নিউমার্কেট সংঘর্ষ, দুই হত্যা

জড়িত ও হেলমেটধারীদের চার দিনেও চিহ্নিত করা যায়নি

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বললেন, ভিডিও বিশ্লেষণ চলছে, শতভাগ নিশ্চিত হলে গ্রেপ্তার

নিউমার্কেটে ছাত্র-ব্যবসায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত পুলিশের কাছে যেসব তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তাতে হত্যায় জড়িতদের পরিচয় নিয়ে গোলক-ধাঁধায়।

এদিকে পুলিশের কাজে বাধা এবং জালাও-পোড়াওয়ের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে ৩ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নিয়েছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। অন্যদিকে ৪ মামলায় মধ্যে একটি মামলায় এজাহারভুক্ত ২৪ আসামি ছাড়া যেসব অজ্ঞাত আসামি রয়েছে তাদের চিহ্নিত করা যায়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যারা হেলমেট পরে, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে তাদের শনাক্ত করাটা একটু কঠিন কাজ। বিশেষ করে সংঘর্ষে মারা যাওয়া নাহিদ এবং মুরসালিন কাদের আঘাতে মারা গেছে তা খুঁজে বের করা কঠিন। তবে পুলিশের কাছে যেসব ফুটেজ বা ছবি রয়েছে তা বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশ হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করার চেয়ে মামলায় যে বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম দিয়েছে তাদের ধরতে বেশি ব্যস্ত। ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য মূল হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করছে না। যেখানে বিভিন্ন ফুটেজে এবং ছবিতে লঠিসোঁটা এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নেয়া অনেকের ছবি প্রকাশ পেয়েছে তারপরও পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছে না।

নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েক হেলমেটধারীকে মারা যাওয়া নাহিদ ও মুরসালিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার ছবি ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু সেই হেলমেটধারীদের ৪ দিনেও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, তারা প্রতিটি ভিডিও বিশ্লেষণ করছেন, শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পর গ্রেপ্তার অভিযানে যাবেন।

গত সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার দিনভর চলা এই সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। তাদের মধ্যে নাহিদ মিয়া নামের ১৮ বছর বয়সী এক তরুণকে রাস্তার ওপর কোপানো হয়। এলিফ্যান্ট রোডের ডাটা টেক কম্পিউটার নামের একটি দোকানের ডেলিভারি অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করতেন নাহিদ। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যু হয়। পরদিন রাতে তার চাচা মো. সাঈদ একটি হত্যা মামলা করেন। আর মঙ্গলবার সংঘর্ষের মধ্যে ইটের আঘাতে আহত দোকান কর্মচারী মুরসালিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বৃহস্পতিবার ভোরে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে হত্যা মামলা করেন তার বড় ভাই নুর মোহাম্মদ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ফজলে এলাহী গতকাল জানান, মুরসালিন হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব তারা পেয়েছেন। আগেরদিন তারা নাহিদ হত্যার তদন্ত ভার পান। তারা হত্যা মামলা দুইটি ‘অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে’ তদন্ত করছেন।

হেলমেট পরে যারা আক্রমণ চালিয়েছে, তাদের অধিকাংশই ছাত্র বলে মনে হচ্ছে বলেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ‘তবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা খুব শীঘ্রই হত্যা মামলা তদন্তে অগ্রগতির আশা করছেন। মাঠে লোকজন কাজ করছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দোকানকর্মীদের রক্তক্ষয়ী ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল গত সোমবার রাতে নিউমার্কেটের একটি খাবারের দোকানে ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র মারধরের শিকার হওয়ার পর।

দোকান মালিকদের ভাষ্য, দুই দোকানের কর্মীদের বচসা থেকে এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীকে ডেকে আনে। তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মধ্যরাতে নিউমার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।

এ ঘটনায় বুধবার রাতে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে একটি মামলা করেন নিউমার্কেট থানার এসআই মেহেদী হাসান। একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাও-পোড়াও, পুলিশের কাজের বাধা দেয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন। পরিদর্শক ইয়ামিন কবিরের মামলায় নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনসহ ২৪ জনের নাম রয়েছে।

নিউমার্কেট থানার ওসি শ ম কাইয়ুম জানান, তারা যে দুইটি মামলা তদন্ত করছেন, তার একটি মামলায় মকবুল হোসেন এক নম্বর আসামি। তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। থানায় রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ‘বাকি ২৩ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে থানা পুলিশ কাজ করছে, আশা করি, খুব শীঘ্রই তাদের গ্রেপ্তার করতে পারব।’

অজ্ঞাত আসামিরা এখনো জ্ঞাত হয়নি

তবে নিউমার্কেটে সংঘর্ষে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলাসহ ৪ মামলায় অজ্ঞাত আসামি কারা তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পিকেটিংকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের খুঁজে না পেলেও একটি মামলায় যে ২৪ জন বিএনপি নেতাকর্মীর নাম এসেছে তাদের ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে হামলায় অংশ নেয়া হেলমেটধারী, এবং দুই যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি। পুলিশি অভিযানের মুখে বিএনপির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে শনাক্ত হওয়ার পর অজ্ঞাত আসামিরা জ্ঞাত হবে। এখানে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখার পর পুলিশের কাঝে বাধা জালাও-পোড়াও সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি কে বা কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

নিউমার্কেটের ছাত্র ব্যবসায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার সংখ্যা ৪টি। দুটি মামলার বাদী পুলিশ আর দুটি মামলার বাদী নিহত দুই যুবকের স্বজনরা। হত্যা মামলা দুটি তদন্তের জন্য ডিবিতে পাঠানো হলেও পুলিশের ওপর হামলা বা কাজে বাধা দেয়া এবং বিস্ফোরক আইনে করা মামলা দুটি নিউমার্কেট থানা পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলায় বিএনপি নেতা মকবুলসহ ২৪ বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এক থেকে দেড়শ’ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। একইভাবে সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিন বিকেলে ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় অজ্ঞাত এক থেকে দেড়শ’ আসামি করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত ) বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন সে মামলায় অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০ জনের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের এসআই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন তাতে অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ১৫০ থেকে ২০০ উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে ২০ এপ্রিল ১৫০ থেকে ২০০ ছাত্র সংঘর্ষের ধারবাহিকতায় আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যাওয়া নাহিদ মিয়ার চাচা যে মামলা করেছেন সেখানে আসামির সংখ্যা ১৫০ থেকে ২০০ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর দোকান কর্মচারী মুরসালিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন সেখানে আসামির সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ জন করা হয়েছে।

পুলিশের কাজে বাধা মামলায় রিমান্ডে বিএনপি নেতা মকবুল

সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। শুক্রবার গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপি নেতা মকবুলকে গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালত সূত্র জানায়, গতকাল মকবুল হোসেনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক হালদার অর্পিত ঠাকুর। শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের এ আদশ দেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, ‘তার (মকবুল) কী পরিচয়, কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় কী, সে বিষয়ে আমরা বিবেচনা করিনি। নিউমার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এক নম্বর আসামি তিনি। এ মামলায় আরও যারা এজাহারভুক্ত রয়েছন, তাদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। বাকিদেরও অচিরেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ২২ রমাদ্বান ১৪৪৩

নিউমার্কেট সংঘর্ষ, দুই হত্যা

জড়িত ও হেলমেটধারীদের চার দিনেও চিহ্নিত করা যায়নি

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বললেন, ভিডিও বিশ্লেষণ চলছে, শতভাগ নিশ্চিত হলে গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

নিউমার্কেটে ছাত্র-ব্যবসায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত পুলিশের কাছে যেসব তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তাতে হত্যায় জড়িতদের পরিচয় নিয়ে গোলক-ধাঁধায়।

এদিকে পুলিশের কাজে বাধা এবং জালাও-পোড়াওয়ের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে ৩ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নিয়েছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। অন্যদিকে ৪ মামলায় মধ্যে একটি মামলায় এজাহারভুক্ত ২৪ আসামি ছাড়া যেসব অজ্ঞাত আসামি রয়েছে তাদের চিহ্নিত করা যায়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যারা হেলমেট পরে, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে তাদের শনাক্ত করাটা একটু কঠিন কাজ। বিশেষ করে সংঘর্ষে মারা যাওয়া নাহিদ এবং মুরসালিন কাদের আঘাতে মারা গেছে তা খুঁজে বের করা কঠিন। তবে পুলিশের কাছে যেসব ফুটেজ বা ছবি রয়েছে তা বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশ হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করার চেয়ে মামলায় যে বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম দিয়েছে তাদের ধরতে বেশি ব্যস্ত। ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য মূল হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করছে না। যেখানে বিভিন্ন ফুটেজে এবং ছবিতে লঠিসোঁটা এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নেয়া অনেকের ছবি প্রকাশ পেয়েছে তারপরও পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছে না।

নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েক হেলমেটধারীকে মারা যাওয়া নাহিদ ও মুরসালিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার ছবি ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু সেই হেলমেটধারীদের ৪ দিনেও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, তারা প্রতিটি ভিডিও বিশ্লেষণ করছেন, শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পর গ্রেপ্তার অভিযানে যাবেন।

গত সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার দিনভর চলা এই সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। তাদের মধ্যে নাহিদ মিয়া নামের ১৮ বছর বয়সী এক তরুণকে রাস্তার ওপর কোপানো হয়। এলিফ্যান্ট রোডের ডাটা টেক কম্পিউটার নামের একটি দোকানের ডেলিভারি অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করতেন নাহিদ। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যু হয়। পরদিন রাতে তার চাচা মো. সাঈদ একটি হত্যা মামলা করেন। আর মঙ্গলবার সংঘর্ষের মধ্যে ইটের আঘাতে আহত দোকান কর্মচারী মুরসালিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বৃহস্পতিবার ভোরে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে হত্যা মামলা করেন তার বড় ভাই নুর মোহাম্মদ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ফজলে এলাহী গতকাল জানান, মুরসালিন হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব তারা পেয়েছেন। আগেরদিন তারা নাহিদ হত্যার তদন্ত ভার পান। তারা হত্যা মামলা দুইটি ‘অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে’ তদন্ত করছেন।

হেলমেট পরে যারা আক্রমণ চালিয়েছে, তাদের অধিকাংশই ছাত্র বলে মনে হচ্ছে বলেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ‘তবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা খুব শীঘ্রই হত্যা মামলা তদন্তে অগ্রগতির আশা করছেন। মাঠে লোকজন কাজ করছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দোকানকর্মীদের রক্তক্ষয়ী ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল গত সোমবার রাতে নিউমার্কেটের একটি খাবারের দোকানে ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র মারধরের শিকার হওয়ার পর।

দোকান মালিকদের ভাষ্য, দুই দোকানের কর্মীদের বচসা থেকে এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীকে ডেকে আনে। তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মধ্যরাতে নিউমার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।

এ ঘটনায় বুধবার রাতে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে একটি মামলা করেন নিউমার্কেট থানার এসআই মেহেদী হাসান। একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাও-পোড়াও, পুলিশের কাজের বাধা দেয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন। পরিদর্শক ইয়ামিন কবিরের মামলায় নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনসহ ২৪ জনের নাম রয়েছে।

নিউমার্কেট থানার ওসি শ ম কাইয়ুম জানান, তারা যে দুইটি মামলা তদন্ত করছেন, তার একটি মামলায় মকবুল হোসেন এক নম্বর আসামি। তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। থানায় রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ‘বাকি ২৩ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে থানা পুলিশ কাজ করছে, আশা করি, খুব শীঘ্রই তাদের গ্রেপ্তার করতে পারব।’

অজ্ঞাত আসামিরা এখনো জ্ঞাত হয়নি

তবে নিউমার্কেটে সংঘর্ষে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলাসহ ৪ মামলায় অজ্ঞাত আসামি কারা তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পিকেটিংকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের খুঁজে না পেলেও একটি মামলায় যে ২৪ জন বিএনপি নেতাকর্মীর নাম এসেছে তাদের ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে হামলায় অংশ নেয়া হেলমেটধারী, এবং দুই যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি। পুলিশি অভিযানের মুখে বিএনপির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে শনাক্ত হওয়ার পর অজ্ঞাত আসামিরা জ্ঞাত হবে। এখানে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখার পর পুলিশের কাঝে বাধা জালাও-পোড়াও সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি কে বা কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

নিউমার্কেটের ছাত্র ব্যবসায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার সংখ্যা ৪টি। দুটি মামলার বাদী পুলিশ আর দুটি মামলার বাদী নিহত দুই যুবকের স্বজনরা। হত্যা মামলা দুটি তদন্তের জন্য ডিবিতে পাঠানো হলেও পুলিশের ওপর হামলা বা কাজে বাধা দেয়া এবং বিস্ফোরক আইনে করা মামলা দুটি নিউমার্কেট থানা পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলায় বিএনপি নেতা মকবুলসহ ২৪ বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এক থেকে দেড়শ’ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। একইভাবে সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিন বিকেলে ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় অজ্ঞাত এক থেকে দেড়শ’ আসামি করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত ) বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন সে মামলায় অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০ জনের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের এসআই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন তাতে অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ১৫০ থেকে ২০০ উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে ২০ এপ্রিল ১৫০ থেকে ২০০ ছাত্র সংঘর্ষের ধারবাহিকতায় আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যাওয়া নাহিদ মিয়ার চাচা যে মামলা করেছেন সেখানে আসামির সংখ্যা ১৫০ থেকে ২০০ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর দোকান কর্মচারী মুরসালিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন সেখানে আসামির সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ জন করা হয়েছে।

পুলিশের কাজে বাধা মামলায় রিমান্ডে বিএনপি নেতা মকবুল

সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। শুক্রবার গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপি নেতা মকবুলকে গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালত সূত্র জানায়, গতকাল মকবুল হোসেনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক হালদার অর্পিত ঠাকুর। শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের এ আদশ দেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, ‘তার (মকবুল) কী পরিচয়, কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় কী, সে বিষয়ে আমরা বিবেচনা করিনি। নিউমার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এক নম্বর আসামি তিনি। এ মামলায় আরও যারা এজাহারভুক্ত রয়েছন, তাদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। বাকিদেরও অচিরেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’