ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে, ইউক্রেন এই যুদ্ধে জিতবে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিজয়ী হবে।’ সিএনএন-এর সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। টানা দুই মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ সেনাদের তীব্র হামলায় পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিয়েভের পক্ষ থেকেও বার বার উঠছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবও। এই পরিস্থিতে এমন মন্তব্য করলেন শ্যামিহাল।
এদিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর একজন ডেপুটি কমান্ডার বলেছেন, সামরিক অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায়ে ডনবাস এবং ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে মস্কো। তবে পরিকল্পনার বিস্তারিত জানাননি এই কমান্ডার। ডনবাসের লুহানস্ক এবং ডোনেস্কে ইতোমধ্যেই হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। ইউক্রেন জানিয়েছে, এরইমধ্যে লুহানস্কের ৮০ শতাংশ জায়গার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ বাহিনী। তবে ডনবাস ও ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার রুশ পরিকল্পনা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিয়েভের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকতে পারে বলে ‘বাস্তব সম্ভাবনা’ রয়েছে। মূলত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরই যুদ্ধে শিগগিরই ইউক্রেনের জয়লাভ নিয়ে মন্তব্য করেন ইউক্রেনীয় প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শামিহাল।
প্রধানমন্ত্রী শামিহাল বলেছেন, তিনি আশা করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে তার দূতাবাস পুনরায় চালু করবে। তবে ঠিক কবে সেটি চালু হতে পারে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
ওয়াশিংটন সফর শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা সময় দূতাবাস পুনরায় চালুর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কি না; এমন প্রশ্নের জবাবে ডেনিস শামিহাল বলেন, ‘এটি অবশ্যই চালু হবে। তবে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।’
অন্য দেশও দখল করতে
চায় রাশিয়া : জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশে রাশিয়ার আগ্রাসন মাত্র শুরু এবং (ইউক্রেনের পর) অন্যান্য দেশগুলোকেও দখল করার পরিকল্পনা রয়েছে মস্কোর। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের মতো যেসব জাতি মৃত্যুর চেয়ে জীবনের জয়ে বিশ্বাসী, তাদের অবশ্যই আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। তাদের অবশ্যই আমাদের সাহায্য করতে হবে, কারণ আমরা (রুশ হামলার) লাইনে প্রথম। এবং পরবর্তী টার্গেট কে?’
রুশ সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল মিলিটারি ডিস্ট্রিক্টের ডেপুটি কমান্ডার মেজর জেনারেল রুস্তম মিনেকায়েভ বলেছেন, দক্ষিণ ইউক্রেনের ওপর মস্কোর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাশিয়াকে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলে প্রবেশাধিকার দেবে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী মলদোভার ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলটি মূলত একটি রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকা।
সেভারডলভস্ক অঞ্চলে একটি সামরিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় জেনারেল রুস্তম মিনেকায়েভ দাবি করেন, ‘ট্রান্সনিস্ট্রিয়ায় যাওয়ার আরেকটি উপায় হচ্ছে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। কারণ ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলে রুশ-ভাষী জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে।’
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এই ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা সমগ্র উপকূল রেখা থেকে ইউক্রেনকে বিচ্ছিন্ন করবে এবং বর্তমান লাইনের বাইরেও ইউক্রেনীয় বাহিনীকে শত শত মাইল পশ্চিমে ঠেলে দেবে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জেনারেল মিনেকায়েভের এই মন্তব্যকে রুশ ‘সাম্রাজ্যবাদ’ বলে আখ্যায়িত করে নিন্দা জানিয়েছে। পরে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জেনারেল মিনেকায়েভের বক্তব্যে এটিই স্পষ্ট যে, রাশিয়া এখন আর নিজের উদ্দেশ্য গোপন করছে না।
জেলেনস্কি বলেন, রুশ জেনারেলের এই বক্তব্যে এটিই বোঝা যায় যে, রাশিয়া অন্যান্য দেশে আক্রমণ করতে চায় এবং ইউক্রেনের ওপর তাদের আক্রমণ তো কেবল শুরু। তার দাবি, ‘আমি এতোদিন যা বলে এসেছি, রুশ জেনারেলের বক্তব্যে ঠিক সেটিই উঠে এসেছে যে, ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসন ছিল কেবল একটি সূচনা, এরপরে তারা অন্যান্য দেশগুলোকেও দখল করতে চায়।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ান ফেডারেশনের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে চূর্ণ করতে যতক্ষণ প্রয়োজন আমরা অবশ্যই নিজেদের রক্ষা করে যাবো। কিন্তু আমাদের মতো যেসব জাতি মৃত্যুর চেয়ে জীবনের জয়ে বিশ্বাসী, তাদের অবশ্যই আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। তাদের আমাদের সাহায্য করতে হবে, কারণ আমরা এই পথে প্রথম।
এবং (রাশিয়ার) পরবর্তী টার্গেট কে?’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো কিছু না হারানোর ভয়ে যারা আজ নিরপেক্ষ থাকতে চায়, তাদের কেউই হয়তো রাশিয়ার পরবর্তী টার্গেট হতে পারে। এটি (নিরপেক্ষ থাকতে চাওয়া দেশগুলোর এখনকার মনোভাব) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাজি। কারণ তারা সব হারাবে।’
রুশ হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকা। বোরোদিয়াঙ্কায় বোমা হামলায় বিধ্বস্ত একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং -ডেইলি মেইল
আরও খবররবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ২২ রমাদ্বান ১৪৪৩
রুশ হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকা। বোরোদিয়াঙ্কায় বোমা হামলায় বিধ্বস্ত একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং -ডেইলি মেইল
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে, ইউক্রেন এই যুদ্ধে জিতবে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিজয়ী হবে।’ সিএনএন-এর সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। টানা দুই মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ সেনাদের তীব্র হামলায় পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিয়েভের পক্ষ থেকেও বার বার উঠছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবও। এই পরিস্থিতে এমন মন্তব্য করলেন শ্যামিহাল।
এদিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর একজন ডেপুটি কমান্ডার বলেছেন, সামরিক অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায়ে ডনবাস এবং ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে মস্কো। তবে পরিকল্পনার বিস্তারিত জানাননি এই কমান্ডার। ডনবাসের লুহানস্ক এবং ডোনেস্কে ইতোমধ্যেই হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। ইউক্রেন জানিয়েছে, এরইমধ্যে লুহানস্কের ৮০ শতাংশ জায়গার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ বাহিনী। তবে ডনবাস ও ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার রুশ পরিকল্পনা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিয়েভের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকতে পারে বলে ‘বাস্তব সম্ভাবনা’ রয়েছে। মূলত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরই যুদ্ধে শিগগিরই ইউক্রেনের জয়লাভ নিয়ে মন্তব্য করেন ইউক্রেনীয় প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শামিহাল।
প্রধানমন্ত্রী শামিহাল বলেছেন, তিনি আশা করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে তার দূতাবাস পুনরায় চালু করবে। তবে ঠিক কবে সেটি চালু হতে পারে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
ওয়াশিংটন সফর শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা সময় দূতাবাস পুনরায় চালুর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কি না; এমন প্রশ্নের জবাবে ডেনিস শামিহাল বলেন, ‘এটি অবশ্যই চালু হবে। তবে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।’
অন্য দেশও দখল করতে
চায় রাশিয়া : জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশে রাশিয়ার আগ্রাসন মাত্র শুরু এবং (ইউক্রেনের পর) অন্যান্য দেশগুলোকেও দখল করার পরিকল্পনা রয়েছে মস্কোর। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের মতো যেসব জাতি মৃত্যুর চেয়ে জীবনের জয়ে বিশ্বাসী, তাদের অবশ্যই আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। তাদের অবশ্যই আমাদের সাহায্য করতে হবে, কারণ আমরা (রুশ হামলার) লাইনে প্রথম। এবং পরবর্তী টার্গেট কে?’
রুশ সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল মিলিটারি ডিস্ট্রিক্টের ডেপুটি কমান্ডার মেজর জেনারেল রুস্তম মিনেকায়েভ বলেছেন, দক্ষিণ ইউক্রেনের ওপর মস্কোর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাশিয়াকে ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলে প্রবেশাধিকার দেবে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী মলদোভার ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলটি মূলত একটি রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকা।
সেভারডলভস্ক অঞ্চলে একটি সামরিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় জেনারেল রুস্তম মিনেকায়েভ দাবি করেন, ‘ট্রান্সনিস্ট্রিয়ায় যাওয়ার আরেকটি উপায় হচ্ছে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। কারণ ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলে রুশ-ভাষী জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে।’
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এই ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা সমগ্র উপকূল রেখা থেকে ইউক্রেনকে বিচ্ছিন্ন করবে এবং বর্তমান লাইনের বাইরেও ইউক্রেনীয় বাহিনীকে শত শত মাইল পশ্চিমে ঠেলে দেবে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জেনারেল মিনেকায়েভের এই মন্তব্যকে রুশ ‘সাম্রাজ্যবাদ’ বলে আখ্যায়িত করে নিন্দা জানিয়েছে। পরে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জেনারেল মিনেকায়েভের বক্তব্যে এটিই স্পষ্ট যে, রাশিয়া এখন আর নিজের উদ্দেশ্য গোপন করছে না।
জেলেনস্কি বলেন, রুশ জেনারেলের এই বক্তব্যে এটিই বোঝা যায় যে, রাশিয়া অন্যান্য দেশে আক্রমণ করতে চায় এবং ইউক্রেনের ওপর তাদের আক্রমণ তো কেবল শুরু। তার দাবি, ‘আমি এতোদিন যা বলে এসেছি, রুশ জেনারেলের বক্তব্যে ঠিক সেটিই উঠে এসেছে যে, ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসন ছিল কেবল একটি সূচনা, এরপরে তারা অন্যান্য দেশগুলোকেও দখল করতে চায়।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ান ফেডারেশনের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে চূর্ণ করতে যতক্ষণ প্রয়োজন আমরা অবশ্যই নিজেদের রক্ষা করে যাবো। কিন্তু আমাদের মতো যেসব জাতি মৃত্যুর চেয়ে জীবনের জয়ে বিশ্বাসী, তাদের অবশ্যই আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। তাদের আমাদের সাহায্য করতে হবে, কারণ আমরা এই পথে প্রথম।
এবং (রাশিয়ার) পরবর্তী টার্গেট কে?’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো কিছু না হারানোর ভয়ে যারা আজ নিরপেক্ষ থাকতে চায়, তাদের কেউই হয়তো রাশিয়ার পরবর্তী টার্গেট হতে পারে। এটি (নিরপেক্ষ থাকতে চাওয়া দেশগুলোর এখনকার মনোভাব) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাজি। কারণ তারা সব হারাবে।’