রেলের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু, অপেক্ষার পর অপেক্ষা

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। প্রথম দিন আগামী ২৭ এপ্রিলের যাত্রার টিকেট বিক্রি করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টায় রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দরসহ ৫টি স্টেশন থেকে একযোগে বিক্রি করা হয় এই অগ্রিম টিকেট। তবে বিক্রি শুরুর ৫ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় অগ্রিম টিকেট।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ১৪-১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও এসি টিকেট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে, অনেক যাত্রীদের। এছাড়া টিকেট সংগ্রহের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জন্ম সনদের ফটোকপি চেকিং করতে কিছু সময় বেশি লেগেছে বলে যাত্রীরা জানান।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বিশেষ ব্যবস্থাপনায় গতকাল থেকে ঢাকার পাঁচটি স্টেশন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা কমলাপুর স্টেশনে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চল? ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকেট বিক্রি করা হয়, ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রি করা হয়। তেজগাঁও স্টেশনে ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রি করা হয়, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের এবং ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হয়।

গতকাল বিক্রি করা হয়েছে আগামী ২৭ এপ্রিলের যাত্রার টিকেট। আজ বিক্রি হবে ২৮ এপ্রিলের যাত্রার টিকেট, ২৫ এপ্রিল ২৯ এপ্রিলের, ২৬ এপ্রিল ৩০ এপ্রিলের এবং ২৭ এপ্রিল ১ মের যাত্রার অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে। এছাড়া ঈদের পর ফিরতি ট্রেনের জন্য আগামী ১ মে বিক্রি করা হবে ৫ মে’র যাত্রারা টিকেট, ২ মে বিক্রি হবে ৬ মে’র টিকেট, ৩ মে বিক্রি হবে ৭ মে’র টিকেট, ৪ মে বিক্রি হবে ৮ মে’র টিকেট।

এ বিষয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ২৭ হাজার অগ্রিম টিকেট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এই টিকেটের অর্ধেক স্টেশনের কাউন্টারে এবং বাকি অর্ধেক অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। পাঁচটি স্টেশনে এই অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। যতক্ষণ টিকেট থাকবে, ততক্ষণ যাত্রীরা টিকেট পাবেন। কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও টিকেট দেয়া হচ্ছে।’

তবে ১৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করে এসি টিকেট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আশরাফুল নামের রংপুরের এক যাত্রী বলেন, ‘নীলসাগর এক্সপ্রেসের দুটি এসির টিকেটের জন্য গতকাল সন্ধ্যা থেকে কমলাপুরে অপেক্ষা করেছি। কিন্তু লাইনের প্রথমদিকে থাকার পরর এসি টিকেট পাইনি। এসির টিকেট তো আসলে কাউন্টারেও পাওয়া যায় না, অনলাইনেও পাওয়া যায় না। গতকাল অনলাইনে চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। আজ এজন্য কাউন্টারে টিকেট নিতে এসেছি, কিন্তু এসির টিকেট পাইনি। টিকেটের অর্ধেক অনলাইনে, অর্ধেক কাউন্টারে। কাউন্টারে প্রথম ১০ থেকে ১২ জনের পরই বলে এসি টিকেট শেষ।’ ১৫ মিনিটের ব্যবধানে এত এসি টিকেট গেল কই বলে প্রশ্ন করেন তিনি।

পারভীন নামে অন্য এক যাত্রী জানান, তিনি ভোর রাত থেকে অপেক্ষা করে টিকেট পেয়েছেন রংপুরের। পরিবারের চারজনের টিকেট নিয়েছেন তিনি।

অগ্রিম টিকেট কাটার সময় যাত্রীদের এনআইডি বা জন্মসনদের ফটোকপি দেখাতে হচ্ছে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারজনের টিকেট কিনতে পারছেন। সেক্ষেত্রে তাকে অন্য তিনজনেরও এনআইডি বা জন্মসনদ দেখাতে হচ্ছে। এতে একটু সময় বেশি লাগছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কমলাপুরে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘কোন কোন পথের ট্রেনে টিকেট ৭০০টি। এর মধ্যে কাউন্টারে ৩৫০ টিকেট। কিন্তু মানুষ টিকেটের সারিতে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার। এত চাপ নেয়া কঠিন। যেহেতু আসন সংখ্যা সীমিত, তাই সীমিত সংখ্যক যাত্রীকেই টিকেট দিতে পারব। এছাড়া মানুষ টিকেট পাওয়ার জন্য ভোরে বা রাতে এসে দাঁড়িয়েছে। যাত্রীর এনআইডি নম্বর নেয়া হচ্ছে। টিকেট কাটতে গিয়ে একজন যাত্রীর জন্য অনেক অপশন থাকায় সময় নিতে হচ্ছে, যার ফলে দেরি হচ্ছে।’

রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ২২ রমাদ্বান ১৪৪৩

রেলের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু, অপেক্ষার পর অপেক্ষা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ট্রেনের অগ্রিম টিকেট নিতে গতকাল প্রথমদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে দীর্ঘ লাইন -সংবাদ

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। প্রথম দিন আগামী ২৭ এপ্রিলের যাত্রার টিকেট বিক্রি করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টায় রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দরসহ ৫টি স্টেশন থেকে একযোগে বিক্রি করা হয় এই অগ্রিম টিকেট। তবে বিক্রি শুরুর ৫ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় অগ্রিম টিকেট।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ১৪-১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও এসি টিকেট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে, অনেক যাত্রীদের। এছাড়া টিকেট সংগ্রহের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জন্ম সনদের ফটোকপি চেকিং করতে কিছু সময় বেশি লেগেছে বলে যাত্রীরা জানান।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বিশেষ ব্যবস্থাপনায় গতকাল থেকে ঢাকার পাঁচটি স্টেশন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা কমলাপুর স্টেশনে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চল? ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকেট বিক্রি করা হয়, ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রি করা হয়। তেজগাঁও স্টেশনে ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রি করা হয়, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের এবং ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হয়।

গতকাল বিক্রি করা হয়েছে আগামী ২৭ এপ্রিলের যাত্রার টিকেট। আজ বিক্রি হবে ২৮ এপ্রিলের যাত্রার টিকেট, ২৫ এপ্রিল ২৯ এপ্রিলের, ২৬ এপ্রিল ৩০ এপ্রিলের এবং ২৭ এপ্রিল ১ মের যাত্রার অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে। এছাড়া ঈদের পর ফিরতি ট্রেনের জন্য আগামী ১ মে বিক্রি করা হবে ৫ মে’র যাত্রারা টিকেট, ২ মে বিক্রি হবে ৬ মে’র টিকেট, ৩ মে বিক্রি হবে ৭ মে’র টিকেট, ৪ মে বিক্রি হবে ৮ মে’র টিকেট।

এ বিষয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ২৭ হাজার অগ্রিম টিকেট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এই টিকেটের অর্ধেক স্টেশনের কাউন্টারে এবং বাকি অর্ধেক অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। পাঁচটি স্টেশনে এই অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। যতক্ষণ টিকেট থাকবে, ততক্ষণ যাত্রীরা টিকেট পাবেন। কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও টিকেট দেয়া হচ্ছে।’

তবে ১৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করে এসি টিকেট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আশরাফুল নামের রংপুরের এক যাত্রী বলেন, ‘নীলসাগর এক্সপ্রেসের দুটি এসির টিকেটের জন্য গতকাল সন্ধ্যা থেকে কমলাপুরে অপেক্ষা করেছি। কিন্তু লাইনের প্রথমদিকে থাকার পরর এসি টিকেট পাইনি। এসির টিকেট তো আসলে কাউন্টারেও পাওয়া যায় না, অনলাইনেও পাওয়া যায় না। গতকাল অনলাইনে চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। আজ এজন্য কাউন্টারে টিকেট নিতে এসেছি, কিন্তু এসির টিকেট পাইনি। টিকেটের অর্ধেক অনলাইনে, অর্ধেক কাউন্টারে। কাউন্টারে প্রথম ১০ থেকে ১২ জনের পরই বলে এসি টিকেট শেষ।’ ১৫ মিনিটের ব্যবধানে এত এসি টিকেট গেল কই বলে প্রশ্ন করেন তিনি।

পারভীন নামে অন্য এক যাত্রী জানান, তিনি ভোর রাত থেকে অপেক্ষা করে টিকেট পেয়েছেন রংপুরের। পরিবারের চারজনের টিকেট নিয়েছেন তিনি।

অগ্রিম টিকেট কাটার সময় যাত্রীদের এনআইডি বা জন্মসনদের ফটোকপি দেখাতে হচ্ছে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারজনের টিকেট কিনতে পারছেন। সেক্ষেত্রে তাকে অন্য তিনজনেরও এনআইডি বা জন্মসনদ দেখাতে হচ্ছে। এতে একটু সময় বেশি লাগছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কমলাপুরে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘কোন কোন পথের ট্রেনে টিকেট ৭০০টি। এর মধ্যে কাউন্টারে ৩৫০ টিকেট। কিন্তু মানুষ টিকেটের সারিতে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার। এত চাপ নেয়া কঠিন। যেহেতু আসন সংখ্যা সীমিত, তাই সীমিত সংখ্যক যাত্রীকেই টিকেট দিতে পারব। এছাড়া মানুষ টিকেট পাওয়ার জন্য ভোরে বা রাতে এসে দাঁড়িয়েছে। যাত্রীর এনআইডি নম্বর নেয়া হচ্ছে। টিকেট কাটতে গিয়ে একজন যাত্রীর জন্য অনেক অপশন থাকায় সময় নিতে হচ্ছে, যার ফলে দেরি হচ্ছে।’