নৌ-যাত্রীদের নিরাপত্তায় ১২ দফা দাবি

দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের যাত্রীরা বেসরকারি লঞ্চ কোম্পানিগুলোর কাছে দীর্ঘদিন যাবত জিম্মি হয়ে আছে। কোন ধর্মীয় উৎসবের আগে ও পরে তারা রোটেশন পদ্ধতি চালু রাখে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য। কিন্তু দুই ঈদের সময়ে এই লঞ্চগুলোই আবার গরু ছাগল বা অন্য পশু পরিবহনের মতো যাত্রী পরিবহন করবে। সেখানেও মূল লক্ষ্য যাত্রী সেবা নয়, বরং অতিরিক্ত মুনাফা। তার সঙ্গে রয়েছে অতিরিক্ত মূল্যে টিকেট বিক্রি, টিকেট কালোবাজারে বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন।

এই সময়ে লঞ্চগুলো প্রতিদিন দুই ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করবে। গভীর রাতে লঞ্চগুলো গন্তব্যে পৌঁছে যাত্রীদের টার্মিনালে নামিয়ে দিয়ে আবার ছুটবে অন্য প্রান্তে। আসন্ন ঈদের সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের সপরিবারে বাড়িতে ফেরা ও পরে আবার সপরিবারে কর্মস্থলে ফেরার সময়েও একই ঘটনা ঘটবে। এই লঞ্চগুলো ঈদের আগে ঢাকার থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যাত্রীদের পশুর মতো লঞ্চ বোঝাই করে কোনরকমে দক্ষিণাঞ্চলের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে আবার ছুটবে ঢাকার উদ্দেশে। আবার ঈদের শেষে দক্ষিণাঞ্চল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার সদরঘাটে যাত্রী পৌঁছে দিয়ে আবার ছুটবে দক্ষিণাঞ্চলের স্টেশন থেকে যাত্রী বোঝাই করে ঢাকায় পৌঁছে দেবে। আবার যাত্রীদের যাতায়াতকে কেন্দ্র করে উভয় প্রান্তে টার্মিনালে প্রবেশের টিকেট, মালামাল পরিবহন সব কিছু নিয়ে থাকবে চরম নৈরাজ্য। এ অবস্থা থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে নৌযাত্রী ঐক্য পরিষদ প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১২ দফা দাবিনামা উত্থাপন করে তার হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ট্রেন, বাসস্ট্যান্ড, বিমান বন্দরের ন্যায় নৌ-পরিবহন টার্মিনালের ইজারা প্রথা ও টোল আদায় বন্ধ, লঞ্চ মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করে স্বভাবিক সময়ে যে ভাড়া আদায় করা হত সেই ভাড়া আদায়ে বাধ্য করা, শিক্ষার্থীদের পরিচিতি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে ডেকে অর্ধেক ভাড়া আদায়, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বিজ্ঞানসম্মতভাবে যাত্রী সংখ্যানুযায়ী লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করতে ও প্রতিটি লঞ্চে দ্রুত সময়ের মধ্যে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা চালু রাখতে নিজস্ব কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও যাত্রীদেরকেও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও লাইফ জ্যাকেটের ব্যবহার সম্পর্কে প্রতিটি ট্রিপে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ, নৌ পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে মালিকপক্ষ কর্তৃক যাত্রী বীমা চালু করা, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মাস্টার, সুকানি, গ্রিজার নিয়োগ দেয়া, ইঞ্জিন রুমের পাশ থেকে ক্যান্টিন সরিয়ে নেয়া, ক্যান্টিন ও চায়ের দোকানদারদের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ ও উচ্চমূল্যে মালিকপক্ষ কর্তৃক দোকানদারদের কাছে ইজারা দেয়া বন্ধ করা, যাত্রীদের লঞ্চে ও টার্মিনালের হয়রানি বন্ধ করা, প্রতিটি নৌযানে যাত্রীদের বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা, নৌযানে অজ্ঞান, মলম, মালামাল নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়া পার্টির উৎপাত থেকে রেহাই দেবার ব্যবস্থা করা, ঢাকা-বরিশালে রুটে প্রতিদিন বিআইডব্লিটিসির দ্রুতগামী ও নিরাপদ স্টিমার সার্ভিস চালুর পাশাপাশি ঈদের আগে ও পরে অতিরিক্ত নৌযান দিয়ে সার্ভিসের সংখ্যা বাড়ানো, টার্মিনালে যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রভৃতি।

শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২ , ১০ বৈশাখ ১৪২৮ ২১ রমাদ্বান ১৪৪৩

নৌ-যাত্রীদের নিরাপত্তায় ১২ দফা দাবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের যাত্রীরা বেসরকারি লঞ্চ কোম্পানিগুলোর কাছে দীর্ঘদিন যাবত জিম্মি হয়ে আছে। কোন ধর্মীয় উৎসবের আগে ও পরে তারা রোটেশন পদ্ধতি চালু রাখে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য। কিন্তু দুই ঈদের সময়ে এই লঞ্চগুলোই আবার গরু ছাগল বা অন্য পশু পরিবহনের মতো যাত্রী পরিবহন করবে। সেখানেও মূল লক্ষ্য যাত্রী সেবা নয়, বরং অতিরিক্ত মুনাফা। তার সঙ্গে রয়েছে অতিরিক্ত মূল্যে টিকেট বিক্রি, টিকেট কালোবাজারে বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন।

এই সময়ে লঞ্চগুলো প্রতিদিন দুই ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করবে। গভীর রাতে লঞ্চগুলো গন্তব্যে পৌঁছে যাত্রীদের টার্মিনালে নামিয়ে দিয়ে আবার ছুটবে অন্য প্রান্তে। আসন্ন ঈদের সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের সপরিবারে বাড়িতে ফেরা ও পরে আবার সপরিবারে কর্মস্থলে ফেরার সময়েও একই ঘটনা ঘটবে। এই লঞ্চগুলো ঈদের আগে ঢাকার থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যাত্রীদের পশুর মতো লঞ্চ বোঝাই করে কোনরকমে দক্ষিণাঞ্চলের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে আবার ছুটবে ঢাকার উদ্দেশে। আবার ঈদের শেষে দক্ষিণাঞ্চল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার সদরঘাটে যাত্রী পৌঁছে দিয়ে আবার ছুটবে দক্ষিণাঞ্চলের স্টেশন থেকে যাত্রী বোঝাই করে ঢাকায় পৌঁছে দেবে। আবার যাত্রীদের যাতায়াতকে কেন্দ্র করে উভয় প্রান্তে টার্মিনালে প্রবেশের টিকেট, মালামাল পরিবহন সব কিছু নিয়ে থাকবে চরম নৈরাজ্য। এ অবস্থা থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে নৌযাত্রী ঐক্য পরিষদ প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১২ দফা দাবিনামা উত্থাপন করে তার হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ট্রেন, বাসস্ট্যান্ড, বিমান বন্দরের ন্যায় নৌ-পরিবহন টার্মিনালের ইজারা প্রথা ও টোল আদায় বন্ধ, লঞ্চ মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করে স্বভাবিক সময়ে যে ভাড়া আদায় করা হত সেই ভাড়া আদায়ে বাধ্য করা, শিক্ষার্থীদের পরিচিতি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে ডেকে অর্ধেক ভাড়া আদায়, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বিজ্ঞানসম্মতভাবে যাত্রী সংখ্যানুযায়ী লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করতে ও প্রতিটি লঞ্চে দ্রুত সময়ের মধ্যে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা চালু রাখতে নিজস্ব কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও যাত্রীদেরকেও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও লাইফ জ্যাকেটের ব্যবহার সম্পর্কে প্রতিটি ট্রিপে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ, নৌ পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে মালিকপক্ষ কর্তৃক যাত্রী বীমা চালু করা, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মাস্টার, সুকানি, গ্রিজার নিয়োগ দেয়া, ইঞ্জিন রুমের পাশ থেকে ক্যান্টিন সরিয়ে নেয়া, ক্যান্টিন ও চায়ের দোকানদারদের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ ও উচ্চমূল্যে মালিকপক্ষ কর্তৃক দোকানদারদের কাছে ইজারা দেয়া বন্ধ করা, যাত্রীদের লঞ্চে ও টার্মিনালের হয়রানি বন্ধ করা, প্রতিটি নৌযানে যাত্রীদের বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা, নৌযানে অজ্ঞান, মলম, মালামাল নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়া পার্টির উৎপাত থেকে রেহাই দেবার ব্যবস্থা করা, ঢাকা-বরিশালে রুটে প্রতিদিন বিআইডব্লিটিসির দ্রুতগামী ও নিরাপদ স্টিমার সার্ভিস চালুর পাশাপাশি ঈদের আগে ও পরে অতিরিক্ত নৌযান দিয়ে সার্ভিসের সংখ্যা বাড়ানো, টার্মিনালে যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রভৃতি।