বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা, দ্বৈত ভূমিকায় শিক্ষা প্রশাসন

ইউজিসি যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছে, সেই প্রতিষ্ঠানের নানা কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিয়ে ভর্তির বিষয়ে ‘সতর্কীকরণ’ ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ জারি করেই দায় সারছে ইউজিসি। মালিকানার দ্বন্দ্ব থাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে শিক্ষা প্রশাসনের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি কয়েকটি বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। যদিও ওইসব ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটসহ প্রায় সব সভায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন সরকার মনোনীত প্রতিনিধি। এজন্য প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য অনুযায়ী, সম্মানীরও ব্যবস্থা রাখা হয়।

ইউজিসি গত ১৮ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে কুমিল্লার ‘ব্রিটানিয়া বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। একইদিকে অন্য এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি এবং দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লায় ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছে ইউজিসি।

ইউজিসি তিন বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেও বিষয়টিকে তেমন আমলে নিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের ‘অনুমোদন’ ছাড়া ইউজিসি কোন নির্দেশনা জারি করতে পারে না যে, কোন বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, কোন বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে না।

গত ২২ এপ্রিল ‘ইবাইস ইউনিভার্সিটির’ সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সরকার মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সেনাবাহিনীর ‘ডিরেক্টর অব এডুকেশন’ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউল ইসলাম, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সাবেক ডিন এয়ার কমোডর সৈয়দ এসএমজি ইয়াজদানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ‘ইবাইস’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. জাকারিয়া লিংকন সংবাদকে বলেন, ‘ইউজিসি আইন-কানুন না জেনেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তারা বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় আইন অনুসরণ করেনি। আমরা আইন অনুযায়ী নিয়মিত সিন্ডিকেট সভা করছি।’

জাকারিয়া লিংকন দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ নেই। একটি ‘চক্র’ তার বিশ^বিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ‘অবৈধভাবে’ কার্যক্রম চালাচ্ছিল। তাদের মদদ দিয়েছিল ইউজিসির কয়েকজন কর্মকর্তা। তবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের ওয়েসবাইটে এখনও সিন্ডিকেট কমিটির ‘সরকার মনোনীত’ সদস্য হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুণা বিশ^াসের নাম রয়েছে। যদিও তিনি ২০২০ সালের ৫ আগস্ট অবসরোত্তর ছুটিতে (এলপিআর) গেছেন।

অরুণা বিশ^াস নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় অংশগ্রহণ করেন কি-না জানতে চাইলে ব্রিটানিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (তথ্যদাতা) আরিফুর রহমান দাবি করেন, ‘হ্যাঁ, তিনি নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় থাকেন।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অরুণা বিশ^াসের সঙ্গে সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ফোনসেট বন্ধ পাওয়া গেছে।

২০১২ সালে ব্রিটানিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটানিয়ায় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

সম্প্রতি ইউজিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সাল থেকে আচার্য নিযুক্ত ভিসি নেই। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারও নেই। এর ফলে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত উপাচার্যের অবর্তমানে অন্য কারো সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভার আইনগত কোন বৈধতা নেই। এই ধরনের অনিয়মের কারণে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ইউজিসির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ অনুযায়ী, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি, শিক্ষাদান, সব পরীক্ষা ও এর ফল অনুমোদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত। ভাইস-চ্যান্সেলর (উপাচার্য) সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি এবং রাষ্ট্রপতি অর্থাৎ আচার্য সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে থাকেন। উপাচার্যের অবর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আইনগত বৈধতা থাকে না বলে ইউজিসির চিঠিতে বলা হয়েছে।

এদিকে আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে ঢুকে জানা গেছে, ২০১৮ সালের পর প্রতিষ্ঠানটি খোলা রয়েছে- নাকি বন্ধ আছে সে সর্ম্পকে হালনাগাদ কোন তথ্য নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও জনবল সংক্রান্ত কোন তথ্যও নেই ওয়েবসাইটে। বিশ^বিদ্যালয়ের ঠিকানা দেয়া হয়েছে ৫৪/১ প্রগতি সরণী, বারিধারা-নদ্দা, ঢাকা।

ওয়েবসাইটে দেয়া সেলফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে নিজেকে আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ‘অ্যাডমিন অফিসার’ পরিচয়ে আমিনুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগেই ইউজিসি এই বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর থেকে শিক্ষার্থী ভর্তিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ আছে। কিন্তু সম্প্রতি গোলাম মুসা নামের এক ব্যক্তি এই বিশ^বিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ভুয়া ঠিকানায় শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, যা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এগুলো দেখার দায়িত্ব ইউজিসির। তারা কী করছেন?’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সনদ বাণিজ্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব, ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোসহ নানা অনিয়মের কারণে সরকার ২০০৬ সালে বন্ধ ঘোষণা করে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে কর্তৃপক্ষ, এরপর স্থগিতাদেশ মিললেও দীর্ঘদিন ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে একটি পক্ষ দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু রেখেছে, যেখানে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে।

ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, আমেরিকা-বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা অন্তত তিনটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা চালাচ্ছেন। এতে দেখা গেছে, একটি পক্ষ ইউজিসির কোন কর্মকর্তার আর্শীবাদ পেলে অন্য পক্ষ মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা বা ব্যক্তির সহযোগিতা পাচ্ছেন। এই ধরনের অনৈতিক তৎপরতার কারণে শিক্ষা প্রশাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি সর্ম্পকে সম্প্রতি ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই বিশ^বিদ্যালয়ে উল্লিখিত ঠিকানায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ফ্লোর স্পেস, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মতো কোনরূপ সুযোগ-সুবিধা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চ্যান্সেলর নিয়োগকৃত ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার পদে কোন ব্যক্তি নেই উল্লেখ করে ইউজিসি জানিয়েছে, ‘এখানে কোন পদেই আইনানুযায়ী বৈধভাবে কেউ নিয়োজিত নেই। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বৈধ কোন কর্তৃপক্ষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির সব কারিকুলাম মেয়াদোত্তীর্ণ বিধায় সব একাডেমিক প্রোগ্রাম বৈধতা হারিয়েছে।’

বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০২২ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ২৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা, দ্বৈত ভূমিকায় শিক্ষা প্রশাসন

রাকিব উদ্দিন

ইউজিসি যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছে, সেই প্রতিষ্ঠানের নানা কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিয়ে ভর্তির বিষয়ে ‘সতর্কীকরণ’ ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ জারি করেই দায় সারছে ইউজিসি। মালিকানার দ্বন্দ্ব থাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে শিক্ষা প্রশাসনের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি কয়েকটি বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। যদিও ওইসব ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটসহ প্রায় সব সভায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন সরকার মনোনীত প্রতিনিধি। এজন্য প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য অনুযায়ী, সম্মানীরও ব্যবস্থা রাখা হয়।

ইউজিসি গত ১৮ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে কুমিল্লার ‘ব্রিটানিয়া বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। একইদিকে অন্য এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি এবং দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লায় ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছে ইউজিসি।

ইউজিসি তিন বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেও বিষয়টিকে তেমন আমলে নিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের ‘অনুমোদন’ ছাড়া ইউজিসি কোন নির্দেশনা জারি করতে পারে না যে, কোন বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, কোন বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে না।

গত ২২ এপ্রিল ‘ইবাইস ইউনিভার্সিটির’ সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সরকার মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সেনাবাহিনীর ‘ডিরেক্টর অব এডুকেশন’ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউল ইসলাম, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সাবেক ডিন এয়ার কমোডর সৈয়দ এসএমজি ইয়াজদানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ‘ইবাইস’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. জাকারিয়া লিংকন সংবাদকে বলেন, ‘ইউজিসি আইন-কানুন না জেনেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তারা বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় আইন অনুসরণ করেনি। আমরা আইন অনুযায়ী নিয়মিত সিন্ডিকেট সভা করছি।’

জাকারিয়া লিংকন দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ নেই। একটি ‘চক্র’ তার বিশ^বিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ‘অবৈধভাবে’ কার্যক্রম চালাচ্ছিল। তাদের মদদ দিয়েছিল ইউজিসির কয়েকজন কর্মকর্তা। তবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের ওয়েসবাইটে এখনও সিন্ডিকেট কমিটির ‘সরকার মনোনীত’ সদস্য হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুণা বিশ^াসের নাম রয়েছে। যদিও তিনি ২০২০ সালের ৫ আগস্ট অবসরোত্তর ছুটিতে (এলপিআর) গেছেন।

অরুণা বিশ^াস নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় অংশগ্রহণ করেন কি-না জানতে চাইলে ব্রিটানিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (তথ্যদাতা) আরিফুর রহমান দাবি করেন, ‘হ্যাঁ, তিনি নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় থাকেন।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অরুণা বিশ^াসের সঙ্গে সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ফোনসেট বন্ধ পাওয়া গেছে।

২০১২ সালে ব্রিটানিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটানিয়ায় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

সম্প্রতি ইউজিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সাল থেকে আচার্য নিযুক্ত ভিসি নেই। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারও নেই। এর ফলে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত উপাচার্যের অবর্তমানে অন্য কারো সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভার আইনগত কোন বৈধতা নেই। এই ধরনের অনিয়মের কারণে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ইউজিসির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ অনুযায়ী, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি, শিক্ষাদান, সব পরীক্ষা ও এর ফল অনুমোদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত। ভাইস-চ্যান্সেলর (উপাচার্য) সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি এবং রাষ্ট্রপতি অর্থাৎ আচার্য সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে থাকেন। উপাচার্যের অবর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আইনগত বৈধতা থাকে না বলে ইউজিসির চিঠিতে বলা হয়েছে।

এদিকে আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে ঢুকে জানা গেছে, ২০১৮ সালের পর প্রতিষ্ঠানটি খোলা রয়েছে- নাকি বন্ধ আছে সে সর্ম্পকে হালনাগাদ কোন তথ্য নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও জনবল সংক্রান্ত কোন তথ্যও নেই ওয়েবসাইটে। বিশ^বিদ্যালয়ের ঠিকানা দেয়া হয়েছে ৫৪/১ প্রগতি সরণী, বারিধারা-নদ্দা, ঢাকা।

ওয়েবসাইটে দেয়া সেলফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে নিজেকে আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ‘অ্যাডমিন অফিসার’ পরিচয়ে আমিনুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগেই ইউজিসি এই বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর থেকে শিক্ষার্থী ভর্তিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ আছে। কিন্তু সম্প্রতি গোলাম মুসা নামের এক ব্যক্তি এই বিশ^বিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ভুয়া ঠিকানায় শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, যা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এগুলো দেখার দায়িত্ব ইউজিসির। তারা কী করছেন?’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সনদ বাণিজ্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব, ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোসহ নানা অনিয়মের কারণে সরকার ২০০৬ সালে বন্ধ ঘোষণা করে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে কর্তৃপক্ষ, এরপর স্থগিতাদেশ মিললেও দীর্ঘদিন ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে একটি পক্ষ দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু রেখেছে, যেখানে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে।

ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, আমেরিকা-বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা অন্তত তিনটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা চালাচ্ছেন। এতে দেখা গেছে, একটি পক্ষ ইউজিসির কোন কর্মকর্তার আর্শীবাদ পেলে অন্য পক্ষ মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা বা ব্যক্তির সহযোগিতা পাচ্ছেন। এই ধরনের অনৈতিক তৎপরতার কারণে শিক্ষা প্রশাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি সর্ম্পকে সম্প্রতি ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই বিশ^বিদ্যালয়ে উল্লিখিত ঠিকানায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ফ্লোর স্পেস, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মতো কোনরূপ সুযোগ-সুবিধা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চ্যান্সেলর নিয়োগকৃত ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার পদে কোন ব্যক্তি নেই উল্লেখ করে ইউজিসি জানিয়েছে, ‘এখানে কোন পদেই আইনানুযায়ী বৈধভাবে কেউ নিয়োজিত নেই। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বৈধ কোন কর্তৃপক্ষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির সব কারিকুলাম মেয়াদোত্তীর্ণ বিধায় সব একাডেমিক প্রোগ্রাম বৈধতা হারিয়েছে।’