সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যু : আরেক মহামারী

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

সড়ক দুর্ঘটনা দেশে এক গুরুতর জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। চলমান করোনা মহামারীর মধ্যে এ যেন আরেক অতিমারী। সারা দেশে সড়ক পথের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। নিশ্চিত হয়নি সড়ক পথের শৃঙ্খলা। বিভিন্ন সময়ে বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার পর গঠিত কমিটিগুলো নানা সুপারিশ করেছে। এর আলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়েছে অনেক সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও দেয়া হয়েছে নির্দেশনা। আবার নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে আদালতকেও। কোনভাবেই সড়ক পথে শৃঙ্খলা ফেরেনি, নিশ্চিত করা যায়নি নিরাপত্তা। সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, আর ঝরছে প্রাণ। ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫ হাজার ৪৩১ জন আর ২০২১ সালে মারা গেছে ৬ হাজার ২৮৪ জন। দেশে কোভিড-১৯ রোগের প্রকোপ বাড়ার কারণে গত বছর গণপরিবহন বন্ধ ছিল ৮৫ দিন। এরপরও ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে, প্রাণহানির ঘটনাও বেড়েছে। তবে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে ২০৩০ সালে সরকার সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সড়ক পরিবহন খাতে অব্যবস্থাপনার কারণে এসডিজি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বার্ষিক মৃত্যুহার উচ্চ আয়ের দেশগুলোর দ্বিগুণ এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ নৈপুণ্য দেখানো অর্থনীতিগুলোর চেয়ে পাঁচগুণের অধিক। আঞ্চলিক গড় বিবেচনায়ও দেশে সড়কে মৃত্যুহার বেশি। এসব তথ্য দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সড়ক নিরাপত্তার নাজুক চিত্রই তুলে ধরে।

নিরাপদ সড়কের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন পূর্বক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতিসংঘ গত দশককে ‘সড়ক নিরাপত্তা দশক’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এ সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে আনার বিষয়ে সদস্য দেশগুলো একমতও হয়েছিল। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশে সড়ক নিরাপত্তায় দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ করা গেলেও দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে এখনো সড়ক দুর্ঘটনা ঊর্ধ্বমুখী। শুধু মানবিক নয়, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দুর্ঘটনা রোধ করা প্রয়োজন। গবেষণায় উঠে এসেছে, কর্মক্ষম মানুষই বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে ক্ষতির শিকার। সেদিক থেকে কর্মক্ষম একজন মানুষের মৃত্যু একই সঙ্গে কোন কোন পরিবারের জন্য আয় হারানো এবং জাতীয় আয়ে নেতিবাচক প্রভাবের কারণও বটে। এক হিসাব বলছে, ৫০ শতাংশ দুর্ঘটনা হ্রাসের টার্গেট পরিপূরণ ৭ থেকে ২২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে। এটি সংশ্লিষ্টদের গভীরভাবে আমলে নেয়া চাই। দেশে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার প্রতিষ্ঠান অনেক। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও সংস্থা এক্ষেত্রে নিয়োজিত। অথচ পারস্পরিক সমন্বয়হীনতার কারণে এক্ষেত্রে সুফল মিলছে না। এ ধরনের সমন্বয়হীনতা দ্রুত দূর করা দরকার। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণীত হয়েছে। কিন্তু আইনটির বেশির ভাগ ধারার প্রয়োগ এখনো শুরু হয়নি। বলতে গেলে আইন প্রয়োগের শিথিলতা, সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিশৃঙ্খলা, চালক মালিকদের বেপরোয়া মনোভাব পুরো সড়ক ব্যবস্থাকে দিন দিন অনিরাপদ করে তুলছে।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে এ ডিজিটাল যুগেও দেশে এখনো হাতের ইশারায় ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনা করা হচ্ছে। সড়ক নিরাপদ করবার তাগিদে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অচিরেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা উচিত। নচেৎ মান্ধাতা আমলের ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলবে। সড়ক দুর্ঘটনায় উপরের বিভিন্ন কারণগুলো যেমন বিদ্যমান, তেমনি ট্রাফিক আইন অমান্য করাও বিদ্যমান। ট্রাফিক আইন অমান্য করবার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বহুগুণ। চালক যাত্রী পথচারী সবাইকে ট্রাফিক আইন মানাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সঙ্গে চালকদের প্রশিক্ষণ, সড়ক আইন সম্পর্কে বেশি করে প্রচার, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, ট্রাফিক ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন করা, ট্রাফিকদের ডিউটির ঘণ্টা কমিয়ে ট্রাফিকদের সংখ্যা বাড়ানো, রাস্তÍায় ভাসমান দোকান বন্ধ, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংমুক্ত করা, গাড়ির গতিরোধ এবং গাড়ির ওভারলোডিং নিয়ন্ত্রণ করা সর্বোপরি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার চালকদের প্রশিক্ষিত করা। দক্ষতা বৃদ্ধি করা। লাইসেন্স দেয়ার সময় অবশ্যই চালকদের দক্ষতা ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে অবৈধভাবে লাইসেন্স দেয়া। সড়কে গাড়ি চালনার সময় করণীয় সম্পর্কে চালকদের সচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি।

রাজধানীতে যদি যানজট না থাকত, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন যে কত মানুষের প্রাণহানি ঘটত, তা কল্পনাও করা যায় না। ঢাকার চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে এবং বাসে বাসে সংঘর্ষ ঘটে। ফুটপাত দখল হওয়ার কারণে মানুষ যেভাবে সড়ক ধরে হাঁটে, তাতে হতাহতের সংখ্যা যে আরও বেশি হয় না, সেটাই ভাগ্য। যানজট কিছুটা বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ঢাকা শহর যদি যানজটমুক্ত থাকত এবং যেসব চালকের হাতে এখন গাড়ির স্টিয়ারিং, তাতে রাজধানীর সড়কগুলো লাশের মিছিলে পরিণত হতো। গাড়ি চালকদের এই বেপরোয়া মনোভাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সড়ক-মহাসড়কের ত্রুটিপূর্ণ সংস্কার ও নির্মাণকাজ। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, দেশব্যাপী দুর্ঘটনা প্রবণ প্রায় পাঁচ শতাধিক বিপজ্জনক এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, এলাকা চিহ্নিত হয়েছে ঠিকই, তবে সেগুলোর সংস্কার কাজ এগোয়নি। মহাসড়কে অবৈধভাবে হাট-বাজার বসার পাশাপাশি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে অটোবাইক, ট্রলি, রিকশা, ভ্যান, মোটরবাইক, ট্রাক ও কভার্ডভ্যান ইত্যাদির চলাচলকেও দায়ী কার হয়েছে। কয়েক মাস আগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করলেও তাতে কোন কাজ হয়নি। অবাধেই এসব যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া মহাসড়কের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য সরুপথ যুক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে যেগুলোকে মহাসড়ক বলা হয়, আদতে সেগুলো মহাসড়ক নয়। উন্নত বিশ্বের মহাসড়ক লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেগুলোতে এলাকাভিত্তিক কোন রাস্তা এসে যুক্ত হয়নি। এগুলো শাখা-প্রশাখাহীন একক সড়ক। বাংলাদেশে এ ধরনের মহাসড়ক নেই। এছাড়া বিভিন্ন যানবাহনের ধরন অনুযায়ী সড়কে আলাদা লেইন/বাই লেইন নির্ধারণপূর্বক তার যথাযথ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে।

ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে লাফিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক-মহাসড়কে ২৪ লাখ অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকের দাপটে দুর্ঘটনায় লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সড়কে ঝরছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ২০২১ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এতে নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত ৭ হাজার ৪৬৮ জন, যা বিগত দুই বছরের তুলনায় অনেক বেশি। শেষ বছরের দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ৯ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা জিডিপির দশমিক ৩ শতাংশ। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ২১৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন শিক্ষার্থী। মোট নিহতের মধ্যে ৮০৩ জনই শিক্ষার্থী। বিভিন্ন সময় সড়কে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু নিয়ে বড় পরিসরে প্রতিবাদও হয়েছে। এরপর কর্তৃপক্ষ শুধু পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা পদক্ষেপের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন কখনোই হচ্ছে না। এমনকি সড়ক পরিবহন আইন শিরোনামের একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হলেও সেটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি ধারা শিথিল করা হয়েছে। সেখানে মৃত্যুজনিত বিষয়, চালকদের লাইসেন্সসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দক্ষ চালক তৈরি, ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য আলাদা রাস্তা তৈরিসহ বেশকিছু সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব বাস্তবায়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন তারা।

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি নেই। খোদ প্রধানমন্ত্রীও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময়ে সুপারিশ দিয়েছেন। কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে বান্তবায়িত হয়নি। দেশে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে এসব সুপারিশ ও নির্দেশনা বাস্তবায়নের সময় এসেছে। শুধু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নয়, সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রেও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভেবে দেখা উচিত। নিরাপদ সড়ক তৈরির জন্য সুপরিকল্পিত নকশা এবং এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে কাজ করাটা জরুরি। মহাসড়কগুলোয় ফিডার রোড দিয়ে কম গতির গাড়ি, মোটরবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা দরকার, যাতে দুর্ঘটনা হ্রাস পায়। আর মহাসড়কের পাশে থাকা বাজার, মানুষজন রাস্তা পারাপার হয় এমন স্থানগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোয় আজকাল আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এমনকি ভারতও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সনাতনী কায়দায় চলছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। বাইরের অভিজ্ঞতাগুলো আমলে নিয়ে দুর্ঘটনা কমাতে প্রযুক্তিভিত্তিক নানা উদ্ভাবনী সমাধানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। একই সঙ্গে সড়ক মহাসড়কে বাড়াতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি। অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ বাড়ানো হলেও দেশে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিনিয়োগ এখনো অনুল্লেখযোগ্য। বিশ্বব্যাংক এক্ষেত্রে নৈপুণ্য বাড়াতে বিনিয়োগের ওপর জোরারোপ করেছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বে অর্থায়ন নিশ্চিত করা যেতে পারে। সর্বোপরি বাড়াতে হবে জনগণের সচেতনতা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পিত উদ্যোগে দেশে টেকসই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে প্রত্যাশা।

নিরাপদ সড়কের জন্য নিরাপদ যান সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, কঠোর আইন ও শৃঙ্খলা অপরিহার্য। সড়ক যাতায়াত এবং যানবাহনের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর হার কমে আসবে। প্রয়োজনে কঠোর এবং কঠিন আইন করে হলেও এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনে সেনা সাহায্য তলব করে হলেও কঠোরতর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশে পরিবহন সেক্টরগুলোতে বিভিন্ন অনিয়ম, দৌরাত্ম্য চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে রাস্তা ও ফুটপাত দখল ইত্যাদি অনিয়ম ও নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠা করে চলছে। তাদের সেই দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করার জন্য অবশ্যই তাদের নিয়ন্ত্রিত পথ ও প্রক্রিয়ার অনুষঙ্গ মেনে চলতে হবে। ডিজিটাল যুগে টেকসই এবং আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ছাড়া সড়কের শৃঙ্খলা আনায়ন অসম্ভব। সামনে ঈদ এ সময়ে সড়ক মহাসড়কগুলো এবং পরিবহন সেক্টরে নজরদারি ও মনিটারিং জোরদার করতে হবে। সর্বোপরি সমন্বিত পরিকল্পনা, সতর্কতা ও সচেতনতায় সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুকে কমিয়ে আনতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেÑজনগণ তাই প্রত্যাশা করে।

[লেখক : সাবেক উপমহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী]

সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২ , ১২ বৈশাখ ১৪২৮ ২৩ রমাদ্বান ১৪৪৩

সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যু : আরেক মহামারী

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

সড়ক দুর্ঘটনা দেশে এক গুরুতর জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। চলমান করোনা মহামারীর মধ্যে এ যেন আরেক অতিমারী। সারা দেশে সড়ক পথের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। নিশ্চিত হয়নি সড়ক পথের শৃঙ্খলা। বিভিন্ন সময়ে বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার পর গঠিত কমিটিগুলো নানা সুপারিশ করেছে। এর আলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়েছে অনেক সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও দেয়া হয়েছে নির্দেশনা। আবার নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে আদালতকেও। কোনভাবেই সড়ক পথে শৃঙ্খলা ফেরেনি, নিশ্চিত করা যায়নি নিরাপত্তা। সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, আর ঝরছে প্রাণ। ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫ হাজার ৪৩১ জন আর ২০২১ সালে মারা গেছে ৬ হাজার ২৮৪ জন। দেশে কোভিড-১৯ রোগের প্রকোপ বাড়ার কারণে গত বছর গণপরিবহন বন্ধ ছিল ৮৫ দিন। এরপরও ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে, প্রাণহানির ঘটনাও বেড়েছে। তবে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে ২০৩০ সালে সরকার সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সড়ক পরিবহন খাতে অব্যবস্থাপনার কারণে এসডিজি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বার্ষিক মৃত্যুহার উচ্চ আয়ের দেশগুলোর দ্বিগুণ এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ নৈপুণ্য দেখানো অর্থনীতিগুলোর চেয়ে পাঁচগুণের অধিক। আঞ্চলিক গড় বিবেচনায়ও দেশে সড়কে মৃত্যুহার বেশি। এসব তথ্য দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সড়ক নিরাপত্তার নাজুক চিত্রই তুলে ধরে।

নিরাপদ সড়কের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন পূর্বক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতিসংঘ গত দশককে ‘সড়ক নিরাপত্তা দশক’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এ সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে আনার বিষয়ে সদস্য দেশগুলো একমতও হয়েছিল। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশে সড়ক নিরাপত্তায় দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ করা গেলেও দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে এখনো সড়ক দুর্ঘটনা ঊর্ধ্বমুখী। শুধু মানবিক নয়, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দুর্ঘটনা রোধ করা প্রয়োজন। গবেষণায় উঠে এসেছে, কর্মক্ষম মানুষই বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে ক্ষতির শিকার। সেদিক থেকে কর্মক্ষম একজন মানুষের মৃত্যু একই সঙ্গে কোন কোন পরিবারের জন্য আয় হারানো এবং জাতীয় আয়ে নেতিবাচক প্রভাবের কারণও বটে। এক হিসাব বলছে, ৫০ শতাংশ দুর্ঘটনা হ্রাসের টার্গেট পরিপূরণ ৭ থেকে ২২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে। এটি সংশ্লিষ্টদের গভীরভাবে আমলে নেয়া চাই। দেশে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার প্রতিষ্ঠান অনেক। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও সংস্থা এক্ষেত্রে নিয়োজিত। অথচ পারস্পরিক সমন্বয়হীনতার কারণে এক্ষেত্রে সুফল মিলছে না। এ ধরনের সমন্বয়হীনতা দ্রুত দূর করা দরকার। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণীত হয়েছে। কিন্তু আইনটির বেশির ভাগ ধারার প্রয়োগ এখনো শুরু হয়নি। বলতে গেলে আইন প্রয়োগের শিথিলতা, সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিশৃঙ্খলা, চালক মালিকদের বেপরোয়া মনোভাব পুরো সড়ক ব্যবস্থাকে দিন দিন অনিরাপদ করে তুলছে।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে এ ডিজিটাল যুগেও দেশে এখনো হাতের ইশারায় ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনা করা হচ্ছে। সড়ক নিরাপদ করবার তাগিদে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অচিরেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা উচিত। নচেৎ মান্ধাতা আমলের ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলবে। সড়ক দুর্ঘটনায় উপরের বিভিন্ন কারণগুলো যেমন বিদ্যমান, তেমনি ট্রাফিক আইন অমান্য করাও বিদ্যমান। ট্রাফিক আইন অমান্য করবার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বহুগুণ। চালক যাত্রী পথচারী সবাইকে ট্রাফিক আইন মানাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সঙ্গে চালকদের প্রশিক্ষণ, সড়ক আইন সম্পর্কে বেশি করে প্রচার, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, ট্রাফিক ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন করা, ট্রাফিকদের ডিউটির ঘণ্টা কমিয়ে ট্রাফিকদের সংখ্যা বাড়ানো, রাস্তÍায় ভাসমান দোকান বন্ধ, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংমুক্ত করা, গাড়ির গতিরোধ এবং গাড়ির ওভারলোডিং নিয়ন্ত্রণ করা সর্বোপরি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার চালকদের প্রশিক্ষিত করা। দক্ষতা বৃদ্ধি করা। লাইসেন্স দেয়ার সময় অবশ্যই চালকদের দক্ষতা ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে অবৈধভাবে লাইসেন্স দেয়া। সড়কে গাড়ি চালনার সময় করণীয় সম্পর্কে চালকদের সচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি।

রাজধানীতে যদি যানজট না থাকত, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন যে কত মানুষের প্রাণহানি ঘটত, তা কল্পনাও করা যায় না। ঢাকার চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে এবং বাসে বাসে সংঘর্ষ ঘটে। ফুটপাত দখল হওয়ার কারণে মানুষ যেভাবে সড়ক ধরে হাঁটে, তাতে হতাহতের সংখ্যা যে আরও বেশি হয় না, সেটাই ভাগ্য। যানজট কিছুটা বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ঢাকা শহর যদি যানজটমুক্ত থাকত এবং যেসব চালকের হাতে এখন গাড়ির স্টিয়ারিং, তাতে রাজধানীর সড়কগুলো লাশের মিছিলে পরিণত হতো। গাড়ি চালকদের এই বেপরোয়া মনোভাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সড়ক-মহাসড়কের ত্রুটিপূর্ণ সংস্কার ও নির্মাণকাজ। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, দেশব্যাপী দুর্ঘটনা প্রবণ প্রায় পাঁচ শতাধিক বিপজ্জনক এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, এলাকা চিহ্নিত হয়েছে ঠিকই, তবে সেগুলোর সংস্কার কাজ এগোয়নি। মহাসড়কে অবৈধভাবে হাট-বাজার বসার পাশাপাশি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে অটোবাইক, ট্রলি, রিকশা, ভ্যান, মোটরবাইক, ট্রাক ও কভার্ডভ্যান ইত্যাদির চলাচলকেও দায়ী কার হয়েছে। কয়েক মাস আগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করলেও তাতে কোন কাজ হয়নি। অবাধেই এসব যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া মহাসড়কের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য সরুপথ যুক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে যেগুলোকে মহাসড়ক বলা হয়, আদতে সেগুলো মহাসড়ক নয়। উন্নত বিশ্বের মহাসড়ক লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেগুলোতে এলাকাভিত্তিক কোন রাস্তা এসে যুক্ত হয়নি। এগুলো শাখা-প্রশাখাহীন একক সড়ক। বাংলাদেশে এ ধরনের মহাসড়ক নেই। এছাড়া বিভিন্ন যানবাহনের ধরন অনুযায়ী সড়কে আলাদা লেইন/বাই লেইন নির্ধারণপূর্বক তার যথাযথ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে।

ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে লাফিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক-মহাসড়কে ২৪ লাখ অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকের দাপটে দুর্ঘটনায় লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সড়কে ঝরছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ২০২১ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এতে নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত ৭ হাজার ৪৬৮ জন, যা বিগত দুই বছরের তুলনায় অনেক বেশি। শেষ বছরের দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ৯ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা জিডিপির দশমিক ৩ শতাংশ। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ২১৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন শিক্ষার্থী। মোট নিহতের মধ্যে ৮০৩ জনই শিক্ষার্থী। বিভিন্ন সময় সড়কে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু নিয়ে বড় পরিসরে প্রতিবাদও হয়েছে। এরপর কর্তৃপক্ষ শুধু পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা পদক্ষেপের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন কখনোই হচ্ছে না। এমনকি সড়ক পরিবহন আইন শিরোনামের একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হলেও সেটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি ধারা শিথিল করা হয়েছে। সেখানে মৃত্যুজনিত বিষয়, চালকদের লাইসেন্সসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দক্ষ চালক তৈরি, ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য আলাদা রাস্তা তৈরিসহ বেশকিছু সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব বাস্তবায়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন তারা।

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি নেই। খোদ প্রধানমন্ত্রীও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময়ে সুপারিশ দিয়েছেন। কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে বান্তবায়িত হয়নি। দেশে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে এসব সুপারিশ ও নির্দেশনা বাস্তবায়নের সময় এসেছে। শুধু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নয়, সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রেও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভেবে দেখা উচিত। নিরাপদ সড়ক তৈরির জন্য সুপরিকল্পিত নকশা এবং এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে কাজ করাটা জরুরি। মহাসড়কগুলোয় ফিডার রোড দিয়ে কম গতির গাড়ি, মোটরবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা দরকার, যাতে দুর্ঘটনা হ্রাস পায়। আর মহাসড়কের পাশে থাকা বাজার, মানুষজন রাস্তা পারাপার হয় এমন স্থানগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোয় আজকাল আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এমনকি ভারতও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সনাতনী কায়দায় চলছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। বাইরের অভিজ্ঞতাগুলো আমলে নিয়ে দুর্ঘটনা কমাতে প্রযুক্তিভিত্তিক নানা উদ্ভাবনী সমাধানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। একই সঙ্গে সড়ক মহাসড়কে বাড়াতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি। অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ বাড়ানো হলেও দেশে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিনিয়োগ এখনো অনুল্লেখযোগ্য। বিশ্বব্যাংক এক্ষেত্রে নৈপুণ্য বাড়াতে বিনিয়োগের ওপর জোরারোপ করেছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বে অর্থায়ন নিশ্চিত করা যেতে পারে। সর্বোপরি বাড়াতে হবে জনগণের সচেতনতা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পিত উদ্যোগে দেশে টেকসই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে প্রত্যাশা।

নিরাপদ সড়কের জন্য নিরাপদ যান সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, কঠোর আইন ও শৃঙ্খলা অপরিহার্য। সড়ক যাতায়াত এবং যানবাহনের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর হার কমে আসবে। প্রয়োজনে কঠোর এবং কঠিন আইন করে হলেও এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনে সেনা সাহায্য তলব করে হলেও কঠোরতর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশে পরিবহন সেক্টরগুলোতে বিভিন্ন অনিয়ম, দৌরাত্ম্য চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে রাস্তা ও ফুটপাত দখল ইত্যাদি অনিয়ম ও নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠা করে চলছে। তাদের সেই দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করার জন্য অবশ্যই তাদের নিয়ন্ত্রিত পথ ও প্রক্রিয়ার অনুষঙ্গ মেনে চলতে হবে। ডিজিটাল যুগে টেকসই এবং আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ছাড়া সড়কের শৃঙ্খলা আনায়ন অসম্ভব। সামনে ঈদ এ সময়ে সড়ক মহাসড়কগুলো এবং পরিবহন সেক্টরে নজরদারি ও মনিটারিং জোরদার করতে হবে। সর্বোপরি সমন্বিত পরিকল্পনা, সতর্কতা ও সচেতনতায় সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুকে কমিয়ে আনতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেÑজনগণ তাই প্রত্যাশা করে।

[লেখক : সাবেক উপমহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী]