পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানিতে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পানির নিচে

ফসল, দিশেহারা কৃষক

সোনালি ধানে যখন বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ভরে উঠেছিল তখন আকষ্মিক পাহাড়ি ঢল কেড়ে নেয় কৃষকের হাসি। বাধ্য হয়ে কাঁচা ও আধাপাকা ধান কেটে নেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। এতে কাক্সিক্ষত ফলন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে এখন হতাশার ছাপ। জানা যায়, আকষ্মিক পানি বেড়ে যাওয়ায় নাসিরনগর উপজেলার লঙ্গন ও মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষা নিচু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। নাসিরনগর সদর, ভলাকুট, বুড়িশ্বর ও গোয়ালনগরসহ অন্তত ৬টি ইউনিয়নের হাওর এলাকার জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে কৃষকরা নির্ধারিত সময়ের আগেই জমির কাঁচা ও আধাপাকা ফসল কাটতে বাধ্য হচ্ছে। আবাদকৃত বিআর-২৮ ও ২৯ ধান তলিয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই জমির ধান কেটে নিচ্ছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন কানিপ্রতি জমি আবাদ করতে তাদের খরচ হয়েছে ৫/৬ হাজার টাকা। অসময়ে ধান কাটতে বাধ্য হওয়ায় কাক্সিক্ষত ফলন পাবেন না। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন তারা দিশেহারা। কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বিজয় ঋষির সঙ্গে তিনি জানান, ঢাকার মতিঝিল এলাকায় জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন তিনি। করোনায় তার কপাল পোড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গ্রামের বাড়ি কামারগাঁওয়ে ফিরে জমি বর্গা নেন। আশায় ছিলেন ভালো কিছুর। কিন্তু বিধি বাম। মেদির হাওরে থাকা সেই ১৫ কানি ধান তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। বিজয়ের চিন্তা এখন ধার-দেনা নিয়ে। কথায় তার বেশ চিন্তার ছাপ।

রূপন দাসের সংসার চলে মাছ ধরে আর জমির ফসল বিক্রির টাকায়। একমাত্র ছেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় বাড়তি খরচের চিন্তা। তবে ধানের ফলন ভালো হওয়ায় বেশ আশায় ছিলেন। সেই আশায় গুড়েবালি। কাটার আগ মুহূর্তে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার কথা স্ত্রীকে বলতে গিয়ে চোখ ছলছল করছিল রূপনের।

বিজয় আর রূপনের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার দুই হাজারেরর বেশি কৃষকের স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। উপজেলার মেদির হাওর, আকাশি হাওর, আটাউড়ি বিল, বালিয়া বিলসহ বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমির মাঠ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সরকারি হিসেব মতে, ৩৫০ হেক্টর ধানের জমি তলিয়ে গেছে। তবে কৃষকরা বলছেন, হাজার হেক্টর জমি এখন পানির নিচে। গত দু’দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।

হাওর পাড়ের কৃষক জিলু চৌধুরী জানান, তার পরিবারের ৭০ কানি ধানি ফসলি জমি এখন পানির নিচে। কৃষি বিভাগ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছে শুনলেও তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৩১২ হেক্টর। শিলাবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে উপজেলার ২৭০ হেক্টর বোরো ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২ হাজার ৫০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর সুনামগঞ্জের উজান থেকে নেমে আসা পানি জেলার তিতাস নদী দিয়ে বিভিন্ন উপজেলার ফসলি জমিতে নেমেছে। এই পানি মেঘনা নদী দিয়ে সরে যাওয়ার কথা। কিন্তু কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বাঁধের কারণে এই পানি সরতে পারেনি। এতেই কৃষকের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ তারেক জানান, তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রণয়ন কাজ শুরু করছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সহায়তা নিয়ে দুই হাজার ৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান শাওন জানান, হাওর পাড়ে মাইকিং করে কৃষককে ৮০ ভাগ পরিপক্ক ধান কেটে আনার জন্য বলা হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে।

image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হাওরে পানির মধ্যে ধান কাটছে কৃষক -সংবাদ

আরও খবর
আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ব্যবস্থাপনার ওপর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ
বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর লড়াই অব্যাহত
বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুই বছরে দুই শতাধিক মামলা
স্ত্রীর ওপর জেদ করে প্রতিবন্ধী শ্যালককে অপহরণ, মুক্তিপণ চেয়ে ফোন
আ’লীগের বর্ধিত সভায় ২ নেতাকে পিটিয়ে ফের আলোচনায় বদি
ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পাচ্ছেন ৩২ হাজার ৯০৪ গৃহহীন
পৌরসভার ‘সচিব’ পদ এখন ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’
ফরিদপুরের আলোচিত জোড়া খুনের প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
খাগড়াছড়িতে ইটভাটায় চলছে অভিযান, বন্ধ ২টি
টাঙ্গাইল তাঁতপল্লী ও শাড়ির বাজার

রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ২২ রমাদ্বান ১৪৪৩

পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানিতে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পানির নিচে

ফসল, দিশেহারা কৃষক

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হাওরে পানির মধ্যে ধান কাটছে কৃষক -সংবাদ

সোনালি ধানে যখন বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ভরে উঠেছিল তখন আকষ্মিক পাহাড়ি ঢল কেড়ে নেয় কৃষকের হাসি। বাধ্য হয়ে কাঁচা ও আধাপাকা ধান কেটে নেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। এতে কাক্সিক্ষত ফলন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে এখন হতাশার ছাপ। জানা যায়, আকষ্মিক পানি বেড়ে যাওয়ায় নাসিরনগর উপজেলার লঙ্গন ও মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষা নিচু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। নাসিরনগর সদর, ভলাকুট, বুড়িশ্বর ও গোয়ালনগরসহ অন্তত ৬টি ইউনিয়নের হাওর এলাকার জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে কৃষকরা নির্ধারিত সময়ের আগেই জমির কাঁচা ও আধাপাকা ফসল কাটতে বাধ্য হচ্ছে। আবাদকৃত বিআর-২৮ ও ২৯ ধান তলিয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই জমির ধান কেটে নিচ্ছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন কানিপ্রতি জমি আবাদ করতে তাদের খরচ হয়েছে ৫/৬ হাজার টাকা। অসময়ে ধান কাটতে বাধ্য হওয়ায় কাক্সিক্ষত ফলন পাবেন না। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন তারা দিশেহারা। কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বিজয় ঋষির সঙ্গে তিনি জানান, ঢাকার মতিঝিল এলাকায় জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন তিনি। করোনায় তার কপাল পোড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গ্রামের বাড়ি কামারগাঁওয়ে ফিরে জমি বর্গা নেন। আশায় ছিলেন ভালো কিছুর। কিন্তু বিধি বাম। মেদির হাওরে থাকা সেই ১৫ কানি ধান তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। বিজয়ের চিন্তা এখন ধার-দেনা নিয়ে। কথায় তার বেশ চিন্তার ছাপ।

রূপন দাসের সংসার চলে মাছ ধরে আর জমির ফসল বিক্রির টাকায়। একমাত্র ছেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় বাড়তি খরচের চিন্তা। তবে ধানের ফলন ভালো হওয়ায় বেশ আশায় ছিলেন। সেই আশায় গুড়েবালি। কাটার আগ মুহূর্তে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার কথা স্ত্রীকে বলতে গিয়ে চোখ ছলছল করছিল রূপনের।

বিজয় আর রূপনের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার দুই হাজারেরর বেশি কৃষকের স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। উপজেলার মেদির হাওর, আকাশি হাওর, আটাউড়ি বিল, বালিয়া বিলসহ বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমির মাঠ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সরকারি হিসেব মতে, ৩৫০ হেক্টর ধানের জমি তলিয়ে গেছে। তবে কৃষকরা বলছেন, হাজার হেক্টর জমি এখন পানির নিচে। গত দু’দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।

হাওর পাড়ের কৃষক জিলু চৌধুরী জানান, তার পরিবারের ৭০ কানি ধানি ফসলি জমি এখন পানির নিচে। কৃষি বিভাগ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছে শুনলেও তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৩১২ হেক্টর। শিলাবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে উপজেলার ২৭০ হেক্টর বোরো ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২ হাজার ৫০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর সুনামগঞ্জের উজান থেকে নেমে আসা পানি জেলার তিতাস নদী দিয়ে বিভিন্ন উপজেলার ফসলি জমিতে নেমেছে। এই পানি মেঘনা নদী দিয়ে সরে যাওয়ার কথা। কিন্তু কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বাঁধের কারণে এই পানি সরতে পারেনি। এতেই কৃষকের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ তারেক জানান, তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রণয়ন কাজ শুরু করছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সহায়তা নিয়ে দুই হাজার ৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান শাওন জানান, হাওর পাড়ে মাইকিং করে কৃষককে ৮০ ভাগ পরিপক্ক ধান কেটে আনার জন্য বলা হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে।