২ বছরে ৪০ ছাপাখানা কালো তালিকাভুক্ত

শাস্তি এড়াতে কৌশলী পন্থায় মুদ্রাকররা

শাস্তি এড়াতে ‘অভিনব’ পন্থা অনুসরণ করছেন কালো তালিকাভুক্ত ছাপাখানার মালিকরা। অনিয়মের দায়ে সরকার অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করলেই তারা নাম পরিবর্তন করে অন্য নামে দরপত্রে অংশ নিচ্ছেন।

পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ-বাধাঁইয়ে নানা অনিয়ম ও নির্ধারিত সময়ে তা সরবরাহ করতে না পারায় দুই বছরে ৪০টি ছাপাখানাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে এনসিটিবি। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য দরপত্রে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ ‘নাম পরিবর্তন’ বা নতুন লাইসেন্স করে পুনরায় পাঠ্যবই ছাপার দরপত্রে অংশ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে একই ব্যক্তি পরপর দুই বছর কালো তালিকাভুক্ত হয়েও পাঠ্যবই ছাপার কাজ পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে কোন কোন প্রতিষ্ঠান গুরুতর অপরাধ করলেও স্বজনপ্রীতির কারণে ‘বড় শাস্তি’র কবল থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির নেতাদের।

এবার নানা অনিয়মের দায়ে ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে সম্প্রতি কালো তালিকাভুক্ত করে নিজেদের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে কোন প্রতিষ্ঠান কতটি বই বিলম্বে সরবরাহ করেছে তা প্রকাশ করা হয়নি। গত বছর ১৪টি ছাপাখানাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এবার অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যাদের গতবছরও একই শাস্তি দেয়া হয়েছিল। বারবার একই অনিয়ম করে কীভাবে রেহাই পাচ্ছেন- সেটি নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মশিউজ্জামান সংবাদকে বলেন, এনসিটিবি কালো তালিকাভুক্ত করলেই তারা স্ত্রী বা সন্তান বা ভাইয়ের নামে লাইসেন্স করে ব্যবসায় নামছে। এ কারণে এনসিটিবি তেমন কিছু করতে পারছে না।

কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের সুযোগ ঠেকানো যায় কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লাইসেন্স দেয় সিটি করপোরেশন। তারা ব্যবস্থা নিতে পারে। এনসিটিবির এখানে তেমন কিছুই করার নেই।’

সম্প্রতি এনসিটিবির ওয়েবসাইটে ‘দরপত্রে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা সংক্রান্ত নোটিশ’ শীর্ষক ১১২০ থেকে ১১৫১ নম্বর স্মারকে কালো তালিকাভুক্তির ঘোষণা সংক্রান্ত একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়। এই নোটিশে মোট ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য এনসিটিবির সব ধরনের দরপত্রে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি ২০২২ শিক্ষাবর্ষে সরকার প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই বিতরণ করেছে।

অধ্যাপক মশিউজ্জামান জানান, অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ২৬টি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ পাঁচ বছর থেকে সর্ব্বনিম্ন এক বছর এনসিটিবির কোন দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না। তাদের আর্থিক জরিমানাও করা হবে।

৫ বছরের জন্য অযোগ্য ১৭ প্রতিষ্ঠান :

প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ অক্ষরবিন্যাস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, প্রেস লাইন, মনির প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, সেডনা প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, আবুল প্রিন্টিং প্রেস, মেসার্স টাঙ্গাইল প্রিন্টিং প্রেস, হক প্রিন্টার্স, মেসার্স নাজমুন নাহার প্রেস, বনফুল আর্ট প্রেস, বুলবুল আর্ট প্রেস, শিক্ষা সেবা প্রিন্টার্স, পিবিএস প্রিন্টার্স, প্লাসিড প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজেস, আমাজন প্রিন্টিং প্রেস, উজ্বল প্রিন্টিং প্রেস, মহানগর অফসেট প্রেস এবং এইচআর প্রিন্টার্স অ্যান্ড পেপার মিলস।

এনসিটিবি’র দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবার সবচেয়ে বেশি ‘ভুগিয়েছে’ প্রেস লাইন নামের প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ নিয়ে প্রথমে নি¤œমানের কাগজে বই ছাপার চেষ্টা করলেও এনসিটিবি তা প্রত্যাখান করে। এরপরও একই কাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটির ছাপা বই গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় এনসিটিবি। এই প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ নোট-গাইড বই ব্যবসায় নের্তৃত্ব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

‘প্রেস লাইন’ জেনারেল ম্যানেজার কাউসার মাহমুদ জানান, তারা এবার সাত লাখ ১৯ হাজার কপি পাঠ্যপুস্তক (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর) ছাপাতে পারেননি। এ কারণে তাদের কালো তালিকাভুক্তির মতো শাস্তি দেয়া হয়েছে।

কালো তালিকা প্রকাশে কারও প্রতি ‘অন্যায়’ হয়েছে কি-না জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘এখানে এনসিটিবি তার নিয়মের মধ্যেই থাকার চেষ্টা করে। আবার স্বজনপ্রীতি যে একেবারে হয় না, তা নয়। কিছু প্রতিষ্ঠান যারা ব্ল্যাক লিস্টেড হওয়ার কথা, তারা তদবির করে বেঁচে যায়।’

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বড় ধরনের অনিয়ম করা সত্ত্বেও ‘লেটার এন কালার...অগ্রণীকে (প্রিন্টিং প্রেস) ছাড় দেয়া হয়েছে। এগুলো আমরা দেখবো। আবার কাউকে ভিক্টিমাইজড করা হয়েছে কি-না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’

নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই ছাপাতে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছর ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল এনসিটিবি। ওই তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি এবারও কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে বলে জানান জহুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘মহানগরকে (অফসেট প্রিন্টিং প্রেস) এবার কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। গত বছর এই প্রতিষ্ঠানের মালিক মিলন প্রেসের নামে কাজ নিয়ে বই দিতে পারেনি। এ কারণে মিলন প্রেসকে গত বছর কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। সেডনা প্রেসও গতবছর বেনামে কাজ নিয়ে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছিল।’

১ থেকে ৩ বছরের জন্য অযোগ্য ৯ প্রতিষ্ঠান :

দুটি ছাপাখানাকে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এনসিটিবি। প্রতিষ্ঠান দুটি হলোÑ ঢাকার ইউসুফ প্রিন্টার্স ও বগুড়ার শরীফা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স। এর মধ্যে শরীফ প্রেসের কর্ণধার গত বছরও ভিন্ন নামে কাজ নিয়ে বই সরবরাহ করতে না পারায় তাদের প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

এছাড়া এবার জিতু অফসেট প্রেস, ন্যাশনাল প্রিন্টার্স ও ওয়েবটেক প্রিন্টার্সকে দুই বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আর বাকো অফসেট প্রেস, দিগন্ত অফসেট প্রেস, এবি কালার প্রেস ও মেসার্স প্রিন্ট প্লাসকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে এনসিটিবি।

২৬ প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তির পাশাপাশি ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আগামীতে পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজে অংশ নিতে হলে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিতে হবে। এই ছয় প্রতিষ্ঠান হলোÑ সোমা প্রিন্টিং প্রেস, রাব্বিল প্রিন্টিং প্রেস, মেরাজ প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, লেটার এন কালার, কাশেম অ্যান্ড রহমান প্রিন্টিং প্রেস ও সমতা প্রেস।

সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২ , ১২ বৈশাখ ১৪২৮ ২৩ রমাদ্বান ১৪৪৩

নানা অনিয়ম ও নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই ছাপাতে না পারা

২ বছরে ৪০ ছাপাখানা কালো তালিকাভুক্ত

শাস্তি এড়াতে কৌশলী পন্থায় মুদ্রাকররা

রাকিব উদ্দিন

শাস্তি এড়াতে ‘অভিনব’ পন্থা অনুসরণ করছেন কালো তালিকাভুক্ত ছাপাখানার মালিকরা। অনিয়মের দায়ে সরকার অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করলেই তারা নাম পরিবর্তন করে অন্য নামে দরপত্রে অংশ নিচ্ছেন।

পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ-বাধাঁইয়ে নানা অনিয়ম ও নির্ধারিত সময়ে তা সরবরাহ করতে না পারায় দুই বছরে ৪০টি ছাপাখানাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে এনসিটিবি। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য দরপত্রে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ ‘নাম পরিবর্তন’ বা নতুন লাইসেন্স করে পুনরায় পাঠ্যবই ছাপার দরপত্রে অংশ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে একই ব্যক্তি পরপর দুই বছর কালো তালিকাভুক্ত হয়েও পাঠ্যবই ছাপার কাজ পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে কোন কোন প্রতিষ্ঠান গুরুতর অপরাধ করলেও স্বজনপ্রীতির কারণে ‘বড় শাস্তি’র কবল থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির নেতাদের।

এবার নানা অনিয়মের দায়ে ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে সম্প্রতি কালো তালিকাভুক্ত করে নিজেদের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে কোন প্রতিষ্ঠান কতটি বই বিলম্বে সরবরাহ করেছে তা প্রকাশ করা হয়নি। গত বছর ১৪টি ছাপাখানাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এবার অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যাদের গতবছরও একই শাস্তি দেয়া হয়েছিল। বারবার একই অনিয়ম করে কীভাবে রেহাই পাচ্ছেন- সেটি নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মশিউজ্জামান সংবাদকে বলেন, এনসিটিবি কালো তালিকাভুক্ত করলেই তারা স্ত্রী বা সন্তান বা ভাইয়ের নামে লাইসেন্স করে ব্যবসায় নামছে। এ কারণে এনসিটিবি তেমন কিছু করতে পারছে না।

কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের সুযোগ ঠেকানো যায় কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লাইসেন্স দেয় সিটি করপোরেশন। তারা ব্যবস্থা নিতে পারে। এনসিটিবির এখানে তেমন কিছুই করার নেই।’

সম্প্রতি এনসিটিবির ওয়েবসাইটে ‘দরপত্রে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা সংক্রান্ত নোটিশ’ শীর্ষক ১১২০ থেকে ১১৫১ নম্বর স্মারকে কালো তালিকাভুক্তির ঘোষণা সংক্রান্ত একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়। এই নোটিশে মোট ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য এনসিটিবির সব ধরনের দরপত্রে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি ২০২২ শিক্ষাবর্ষে সরকার প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই বিতরণ করেছে।

অধ্যাপক মশিউজ্জামান জানান, অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ২৬টি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ পাঁচ বছর থেকে সর্ব্বনিম্ন এক বছর এনসিটিবির কোন দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না। তাদের আর্থিক জরিমানাও করা হবে।

৫ বছরের জন্য অযোগ্য ১৭ প্রতিষ্ঠান :

প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ অক্ষরবিন্যাস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, প্রেস লাইন, মনির প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, সেডনা প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, আবুল প্রিন্টিং প্রেস, মেসার্স টাঙ্গাইল প্রিন্টিং প্রেস, হক প্রিন্টার্স, মেসার্স নাজমুন নাহার প্রেস, বনফুল আর্ট প্রেস, বুলবুল আর্ট প্রেস, শিক্ষা সেবা প্রিন্টার্স, পিবিএস প্রিন্টার্স, প্লাসিড প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজেস, আমাজন প্রিন্টিং প্রেস, উজ্বল প্রিন্টিং প্রেস, মহানগর অফসেট প্রেস এবং এইচআর প্রিন্টার্স অ্যান্ড পেপার মিলস।

এনসিটিবি’র দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবার সবচেয়ে বেশি ‘ভুগিয়েছে’ প্রেস লাইন নামের প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ নিয়ে প্রথমে নি¤œমানের কাগজে বই ছাপার চেষ্টা করলেও এনসিটিবি তা প্রত্যাখান করে। এরপরও একই কাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটির ছাপা বই গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় এনসিটিবি। এই প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ নোট-গাইড বই ব্যবসায় নের্তৃত্ব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

‘প্রেস লাইন’ জেনারেল ম্যানেজার কাউসার মাহমুদ জানান, তারা এবার সাত লাখ ১৯ হাজার কপি পাঠ্যপুস্তক (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর) ছাপাতে পারেননি। এ কারণে তাদের কালো তালিকাভুক্তির মতো শাস্তি দেয়া হয়েছে।

কালো তালিকা প্রকাশে কারও প্রতি ‘অন্যায়’ হয়েছে কি-না জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘এখানে এনসিটিবি তার নিয়মের মধ্যেই থাকার চেষ্টা করে। আবার স্বজনপ্রীতি যে একেবারে হয় না, তা নয়। কিছু প্রতিষ্ঠান যারা ব্ল্যাক লিস্টেড হওয়ার কথা, তারা তদবির করে বেঁচে যায়।’

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বড় ধরনের অনিয়ম করা সত্ত্বেও ‘লেটার এন কালার...অগ্রণীকে (প্রিন্টিং প্রেস) ছাড় দেয়া হয়েছে। এগুলো আমরা দেখবো। আবার কাউকে ভিক্টিমাইজড করা হয়েছে কি-না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’

নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই ছাপাতে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছর ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল এনসিটিবি। ওই তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি এবারও কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে বলে জানান জহুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘মহানগরকে (অফসেট প্রিন্টিং প্রেস) এবার কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। গত বছর এই প্রতিষ্ঠানের মালিক মিলন প্রেসের নামে কাজ নিয়ে বই দিতে পারেনি। এ কারণে মিলন প্রেসকে গত বছর কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। সেডনা প্রেসও গতবছর বেনামে কাজ নিয়ে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছিল।’

১ থেকে ৩ বছরের জন্য অযোগ্য ৯ প্রতিষ্ঠান :

দুটি ছাপাখানাকে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এনসিটিবি। প্রতিষ্ঠান দুটি হলোÑ ঢাকার ইউসুফ প্রিন্টার্স ও বগুড়ার শরীফা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স। এর মধ্যে শরীফ প্রেসের কর্ণধার গত বছরও ভিন্ন নামে কাজ নিয়ে বই সরবরাহ করতে না পারায় তাদের প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

এছাড়া এবার জিতু অফসেট প্রেস, ন্যাশনাল প্রিন্টার্স ও ওয়েবটেক প্রিন্টার্সকে দুই বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আর বাকো অফসেট প্রেস, দিগন্ত অফসেট প্রেস, এবি কালার প্রেস ও মেসার্স প্রিন্ট প্লাসকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে এনসিটিবি।

২৬ প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তির পাশাপাশি ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আগামীতে পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজে অংশ নিতে হলে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিতে হবে। এই ছয় প্রতিষ্ঠান হলোÑ সোমা প্রিন্টিং প্রেস, রাব্বিল প্রিন্টিং প্রেস, মেরাজ প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, লেটার এন কালার, কাশেম অ্যান্ড রহমান প্রিন্টিং প্রেস ও সমতা প্রেস।