হাওরে পানি কমছে, দুর্ভোগ কমেনি কৃষকের

সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। কৃষকদের আতঙ্ক ও দুর্ভোগ কমছে না। গত দুই সপ্তাহ যাবত পাহাড়ি ঢল নেমে নদ-নদী থেকে গিয়ে হাওরগুলোতে পানি প্রবেশ করে। এতে সুনামগঞ্জ জেলার অন্তত ২০টি ছোট বড় হাওরে পানি প্রবেশ করে ফসল তলিয়ে গেছে। ঝুঁকির মধ্যে আছে অনেক হাওর। দীর্ঘদিন বাঁধের পাশে পানি জমে থাকায় বাঁধগুলো নরম হয়ে আছে। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙে কৃষকের সোনার ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

বিভিন্ন হাওরের কৃষক গণবাঁধের ওপরই দিন ও রাত কাটাচ্ছেন। শুধু কৃষক নয় ইউএনও, এসিল্যান্ড, পাউবোর এসওসহ অন্য কর্মকর্তারা বাঁধে বাঁধেই থাকছেন। অনেক কৃষক ছেলে মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। কখন জানি বাঁধ ভেঙে যায় সেই আতঙ্কে। কোন সময় বাঁধ চুইয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করলে উড়া কোদাল বাঁশ নিয়ে শত শত নারী-পুরুষ বাঁধ মেরামত কাজে নেমে পড়েন। বেশি সমস্যা হলে বাঁধের পাশের গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে মানুষ বাঁধ নির্মাণের জন্য চলে আসে। গত ১৫/ ২০ দিন যাবত এভাবেই কাটছে হাওর পাড়ের কৃষকদের জীবন।

কৃষকরা জানান এরকম কম পাকা ধান কর্তন করে তেমন লাভবান হবেন না। উপযুক্ত মূল্য ও পাবেন না। তারপরও পানি আসার ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে ধান কর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সমসার হাওরের পাড়ের বাসিন্দা আবদুল সামাদ বলেন কয়েক হাল জমি চাষাবাদ করি কিছু পানিতে তলিয়ে গেছে কিছু কর্তন করি। কিন্ত ফলন বা ধানের মান ভালো না। এগুলো ভালো দরে বিক্রি করা যাবে না।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন এ পর্যন্ত অন্তত ২০টি হাওরের পানিতে ফসল তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ৩০ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার পরিমাণে ৩শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল ৩০ ভাগ কর্তন হয়েছে তাও আবার আধাপাকা।

সুনামগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাওরের ১৯টিতে পানি প্রবেশ করেছে। ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অন্তত ২০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি আরও জানান এ পর্যন্ত হাওর এলাকায় ১ লাখ ৬ হাজার হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে যা শতকরা ৬৪ ভাগ। হাওরের বাইরে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর কর্তন হয়েছে যা শতকরা ১০ ভাগ।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ১ জহুরুল ইসলাম জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতার মধ্যে ৪টি বাঁধ ভেঙেছে। এগুলো হলো তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওরের গুরমার হাওরের বর্ধিত অংশ। ধর্ম পাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল দিরাই উপজেলার চাপতির হাওর ও হুরা মন্দিরা হাওর। তিনি আরও জানান ক্ষতির পরিমাণ হাওরে ৩ হাজার হেক্টর আর হাওরের বাইরে ২ হাজার হেক্টর হতে পারে। হাওরের পানি খুবই ধীর গতিতে নামছে। দীর্ঘদিন ধরেই বাঁধের গোড়াতে পানি জমে থাকার কারণে চরম ঝুঁকির মধ্যেই আছে। যেকোন সময় বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা ও করছেন এই কর্মকর্তা।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান হাওরের পানি কিছু কমছে তবে খুব ধীর গতিতে। বাঁধ সুরক্ষিত রাখতে ও ধান কর্তন করতে সার্বক্ষণিক হাওরের কৃষকদের পাশেই আছি।

রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ২২ রমাদ্বান ১৪৪৩

হাওরে পানি কমছে, দুর্ভোগ কমেনি কৃষকের

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ

image

সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। কৃষকদের আতঙ্ক ও দুর্ভোগ কমছে না। গত দুই সপ্তাহ যাবত পাহাড়ি ঢল নেমে নদ-নদী থেকে গিয়ে হাওরগুলোতে পানি প্রবেশ করে। এতে সুনামগঞ্জ জেলার অন্তত ২০টি ছোট বড় হাওরে পানি প্রবেশ করে ফসল তলিয়ে গেছে। ঝুঁকির মধ্যে আছে অনেক হাওর। দীর্ঘদিন বাঁধের পাশে পানি জমে থাকায় বাঁধগুলো নরম হয়ে আছে। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙে কৃষকের সোনার ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

বিভিন্ন হাওরের কৃষক গণবাঁধের ওপরই দিন ও রাত কাটাচ্ছেন। শুধু কৃষক নয় ইউএনও, এসিল্যান্ড, পাউবোর এসওসহ অন্য কর্মকর্তারা বাঁধে বাঁধেই থাকছেন। অনেক কৃষক ছেলে মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। কখন জানি বাঁধ ভেঙে যায় সেই আতঙ্কে। কোন সময় বাঁধ চুইয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করলে উড়া কোদাল বাঁশ নিয়ে শত শত নারী-পুরুষ বাঁধ মেরামত কাজে নেমে পড়েন। বেশি সমস্যা হলে বাঁধের পাশের গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে মানুষ বাঁধ নির্মাণের জন্য চলে আসে। গত ১৫/ ২০ দিন যাবত এভাবেই কাটছে হাওর পাড়ের কৃষকদের জীবন।

কৃষকরা জানান এরকম কম পাকা ধান কর্তন করে তেমন লাভবান হবেন না। উপযুক্ত মূল্য ও পাবেন না। তারপরও পানি আসার ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে ধান কর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সমসার হাওরের পাড়ের বাসিন্দা আবদুল সামাদ বলেন কয়েক হাল জমি চাষাবাদ করি কিছু পানিতে তলিয়ে গেছে কিছু কর্তন করি। কিন্ত ফলন বা ধানের মান ভালো না। এগুলো ভালো দরে বিক্রি করা যাবে না।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন এ পর্যন্ত অন্তত ২০টি হাওরের পানিতে ফসল তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ৩০ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার পরিমাণে ৩শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল ৩০ ভাগ কর্তন হয়েছে তাও আবার আধাপাকা।

সুনামগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাওরের ১৯টিতে পানি প্রবেশ করেছে। ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অন্তত ২০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি আরও জানান এ পর্যন্ত হাওর এলাকায় ১ লাখ ৬ হাজার হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে যা শতকরা ৬৪ ভাগ। হাওরের বাইরে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর কর্তন হয়েছে যা শতকরা ১০ ভাগ।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ১ জহুরুল ইসলাম জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতার মধ্যে ৪টি বাঁধ ভেঙেছে। এগুলো হলো তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওরের গুরমার হাওরের বর্ধিত অংশ। ধর্ম পাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল দিরাই উপজেলার চাপতির হাওর ও হুরা মন্দিরা হাওর। তিনি আরও জানান ক্ষতির পরিমাণ হাওরে ৩ হাজার হেক্টর আর হাওরের বাইরে ২ হাজার হেক্টর হতে পারে। হাওরের পানি খুবই ধীর গতিতে নামছে। দীর্ঘদিন ধরেই বাঁধের গোড়াতে পানি জমে থাকার কারণে চরম ঝুঁকির মধ্যেই আছে। যেকোন সময় বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা ও করছেন এই কর্মকর্তা।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান হাওরের পানি কিছু কমছে তবে খুব ধীর গতিতে। বাঁধ সুরক্ষিত রাখতে ও ধান কর্তন করতে সার্বক্ষণিক হাওরের কৃষকদের পাশেই আছি।