ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে বের হওয়া ৭ মুখে যানজটের আশঙ্কা

ঈদযাত্রায় গাড়ির অতিরিক্ত চাপ ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণে ঈদের আগে ঢাকা থেকে বের হওয়ার প্রতিটি মুখে দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে ঘরমুখো মানুষদের। এর মধ্যে গুলিস্তান-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর সড়কে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হবে বলে স্থানীয়রা জানান।

রাজধানীর গুলিস্তানে সড়কের নিয়ন্ত্রণ কারো হাতে নেই। এই সড়কটি দখল হয়ে গেছে ফুটপাতের দোকান ও অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ে। দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রার যানযটের ভোগান্তি শুরু হয় গুলিস্তান থেকেই। এই মুখ দিয়ে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের যাত্রীরা যাতায়াত করে। রাজধানী থেকে বের হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই মুখের প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে যাত্রীরা জানান। ঈদের আগে তা আরও দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া এলাকায় রুবেল নামের সদরঘাটের এক যাত্রী গত শুক্রবার সংবাদকে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সদরঘাটের উদ্দেশে মগবাজার থেকে বাসে উঠি। গুলিস্তান আসতে বেশি সময় লাগেনি। ৩০ মিনিটে গুলিস্তানে চলে এসেছি। কিন্তু গুলিস্তান আসার পর বাস আর চলে না। জিপিও মোড় থেকে ফুলিবাড়িয়া আসতে আধঘণ্টা পার হয়েছে। ফুলবাড়িয়া দীর্ঘ যানজটে বসে আছি। বৃষ্টি মধ্যে খারাপ অবস্থা। হেঁটে যেতে পারছি না। তাই বসে থাকা ছাড়া উপায় নাই।’

গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া এলাকায় অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ড ও ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-ধামরাইয়ের রুটের বাসগুলো সড়কের অর্ধেক দখল করে পার্কিং করে রাখা হয়। এছাড়া সড়ক দখল করে ফুটপাতের দোকান বসানোর কারনে প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটের শিকার হতে হয় বলে যাত্রীরা জানান।

শাহীন চৌধুরী নামের গুলিস্তানে অন্য এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘উত্তরা বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তানে আসতে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টা। কিন্তু গুলিস্তান এলাকায় আধঘণ্টা যানজটে বসে আছি। সদরঘাটে যাব। তাই অন্য যানবাহন খুঁজছি। মোটরসাইকেলে না গেলে ইফতার পাওয়া যাবে না।’ শুক্রবার এই অবস্থা হলে ঈদযাত্রায় গুলিস্তান এলাকায় যাত্রীদের কি ভোগান্তি পোহাতে হবে এই প্রশ্ন তুললেন রুবেল এবং শাহীন।

এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলোতে মানুষজনকে অসহনীয় যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এসব এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’ তা না হলে আগামী ২৫ রমজান থেকে যানজটেন যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা প্রবেশ ও বের হওয়ার ৭ মুখেই যানজটের আশঙ্কা

ঈদের আগেই রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সড়কে যানজটে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনা, ফুটপাতের দোকান, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, খানাখন্দ সড়ক ও নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের কারণে রাজধানীতে প্রবেশমুখেই প্রতিনিয়ত প্রচ- যানজটে শিকার হতে হয় আন্তঃজেলা যানবাহনকে।

বিশেষ করে কাঁচপুর ব্রিজ-সাইনবোর্ড মোড়, দোলাইপাড় মোড়-জুরাইন রেলক্রসিং, বাবুবাজার ব্রিজ-বংশাল মোড়, আমিনবাজার ব্রিজ-গাবতলীর মোড়, কামারপাড়া-আবদুল্লাহপুর মোড়, নির্মাণাধীন ডেমরা চারলেন মহাসড়েক স্টাফ কোয়ার্টার থেকে সুলতানা কামাল ব্রিজ ও গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী সড়কসহ রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়া এই ৭টি মুখেই প্রচ- যানজটের শিকার হতে হয় পরিবহনকে। এছাড়া মাওয়া, আরিচা ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয় বলে স্থানীয়রা জানান।

স্বামীবাগ সড়ক দখলে পণ্যবাহী ট্রাক ও মেঘালয় পরিবহন

রাজধানীর স্বামীবাগ এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড পাশের সড়কের অর্ধেক দখল করে পণ্যবাহী ট্রাক ও ঢাকা-নরসিংদী রুটের মেঘালয় পরিবহনের বাসগুলো রাখা হয়। এ কারণে সায়েদাবাদ রেলক্রসিং থেকে রাজধানীর সুপার মার্কেট পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হয় যানবাহনকে। এছাড়া রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে উইটার্ন থাকায় প্রতিদিন আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা মার্কেটের সামনে আটকে থাকতে হয়। ঈদের সময় তা আরও বাড়বে বলে ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটের বাসচালকরা জানান।

রাজধানীর সুপার মার্কেটের সামনে আলম নামের ট্রান্স সিলভা পরিবহনের এক চালক সংবাদকে বলেন, ‘পুলিশের লইগ্যা এহানে জ্যাম লাগে। মার্কেটের মোচরে টার্ন নেয় গাড়িগুলো। পুলিশ টাকা খায়। এর লইগ্যা সায়েদবাদ জনপথ মোচর থেকে বলধা গার্ডেন পর্যন্ত জ্যাম লাইগ্যা থাকে। ঈদের সময় আরও খারাপ অইবো।’ তিনি জানান, এই যানজটের জন্য অনেকে সায়েদাবাদ না গিয়ে দয়াগঞ্জ হয়ে দোলাইপাড় দিয়ে মাওয়া রুটে যাতায়াত করে। রাজধানী সুপার মার্কেটের যানজটের কারণে সায়েদাবাদ, দয়াগঞ্জ ও বলধা গার্ডেনের এই তিন সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

ফুটপাতের দোকানে সড়ক দখল

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার বেশিরভাগ সড়কের দুই পাশে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাতের দোকান বসানো হয়েছে। এছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় প্রতিদিন সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী মোড় পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। এছাড়া ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথেই যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রীদের ঢাকা থেকে প্রবেশ ও বের হতে হয় কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, গুলিস্তান ও বাবু বাজার ব্রিজ দিয়ে। তাই এই চারটি মহাসড়কের যাত্রীদের প্রবেশ ও বের হওয়ার মুখেই যানজটে শিকার হতে হতে হয়।

এর মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে সাইনবোর্ড হয়ে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়কে যানজট লেগেই থাকে। ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্তানে নামার পথে যানজটে আটকে থাকে যানবাহনগুলো। এছাড়া কাঁচপুর ব্রিজ থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিদিনেই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। যা ঈদের দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীদের কাঁচপুর ব্রিজ ব্যবহার করে রাজধানীতে প্রবেশ করতে হয়। তাই কাঁচপুর এলাকায় প্রচ- যানজটের শিকার হতে হয় এই মহাসড়কের যাত্রীদের। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট এই দুই মহাসড়কের গাড়ির চাপে কাঁচপুরের চারলেনের সেতুর যানবাহনকে ধীরগতিতে চলতে হয়। তাই ব্রিজে উঠার আগে ৩০ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে যাত্রীরা জানান।

ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রীরা রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হয় পোস্তগোলা ও বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখেই যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে জুরাইন রেলগেট, বংশাল মোড় থেকে বাবুবাজার ব্রিজের পর্যন্ত ১-২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হয় ঘরমুখো যাত্রীদের। এর মধ্যে জুরাইন রেলগেটে এলাকায় রাস্তা দখল করে ফুটপাতের দোকান, এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিং ও ট্রাফিকের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিনিয়ত এই সড়কগুলোতে যানজট গেলে থাকে বলে ভোক্তভুগীরা জানান।

এছাড়া আরিচা ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটের যানবাহনগুলো গাবতলীর আমিনবাজার সেতু দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরাও আমিনবাজার ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। ঈদের সময় গাড়ির চাপে গাবতলী থেকে আমিনবাজার সেতু ১ কিলোমিটার সড়কে দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে যাত্রীরা জানান।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যানবাহনগুলো টঙ্গী ব্রিজ দিয়ে রাজধানী থেকে বের হয়র। এ পথে গাজীপুর থেকে উত্তরা বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণ কাজে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। সরু রাস্তার কারণে আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ

‘ঈদে নিরবচ্ছিন্ন’ যানবাহন চলাচলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বনানীর প্রধান কার্যালয়ে তৃতীয় তলায় এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বিআরটিএ ও বিআরটিসির সমন্বয়ে। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ৮ দিন বিভিন্ন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। গত বুধবার এক অফিস আদেশে এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার কথা জানানো হয়।

এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘ঈদে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এর আগে সড়ক সচিবের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে পুলিশের লোকসহ সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে ঈদে যাতায়াতে সড়ক-মহাসড়কে কোন সমস্যা না হয়।’

সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২ , ১২ বৈশাখ ১৪২৮ ২৩ রমাদ্বান ১৪৪৩

ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে বের হওয়া ৭ মুখে যানজটের আশঙ্কা

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

ঈদযাত্রায় গাড়ির অতিরিক্ত চাপ ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণে ঈদের আগে ঢাকা থেকে বের হওয়ার প্রতিটি মুখে দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে ঘরমুখো মানুষদের। এর মধ্যে গুলিস্তান-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর সড়কে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হবে বলে স্থানীয়রা জানান।

রাজধানীর গুলিস্তানে সড়কের নিয়ন্ত্রণ কারো হাতে নেই। এই সড়কটি দখল হয়ে গেছে ফুটপাতের দোকান ও অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ে। দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রার যানযটের ভোগান্তি শুরু হয় গুলিস্তান থেকেই। এই মুখ দিয়ে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের যাত্রীরা যাতায়াত করে। রাজধানী থেকে বের হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই মুখের প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে যাত্রীরা জানান। ঈদের আগে তা আরও দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া এলাকায় রুবেল নামের সদরঘাটের এক যাত্রী গত শুক্রবার সংবাদকে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সদরঘাটের উদ্দেশে মগবাজার থেকে বাসে উঠি। গুলিস্তান আসতে বেশি সময় লাগেনি। ৩০ মিনিটে গুলিস্তানে চলে এসেছি। কিন্তু গুলিস্তান আসার পর বাস আর চলে না। জিপিও মোড় থেকে ফুলিবাড়িয়া আসতে আধঘণ্টা পার হয়েছে। ফুলবাড়িয়া দীর্ঘ যানজটে বসে আছি। বৃষ্টি মধ্যে খারাপ অবস্থা। হেঁটে যেতে পারছি না। তাই বসে থাকা ছাড়া উপায় নাই।’

গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া এলাকায় অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ড ও ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-ধামরাইয়ের রুটের বাসগুলো সড়কের অর্ধেক দখল করে পার্কিং করে রাখা হয়। এছাড়া সড়ক দখল করে ফুটপাতের দোকান বসানোর কারনে প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটের শিকার হতে হয় বলে যাত্রীরা জানান।

শাহীন চৌধুরী নামের গুলিস্তানে অন্য এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘উত্তরা বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তানে আসতে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টা। কিন্তু গুলিস্তান এলাকায় আধঘণ্টা যানজটে বসে আছি। সদরঘাটে যাব। তাই অন্য যানবাহন খুঁজছি। মোটরসাইকেলে না গেলে ইফতার পাওয়া যাবে না।’ শুক্রবার এই অবস্থা হলে ঈদযাত্রায় গুলিস্তান এলাকায় যাত্রীদের কি ভোগান্তি পোহাতে হবে এই প্রশ্ন তুললেন রুবেল এবং শাহীন।

এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলোতে মানুষজনকে অসহনীয় যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এসব এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’ তা না হলে আগামী ২৫ রমজান থেকে যানজটেন যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা প্রবেশ ও বের হওয়ার ৭ মুখেই যানজটের আশঙ্কা

ঈদের আগেই রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সড়কে যানজটে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনা, ফুটপাতের দোকান, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, খানাখন্দ সড়ক ও নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের কারণে রাজধানীতে প্রবেশমুখেই প্রতিনিয়ত প্রচ- যানজটে শিকার হতে হয় আন্তঃজেলা যানবাহনকে।

বিশেষ করে কাঁচপুর ব্রিজ-সাইনবোর্ড মোড়, দোলাইপাড় মোড়-জুরাইন রেলক্রসিং, বাবুবাজার ব্রিজ-বংশাল মোড়, আমিনবাজার ব্রিজ-গাবতলীর মোড়, কামারপাড়া-আবদুল্লাহপুর মোড়, নির্মাণাধীন ডেমরা চারলেন মহাসড়েক স্টাফ কোয়ার্টার থেকে সুলতানা কামাল ব্রিজ ও গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী সড়কসহ রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়া এই ৭টি মুখেই প্রচ- যানজটের শিকার হতে হয় পরিবহনকে। এছাড়া মাওয়া, আরিচা ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয় বলে স্থানীয়রা জানান।

স্বামীবাগ সড়ক দখলে পণ্যবাহী ট্রাক ও মেঘালয় পরিবহন

রাজধানীর স্বামীবাগ এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড পাশের সড়কের অর্ধেক দখল করে পণ্যবাহী ট্রাক ও ঢাকা-নরসিংদী রুটের মেঘালয় পরিবহনের বাসগুলো রাখা হয়। এ কারণে সায়েদাবাদ রেলক্রসিং থেকে রাজধানীর সুপার মার্কেট পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হয় যানবাহনকে। এছাড়া রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে উইটার্ন থাকায় প্রতিদিন আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা মার্কেটের সামনে আটকে থাকতে হয়। ঈদের সময় তা আরও বাড়বে বলে ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটের বাসচালকরা জানান।

রাজধানীর সুপার মার্কেটের সামনে আলম নামের ট্রান্স সিলভা পরিবহনের এক চালক সংবাদকে বলেন, ‘পুলিশের লইগ্যা এহানে জ্যাম লাগে। মার্কেটের মোচরে টার্ন নেয় গাড়িগুলো। পুলিশ টাকা খায়। এর লইগ্যা সায়েদবাদ জনপথ মোচর থেকে বলধা গার্ডেন পর্যন্ত জ্যাম লাইগ্যা থাকে। ঈদের সময় আরও খারাপ অইবো।’ তিনি জানান, এই যানজটের জন্য অনেকে সায়েদাবাদ না গিয়ে দয়াগঞ্জ হয়ে দোলাইপাড় দিয়ে মাওয়া রুটে যাতায়াত করে। রাজধানী সুপার মার্কেটের যানজটের কারণে সায়েদাবাদ, দয়াগঞ্জ ও বলধা গার্ডেনের এই তিন সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

ফুটপাতের দোকানে সড়ক দখল

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার বেশিরভাগ সড়কের দুই পাশে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাতের দোকান বসানো হয়েছে। এছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় প্রতিদিন সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী মোড় পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। এছাড়া ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথেই যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রীদের ঢাকা থেকে প্রবেশ ও বের হতে হয় কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, গুলিস্তান ও বাবু বাজার ব্রিজ দিয়ে। তাই এই চারটি মহাসড়কের যাত্রীদের প্রবেশ ও বের হওয়ার মুখেই যানজটে শিকার হতে হতে হয়।

এর মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে সাইনবোর্ড হয়ে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়কে যানজট লেগেই থাকে। ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্তানে নামার পথে যানজটে আটকে থাকে যানবাহনগুলো। এছাড়া কাঁচপুর ব্রিজ থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিদিনেই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। যা ঈদের দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীদের কাঁচপুর ব্রিজ ব্যবহার করে রাজধানীতে প্রবেশ করতে হয়। তাই কাঁচপুর এলাকায় প্রচ- যানজটের শিকার হতে হয় এই মহাসড়কের যাত্রীদের। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট এই দুই মহাসড়কের গাড়ির চাপে কাঁচপুরের চারলেনের সেতুর যানবাহনকে ধীরগতিতে চলতে হয়। তাই ব্রিজে উঠার আগে ৩০ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে যাত্রীরা জানান।

ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রীরা রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হয় পোস্তগোলা ও বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখেই যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে জুরাইন রেলগেট, বংশাল মোড় থেকে বাবুবাজার ব্রিজের পর্যন্ত ১-২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হয় ঘরমুখো যাত্রীদের। এর মধ্যে জুরাইন রেলগেটে এলাকায় রাস্তা দখল করে ফুটপাতের দোকান, এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিং ও ট্রাফিকের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিনিয়ত এই সড়কগুলোতে যানজট গেলে থাকে বলে ভোক্তভুগীরা জানান।

এছাড়া আরিচা ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটের যানবাহনগুলো গাবতলীর আমিনবাজার সেতু দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরাও আমিনবাজার ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। ঈদের সময় গাড়ির চাপে গাবতলী থেকে আমিনবাজার সেতু ১ কিলোমিটার সড়কে দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে যাত্রীরা জানান।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যানবাহনগুলো টঙ্গী ব্রিজ দিয়ে রাজধানী থেকে বের হয়র। এ পথে গাজীপুর থেকে উত্তরা বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণ কাজে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। সরু রাস্তার কারণে আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ

‘ঈদে নিরবচ্ছিন্ন’ যানবাহন চলাচলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বনানীর প্রধান কার্যালয়ে তৃতীয় তলায় এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বিআরটিএ ও বিআরটিসির সমন্বয়ে। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ৮ দিন বিভিন্ন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। গত বুধবার এক অফিস আদেশে এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার কথা জানানো হয়।

এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘ঈদে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এর আগে সড়ক সচিবের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে পুলিশের লোকসহ সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে ঈদে যাতায়াতে সড়ক-মহাসড়কে কোন সমস্যা না হয়।’