেট। জমে উঠেছে ক্রেতাদের পদচারণা। পুরোদমে চলছে কেনাকাটা। এতে যেমন খুশি ক্রেতা, তেমনি বিক্রেতাও।