দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই

স্বাস্থ্য বিভাগের প্রচেষ্টা ও প্রচারণা সত্ত্বেও দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতির এখন পর্যন্ত উন্নতি লক্ষণীয় নয়। প্রতিদিনই ৪শ’ থেকে ৫শ’ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য আসছে। গত এক সপ্তাহে এই অঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২ উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আরও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।

এ নিয়ে গত ৩ মাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজার অতিক্রম করল। এর মধ্যে গত এক মাসেই ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। লাগাতার অনাবৃষ্টির সঙ্গে দুঃসহ গরম ও বিশুদ্ধ পানির সংকট পরিস্থিতির উন্নতি ব্যাহত করছে। গত বছরও মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৭৫ হাজারের বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসার জন্য আসে। মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২৫ জনের।

এবার পটুয়াখালীতে দু’জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, ‘তারা ডায়রিয়ায় মারা যায়নি’। পিরোজপুর ও ভোলার পরিস্থিতিও গত কয়েকদিন ধরে অবনতিশীল। তবে গত তিন মাসে মোট আক্রান্তের মধ্যে বরিশালই শীর্ষে। এ জেলার প্রায় ৮ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য এসেছে। দ্বীপজেলা ভোলাতেও মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি।

পটুয়াখালীতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ও পিরোজপুরে প্রায় ৩ হাজার ৮শ’ ডায়রিয়া আক্রান্ত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে আসলেও বরগুনাতেও প্রায় আড়াই হাজার ও ঝালকাঠীতে ২ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছে। তবে গত এক সপ্তাহে ভোলাতে সহ¯্রাধিক ও পিরোজপুরে ৮ শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য এসেছে।

তবে এ হিসাবের আরও অন্তত দ্বিগুণ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ ব্যক্তিগত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নিজ ঘরে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। গোটা দক্ষিণাঞ্চলেই গত কয়েক বছর ধরে মার্চের শুরু থেকে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। মূলত বিশুদ্ধ পানির সংকটই এ রোগের মূল কারণ বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এর সঙ্গে বাসি ও পঁচা খাবারসহ রমজানের এ সময়ে অতি মাত্রায় নিম্নমানের ভাজা পোড়া খাবারও ডায়রিয়া বিস্তৃতির অন্যতম কারণ বলেও জানা গেছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, এ অঞ্চলের ৪২টি উপজেলার প্রায় সবগুলোতেই ইতোমধ্যে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়লেও ৪১৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তবে ৩-৪টি মেডিকেল টিম একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে কাজ করলেও অন্য টিমগুলোতে একজন করে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক জানিয়েছেন। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাসহ উপজেলাগুলোতে ১ হাজার সিসির লক্ষাধিক ব্যাগ ও ৫শ’ সিসির আরও প্রায় ৭০ হাজার ব্যাগ আইভি স্যালাইন মজুদ থাকার কথা জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর।

করোনা মহামারী সংকট কিছুটা স্তিমিত হবার মধ্যেই গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই ডায়রিয়া দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করায় জনমনে নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ডায়রিয়া প্রতিরোধে বিশুদ্ধ পানি পান করা ছাড়াও বর্তমানের দুঃসহ গরম ও রোজায় তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে সহজ পাচ্য আহারের পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি ডায়রিয়া দেখা দিলে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে দ্রুত খাবার স্যালাইন পান করাসহ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণেরও তাগিদ দিয়েছেন।

এদিকে বরিশাল মহানগরীর ১শ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটিতে ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এখন প্রতিদিনই ২০-২৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে। কিন্তু ১ হাজার শয্যার শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে কোন ডায়রিয়া ওয়ার্ড নেই। শুধুমাত্র শিশু বিভাগে ১০ শয্যার একটি আইসোলেশন ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা মিললেও নারী ও পুরুষদের সেখানে ভর্তি করা হয় না।

বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে হাপাতাল কর্তৃপক্ষ ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হলেও দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালুর কোন সুরাহা হয়নি। গত বছর শেরে বাংলা হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে জেনারেল হাসপাতালে যাবার পথে এক ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যুর পরেও টনক নড়েনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের।

শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২ , ১০ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমাদ্বান ১৪৪৩

দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

স্বাস্থ্য বিভাগের প্রচেষ্টা ও প্রচারণা সত্ত্বেও দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতির এখন পর্যন্ত উন্নতি লক্ষণীয় নয়। প্রতিদিনই ৪শ’ থেকে ৫শ’ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য আসছে। গত এক সপ্তাহে এই অঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২ উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আরও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।

এ নিয়ে গত ৩ মাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজার অতিক্রম করল। এর মধ্যে গত এক মাসেই ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। লাগাতার অনাবৃষ্টির সঙ্গে দুঃসহ গরম ও বিশুদ্ধ পানির সংকট পরিস্থিতির উন্নতি ব্যাহত করছে। গত বছরও মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৭৫ হাজারের বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসার জন্য আসে। মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২৫ জনের।

এবার পটুয়াখালীতে দু’জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, ‘তারা ডায়রিয়ায় মারা যায়নি’। পিরোজপুর ও ভোলার পরিস্থিতিও গত কয়েকদিন ধরে অবনতিশীল। তবে গত তিন মাসে মোট আক্রান্তের মধ্যে বরিশালই শীর্ষে। এ জেলার প্রায় ৮ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য এসেছে। দ্বীপজেলা ভোলাতেও মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি।

পটুয়াখালীতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ও পিরোজপুরে প্রায় ৩ হাজার ৮শ’ ডায়রিয়া আক্রান্ত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে আসলেও বরগুনাতেও প্রায় আড়াই হাজার ও ঝালকাঠীতে ২ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছে। তবে গত এক সপ্তাহে ভোলাতে সহ¯্রাধিক ও পিরোজপুরে ৮ শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য এসেছে।

তবে এ হিসাবের আরও অন্তত দ্বিগুণ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ ব্যক্তিগত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নিজ ঘরে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। গোটা দক্ষিণাঞ্চলেই গত কয়েক বছর ধরে মার্চের শুরু থেকে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। মূলত বিশুদ্ধ পানির সংকটই এ রোগের মূল কারণ বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এর সঙ্গে বাসি ও পঁচা খাবারসহ রমজানের এ সময়ে অতি মাত্রায় নিম্নমানের ভাজা পোড়া খাবারও ডায়রিয়া বিস্তৃতির অন্যতম কারণ বলেও জানা গেছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, এ অঞ্চলের ৪২টি উপজেলার প্রায় সবগুলোতেই ইতোমধ্যে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়লেও ৪১৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তবে ৩-৪টি মেডিকেল টিম একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে কাজ করলেও অন্য টিমগুলোতে একজন করে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক জানিয়েছেন। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাসহ উপজেলাগুলোতে ১ হাজার সিসির লক্ষাধিক ব্যাগ ও ৫শ’ সিসির আরও প্রায় ৭০ হাজার ব্যাগ আইভি স্যালাইন মজুদ থাকার কথা জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর।

করোনা মহামারী সংকট কিছুটা স্তিমিত হবার মধ্যেই গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই ডায়রিয়া দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করায় জনমনে নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ডায়রিয়া প্রতিরোধে বিশুদ্ধ পানি পান করা ছাড়াও বর্তমানের দুঃসহ গরম ও রোজায় তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে সহজ পাচ্য আহারের পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি ডায়রিয়া দেখা দিলে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে দ্রুত খাবার স্যালাইন পান করাসহ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণেরও তাগিদ দিয়েছেন।

এদিকে বরিশাল মহানগরীর ১শ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটিতে ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এখন প্রতিদিনই ২০-২৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে। কিন্তু ১ হাজার শয্যার শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে কোন ডায়রিয়া ওয়ার্ড নেই। শুধুমাত্র শিশু বিভাগে ১০ শয্যার একটি আইসোলেশন ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা মিললেও নারী ও পুরুষদের সেখানে ভর্তি করা হয় না।

বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে হাপাতাল কর্তৃপক্ষ ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হলেও দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালুর কোন সুরাহা হয়নি। গত বছর শেরে বাংলা হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে জেনারেল হাসপাতালে যাবার পথে এক ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যুর পরেও টনক নড়েনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের।