টাঙ্গাইল তাঁতপল্লী ও শাড়ির বাজার

করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ঈদকে সামনে রেখে আবার কর্মমুখর হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের তাঁত পল্লীগুলো। টাঙ্গাইলের তাঁত পল্লীগুলোতে মুখরিত হয়ে উঠেছে তাঁতের খট-খট শব্দে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁত শ্রমিকরা। নিপুণহাতে তৈরি করছেন ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ি। তাদের তৈরি শাড়ি দেশের সীমানা পেরিয়ে চলে যাচ্ছে ভিনদেশেও। মন জয় করে নিচ্ছে দেশ বিদেশের হাজারও ক্রেতাদের। তবে করোনার পর এবার সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশার মধ্যে রয়েছেন তাঁত ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ তাঁত পল্লী। ফলে তাঁত শ্রমিকদের সংকট দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিকরা সারাবছর অপেক্ষা করেন দুটি ঈদ, দুর্গাপূজা ও পহেলা বৈশাখের। এই উৎসবেই তাদের ব্যবসায়ীক লাভের প্রধান উৎস। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল অধিকাংশ তাঁত। ব্যবসা হয়নি আশানুরূপ। তাদের গুনতে হয়েছে লোকসানের বোঝা। এ বছর ঈদের আগে করোনা দুর্যোগ নেই বললেই চলে।

গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাঁতশিল্পে জড়িতরা এবার উঠে পড়ে লেগেছেন ঈদ মাকের্টের শাড়ি তৈরিতে। টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ পাথরাইল, চন্ডী, বল্লা, রামপুর, নলশোধা, বাজিতপুর, করটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার তাঁতিরা এখন মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে অল্প সংখ্যক শ্রমিক ঈদ মার্কেটের শাড়ির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড (বাতাঁবো) ঋণ সহযোগিতা না করায় দেখা দিয়েছে পুঁজি সংকট। এতে করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক তাঁত মালিকরা শাড়ি উৎপাদনে যেতে পারছেন না। অনেকেই বাধ্য হয়ে ঝুঁকে পড়ছেন ভিন্ন পেশায়।

টাঙ্গাইল তাঁত বোর্ডের তথ্য মতে, টাঙ্গাইল জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার তাঁত রয়েছে। এতে ১ লাখ ৩ হাজার ২০৬ জন তাঁত শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

তবে বর্তমানে এই তাঁতের এক তৃতীয়াংশই পুঁজির অভাবে বন্ধ রয়েছে। সরেজমিন তাঁত পল্লীগুলো ঘুরে দেখা গেছে সেই চিরচেনা দৃশ্য। কানে বাজে তাঁতের খট-খট শব্দ। বিশাল কর্মযজ্ঞে নির্ঘুম সময় কাটছে তাঁত শ্রমিকদের। তারা মালিকদের চাহিদা মতো নতুন নতুন বাহারি ডিজাইনের শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁত শ্রমিকরা কেউ চরকায় সুতা কাটছে, কেউ সুতা টানা দিচ্ছে, কেউ কেউ শানায় সুতা ভরছে, কেউ বও ভরছে, কেউ মাকু টেনে শাড়ি বুনাচ্ছে। সব মিলিয়ে তাঁত পল্লীগুলোতে রাত-দিন কাজ চলছে। দিন-রাত কাজ করার পরেও চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁতিদের। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও নলীভরা, সুতাপারি করাসহ কাপড় বুনতে সহযোগিতা করছেন।

কথায় আছে ‘নদী-চর, খাল-বিল, গজারীর বন’ টাঙ্গাইল শাড়ি তার গর্বের ধন। আর টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি বাঙালি রমনীর প্রথম পছন্দ। তাঁতের শাড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত টাঙ্গাইলের পাথরাইল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন ক্রেতারা। দিন-রাত চলছে পাইকারি-খুচরা শাড়ি বিক্রি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়িতে এসেছে বৈচিত্র্য আর নতুনত্ব। সুতি ৪০০ থেকে ২ হাজার, তন্তুজ জামদানি-২ হাজার থেকে ২৫০০, সুতি বালু চুরি ১ হাজার থেকে ৩ হাজার, হাফ সিল্ক ৮০০ থেকে ২ হাজার, হাফ সিল্ক জামদানি ১৫০০ থেকে ৬ হাজার, পিওর সিল্ক- ১৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার, পিওর সিল্ক জামদানি ৬ হাজার থেকে ১ লাখ। করোনা ও লকডাউনের কারণে গত দুই বছর তাঁতশিল্প বন্ধ থাকার পর হঠাৎ করেই সুতার দাম বৃদ্ধির ফলে হতাশায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সুতার দামের কারণে বেড়েছে শাড়ির দামও। এতে করে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে শাড়ি। এছাড়া করোনায় দীর্ঘদিন তাঁত বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শ্রমিকরাই নিজেদের পেশা পরিবর্তন করেছে। ফলে অধিকাংশ তাঁত বন্ধ থাকায় চাহিদার তুলনায় অনেক কম শাড়ি তৈরি করতে হচ্ছে বলে জানায় তাঁত মালিকরা।

টাঙ্গাইলের শাড়ি বিক্রেতা ও কারিগররা বলেন, করোনার মধ্যে আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। আমরা ব্যবসা করতে পারি নাই। ঈদকে সামনে রেখে ভালোই শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির চাহিদা বেশি রয়েছে। সিলেট থেকে টাঙ্গাইলে আসা পাইকারি শাড়ি ব্যবসায়ী কাদের মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন করোনা ছিল, আমাদের ব্যবসা হয়নি। এখন স্বাভাবিক থাকায় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল এ এসেছি শাড়ি নেয়ার জন্য। টাঙ্গাইলের শাড়ির মান ভালো থাকায় এর চাহিদা অনেক বেশি।

পাইকারি শাড়ির ব্যবসায়ী শান্ত সাহা বলেন, আমি পাবনা জেলা থেকে এসেছি। পাথরাইলে আসি শাড়ির নেয়ার জন্য। আমাদের এলাকায় টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ির অনেক চাহিদা। তাই এখানে এসেছি কিছু শাড়ি নেয়ার জন্য। শাড়ি কিনতে আসা ক্রেতা সুপ্তা আক্তার বলেন, পাথরাইলের শাড়ির মান অনেক ভালো। আমি প্রতি বছর এখান থেকে শাড়ি কিনে নেই। এছাড়া পরিবারের সবাইকে উপহার দেয়ার জন্য শাড়ি কিনেছি। তবে এ বছর শাড়ির দাম অন্য বছরের তুলনায় একটু বেশি।

টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, বিগত দুই বছর করোনার কারণে আমরা শাড়ির ব্যবসা করতে পারি নাই। কিন্তু করোনার কারণে আমাদের উৎপাদন কম ছিল। এ জন্য অনেক শ্রমিক বাহিরে চলে গেছে। আবার অনেকে পুঁজি হারিয়ে ফেলেছে। তবে এবার আশাবাদী আমরা আগের থেকে একটু ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, করোনার এই সময়ে কাজের ঘাটতি হয়েছে। যে সমস্ত শ্রমিক পেশা ছেড়ে চলে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনা কোনভাবে সম্ভব হচ্ছে না। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, যারা কাপড়গুলো উৎপাদন করে। আমরা ঠিকমতো তাদের চাহিদা পূরণ না করায় তারা অন্য পেশায় চলে গেছে। তাদের অনেকেই আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বছর ঈদকে সামনে রেখে আমাদের বড় একটি আশা রয়েছে। দেশ ও দেশের বাইরে আমাদের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির ভালো সাড়া মিলেছে। তাঁতিরা রাত-দিন নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল শাড়ি কেনার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি মহাজনরা প্রতিনিয়তই টাঙ্গাইলের পাথরাইলে আসছে। তাদের চাহিদা মোতাবেক শাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। তবে সুতার দাম বেশি থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে শাড়িগুলো বিক্রি করতে।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড লিয়াজোঁ অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে তাঁতিদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ঠিকমতো শাড়ি তৈরি করতে পারছিল না। কিন্তু এবার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অবার তারা ব্যস্ত সময় পার করছে। বর্তমানে তাঁতিরা শাড়ির ভালো দাম পাচ্ছে। যারা এই পেশা থেকে সরে গিয়েছিল তাদের আবার ফিরেয়ে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা তাঁত বোর্ড থেকে তাঁত মালিকদের ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকি।

image

টাঙ্গাইল : তাঁতপল্লীতে কর্মরত শ্রমিক - সংবাদ

আরও খবর
আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ব্যবস্থাপনার ওপর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ
বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর লড়াই অব্যাহত
বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুই বছরে দুই শতাধিক মামলা
স্ত্রীর ওপর জেদ করে প্রতিবন্ধী শ্যালককে অপহরণ, মুক্তিপণ চেয়ে ফোন
আ’লীগের বর্ধিত সভায় ২ নেতাকে পিটিয়ে ফের আলোচনায় বদি
ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পাচ্ছেন ৩২ হাজার ৯০৪ গৃহহীন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পানির নিচে
পৌরসভার ‘সচিব’ পদ এখন ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’
ফরিদপুরের আলোচিত জোড়া খুনের প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
খাগড়াছড়িতে ইটভাটায় চলছে অভিযান, বন্ধ ২টি

রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ২২ রমাদ্বান ১৪৪৩

টাঙ্গাইল তাঁতপল্লী ও শাড়ির বাজার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

image

টাঙ্গাইল : তাঁতপল্লীতে কর্মরত শ্রমিক - সংবাদ

করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ঈদকে সামনে রেখে আবার কর্মমুখর হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের তাঁত পল্লীগুলো। টাঙ্গাইলের তাঁত পল্লীগুলোতে মুখরিত হয়ে উঠেছে তাঁতের খট-খট শব্দে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁত শ্রমিকরা। নিপুণহাতে তৈরি করছেন ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ি। তাদের তৈরি শাড়ি দেশের সীমানা পেরিয়ে চলে যাচ্ছে ভিনদেশেও। মন জয় করে নিচ্ছে দেশ বিদেশের হাজারও ক্রেতাদের। তবে করোনার পর এবার সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশার মধ্যে রয়েছেন তাঁত ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ তাঁত পল্লী। ফলে তাঁত শ্রমিকদের সংকট দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিকরা সারাবছর অপেক্ষা করেন দুটি ঈদ, দুর্গাপূজা ও পহেলা বৈশাখের। এই উৎসবেই তাদের ব্যবসায়ীক লাভের প্রধান উৎস। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল অধিকাংশ তাঁত। ব্যবসা হয়নি আশানুরূপ। তাদের গুনতে হয়েছে লোকসানের বোঝা। এ বছর ঈদের আগে করোনা দুর্যোগ নেই বললেই চলে।

গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাঁতশিল্পে জড়িতরা এবার উঠে পড়ে লেগেছেন ঈদ মাকের্টের শাড়ি তৈরিতে। টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ পাথরাইল, চন্ডী, বল্লা, রামপুর, নলশোধা, বাজিতপুর, করটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার তাঁতিরা এখন মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে অল্প সংখ্যক শ্রমিক ঈদ মার্কেটের শাড়ির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড (বাতাঁবো) ঋণ সহযোগিতা না করায় দেখা দিয়েছে পুঁজি সংকট। এতে করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক তাঁত মালিকরা শাড়ি উৎপাদনে যেতে পারছেন না। অনেকেই বাধ্য হয়ে ঝুঁকে পড়ছেন ভিন্ন পেশায়।

টাঙ্গাইল তাঁত বোর্ডের তথ্য মতে, টাঙ্গাইল জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার তাঁত রয়েছে। এতে ১ লাখ ৩ হাজার ২০৬ জন তাঁত শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

তবে বর্তমানে এই তাঁতের এক তৃতীয়াংশই পুঁজির অভাবে বন্ধ রয়েছে। সরেজমিন তাঁত পল্লীগুলো ঘুরে দেখা গেছে সেই চিরচেনা দৃশ্য। কানে বাজে তাঁতের খট-খট শব্দ। বিশাল কর্মযজ্ঞে নির্ঘুম সময় কাটছে তাঁত শ্রমিকদের। তারা মালিকদের চাহিদা মতো নতুন নতুন বাহারি ডিজাইনের শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁত শ্রমিকরা কেউ চরকায় সুতা কাটছে, কেউ সুতা টানা দিচ্ছে, কেউ কেউ শানায় সুতা ভরছে, কেউ বও ভরছে, কেউ মাকু টেনে শাড়ি বুনাচ্ছে। সব মিলিয়ে তাঁত পল্লীগুলোতে রাত-দিন কাজ চলছে। দিন-রাত কাজ করার পরেও চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁতিদের। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও নলীভরা, সুতাপারি করাসহ কাপড় বুনতে সহযোগিতা করছেন।

কথায় আছে ‘নদী-চর, খাল-বিল, গজারীর বন’ টাঙ্গাইল শাড়ি তার গর্বের ধন। আর টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি বাঙালি রমনীর প্রথম পছন্দ। তাঁতের শাড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত টাঙ্গাইলের পাথরাইল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন ক্রেতারা। দিন-রাত চলছে পাইকারি-খুচরা শাড়ি বিক্রি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়িতে এসেছে বৈচিত্র্য আর নতুনত্ব। সুতি ৪০০ থেকে ২ হাজার, তন্তুজ জামদানি-২ হাজার থেকে ২৫০০, সুতি বালু চুরি ১ হাজার থেকে ৩ হাজার, হাফ সিল্ক ৮০০ থেকে ২ হাজার, হাফ সিল্ক জামদানি ১৫০০ থেকে ৬ হাজার, পিওর সিল্ক- ১৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার, পিওর সিল্ক জামদানি ৬ হাজার থেকে ১ লাখ। করোনা ও লকডাউনের কারণে গত দুই বছর তাঁতশিল্প বন্ধ থাকার পর হঠাৎ করেই সুতার দাম বৃদ্ধির ফলে হতাশায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সুতার দামের কারণে বেড়েছে শাড়ির দামও। এতে করে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে শাড়ি। এছাড়া করোনায় দীর্ঘদিন তাঁত বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শ্রমিকরাই নিজেদের পেশা পরিবর্তন করেছে। ফলে অধিকাংশ তাঁত বন্ধ থাকায় চাহিদার তুলনায় অনেক কম শাড়ি তৈরি করতে হচ্ছে বলে জানায় তাঁত মালিকরা।

টাঙ্গাইলের শাড়ি বিক্রেতা ও কারিগররা বলেন, করোনার মধ্যে আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। আমরা ব্যবসা করতে পারি নাই। ঈদকে সামনে রেখে ভালোই শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির চাহিদা বেশি রয়েছে। সিলেট থেকে টাঙ্গাইলে আসা পাইকারি শাড়ি ব্যবসায়ী কাদের মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন করোনা ছিল, আমাদের ব্যবসা হয়নি। এখন স্বাভাবিক থাকায় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল এ এসেছি শাড়ি নেয়ার জন্য। টাঙ্গাইলের শাড়ির মান ভালো থাকায় এর চাহিদা অনেক বেশি।

পাইকারি শাড়ির ব্যবসায়ী শান্ত সাহা বলেন, আমি পাবনা জেলা থেকে এসেছি। পাথরাইলে আসি শাড়ির নেয়ার জন্য। আমাদের এলাকায় টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ির অনেক চাহিদা। তাই এখানে এসেছি কিছু শাড়ি নেয়ার জন্য। শাড়ি কিনতে আসা ক্রেতা সুপ্তা আক্তার বলেন, পাথরাইলের শাড়ির মান অনেক ভালো। আমি প্রতি বছর এখান থেকে শাড়ি কিনে নেই। এছাড়া পরিবারের সবাইকে উপহার দেয়ার জন্য শাড়ি কিনেছি। তবে এ বছর শাড়ির দাম অন্য বছরের তুলনায় একটু বেশি।

টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, বিগত দুই বছর করোনার কারণে আমরা শাড়ির ব্যবসা করতে পারি নাই। কিন্তু করোনার কারণে আমাদের উৎপাদন কম ছিল। এ জন্য অনেক শ্রমিক বাহিরে চলে গেছে। আবার অনেকে পুঁজি হারিয়ে ফেলেছে। তবে এবার আশাবাদী আমরা আগের থেকে একটু ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, করোনার এই সময়ে কাজের ঘাটতি হয়েছে। যে সমস্ত শ্রমিক পেশা ছেড়ে চলে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনা কোনভাবে সম্ভব হচ্ছে না। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, যারা কাপড়গুলো উৎপাদন করে। আমরা ঠিকমতো তাদের চাহিদা পূরণ না করায় তারা অন্য পেশায় চলে গেছে। তাদের অনেকেই আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বছর ঈদকে সামনে রেখে আমাদের বড় একটি আশা রয়েছে। দেশ ও দেশের বাইরে আমাদের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির ভালো সাড়া মিলেছে। তাঁতিরা রাত-দিন নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল শাড়ি কেনার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি মহাজনরা প্রতিনিয়তই টাঙ্গাইলের পাথরাইলে আসছে। তাদের চাহিদা মোতাবেক শাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। তবে সুতার দাম বেশি থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে শাড়িগুলো বিক্রি করতে।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড লিয়াজোঁ অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে তাঁতিদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ঠিকমতো শাড়ি তৈরি করতে পারছিল না। কিন্তু এবার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অবার তারা ব্যস্ত সময় পার করছে। বর্তমানে তাঁতিরা শাড়ির ভালো দাম পাচ্ছে। যারা এই পেশা থেকে সরে গিয়েছিল তাদের আবার ফিরেয়ে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা তাঁত বোর্ড থেকে তাঁত মালিকদের ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকি।