রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি : বিচার দাবি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণে জাতীয় মানদণ্ড তৈরির দাবি

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছর পূর্ণ হলো গতকাল। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে ধসে পড়েছিল ৯ তলা ভবনটি। এটি ছিল দেশের পোশাক শিল্পে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত ও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জাতীয় মানদণ্ড তৈরিসহ রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে শ্রমিক নেতারা। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের উদ্যোগে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৯ বছর স্মরণে মানববন্ধন থেকে শ্রমিক নেতারা এ দাবি করেন।

হতাহতদের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ ও আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক নির্বিশেষে সকল শ্রমিককে শ্রম আইনের আওতায় আনতে হবে। নির্মাণ, রাসায়নিক ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রগুলো পরিদর্শনে দেশব্যাপী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বা ঝটিকা পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার দাবিও জানান তারা।

৯ বছর হয়ে গেলেও রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলা ও বিল্ডিং কোড সংক্রান্ত আইন ভঙ্গের মামলা আজও নিষ্পত্তি হয়নি উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টাকা করার সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

২০০৬ সালে শ্রম আইনে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর ১৩ বছর পর ২০১৮ সালের শ্রম আইন সংশোধনীতে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহি আজও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

ভবন ধসে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ১৭৫ জন শ্রমিক। আহতদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

দিনটির স্মরণে শ্রমিক সংগঠন, আহত শ্রমিক, নিহত শ্রমিকদের স্বজনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সে সময় বিভিন্ন দাবিও তুলে ধরেন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মী, আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, যাদের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, ৯ বছরেও তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোও এখনো যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায়নি। তাদের দাবি, ভবন মালিক সোহেল রানাসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া।

এছাড়া তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের পুনর্বাসন করা, আহত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং শ্রমিকদের আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা।

রানা প্লাজার জায়গাটি অধিগ্রহণ করে শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ ও ২৪ এপ্রিলকে ‘জাতীয় শ্রমিক শোক দিবস’ ঘোষণা করার দাবিও জানানো হয়েছে।

শ্রমিক সংগঠনগুলো এর আগের বর্ষপূর্তিতে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সারাদেশে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু তাদের একটি দাবিও পূরণ হয়নি বলে তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে আহত শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও উপার্জনক্ষম আপনজনকে হারিয়ে অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ক্ষতিপূরণ দেয়া হলে তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারতেন। চিকিৎসা করাতে পারতেন।’

‘বিচারে ধীর গতির জন্য’ হতাশা প্রকাশ করে রফিকুল ইসলাম সুজন আরও বলেন, ‘গত ৯ বছরে ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে মামলা চলতে থাকলে হাজার বছরেও এর নিষ্পত্তি হবে না। বিচার কার্যক্রম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করতে হবে।’

image

জুরাইন কবরস্থানে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে স্বজনসহ বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন -সংবাদ

আরও খবর
শিল্প-কারখানাসহ প্রতিটি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে
পাকিস্তানের নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ জন সিনেটরের বিবৃতি
প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন সংবাদপত্র শিল্পকে আরও রুগ্ণ করবে : নোয়াব
কৃষিতে বৈরী আবহাওয়া সফলভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে : কৃষিমন্ত্রী
ঈদযাত্রায় মহাসড়কে নিরাপত্তা ছক
মাতার বাড়ি টার্মিনাল হলে ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে
বাবার কোলে শিশু হত্যা : অস্ত্রের যোগানদাতা গ্রেপ্তার
কলাবাগান তেঁতুলতলা : শিশুদের খেলার মাঠ দখল করে থানা বানানোর পাঁয়তারা, প্রতিবাদ করায় মা-ছেলেকে আটক

সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২ , ১২ বৈশাখ ১৪২৮ ২৩ রমাদ্বান ১৪৪৩

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি : বিচার দাবি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণে জাতীয় মানদণ্ড তৈরির দাবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

জুরাইন কবরস্থানে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে স্বজনসহ বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন -সংবাদ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছর পূর্ণ হলো গতকাল। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে ধসে পড়েছিল ৯ তলা ভবনটি। এটি ছিল দেশের পোশাক শিল্পে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত ও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জাতীয় মানদণ্ড তৈরিসহ রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে শ্রমিক নেতারা। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের উদ্যোগে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৯ বছর স্মরণে মানববন্ধন থেকে শ্রমিক নেতারা এ দাবি করেন।

হতাহতদের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ ও আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক নির্বিশেষে সকল শ্রমিককে শ্রম আইনের আওতায় আনতে হবে। নির্মাণ, রাসায়নিক ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রগুলো পরিদর্শনে দেশব্যাপী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বা ঝটিকা পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার দাবিও জানান তারা।

৯ বছর হয়ে গেলেও রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলা ও বিল্ডিং কোড সংক্রান্ত আইন ভঙ্গের মামলা আজও নিষ্পত্তি হয়নি উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টাকা করার সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

২০০৬ সালে শ্রম আইনে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর ১৩ বছর পর ২০১৮ সালের শ্রম আইন সংশোধনীতে নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহি আজও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

ভবন ধসে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ১৭৫ জন শ্রমিক। আহতদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

দিনটির স্মরণে শ্রমিক সংগঠন, আহত শ্রমিক, নিহত শ্রমিকদের স্বজনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সে সময় বিভিন্ন দাবিও তুলে ধরেন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মী, আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, যাদের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, ৯ বছরেও তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোও এখনো যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায়নি। তাদের দাবি, ভবন মালিক সোহেল রানাসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া।

এছাড়া তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের পুনর্বাসন করা, আহত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং শ্রমিকদের আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা।

রানা প্লাজার জায়গাটি অধিগ্রহণ করে শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ ও ২৪ এপ্রিলকে ‘জাতীয় শ্রমিক শোক দিবস’ ঘোষণা করার দাবিও জানানো হয়েছে।

শ্রমিক সংগঠনগুলো এর আগের বর্ষপূর্তিতে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সারাদেশে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু তাদের একটি দাবিও পূরণ হয়নি বলে তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে আহত শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও উপার্জনক্ষম আপনজনকে হারিয়ে অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ক্ষতিপূরণ দেয়া হলে তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারতেন। চিকিৎসা করাতে পারতেন।’

‘বিচারে ধীর গতির জন্য’ হতাশা প্রকাশ করে রফিকুল ইসলাম সুজন আরও বলেন, ‘গত ৯ বছরে ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে মামলা চলতে থাকলে হাজার বছরেও এর নিষ্পত্তি হবে না। বিচার কার্যক্রম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করতে হবে।’