শেষ রক্ষা হয়নি, বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ছায়ার হাওর

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ৮১নং পিআইসির বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে সুবিশাল হাওর। কড়া তদারকি ও নজরদারির মধ্যেও রাতে ওই বাঁধে লিকেজ হয়ে গতকাল ভোরে বাঁধটি ভেঙে যায়। আর বাঁধটি ভাঙার পেছনে পিআইসির লোকজনের গাফিলতিকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তবে পিআইসির সভাপতির লোকজন এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন।

গত চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নদ-নদীর পানি বাড়লে উপজেলা প্রশাসন, পৌর বিভাগ, সংশ্লিষ্ট পিআইসির লোকজন ও এলাকাবাসী দিনরাত কাজ করে সবগুলো বাঁধ অক্ষত রাখলেও নদীর পানি কিছুটা কমে গিয়ে আবহাওয়া অনুকূল আসায় বাঁধের ওপর জনতৎপরতা কিছুটা হ্রাস পায়। কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ধান কাটায়। কৃষকরা বাঁধ ছেড়ে দিলেও উপজেলা প্রশাসন থেমে থাকেননি। প্রতিটি বাঁধেই প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

এরইমধ্যে গত শনিবার রাতে অতর্কিত কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলে ও প্রচ- বজ্রপাতের কারণে ৮১নং পিআইসির লোকজন চলে আসায় রাতেই এমন দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

বাঁধটি ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে চলে যায় কিন্তু স্রোতের প্রকোপে ভাঙন দ্রুত বাড়তে থাকায় কোন প্রতিকারে হাত দিতে পারেননি তারা। জানা যায়, উপজেলার ছায়ার হাওরে এ বছর শাল্লা অংশে ৪ হাজার ৬শ’ ৩৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। তাছাড়া কিশোরগঞ্জের ইটনা অংশে ও নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি অংশে প্রায় হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়।

শাল্লা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর ও ইউএনও অফিস সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ছায়ার হওরে ৯৫ শতাংশ জমির ফসল কাটা হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের অভিমত ভিন্ন। তারা বলছেন এখনো ছায়ার হাওরে ১৫ শতাংশের ওপরে ফসল রয়েছে। তারা এও বলছেন, পানিতে হাওর তলিয়ে যেতে দু’একদিন সময় লাগবে, এরই মধ্যে আরও কিছু ফসল কাটা সম্ভব হতে পারে।

ছায়ার হাওর পাড়ের সুলতানপুর গ্রামের কৃষক তকবির হোসেন বলেন, আমার প্রায় ৩০% জমি কাটা বাকি রয়েছে। লোকবলের অভাবে ধান কাটতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমার দেখা মতে ছায়ার হওরে প্রায় ১০ শতাংশ জমির ফসল এখনো রয়েছে। ওই হাওরের মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র চৌধুরী জানান এখনো ছায়ার হাওরে প্রায় ২৫ শতাংশ ফসল রয়ে গেছে। ৪নং শাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুস সাত্তার মিয়া জানান, হাওরে এখনো ছয় আনা জমির ফসল কাটা হয়নি। অন্যদিকে খালিয়াজুড়ির কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামীম মোড়লের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেল, আমার ইউনিয়ন এলাকায় এখনো ২০% ফসল রয়েছে। তবে আশা করছি, আজ কালের মধ্যে ধান কাটা শেষ করতে পারবো।

এ বিষয়ে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, পানি আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সাধারণ কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে এতোদিন বাঁধ অক্ষত রাখতে পেরেছি। কিন্তু গত রাতে প্রবল কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে কিছুটা বিঘœ ঘটেছে। তবে বাঁধের অক্ষত স্থানে কীভাবে ভেঙে গেলো বুঝে উঠতে পারছি না। এস্থানে বাঁধ ভাঙার কথা নয়। মূল ক্লোজার এখনো অক্ষত রয়েছে।

এরইমধ্যে ছায়ার হাওরের ৯৫ শতাংশ জমির ফসল কাটা হয়েছে মর্মে নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব।

সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২ , ১২ বৈশাখ ১৪২৮ ২৩ রমাদ্বান ১৪৪৩

শেষ রক্ষা হয়নি, বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ছায়ার হাওর

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ

image

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ৮১নং পিআইসির বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে সুবিশাল হাওর। কড়া তদারকি ও নজরদারির মধ্যেও রাতে ওই বাঁধে লিকেজ হয়ে গতকাল ভোরে বাঁধটি ভেঙে যায়। আর বাঁধটি ভাঙার পেছনে পিআইসির লোকজনের গাফিলতিকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তবে পিআইসির সভাপতির লোকজন এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন।

গত চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নদ-নদীর পানি বাড়লে উপজেলা প্রশাসন, পৌর বিভাগ, সংশ্লিষ্ট পিআইসির লোকজন ও এলাকাবাসী দিনরাত কাজ করে সবগুলো বাঁধ অক্ষত রাখলেও নদীর পানি কিছুটা কমে গিয়ে আবহাওয়া অনুকূল আসায় বাঁধের ওপর জনতৎপরতা কিছুটা হ্রাস পায়। কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ধান কাটায়। কৃষকরা বাঁধ ছেড়ে দিলেও উপজেলা প্রশাসন থেমে থাকেননি। প্রতিটি বাঁধেই প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

এরইমধ্যে গত শনিবার রাতে অতর্কিত কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলে ও প্রচ- বজ্রপাতের কারণে ৮১নং পিআইসির লোকজন চলে আসায় রাতেই এমন দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

বাঁধটি ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে চলে যায় কিন্তু স্রোতের প্রকোপে ভাঙন দ্রুত বাড়তে থাকায় কোন প্রতিকারে হাত দিতে পারেননি তারা। জানা যায়, উপজেলার ছায়ার হাওরে এ বছর শাল্লা অংশে ৪ হাজার ৬শ’ ৩৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। তাছাড়া কিশোরগঞ্জের ইটনা অংশে ও নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি অংশে প্রায় হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়।

শাল্লা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর ও ইউএনও অফিস সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ছায়ার হওরে ৯৫ শতাংশ জমির ফসল কাটা হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের অভিমত ভিন্ন। তারা বলছেন এখনো ছায়ার হাওরে ১৫ শতাংশের ওপরে ফসল রয়েছে। তারা এও বলছেন, পানিতে হাওর তলিয়ে যেতে দু’একদিন সময় লাগবে, এরই মধ্যে আরও কিছু ফসল কাটা সম্ভব হতে পারে।

ছায়ার হাওর পাড়ের সুলতানপুর গ্রামের কৃষক তকবির হোসেন বলেন, আমার প্রায় ৩০% জমি কাটা বাকি রয়েছে। লোকবলের অভাবে ধান কাটতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমার দেখা মতে ছায়ার হওরে প্রায় ১০ শতাংশ জমির ফসল এখনো রয়েছে। ওই হাওরের মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র চৌধুরী জানান এখনো ছায়ার হাওরে প্রায় ২৫ শতাংশ ফসল রয়ে গেছে। ৪নং শাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুস সাত্তার মিয়া জানান, হাওরে এখনো ছয় আনা জমির ফসল কাটা হয়নি। অন্যদিকে খালিয়াজুড়ির কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামীম মোড়লের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেল, আমার ইউনিয়ন এলাকায় এখনো ২০% ফসল রয়েছে। তবে আশা করছি, আজ কালের মধ্যে ধান কাটা শেষ করতে পারবো।

এ বিষয়ে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, পানি আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সাধারণ কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে এতোদিন বাঁধ অক্ষত রাখতে পেরেছি। কিন্তু গত রাতে প্রবল কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে কিছুটা বিঘœ ঘটেছে। তবে বাঁধের অক্ষত স্থানে কীভাবে ভেঙে গেলো বুঝে উঠতে পারছি না। এস্থানে বাঁধ ভাঙার কথা নয়। মূল ক্লোজার এখনো অক্ষত রয়েছে।

এরইমধ্যে ছায়ার হাওরের ৯৫ শতাংশ জমির ফসল কাটা হয়েছে মর্মে নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব।