মাতার বাড়ি টার্মিনাল হলে ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে

সংবাদ সম্মেলনে বন্দর কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান

মাতারবাড়ী টার্মিনাল হলে ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। একই সঙ্গে বে-টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে বন্দরের সক্ষমতা ৩-৪ গুণ বাড়বে বলে জানান তিনি। গতকাল রোববার শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে বন্দরের ১৩৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রচারমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা’য় এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, ১ হাজার ২২৫ মিটার ও ৮০০ দীর্ঘ ২টি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানান, বছরে সাড়ে ৪ লাখ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বন্দরের ১ হাজার ২২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ৬০০ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার লম্বা ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের তিনটি কনটেইনার জাহাজ ও ২২০ মিটার লম্বা ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে। আগামী জুলাইতে পিসিটির কার্যক্রম শুরু হবে আশা করি।

তিনি জানান, গত ৩০ মার্চ মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ২৮৩ দশমিক ২৭ একর জমি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে। বন্দর নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে সহসা দরপত্র আহ্বান করা হবে। মাতারবাড়ী টার্মিনাল হলে ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে।

তিনি বলেন, বে-টার্মিনাল প্রকল্পাধীন ৬৭ একর ব্যক্তিমালিকানার জমির দলিল ২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বন্দরকে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আরও ৮০৩ একর জমি প্রতীকী মূল্যে বন্দরের অনুকূলে বরাদ্দ দিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের পথে সরাসরি শিপিং সার্ভিস চালু আরএমজি পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে সমুদ্রপথে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে। ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’ ৯৫২ কনটেইনার পণ্য নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বন্দর ছেড়েছিল। চট্টগ্রাম থেকে ইউএসএ রুটেও সরাসরি জাহাজ চলাচলের সুযোগ রয়েছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এক দশকে ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ড তৈরি করায় কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, পোর্ট লিমিট ৭ নটিক্যাল মাইল থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত করা হয়েছে। পোর্ট লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়াতে কান্ডারি ৬ ও ১২ নামের ২টি টাগবোট, ২টি মুরিং লঞ্চ, ২টি সাইট স্ক্যান সোনার, ২টি ইকো সাউন্ডার, ১টি সমুদ্রগামী হারবার টাগবোট সংগ্রহ করা হয়েছে। গত এক দশকে শিপ টু শোর কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, মোবাইল হারবার ক্রেন, রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের ৩৯০টি কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মো. মোস্তফিজুর রহমান, সদস্য (অর্থ) কামরুল আমিন, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রগমান, সব বিভাগীয় প্রধান ও সিবিএ নেতারা।

বন্দর চেয়ারম্যান আরও জানান, বেসরকারি আইসিডিতে বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নানা ছাড় দেয়া হচ্ছে। বন্দরের ১ নম্বর জেটি গেটের কাছে মাল্টি স্টোরেড কার শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। বিপজ্জনক, তেজষ্ক্রিয় ও রাসায়নিক পণ্য নিরাপদে আমদানি রপ্তানির সুবিধার্থে স্টেট অব আর্ট ক্যামিকেল শেড গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ২০২১ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউস, প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৬৬ লাখ টন, প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৩ শতাংশ। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ২০৯টি, প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ। এ অর্জন বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি প্রক্ষেপণ ছাড়িয়ে গেছে।

সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২ , ১২ বৈশাখ ১৪২৮ ২৩ রমাদ্বান ১৪৪৩

মাতার বাড়ি টার্মিনাল হলে ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে

সংবাদ সম্মেলনে বন্দর কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম ব্যুরো

মাতারবাড়ী টার্মিনাল হলে ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। একই সঙ্গে বে-টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে বন্দরের সক্ষমতা ৩-৪ গুণ বাড়বে বলে জানান তিনি। গতকাল রোববার শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে বন্দরের ১৩৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রচারমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা’য় এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, ১ হাজার ২২৫ মিটার ও ৮০০ দীর্ঘ ২টি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানান, বছরে সাড়ে ৪ লাখ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বন্দরের ১ হাজার ২২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ৬০০ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার লম্বা ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের তিনটি কনটেইনার জাহাজ ও ২২০ মিটার লম্বা ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে। আগামী জুলাইতে পিসিটির কার্যক্রম শুরু হবে আশা করি।

তিনি জানান, গত ৩০ মার্চ মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ২৮৩ দশমিক ২৭ একর জমি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে। বন্দর নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে সহসা দরপত্র আহ্বান করা হবে। মাতারবাড়ী টার্মিনাল হলে ১৬ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে।

তিনি বলেন, বে-টার্মিনাল প্রকল্পাধীন ৬৭ একর ব্যক্তিমালিকানার জমির দলিল ২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বন্দরকে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আরও ৮০৩ একর জমি প্রতীকী মূল্যে বন্দরের অনুকূলে বরাদ্দ দিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের পথে সরাসরি শিপিং সার্ভিস চালু আরএমজি পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে সমুদ্রপথে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে। ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’ ৯৫২ কনটেইনার পণ্য নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বন্দর ছেড়েছিল। চট্টগ্রাম থেকে ইউএসএ রুটেও সরাসরি জাহাজ চলাচলের সুযোগ রয়েছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এক দশকে ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ড তৈরি করায় কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, পোর্ট লিমিট ৭ নটিক্যাল মাইল থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত করা হয়েছে। পোর্ট লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়াতে কান্ডারি ৬ ও ১২ নামের ২টি টাগবোট, ২টি মুরিং লঞ্চ, ২টি সাইট স্ক্যান সোনার, ২টি ইকো সাউন্ডার, ১টি সমুদ্রগামী হারবার টাগবোট সংগ্রহ করা হয়েছে। গত এক দশকে শিপ টু শোর কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, মোবাইল হারবার ক্রেন, রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের ৩৯০টি কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মো. মোস্তফিজুর রহমান, সদস্য (অর্থ) কামরুল আমিন, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রগমান, সব বিভাগীয় প্রধান ও সিবিএ নেতারা।

বন্দর চেয়ারম্যান আরও জানান, বেসরকারি আইসিডিতে বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নানা ছাড় দেয়া হচ্ছে। বন্দরের ১ নম্বর জেটি গেটের কাছে মাল্টি স্টোরেড কার শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। বিপজ্জনক, তেজষ্ক্রিয় ও রাসায়নিক পণ্য নিরাপদে আমদানি রপ্তানির সুবিধার্থে স্টেট অব আর্ট ক্যামিকেল শেড গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ২০২১ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউস, প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৬৬ লাখ টন, প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৩ শতাংশ। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ২০৯টি, প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ। এ অর্জন বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি প্রক্ষেপণ ছাড়িয়ে গেছে।