শিল্প-কারখানাসহ প্রতিটি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে

বহুতল ভবন নির্মাণকালে ফুটপাত দখল করা যাবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিল্প-কলকারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি ভবনে খোলা জায়গা রাখতে হবে। দ্রুত অগ্নিনির্বাপণে জলাধারগুলো ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হবে। বহুতল ভবন করতে গিয়ে অবশ্যই ফুটপাতের জন্য জায়গা রাখতে হবে। যেন মানুষের চলাচলসহ কোন দুর্ঘটনায় ফায়ার ফাইটাররা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে পারে। এজন্য প্রকৌশলীদের সবকিছু চিন্তা করে ভবন বা প্রকল্প ডিজাইন করতে হবে। গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ভবনে আয়োজিত দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি নবনির্মিত ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধনকালে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে দমকল বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ওপর একটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে বসুন্ধরা শপিংমলের অগ্নিকা-ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বসুন্ধরা সিটি যেখানে নির্মাণ করা হয় সে জায়গাটি ছিল খাল। সেখানে নৌকাও আসত। এছাড়া এলাকাটি ছিল বিল এলাকা। সেই বিল এলাকা ভরাটের কারণে এবং খালে বক্স কালভার্ট তৈরি করায় বসুন্ধরায় আগুন লাগার সময় নির্বাপণের জন্য সেখানে পানি পাওয়া যায়নি। পানি আনতে হয়েছে সোনারগাঁ হোটেলের সুইমিং পুল থেকে। এটাই ছিল আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বহুতল ভবন করতে গিয়ে, নিচে গাড়ি রাখার জায়গা করতে গিয়ে ফুটপাতগুলো দখল করা হয়। যেসব আর্কিটেক্ট বা প্রকৌশলীরা এসব ডিজাইন করেন তারাই এমনটা করেন। এর ফলে ঢাকার ফুটপাত দখল হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর গুলশানসহ বহু জায়গায় বড় ভবনগুলো ফুটপাতের জায়গা দখল রেখেই হয়েছে। দেখা যায়, গাড়ি বের হওয়ার সময় ফুটপাত দিয়ে বের হচ্ছে। ফুটপাত ফাঁকা রাখলে এমনটা হতো না। কেউ একটু জায়গাও ফাঁকা রাখতে চায় না। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টসহ সবাইকে নজর রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসের প্ল্যান করার সময়ও ফুটপাতের জায়গা ফাঁকা রেখে ও সামনে উঠান রেখে করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কাজ শেষে দেখা গেল, উঠান তো নেই। এছাড়া ফুটপাতের জায়গাও দখল হয়ে গেছে। পরে ফুটপাতের জায়গা ছেড়ে দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে বিশে^র অনেক দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধেরও একটা প্রভাব পড়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ে খেলা খেলবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। একইভাবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুর্গত এলাকায় যেন দমকল বাহিনীর গাড়ি পৌঁছতে পারে, সেজন্য রাস্তার প্রশস্ততার পাশাপাশি পানির সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, স্থাপত্যবিদ বা প্রকৌশলীদের সবকিছু চিন্তা করে ডিজাইন করতে হবে। তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে নতুন কোন প্রকল্প গ্রহণ করলে সেখানে অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক ব্যবস্থা যেমন রাখতে হবে, তেমনি নির্বাপণে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ কারণে জলাধারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।

নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার স্টেশন হলো টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ফায়ার স্টেশন, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, দৌলতপুর ও সাটুরিয়া ফায়ার স্টেশন, গাজীপুরের কাপাসিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর (পুনর্নির্মাণ) ও সিরাজদিখান, মাগুরা সদর (পুনর্নির্মাণ), কিশোরগঞ্জের নিকলী স্থল কাম-নদী, ঢাকার কল্যাণপুর, জামালপুর সদর ও সরিষাবাড়ী (পুনর্নির্মাণ), যশোর সদর ও ঝিকরগাছা (পুনর্নির্মাণ), যশোর সেনানিবাস, যশোরের চৌগাছা ও কেশবপুর, বাগেরহাটের মোল্লাহাট, ফরিদপুর সদর (পুনর্নির্মাণ), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, খাগড়াছড়ির পানছড়ি, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, কিশোরগঞ্জের ইটনা, অষ্টগ্রাম, হোসেনপুর, মিঠামইন ও পাকুন্দিয়া, মেহেরপুরের মুজিবনগর, রাজবাড়ীর কালুখালী, সাতক্ষীরার দেবহাটা, নোয়াখালীর কবিরহাট, বিবাড়ীয়ার বিজয়নগর, বান্দরবানের থানচি ও রামু, খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, নেত্রকোনার পূর্বধলা, ময়মনসিংহের গৌরীপুর এবং মাদারীপুরের কালকিনি ফায়ার স্টেশন।

সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২ , ১২ বৈশাখ ১৪২৮ ২৩ রমাদ্বান ১৪৪৩

শিল্প-কারখানাসহ প্রতিটি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে

বহুতল ভবন নির্মাণকালে ফুটপাত দখল করা যাবে না

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিল্প-কলকারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি ভবনে খোলা জায়গা রাখতে হবে। দ্রুত অগ্নিনির্বাপণে জলাধারগুলো ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হবে। বহুতল ভবন করতে গিয়ে অবশ্যই ফুটপাতের জন্য জায়গা রাখতে হবে। যেন মানুষের চলাচলসহ কোন দুর্ঘটনায় ফায়ার ফাইটাররা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে পারে। এজন্য প্রকৌশলীদের সবকিছু চিন্তা করে ভবন বা প্রকল্প ডিজাইন করতে হবে। গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ভবনে আয়োজিত দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি নবনির্মিত ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধনকালে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে দমকল বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ওপর একটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে বসুন্ধরা শপিংমলের অগ্নিকা-ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বসুন্ধরা সিটি যেখানে নির্মাণ করা হয় সে জায়গাটি ছিল খাল। সেখানে নৌকাও আসত। এছাড়া এলাকাটি ছিল বিল এলাকা। সেই বিল এলাকা ভরাটের কারণে এবং খালে বক্স কালভার্ট তৈরি করায় বসুন্ধরায় আগুন লাগার সময় নির্বাপণের জন্য সেখানে পানি পাওয়া যায়নি। পানি আনতে হয়েছে সোনারগাঁ হোটেলের সুইমিং পুল থেকে। এটাই ছিল আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বহুতল ভবন করতে গিয়ে, নিচে গাড়ি রাখার জায়গা করতে গিয়ে ফুটপাতগুলো দখল করা হয়। যেসব আর্কিটেক্ট বা প্রকৌশলীরা এসব ডিজাইন করেন তারাই এমনটা করেন। এর ফলে ঢাকার ফুটপাত দখল হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর গুলশানসহ বহু জায়গায় বড় ভবনগুলো ফুটপাতের জায়গা দখল রেখেই হয়েছে। দেখা যায়, গাড়ি বের হওয়ার সময় ফুটপাত দিয়ে বের হচ্ছে। ফুটপাত ফাঁকা রাখলে এমনটা হতো না। কেউ একটু জায়গাও ফাঁকা রাখতে চায় না। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টসহ সবাইকে নজর রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসের প্ল্যান করার সময়ও ফুটপাতের জায়গা ফাঁকা রেখে ও সামনে উঠান রেখে করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কাজ শেষে দেখা গেল, উঠান তো নেই। এছাড়া ফুটপাতের জায়গাও দখল হয়ে গেছে। পরে ফুটপাতের জায়গা ছেড়ে দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে বিশে^র অনেক দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধেরও একটা প্রভাব পড়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ে খেলা খেলবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। একইভাবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুর্গত এলাকায় যেন দমকল বাহিনীর গাড়ি পৌঁছতে পারে, সেজন্য রাস্তার প্রশস্ততার পাশাপাশি পানির সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, স্থাপত্যবিদ বা প্রকৌশলীদের সবকিছু চিন্তা করে ডিজাইন করতে হবে। তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে নতুন কোন প্রকল্প গ্রহণ করলে সেখানে অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক ব্যবস্থা যেমন রাখতে হবে, তেমনি নির্বাপণে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ কারণে জলাধারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।

নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার স্টেশন হলো টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ফায়ার স্টেশন, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, দৌলতপুর ও সাটুরিয়া ফায়ার স্টেশন, গাজীপুরের কাপাসিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর (পুনর্নির্মাণ) ও সিরাজদিখান, মাগুরা সদর (পুনর্নির্মাণ), কিশোরগঞ্জের নিকলী স্থল কাম-নদী, ঢাকার কল্যাণপুর, জামালপুর সদর ও সরিষাবাড়ী (পুনর্নির্মাণ), যশোর সদর ও ঝিকরগাছা (পুনর্নির্মাণ), যশোর সেনানিবাস, যশোরের চৌগাছা ও কেশবপুর, বাগেরহাটের মোল্লাহাট, ফরিদপুর সদর (পুনর্নির্মাণ), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, খাগড়াছড়ির পানছড়ি, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, কিশোরগঞ্জের ইটনা, অষ্টগ্রাম, হোসেনপুর, মিঠামইন ও পাকুন্দিয়া, মেহেরপুরের মুজিবনগর, রাজবাড়ীর কালুখালী, সাতক্ষীরার দেবহাটা, নোয়াখালীর কবিরহাট, বিবাড়ীয়ার বিজয়নগর, বান্দরবানের থানচি ও রামু, খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, নেত্রকোনার পূর্বধলা, ময়মনসিংহের গৌরীপুর এবং মাদারীপুরের কালকিনি ফায়ার স্টেশন।