ত্রিশালে কৃষি কার্ড জালিয়াতি : প্রকৃত কৃষক বঞ্চিত

অকৃষক পাচ্ছেন প্রনোদনার সারবীজ ডিলারের গোডাউনে বিক্রি

প্রান্তিক কৃষকের জন্য বরাদ্ধকৃত বিনামুল্যে প্রনোদনার সার বীজ প্রকৃত কৃষকরা না পেয়ে পেয়েছেন অকৃষিজীবীরা ।সব যাচ্ছে ডিলারদের গোডাউনে। উপজেলা কৃষি অফিসের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিধিদের সম্পৃক্ততা ও অসাধু ডিলারের সমন্বয়ে আত্বসাৎ করছে কৃষকের জন্য ঘোষিত বিনামুল্যে সার বীজের প্রনোদনা। গত বৃহস্পতিবার বিতরনের ২য় দিনে কৃষক সার উত্তোলন করে কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সামনে ডিলারদের কাছে বিক্রি করে দিলে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

জানাযায়, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলায় চলতি আউশ মৌসুমী জন্য সরকারিভাবে ৩ হাজার ছয়শত ৪০ জন সুবিধাভোগী কৃষকের প্রনোদনা দেয়ার জন্য নামের তালিকা করে স্থানীয় ইউপি মেম্বার চেয়ারম্যান ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। বর্তমান সরকার ঘোষিত প্রনোদনা অনুযায়ী একেকজন কৃষক প্রতি বিঘা ধান চাষের জন্য ৫ কেজি উপশী বীজ, দেড় কেজি হাইব্রিড বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০কেজি এমওপি সার বিতরনের জন্য গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম উদ্বোধন করে কৃষি অফিস। বিতরনের শুরুর পর থেকেই কার্ডধারীরা সার বীজ উত্তোলন করেই ডিলারের গোডাইনে বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে যায়। উপকারভোগী মনোনিত কৃষকরা সরকারি সার উত্তোলন করে সাথে সাথে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোডাউনের সামনেই একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উত্তোলনকৃত সার বিক্রি করে দেন। আর এসব সার কিনে নেন একতা ট্রেডার্সের মালিক ডিলার আনিসুজ্জামান। সচেতন মহলের অভিযোগ সঠিকভাবে প্রান্তিক চাষীদের মনোনীত না করায় ঘটছে এমন ঘটনা। যাদের জমিজমা নাই তারা এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। পরে কালোবাজারির মাধ্যমে ডিলারের দোকানে সার চলে যাচ্ছে এমন ঘটনা জানাজানি হলে ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান ত্রিশাল পৌরবাজারে ডিলার আনিসুজ্জামানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অভিযান পরিচালনা করেন। ওই সময় ডিলারের দোকান থেকে ৩০ বস্তা সরকারি সার জব্দ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা কৃষি অফিস।

গত বৃহস্পতিবার সার বিতরনে দ্বিতীয় দিনে সরজমিনে দেখা যায় কার্ডধারী কৃষকরা সার উত্তোলন করে স্থানীয় ডিলারদের ভাড়া করা ভ্যানে মালামাল তুলে দিয়ে ডিলারের দোকান থেকে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। এসময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দাড়িয়ে থাকলেও এব্যাপারে কোন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার আনিসুজ্জামান বলেন, কৃষি অফিসের সামনে কৃষকদের নিকট থেকে উক্ত সারগুলো ক্রয় করা হয়েছিল। আমরা টাকা দিয়ে সার ক্রয় করেছি আর এ কাজে কৃষি অফিসের লোকজন জড়িত আছে।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনুসন্ধান করে জানাযায় স্থানীয় ইউপি মেম্বার, চেয়ারম্যান ডিলার ও কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা মিলে প্রকৃত কৃষককে বাদ দিয়ে এসব তালিকা করে। যাদের তালিকা করা হয়েছে তাদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী অর্ধেক টাকা নিয়ে ডিলারদের দোকানে মালামাল দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছে দেদারছে। প্রকৃত কৃষকরা প্রনোদনার কার্ড না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি আক্ষেপ করেন।

উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল বাতেন ২১০ শতাংশ জমি আউশ আবাদ করেন, ৮নং ওয়ার্ডের আবেদ আলী ৭ কাঠা ,আংরার চড় গ্রামের মোহাম্মদ আলী ৮ কাঠা, পৌরসভার দরিরামপুর গ্রামের ফজলুল হক আট কাঠা, মেদারপাড়ের জয়নাল আবেদীন ২ একর,দরিরামপুরের জালাল উদ্দিন ১২ কাঠা, আব্দুল আজিজ তিন একর জমি,দুলাল ১২ কাঠা,পাচপাড়া গ্রামের আমানুল্লাহ এক একর জমি আবাদ করলেও কেউ কোন কৃষি কার্ড পায়নি। উপজেলার ১২ ইউনিয়নের অধিকাংশ প্রকৃত কৃষকরা এই কৃষি কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছে অসাধু চক্রের কারনে।

একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানাযায়, শুনেছি বর্তমান সরকার কৃষকের জন্য বিনামুল্যে সার বীজ দেয়। কখনো এই প্রনোদনা চোখে দেখেনি। বিনামুল্যে পাওয়া দুরের কথা আমরা ডিলারদের কাছ থেকে চড়ামুল্যে সার বীজ কিনে কৃষি কাজ করে থাকি। কখনো সরকারের প্রনোদনা বা বিনামুল্যে সার বীজ চোখে দেখিনি।

ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী আমরা কার্ডের মাধ্যমে সার বীজ বিতরন করে থাকি। বিতরনের প্রথমদিন সার বীজ বিক্রির সময় হাতে নাতে আমরা ডিলারের দোকানে কিছু মাল জব্দ করে নিয়ে আসি। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।আমরা কৃষকদের সার বীজ দিচ্ছি এখন এগুলো যদি তারা বিক্রি করে দেয় আমাদের কি করার আছে।

এ ব্যাপারে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তারুজ্জামান জানান, বিনামুল্যে সার বীজ ডিলারের গোডাউন থেকে জব্দ করার ঘটনা শুনেছি। উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে কথা বলে ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকৃত কৃষকরা যদি তালিকা বঞ্চিত হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ২২ রমাদ্বান ১৪৪৩

ত্রিশালে কৃষি কার্ড জালিয়াতি : প্রকৃত কৃষক বঞ্চিত

অকৃষক পাচ্ছেন প্রনোদনার সারবীজ ডিলারের গোডাউনে বিক্রি

প্রতিনিধি, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

image

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) : প্রণোদনার সার উত্তোলনের পর এভাবেই স্তূপ করে রাখা হয় বিক্রির উদ্দেশ্যে -সংবাদ

প্রান্তিক কৃষকের জন্য বরাদ্ধকৃত বিনামুল্যে প্রনোদনার সার বীজ প্রকৃত কৃষকরা না পেয়ে পেয়েছেন অকৃষিজীবীরা ।সব যাচ্ছে ডিলারদের গোডাউনে। উপজেলা কৃষি অফিসের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিধিদের সম্পৃক্ততা ও অসাধু ডিলারের সমন্বয়ে আত্বসাৎ করছে কৃষকের জন্য ঘোষিত বিনামুল্যে সার বীজের প্রনোদনা। গত বৃহস্পতিবার বিতরনের ২য় দিনে কৃষক সার উত্তোলন করে কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সামনে ডিলারদের কাছে বিক্রি করে দিলে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

জানাযায়, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলায় চলতি আউশ মৌসুমী জন্য সরকারিভাবে ৩ হাজার ছয়শত ৪০ জন সুবিধাভোগী কৃষকের প্রনোদনা দেয়ার জন্য নামের তালিকা করে স্থানীয় ইউপি মেম্বার চেয়ারম্যান ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। বর্তমান সরকার ঘোষিত প্রনোদনা অনুযায়ী একেকজন কৃষক প্রতি বিঘা ধান চাষের জন্য ৫ কেজি উপশী বীজ, দেড় কেজি হাইব্রিড বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০কেজি এমওপি সার বিতরনের জন্য গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম উদ্বোধন করে কৃষি অফিস। বিতরনের শুরুর পর থেকেই কার্ডধারীরা সার বীজ উত্তোলন করেই ডিলারের গোডাইনে বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে যায়। উপকারভোগী মনোনিত কৃষকরা সরকারি সার উত্তোলন করে সাথে সাথে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোডাউনের সামনেই একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উত্তোলনকৃত সার বিক্রি করে দেন। আর এসব সার কিনে নেন একতা ট্রেডার্সের মালিক ডিলার আনিসুজ্জামান। সচেতন মহলের অভিযোগ সঠিকভাবে প্রান্তিক চাষীদের মনোনীত না করায় ঘটছে এমন ঘটনা। যাদের জমিজমা নাই তারা এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। পরে কালোবাজারির মাধ্যমে ডিলারের দোকানে সার চলে যাচ্ছে এমন ঘটনা জানাজানি হলে ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান ত্রিশাল পৌরবাজারে ডিলার আনিসুজ্জামানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অভিযান পরিচালনা করেন। ওই সময় ডিলারের দোকান থেকে ৩০ বস্তা সরকারি সার জব্দ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা কৃষি অফিস।

গত বৃহস্পতিবার সার বিতরনে দ্বিতীয় দিনে সরজমিনে দেখা যায় কার্ডধারী কৃষকরা সার উত্তোলন করে স্থানীয় ডিলারদের ভাড়া করা ভ্যানে মালামাল তুলে দিয়ে ডিলারের দোকান থেকে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। এসময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দাড়িয়ে থাকলেও এব্যাপারে কোন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার আনিসুজ্জামান বলেন, কৃষি অফিসের সামনে কৃষকদের নিকট থেকে উক্ত সারগুলো ক্রয় করা হয়েছিল। আমরা টাকা দিয়ে সার ক্রয় করেছি আর এ কাজে কৃষি অফিসের লোকজন জড়িত আছে।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনুসন্ধান করে জানাযায় স্থানীয় ইউপি মেম্বার, চেয়ারম্যান ডিলার ও কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা মিলে প্রকৃত কৃষককে বাদ দিয়ে এসব তালিকা করে। যাদের তালিকা করা হয়েছে তাদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী অর্ধেক টাকা নিয়ে ডিলারদের দোকানে মালামাল দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছে দেদারছে। প্রকৃত কৃষকরা প্রনোদনার কার্ড না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি আক্ষেপ করেন।

উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল বাতেন ২১০ শতাংশ জমি আউশ আবাদ করেন, ৮নং ওয়ার্ডের আবেদ আলী ৭ কাঠা ,আংরার চড় গ্রামের মোহাম্মদ আলী ৮ কাঠা, পৌরসভার দরিরামপুর গ্রামের ফজলুল হক আট কাঠা, মেদারপাড়ের জয়নাল আবেদীন ২ একর,দরিরামপুরের জালাল উদ্দিন ১২ কাঠা, আব্দুল আজিজ তিন একর জমি,দুলাল ১২ কাঠা,পাচপাড়া গ্রামের আমানুল্লাহ এক একর জমি আবাদ করলেও কেউ কোন কৃষি কার্ড পায়নি। উপজেলার ১২ ইউনিয়নের অধিকাংশ প্রকৃত কৃষকরা এই কৃষি কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছে অসাধু চক্রের কারনে।

একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানাযায়, শুনেছি বর্তমান সরকার কৃষকের জন্য বিনামুল্যে সার বীজ দেয়। কখনো এই প্রনোদনা চোখে দেখেনি। বিনামুল্যে পাওয়া দুরের কথা আমরা ডিলারদের কাছ থেকে চড়ামুল্যে সার বীজ কিনে কৃষি কাজ করে থাকি। কখনো সরকারের প্রনোদনা বা বিনামুল্যে সার বীজ চোখে দেখিনি।

ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী আমরা কার্ডের মাধ্যমে সার বীজ বিতরন করে থাকি। বিতরনের প্রথমদিন সার বীজ বিক্রির সময় হাতে নাতে আমরা ডিলারের দোকানে কিছু মাল জব্দ করে নিয়ে আসি। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।আমরা কৃষকদের সার বীজ দিচ্ছি এখন এগুলো যদি তারা বিক্রি করে দেয় আমাদের কি করার আছে।

এ ব্যাপারে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তারুজ্জামান জানান, বিনামুল্যে সার বীজ ডিলারের গোডাউন থেকে জব্দ করার ঘটনা শুনেছি। উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে কথা বলে ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকৃত কৃষকরা যদি তালিকা বঞ্চিত হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।