বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর লড়াই অব্যাহত

আগের দিনগুলোর মতো ২৪ এপ্রিলও দেশের নানা স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই অব্যাহত থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের করেরহাটে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করে তাদের গতি শ্লথ করে দেয়। রাঙামাটি থেকে মহালছড়ির দিকে আসা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় কুতুবছড়িতে। এতে পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া এদিনে পাকিস্তানি সেনারা মাদারীপুর শহরে ঢুকেই বিভিন্ন বাড়িতে আগুন দেয়।

পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট, বাঙালিপুর, টিয়রপাড়া ও মধুপুরে ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য বাছাইপ্রক্রিয়া শুরু হয়। এইদিন ভারত- পাকিস্তান একটি ফ্ল্যাগ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পাকিস্তানিরা ভারতে আশ্রয় নেয়া ইপিআরের সদস্যদের তাদের হাতে সমর্পণ করতে চাপ দেয়। ভারতের বিএসএফের কর্মকর্তারা বলেন, ইপিআর সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।

এদিন পাকিস্তানি সেনারা যমোরের বেনাপোল দিয়ে ভারত সীমান্তের ভেতরে বনগাঁয়ে মুক্তিবাহিনীর শিবিরে মর্টার হামলা চালায়। কিছু গোলা ভারতীয় এলাকার ভেতরেও পড়ে। এ ঘটনার খবরে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় বলা হয়, ‘ভারতীয় সীমান্ত বনগাঁর কাছে শনিবার সকালে পাকিস্তানি গোলা এসে পড়েছে। তা ছাড়া এক কোম্পানি পাকফৌজ নিষিদ্ধ সীমার পাঁচ কিলোমিটার ভিতরে এসে পেট্রাপোলে রেললাইনের কাছে অবস্থান নিয়ে শনিবার বিকেল চারটে থেকে এক ঘণ্টা ধরে ভারতীয় গ্রামগুলোর ওপর গুলি চালায়।’

নয়াদিল্লি থেকে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম বলেন, ভারতীয় এলাকায় পাকিস্তানের কোন সামরিক অভিযান সহ্য করা হবে না। এছাড়া ভারতের বহির্বিষয়ক মন্ত্রণালয় পাকিস্তান হাইকমিশনকে ঘটনার প্রতিবাদে কড়া নোট পাঠায়।

ভারতের মুম্বাইয়ে এ দিনে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বাংলাদেশ সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির উদ্দেশ হলো বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষদের সাহায্য করা। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় হরিশ হীন্দ্রকে। ভাইস চেয়ারম্যান হন ওয়াহিদা রহমান ও শর্মিলা ঠাকুর।

এদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেয়, ভারতে চলে যাওয়া বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যাপকদের অন্তত ছয় মাসের জন্য ‘পরিদর্শক শিক্ষক’ হিসেবে নিয়োগ দেবে।

এদিন পাকিস্তানের সরকারের এক হ্যান্ডআউটে বলা হয়, নিউমার্কেট, বায়তুল মোকাররমসহ ঢাকা শহরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ চলছে। সর্বত্র বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করায় মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে।

ঢাকার মিরপুরে এক সভায় ২৫ সদস্যের শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটির ১৮টি ইউনিট আহ্বায়কের নামও ঘোষণা করা হয়।

দেশের নানা স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই অব্যাহত থাকে। পূর্বাঞ্চলে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের করেরহাটে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করে তাদের গতি শ্লথ করে দেয়। অন্যদিকে রাঙামাটি থেকে মহালছড়ির দিকে আসা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় কুতুবছড়িতে। এতে পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়।

ব্রিটেনের কমনস সভার সদস্য উড্রো ওয়াট এদিন কমনস সভায় বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে যেসব ঘটনা ঘটছে, তা অত্যন্ত জঘন্য। পাকিস্তানি নির্মমতার বিষয়টি জাতিসংঘে কেন ব্রিটিশ সরকার উপস্থাপন করছে না, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ২২ রমাদ্বান ১৪৪৩

২৪ এপ্রিল ১৯৭১

বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর লড়াই অব্যাহত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আগের দিনগুলোর মতো ২৪ এপ্রিলও দেশের নানা স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই অব্যাহত থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের করেরহাটে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করে তাদের গতি শ্লথ করে দেয়। রাঙামাটি থেকে মহালছড়ির দিকে আসা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় কুতুবছড়িতে। এতে পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া এদিনে পাকিস্তানি সেনারা মাদারীপুর শহরে ঢুকেই বিভিন্ন বাড়িতে আগুন দেয়।

পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট, বাঙালিপুর, টিয়রপাড়া ও মধুপুরে ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য বাছাইপ্রক্রিয়া শুরু হয়। এইদিন ভারত- পাকিস্তান একটি ফ্ল্যাগ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পাকিস্তানিরা ভারতে আশ্রয় নেয়া ইপিআরের সদস্যদের তাদের হাতে সমর্পণ করতে চাপ দেয়। ভারতের বিএসএফের কর্মকর্তারা বলেন, ইপিআর সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।

এদিন পাকিস্তানি সেনারা যমোরের বেনাপোল দিয়ে ভারত সীমান্তের ভেতরে বনগাঁয়ে মুক্তিবাহিনীর শিবিরে মর্টার হামলা চালায়। কিছু গোলা ভারতীয় এলাকার ভেতরেও পড়ে। এ ঘটনার খবরে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় বলা হয়, ‘ভারতীয় সীমান্ত বনগাঁর কাছে শনিবার সকালে পাকিস্তানি গোলা এসে পড়েছে। তা ছাড়া এক কোম্পানি পাকফৌজ নিষিদ্ধ সীমার পাঁচ কিলোমিটার ভিতরে এসে পেট্রাপোলে রেললাইনের কাছে অবস্থান নিয়ে শনিবার বিকেল চারটে থেকে এক ঘণ্টা ধরে ভারতীয় গ্রামগুলোর ওপর গুলি চালায়।’

নয়াদিল্লি থেকে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম বলেন, ভারতীয় এলাকায় পাকিস্তানের কোন সামরিক অভিযান সহ্য করা হবে না। এছাড়া ভারতের বহির্বিষয়ক মন্ত্রণালয় পাকিস্তান হাইকমিশনকে ঘটনার প্রতিবাদে কড়া নোট পাঠায়।

ভারতের মুম্বাইয়ে এ দিনে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বাংলাদেশ সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির উদ্দেশ হলো বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষদের সাহায্য করা। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় হরিশ হীন্দ্রকে। ভাইস চেয়ারম্যান হন ওয়াহিদা রহমান ও শর্মিলা ঠাকুর।

এদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেয়, ভারতে চলে যাওয়া বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যাপকদের অন্তত ছয় মাসের জন্য ‘পরিদর্শক শিক্ষক’ হিসেবে নিয়োগ দেবে।

এদিন পাকিস্তানের সরকারের এক হ্যান্ডআউটে বলা হয়, নিউমার্কেট, বায়তুল মোকাররমসহ ঢাকা শহরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ চলছে। সর্বত্র বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করায় মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে।

ঢাকার মিরপুরে এক সভায় ২৫ সদস্যের শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটির ১৮টি ইউনিট আহ্বায়কের নামও ঘোষণা করা হয়।

দেশের নানা স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই অব্যাহত থাকে। পূর্বাঞ্চলে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের করেরহাটে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করে তাদের গতি শ্লথ করে দেয়। অন্যদিকে রাঙামাটি থেকে মহালছড়ির দিকে আসা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় কুতুবছড়িতে। এতে পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়।

ব্রিটেনের কমনস সভার সদস্য উড্রো ওয়াট এদিন কমনস সভায় বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে যেসব ঘটনা ঘটছে, তা অত্যন্ত জঘন্য। পাকিস্তানি নির্মমতার বিষয়টি জাতিসংঘে কেন ব্রিটিশ সরকার উপস্থাপন করছে না, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।